হীরেন বসু
হীরেন বসু বা হীরেন্দ্রনাথ বসু (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ - ১৮ জুন ১৯৮৭) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীতশিল্পী, সংগীতরচয়িতা, সুরকার, লেখক ও ঔপন্যাসিক। সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতে হীরেন বসু আর সাহিত্য জগতে অর্থাৎ বইয়ের প্রচ্ছদে তিনি হীরেন্দ্রনাথ বসু নামে পরিচিত।[১][২] ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের প্রবর্তক তিনি এবং প্রথম কণ্ঠদান তার নিজের।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
হীরেন বসু | |
---|---|
জন্ম | ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ |
মৃত্যু | ১৮ জুন ১৯৮৭ | (বয়স ৮৩)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, সঙ্গীত শিল্পী গীতিকার ও সুরকার |
সংক্ষিপ্ত জীবনী
সম্পাদনাহীরেন বসুর জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতায় ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতার সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনার পর 'বিদ্যাভূষণ' উপাধি লাভ করেন। এরপর সংগীত চর্চা শুরু করেন। ধ্রুপদ শেখেন রাজেন ঘোষের কাছে, খেয়াল শেখেন নগেন দত্ত, শুকদেব মিশ্র, মাস্তান গামা প্রমুখের কাছে। আর কণ্ঠ সংগীতের পরিমার্জনা পান ওস্তাদ জামিরুদ্দিনের কাছে। প্রথম প্রথম তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত,দ্বিজেন্দ্রগীতি ও রজনীকান্তের গানই গাইতেন। পরে নিজে গীত রচনা শুরু করে নিজেই সুর দিতে লাগেন।
চলচ্চিত্র জগতে
সম্পাদনাহীরেন বসু ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাডান কোম্পানির প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সবাক চলচ্চিত্র "ঋষির প্রেম" ছবিতে নায়ক, গীতিকার,গায়ক ও অন্যতম সুরকার হিসেবে অবতীর্ণ হন এবং ওই বৎসরেই তিনি "জোরবরাত" ছায়াছবিতে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন। অতঃপর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের প্রথম প্রবর্তন করেন। ভারতীয়দের কাছে যখন আফ্রিকা সাহিত্য ও বিনোদনের ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে, সেই সময় ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি সম্পূর্ণ ফিল্ম ইউনিট নিয়ে রওয়ানা দিলেন মোম্বাসার উদ্দেশ্যে - 'ইন্ডিয়া ইন আফ্রিকা' বা 'অফ্রিকা মে হিন্দ' শুটিংয়ের জন্য - আফ্রিকার জঙ্গলের জীবন সংগীত ধরে আনার জন্য। আফ্রিকার পটভূমিতে নির্মিত সেই হিন্দি ছবি মুক্তি পায় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়া 'দাসী', 'তুলসীদাস', 'অমরগীতি' সহ মোট এগারোটি চলচ্চিত্রের পরিচালনা করেন। তার মধ্যে অন্যতম হল "ইন্ডিয়া ইন আফ্রিকা"।
সংগীত জগতে
সম্পাদনাহীরেন বসু বেতার, গ্রামোফোন রেকর্ড, ছায়াছবি ও নাটকের জন্য অসংখ্য গান লিখেছেন এবং সংযোজন করেছেন। প্রথম জীবনে শুদ্ধ রাগাশ্রয়ী বহু গান, গীতি-আলেখ্য এবং আবহ-সংগীত রচনা করেন। পরে আধুনিক গানে নিও-ক্লাসিক্যাল সুরের প্রবর্তন করেন। বহু খ্যাতনামা শিল্পীদের কণ্ঠে তার লিরিক গীত হয়েছে। তিনি প্রায় দেড় হাজার গান লিখে গিয়েছেন। জনপ্রিয়তার নিরিখে উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-
- ধীরেন্দ্রনাথ দাসের কণ্ঠে
- 'আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও' (১৯৩১)
- মিস লাইটের কণ্ঠে -
- 'শেফালি তোমার আঁচলখানি বিছাও'(১৯৩২)
- কানন দেবীর কণ্ঠে -
- 'রিনিকি ঝিনিকি ঝিনি'(১৯৩৩)
- রবীন মজুমদারের কণ্ঠে-
- 'আমার আঁধার ঘরের প্রদীপ'(১৯৪২)
- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে -
- 'শুকনো পাতা ঝরে যায়'(১৯৪৮)
- 'লিখিনু যে লিপিখানি প্রিয়তমারে' (১৯৫০)
- 'প্রিয়ার প্রেমের লিপি'(১৯৪৮)
- 'মেঘ মেদুর বরখারে' (১৯৫১)
- 'হংসমিথুন চলে'(১৯৫০)
- 'আমি তনু চন্দন বাটি'(১৯৫০)
- সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে -
- 'বাউরি হয়েছে আজ শ্রীরাধা', প্রভৃতি
সংগীতের জন্য গ্রামোফোন কোম্পানি ছাড়াও আকাশবাণী কলকাতার সূচনা পর্ব হতে তার যোগাযোগ ছিল গায়ক ও পরিচালক হিসেবে।
সাহিত্যচর্চায়
সম্পাদনাহীরেন বসু গল্প, কবিতা, উপন্যাসও লিখতেন। এগুলি সেসময় প্রবাসী, মানসী ও মর্মবাণী, কল্লোল, দেশ,অমৃত, দীপালি প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আফ্রিকায় শুটিংয়ে গিয়ে তিনি তার আফ্রিকা-দর্শনে কল্পনা আর রোমাঞ্চ ছাড়াও যে বাস্তবতা অনুভব করেছেন তা তুলে ধরেছেন 'বনে-জঙ্গলে' বইতে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 'সুরের ডালি' নামে গীত -সংকলন প্রকাশিত হয়। অন্য গীত সংকলন দুটি হল - ধূপধূনা ও গীতসবিতা। এছাড়া তার অন্যান্য গ্রন্থ দুটি হল -
- 'জাতিস্মর' আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
- 'ফিলজফি ইন ইন্ডিয়ান মিউজিক'।
মৃত্যু
সম্পাদনাহীরেন বসু ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৮০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "বর্ষায় সিংহ এফোঁড় ওফোঁড়"। অজানা প্যারামিটার
|সংগ্রহের তারিখ=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)