সুপ্রীতি ঘোষ
সুপ্রীতি ঘোষ (জন্ম: ২৮ আগস্ট, ১৯২২ - মৃত্যু: ২২ এপ্রিল, ২০০৯) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মির্জাপুর স্ট্রিটের উত্তর কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন।[১] ‘পানসি’ ডাকনামে পরিচিত সুপ্রীতি ঘোষ জন্মকালীন সুপ্রীতি মজুমদার নামে পরিচিত ছিলেন।[২] বেশ সুরেলা কণ্ঠস্বরের অধিকারী ছিলেন তিনি। বেশীরভাগ বাঙালির মনে আজও বিরাজ করেন মহিষাসুরমর্দিনির ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ - এই গানটির মাধ্যমে। পাশাপাশি, বহু আধুনিক গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতে কণ্ঠ দিয়েছেন।
সুপ্রীতি ঘোষ | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | সুপ্রীতি মজুমদার |
উপনাম | পানসি |
জন্ম | ২৮ আগস্ট ১৯২২ |
উদ্ভব | মির্জাপুর স্ট্রিট, উত্তর কলকাতা, অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) ভারত |
মৃত্যু | ২২ এপ্রিল ২০০৯ | (বয়স ৮৬)
ধরন | রবীন্দ্র সঙ্গীত |
পেশা | সংগীতশিল্পী |
কার্যকাল | ১৯৩৩-১৯৭০ |
শৈশবকাল
সম্পাদনারবীন্দ্রনাথ মজুমদার ও কমলাদেবীর কন্যা ছিলেন। তাঁর অপর বোন ভারতী’র সাথে একত্রে গান গাইতেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি সঙ্গীত জীবনে পা রেখেছিলেন এবং শেষ বয়স অবধি নিজের সুর থেকে বঞ্চিত করেননি শ্রোতাদের। শৈশব কালেই তাঁর জ্যাঠামশাই জনপ্রিয় সঙ্গীতজ্ঞ ও আকাশবাণী কলকাতার অধিকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, হীরেন বসু ও রাইচাঁদ বড়ালের ন্যায় কিংবদন্তীতুল্য গায়কদের সান্নিধ্য লাভসহ তাদের গান শোনার সুযোগ লাভ করেছিলেন।[৩] তারা মাঝে-মধ্যেই সুপ্রীতি ঘোষের গান শুনে মুগ্ধ হতেন। তাদের অনুপ্রেরণায় রেকর্ডিং স্টুডিওতে পদচারণার সুযোগ পান। শৈশবে মনোরঞ্জন সেনের পরিচালনায় বাসন্তী বিদ্যাবীথিতে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে তার সঙ্গীতের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন অনাদি ঘোষ দস্তিদার, নিতাই ঘটক, জগৎ ঘটক, শৈলেশ দত্ত প্রমূখেরা।
কর্মজীবন
সম্পাদনাশৈশব পেরিয়ে গানকে আরও বেশী আঁকড়ে ধরলেন। এরপর জনসমক্ষে গান পরিবেশনসহ চলচ্চিত্রে গান পরিবেশনের প্রস্তাব পেতে থাকেন। অনেকগুলো চলচ্চিত্রে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৩৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বেতারে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৩৬ সালে সেনালো রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হবার পর সেই কোম্পানি থেকে তার প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। রেকর্ডের এক পীঠে কাব্যসঙ্গীত ও অপরপীঠে কীর্তন ছিল।
সকল ধরনের গানেই তাঁর সবিশেষ আগ্রহ ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও নজরুল গীতি, অতুল প্রসাদী গান, দিজেন্দ্রগীতি, আধুনিক বাংলা গান তিনি শিখেছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালক বিমল রায় ‘তথাপি’ ছবিতে তাকে দিয়ে ‘ওগো সাথী মম সাথী’ গানটি গাওয়ালেন। তবে সবকিছু ছাঁপিয়ে অল ইন্ডিয়া রেডিও’র স্টুডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনিতে অংশগ্রহণের পর তার কণ্ঠস্বর ঘরে ঘরে আলোচিত হতে থাকে। দেবী দুর্গা’র অতি সুপরিচিত বন্দনা ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ গানের সাথে তাঁর কণ্ঠের বেশ সমার্থক ছিল। এ গানের মাধ্যমেই বিপুলভাবে তাঁর সঙ্গীত পরিচিতি গড়ে উঠে। গানসহ স্তোত্র বাংলার স্রোতামহলে বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করে।[৪] বর্ণাঢ্যময় কর্মজীবনে তিন শতাধিক গান গেয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাসুপ্রীতি ঘোষ ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। অরবিন্দ ঘোষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কলকাতাভিত্তিক গীতবিতানে কিছুসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে কলকাতায় ৮৬ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জনতারকণ্ঠ.কমে প্রকাশিত সুপ্রীতি ঘোষের জন্মবার্ষিকীবিষয়ক প্রতিবেদন, সংগ্রহ: ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
- ↑ জিওবাংলা.কমে প্রকাশিত মহিষাসুরমর্দিনি ও সুপ্রীতি ঘোষের প্রতিবেদন, সংগ্রহ: ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
- ↑ টেলিগ্রাফইন্ডিয়া.কমে প্রকাশিত সুপ্রীতি ঘোষের স্মরণসভার প্রতিবেদন, প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০১৪
- ↑ বাংলালাইভ.কমে প্রকাশিত সুপ্রীতি ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীর প্রতিবেদন, সংগ্রহ: ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে সুপ্রীতি ঘোষ (ইংরেজি)