সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্মত অবস্থায় আনতে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদের উইকিকরণ প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে সম্পর্কিত আন্তঃসংযোগ প্রয়োগের মাধ্যমে নিবন্ধের উন্নয়নে সহায়তা করুন। |
সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি সমৃদ্ধ ও একমাত্র চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানটি শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের কাছাকাছি, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, ১.৮০ একর এলাকাজুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর রুপস্পুর মৎস্য খামার বাড়িতে অবস্থিত। [১]>[২] বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে এই চিড়িয়াখানা স্থাপিত হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকসহ বিদেশি অনেক পর্যটকও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভিড় করেন এ চিড়িয়াখানায়।[৩] এলাকার লোকজনের শিক্ষার সহায়ক একটি ক্ষেত্রও এই চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বিরল প্রজাতির প্রাণীদের উপর দেশী-বিদেশী গবেষকগণ গবেষণাও পরিচালনা করেন (দলিলাদি অংশ দ্রষ্টব্য)। এজন্যই একবার চিড়িয়াখানা থেকে একটি শাকিনী সাপ জঙ্গলে অবমুক্ত করতে চাইলে অনেকেই তাকে তা করতে বিরত রাখেন, যাতে সাপটি দেখে এবং পরবর্তি প্রজন্মকে দেখিয়ে বিশেষ এই সাপ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন তারা।[৪] চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে পরিচালনা করেন সিতেশ রঞ্জন দেবের সন্তান সজল দেব।
খোলার তারিখ | ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ |
---|---|
অবস্থান | শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার |
আয়তন | ১.৮০ একর |
প্রধান প্রদর্শনসমূহ | সাদা বাঘ,ভাল্লুক,অজগর |
স্বত্বাধিকারী | সিতেশ বাবু |
ব্যবস্থাপনা | সজল দেব |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেরও আগে সিতেশ বাবুর বাবার তত্ত্বাবধানে তাদের নোয়াগাঁওয়ের বাড়িতে একটি ছোটখাটো চিড়িয়াখানা ছিল।[১] তারপর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ বাবু তার নিজ বাড়িতে শখের বসে চিড়িয়াখানাটিকে আরও কিছুটা বড় করে গড়ে তুলেছিলেন ।[৫] পরবর্তিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে[১] চিড়িয়াখানটি হাইল হাওরের কাছাকাছি, শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, ১.৮০ একর এলাকাজুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর মৎস্য খামার 'রূপসপুর খামারবাড়ি'তে[১] স্থানান্তর করা হয়।[২]
প্রাণি সংগ্রহ
সম্পাদনাদীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রাণি সংগ্রহের পর বর্তমানে এটি একটি সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে রয়েছে: বিলুপ্তপ্রায় সাদা বাঘ, বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, সোনালী হনুমান, সজারু, হিংস্র মেছোবাঘ, চারপাশে আতপ চালে গন্ধ ছড়ানো গন্ধগোকুল, পাহাড়ি বক, নিশি বক, সোনালী কচ্ছপ ও অসংখ্য বিরল প্রজাতির পাখি। এছাড়াও আছে লজ্জাবতী বানর, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, অজগর, হনুমান, মায়া হরিণসহ প্রায় দেড়শ প্রজাতির জীবজন্তু।[২] রয়েছে কালো-হলুদ ডোরাকাটা ত্রিভুজাকৃতির বিলুপ্তপ্রায় শঙ্খিনীণি।[৪] আছে হিমালয়ান সিভিটকেট, মথুরা, সোনালি কচুয়া, বন্য খরগোশ, বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, ধলা বালিহাঁস, প্যারিহাঁস, কোয়েল, লাভবার্ড[১], চিত্রা হরিণ, বনরুই, বিভিন্ন রঙের খরগোশ, সোনালি খাটাশ, বড় গুইসাপ, ধনেশ, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, কাসে-চড়া, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খ চিল, তোতা, সবুজ ঘুঘু, হরিয়াল প্রভৃতিও।[৫]
-
পাখি
-
বানর
চিড়িয়াখানার বন্য পশুপাখি সংগ্রহের ব্যাপারে সিতেশ রঞ্জন বাবুর অভিমত হলো:[৬]
“ |
বনের পশুপাখিরা লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়ে। লোকজন আহতাবস্থায় প্রাণীগুলো চিড়িয়াখানায় দিয়ে যায়। কখনো কখনো খবর পেয়ে নিজে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। |
” |
চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের খাবার হিসাবে সাধারণত সরবরাহ করা হয় কাঁচা মাংস, সবজি, বিচি, বাদাম। তবে শঙ্খিনীণি সাপের জন্য সরবরাহ করতে হয় সাপ, টিকটিকি, লেঞ্জা (এরেলা সাপ), মাটিয়া সাপ।[৪]
সাদা বাঘ
সম্পাদনাসাদা বাঘ পৃথিবীর মধ্যে আছে মাত্র গুটি কয়েক। তারই একটা সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংগ্রহশালার কারণে তার সংগৃহীত এই বাঘটিকে সিতেশবাবুর সাদা বাঘ বলেই চেনেন অনেকে। নটর ডেম ন্যাচার স্টাডি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জনাব অধ্যাপক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এটিকে বনবিড়ালের সাদা বা অ্যালবিনো ধরন (Felis chaus) হিসেবে শনাক্ত করেন। ধবধবে সাদা এ বাঘটি প্রায় আড়াই ফুট দীর্ঘ আর উচ্চতায় প্রায় দেড় ফুট। হিংস্র প্রকৃতির এ বাঘটি মাংস খায়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো বাঘটির চোখ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়: কখনও হলুদ, কখনও সাদা, কখনও লাল হয়ে ওঠে চোখের রং।[৭]
স্টাফ করা পশুপাখি
সম্পাদনাএছাড়া চিড়িয়াখানায় রয়েছে স্টাফ করা অবস্থায় নানা পশুপাখি। আছে স্টাফ করা ময়ূর, চখাচখিসহ অন্যান্য পাখি।
-
বিপন্ন জাতের স্ত্রী প্রজাতির একটি উল্লুক
-
বিপন্ন জাতের স্ত্রী প্রজাতির একটি উল্লুক
-
পাখি
-
পাখি
-
বানর
-
বানর
-
বানর
-
পাখি
-
পাখি
-
বানর
-
পাখি
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ
সম্পাদনাসিতেশ বাবুর স্থানীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে প্রায় তিন দশক ধরে পরিশ্রম করা হচ্ছে।[৫] প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়া বন্যপ্রাণীদের উদ্ধার করে সেবা-সুশ্রুষা দিয়ে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।[২] এপর্যন্ত এই চিড়িয়াখানা এভাবে শুশ্রুষা দিযে ছেড়ে দেয়া প্রাণীকুলের মধ্যে আছে অজগর[৮], বিলুপ্তপ্রায় শকুন[৯], বিলুপ্তপ্রায় ফ্যায়র্স লাঙ্গুরের বাচ্চা[১০], বিভিন্ন রকমের অতিথি পাখি[১১], বন বিড়াল, লজ্জাবতী বানর, বাদামী বানর[১২], ধনেশ পাখি, বিরল প্রজাতির হিমালয়ান পাম সিবেট প্রভৃতি।[৬]
বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করার ব্যাপারে তার দৃষ্টিকোণ:[৬]
“ |
[সংগৃহীত বন্যপ্রাণী] ...আবারও প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিতে পারলে আমি তৃপ্তি পাই। একসময় আমি শিকার করতাম। শিকারের আনন্দের চেয়ে এই আনন্দ কয়েক গুণ বেশি—এটা ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারব না। |
” |
দলিলাদি
সম্পাদনা- সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় রক্ষিত প্রাণীর উপর আন্তর্জাতিক গবেষণার প্রতিবেদন, www.smallcarnivoreconservation.org; পরিদর্শনের তারিখ: ১৯ মে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন (মার্চ ১, ২০১০)। "বন্য প্রাণী-প্রেমিক"। দৈনিক কালের কণ্ঠ (প্রিন্ট) । ঢাকা। পৃষ্ঠা ১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ডি.এম রেজা চৌধুরী রিপন। "শ্রীমঙ্গলে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সীতেশ দেবের মিনি চিড়িয়াখানা অর্থ সংকটে হুমকির মুখে পড়েছে"। সাপ্তাহিক অভিযোগ। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (php web) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১০।
- ↑ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।এসইউ/এবিএস। "ঘুরে আসুন চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল" (php web)। jagonews24। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ চৌধুরী ভাস্কর হোম (জুলাই ৮, ২০০৯)। "এক সর্পরাজ শাকিনীর কথা"। News Bangla। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (php web) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১০।
- ↑ ক খ গ "পর্যটন" (ওয়েব)। ওয়েব। মৌলভীবাজার: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০১০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি (আগস্ট ১৪, ২০০৯)। "ওরা ফিরে গেল নিজ গৃহে" (প্রিন্ট)। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ শেখর রায় (১৯২৭)। "সীতেশবাবুর সাদা বাঘ" (প্রিন্ট)। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা।
- ↑ রেডটাইমসবিডি ডট কমের প্রতিনিধি। "শ্রীমঙ্গলে বিশাল আকৃতির অজগর সাপ আটক" (php web)। RedTimesBD.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "[www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=171186 Rare species vulture rescued], The Daily Star, ঢাকা। পরিদর্শনের তারিখ: ১৯ মে ২০১১।
- ↑ শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি (মার্চ ১৫, ২০০৯)। "শ্রীমঙ্গলে ধরা পড়া হনুমানটি ক্যাপড় লাঙ্গুর নয়, ফ্যায়র্স লাঙ্গুর"। দৈনিক প্রথম আলো (প্রিন্ট) । ঢাকা। পৃষ্ঠা ৪।
- ↑ শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি (ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১০)। "অবশেষে অতিথি পাখিগুলো মুক্তি পেল" (প্রিন্ট)। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা।
- ↑ শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি (ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১০)। "লাউয়াছড়ায় ছয়টি প্রাণী মুক্ত করে অন্য রকম একুশ উদ্যাপন" (প্রিন্ট)। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "The One-Eyed Hunter and the Albino Fishing Cat ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ এপ্রিল ২০১১ তারিখে", Dan Morrison, David Braun, National Geographic Society; সেপ্টেম্বর ২২, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ।