সীতা আম্মান মন্দির

শ্রীলঙ্কার একটি প্রাচীন বৈষ্ণবীয় হিন্দু মন্দির

সীতা আম্মান মন্দির, বা 'সীতা এলিয়া সীতাই আম্মান থিরুক্কভিল', 'অশোক বাটিকা সীতা মন্দির' নামেও পরিচিত, একটি প্রাচীন বৈষ্ণবীয় হিন্দু মন্দির এবং অন্যতম উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এটি মধ্য শ্রীলঙ্কার নুওয়ারা এলিয়া জেলায় অবস্থিত। মন্দিরের লোককাহিনীটি হিন্দুধর্মের মহাকাব্য রামায়ণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। মহাকাব্য অনুসারে, লঙ্কেশ্বর রাবণ রামের সহধর্মিনী সীতাকে অপহরণ করার পর তাকে এইস্থানে বন্দি করে রাখেন, কারণ সীতা রাবণের প্রাসাদে অবস্থানে অস্বীকার করেন এবং অশোক বাটিকার শিমসাপা (একরকমের পর্ণমোচী রোজউড, বৈজ্ঞানিক নাম 'ডালবার্গিয়া শিশু') গাছের তলায় থাকতে পছন্দ করেন। রাম ও লক্ষ্মণ বনবাসে অবস্থানকালে রাবণের ভগিনী শূর্পনাখাকে অসম্মান করার ফলস্বরূপ প্রতিশোধ নিতে রাবণ সীতাকে হরণ করেন এবং শ্রীলঙ্কায় নিয়ে যান। []

সীতা আম্মান মন্দির
சீத்தா எலிய சீதையம்மன் கோவில்
සීතා එළිය සීතා අම්මන් දේවස්ථානය
অশোক বাটিকা সীতা মন্দির
২০১০ খ্রিস্টাব্দের সংগৃহীত আলোকচিত্র
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলানুওয়ারা এলিয়া
প্রদেশকেন্দ্রীয় প্রদেশ
ঈশ্বরসীতা
বৈশিষ্ট্য
  • মন্দির পুকুর: সীতা নদী শাখা নদী
  • মন্দির বৃক্ষ: অশোক গাছ
অবস্থান
অবস্থানসীতা এলিয়া
দেশশ্রীলঙ্কা
সীতা আম্মান মন্দির শ্রীলঙ্কা-এ অবস্থিত
সীতা আম্মান মন্দির
শ্রীলঙ্কায় অবস্থান
স্থানাঙ্ক৬°৫৬′০০″ উত্তর ৮০°৪৮′৩৮″ পূর্ব / ৬.৯৩৩২° উত্তর ৮০.৮১০৫° পূর্ব / 6.9332; 80.8105
স্থাপত্য
ধরনহিন্দু মন্দির
স্থাপত্য শৈলীতামিল স্থাপত্য
সম্মুখভাগের দিকপূর্ব

রামায়ণে, রাবণ সীতাকে তার প্রাসাদে স্থান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন,কিন্তু সীতা প্রত্যাখ্যান করেন। পরিবর্তে ১৪ বছর বনে নির্বাসনে থেকে এবং রাম কর্তৃক নিজেকে উদ্ধারের অপেক্ষা পছন্দ করেন। রাবণ তখন একটি প্রাকৃতিক বাগান তৈরি করেন যেখানে সীতা অপেক্ষা করতে পারেন। সেটিই বর্তমানে 'হাকগালা বোটানিক্যাল গার্ডেন' নামে পরিচিত। পাশের নদীতে সীতার স্নানের এবং রামের আগমন পর্যন্ত সীতার ধ্যানের সময়ে প্রহরায় অসুর নারীদের রেখেছিলেন। এটি সেই স্থান বলেও বিশ্বাস করা হয় যেখানে হনুমান প্রথম সীতার সাথে দেখা করেছিলেন এবং আশার চিহ্ন হিসাবে তাকে রামের বিবাহের আংটি দিয়েছিলেন। এই মন্দিরটি বিশ্বের একমাত্র 'সীতা মন্দির' বলে বিশ্বাস করা হয়। []

প্রথমদিকে, এই একই অবস্থানে রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতাকে উৎসর্গ করে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী পাথর রেখে সাধারণ মন্দিরে পূজিত হতেন। পরে ভারত হতে ব্রিটিশ শাসকদের আনা ভারতীয় তামিলরা চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে কাজ করে বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করে এবং অদ্যাবধি, মন্দিরটি স্থানীয় শ্রীলঙ্কার তামিলদের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার ভারতীয় তামিলরাই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয়েরা রামায়ণে উল্লেখিত স্থানগুলির সাথে অশোক বাটিকা সীতা মন্দির তীর্থস্থান হিসাবে পরিদর্শন করে। []

অবস্থান

সম্পাদনা

সীতা আম্মান মন্দিরের অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হলো ৬.৯৩৩২ উত্তর ৮০.৮১০৫ পূর্ব। মন্দিরটি পেরাদেনিয়া-বাদুল্লা-চেঙ্কলাদি হাইওয়ে বরাবর নুওয়ারা এলিয়ার প্রধান শহর থেকে ৮ কিমি (৫.০ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। মন্দিরের আনুমানিক ১.৭ কিমি (১.১ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে হাকগালা বোটানিক্যাল গার্ডেন। বাল্মিকী রামায়ণ অনুসারে সীতার জন্য রাবণ দ্বারা তৈরি করা বাগান বলে বিশ্বাস করা হয়। []

কিংবদন্তি

সম্পাদনা

সীতা এলিয়া সীতাই আম্মান থিরুক্কোভিল, যা অশোক বাটিকা সীতা মন্দির নামেও পরিচিত, সেই স্থান বলে মনে করা হয় যেখানে রাক্ষস রাজা রাবণ সীতাকে বন্দী করে রেখেছিলেন, হিন্দু মহাকাব্য, রামায়ণ অনুসারে। সীতা প্রতিদিন তার স্বামী রামের কাছে প্রার্থনা করতেন তাকে এই স্থান থেকে উদ্ধার করার জন্য। মন্দিরটি মধ্য শ্রীলঙ্কার নুওয়ারা এলিয়া জেলায় অবস্থিত এবং উল্লেখযোগ্য পৌরাণিক নিদর্শন দ্বারা বেষ্টিত। সীতা আম্মান মন্দিরের পিছনের পাথরে হনুমানের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। [] এখানেই রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী সীতার সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং হনুমান তিনি যে, পুরুষোত্তম রামের একান্ত অনুগত বানর সঙ্গী। সীতার সন্দেহ নিরসনে হনুমান রামের আঙুলের আংটি দিয়ে নিজেকে সনাক্ত করেন।

মন্দিরের পাশ দিয়ে একটি নদী বয়ে গিয়েছে। জনশ্রুতি, অশোক বাটিকায় সীতা দেবীর বন্দিত্বের সময় তার চাহিদা মেটাতে এটির সৃষ্টি হয়েছিল এবং এই নদীর জলধারায় সীতা স্নান করতেন। পাথরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর স্রোতপথে পাথরে বৃত্তাকারে হনুমানের পদচিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। [] বাল্মিকী রামায়ণ অনুসারে, হনুমান এই স্থানে সীতার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাকে রামের বিয়ের আংটি দিয়েছিলেন আশার চিহ্ন হিসাবে। উপরন্তু, রাবণ রামের আগমনের অপেক্ষায় সীতার জন্য একটি প্রাকৃতিক বাগান তৈরি করেছিলেন, যা এখন হাকগালা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত। পৌরাণিক তাৎপর্য সমৃদ্ধ এই সাইটটি ভক্ত ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলেছে যারা সীতার ভক্তি ও ধৈর্যের গল্পকে শ্রদ্ধা করে। []

সীতা আম্মান মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা

সম্পাদনা

২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি ভারতের অযোধ‍্যায় অতি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে রাজসূয় যজ্ঞে অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্যে উদ্বোধন হয়েছে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের। শ্রীলঙ্কার সীতা আম্মান মন্দিরে সীতা দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান হয় ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে। সেজন্য আগে থেকেই অযোধ্যার সরযূ নদী হতে একুশ লিটার জল শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। প্রসঙ্গত, সীতা আম্মান মন্দিরে মা জানকীর নতুন মূর্তির অভিষেক হয় জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Goonatilake, Susantha (২০১৪)। "Introduction to the Issue on the Rāmāyaṇa"Royal Asiatic Society of Sri Lanka। New Series, Vol. 59, No. 2 (Special Issue on the Ramayana): 1–21। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০২৩ 
  2. "WWW Virtual Library: Sita Eliya / Seetha Eliya / Sitha Eliya" 
  3. "Ramayanaya"www.srilanka.travel। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯ 
  4. Sinha, Amitabh (২৬ এপ্রিল ২০২৩)। "'Epic' Ties: Sri Lankan PM Unveils Special Cover for Sita Temple in Nuwara Eliya, Ramayana Trail to Be Made More Attractive"News18 
  5. "শ্রীলঙ্কায় দেবী সীতার মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা, অযোধ্য়া থেকে যাবে সরযূর জল, কবে অনুষ্ঠান?"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৬ 
  6. "Seetha Amman Temple Seetha Eliya Sri Lanka - ramayana in Sri Lanka"www.travel-culture.com (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]