লক্ষ্মণ
লক্ষ্মণ (সংস্কৃত: लक्ष्मण, IAST Lakṣmaṇa) হলেন হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের একটি চরিত্র। তিনি রামের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। কোনো কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ে লক্ষ্মণকেও অবতার বা রামের অপর রূপ মনে করা হয়। আবার কোনো কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ে তাকে শেষনাগের অবতার মনে করা হয়।
লক্ষ্মণ | |
---|---|
অন্তর্ভুক্তি | বৈষ্ণববাদ |
আবাস | বৈকুণ্ঠ, ক্ষীরসাগর |
অস্ত্র | তীর-ধনুক, ছোরা |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | অযোধ্যা |
মৃত্যু | সরয্যু নদী, অযোধ্যা |
মাতাপিতা | দশরথ (পিতা) সুমিত্রা (মাতা) কৌশল্যা (সৎ মা) কৈকেয়ী (সৎ মা) |
সহোদর | শত্রুঘ্ন (ভাই) রাম (সৎ ভাই) ভরত (সৎ ভাই) শান্তা (সৎ বোন) |
দম্পত্য সঙ্গী | ঊর্মিলা |
সন্তান | অঙ্গদ চন্দ্রকেতু [১] |
রাজবংশ | রঘুবংশ-সূর্যবংশ |
অযোধ্যার রাজা দশরথের কনিষ্ঠা মহিষী সুমিত্রার দুই যমজ পুত্র হলেন লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন।[২] তিনি রামের অত্যন্ত অনুগত ছিলেন। বিশ্বামিত্র রাক্ষসবধের জন্য রামকে আমন্ত্রণ জানালে লক্ষ্মণ তার সঙ্গী হন।[২] পরবর্তীকালে, তিনি রামকে পিতার আদেশের বিরুদ্ধে বনগমনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু রাম বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে, লক্ষ্মণও তার সঙ্গে বনে যান। বনবাসকালে তিনি একাধারে রামের ভাই, বন্ধু ও সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন।[২] লঙ্কার যুদ্ধে তিনি রাবণের পুত্র মেঘনাদকে বধ করেন।[২] বনবাসের শেষে রাম অযোধ্যার রাজা হলে লক্ষ্মণ তার মন্ত্রী নিযুক্ত হন।[২] উত্তরকাণ্ডে রাম সীতাকে নির্বাসিত করলে, লক্ষ্মণ তাকে বাল্মীকির তপোবনে রেখে আসেন।[২] রামচন্দ্র যখন কালপুরুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন লক্ষ্মণ দ্বাররক্ষীর ভূমিকা পালন করেন। এই সময় দুর্বাশা ঋষি রামের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে, তিনি কাউকে রামের কাছে যেতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে দুর্বাসাকে রামের কাছে নিয়ে যান। প্রতিজ্ঞাভঙ্গের অপরাধে রাম তাকে পরিত্যাগ করলে, তিনি সরযূ নদীর তীরে যোগাবলম্বে দেহত্যাগ করেন।[২]
ণ হলেন এমন এক মহাপুরুষ যিনি মহাপরাক্রমশালী রাবণপুত্র মেঘনাদকে বধ করেন। মেঘনাদের এমন বর ছিল যে, যে ব্যক্তি ১৪ বছর না খেয়ে, না ঘুমিয়ে ব্রহ্মচর্য্য পালন করবেন তিনিই শুধু মেঘনাদকে বধ করতে পারবেন। বনবাসের সময় ১৪ বছর শ্রীরামের ভ্রাতা লক্ষণ এই মহা কঠিন কার্য ও শক্তি অর্জন করেন, ফলস্বরূপ তিনি রামায়ণের যুদ্ধে রাবণের পুত্র মেঘনাদকে বধ করেন।
লক্ষ্মণ সীতার কনিষ্ঠা ভগিনী ঊর্মিলাকে বিবাহ করেন।[৩] তার দুই পুত্রের নাম ছিল অঙ্গদ ও ধর্মকেতু।[৪] কথিত আছে, লখনউ শহরটি (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী) লক্ষ্মণ প্রতিষ্ঠা করেন।[৫]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
অষ্টাদশ শতাব্দীর ভারতীয় চিত্রকলায় রাম (বামে) ও লক্ষ্মণ (ডানে)
-
রাজা রবি বর্মা অঙ্কিত রাম (বামে), সীতা (মধ্যে) ও লক্ষণ (ডানে)
-
রামায়ণের পুথিচিত্রে লক্ষ্মণ (সর্বদক্ষিণে), বিলাসপুর, হিমাচল প্রদেশ, ভারত, ১৬৮৫-৯০ খ্রিষ্টাব্দ
-
বানরসেনার সম্মুখে রাম ও লক্ষ্মণ (সর্বদক্ষিণে), ভারতীয় চিত্রকলা, ১৮০০-০৫
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ Ramayana – Conclusion, translated by Romesh C. Dutt (1899)
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জীবনীকোষ: ভারতীয়-পৌরাণিক, শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার, দ্বিতীয় খণ্ড, সদেশ, কলকাতা, ১৪১৩ সং, পৃ. ১৫৬৭
- ↑ জীবনীকোষ: ভারতীয়-পৌরাণিক, শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার, প্রথম খণ্ড, সদেশ, কলকাতা, ১৪১৩ সং, পৃ. ১৭৫
- ↑ জীবনীকোষ: ভারতীয়-পৌরাণিক, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৭
- ↑ ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৯৭৩, পৃ. ৪৪৮