ধনেশ

ধণেশ পাখির প্রজাতি

ধনেশ (ইংরেজি: Hornbill) শক্ত ও লম্বা বাঁকানো ঠোঁটওয়ালা পাখি হিসেবে পরিচিত। এটি বিউসেরোটিডি (Bucerotidae) গোত্র বা পরিবারভূক্ত পাখি। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকা, এশিয়া মহাদেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে অধিকাংশ ধনেশের প্রধান আবাস। নিচের দিকে বাঁকানো উজ্জ্বল বর্ণের বিশাল ঠোঁট ধনেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ঠোঁটের উপরে অধিকাংশ সময়ে প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। স্ত্রী ধনেশ গাছের কোটরে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে পুরুষ ধনেশের সহযোগিতা নিয়ে স্ত্রীজাতীয় ধনেশ ডিমে তা দেয় ও বাচ্চাকে বড় করে তোলে। ঐ সময়ে এটি বাসা থেকে বের হয় না। পুরুষ ধনেশ খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে আসে ও স্ত্রী পক্ষীর মুখে খাইয়ে দেয়। এরফলে সাপের ন্যায় বিভিন্ন খাদক প্রজাতির প্রাণী থেকে বাচ্চাকে নিরাপদে রাখে। বাচ্চা উড়তে না শেখা পর্যন্ত এটি সর্বদাই কাছাকাছি অবস্থান করে।[]

ধনেশ
রাজ ধনেশ
Buceros bicornis
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Coraciiformes (তবে নিবন্ধ দেখুন)
পরিবার: Bucerotidae
Rafinesque, 1815
Genera

14, see text

ধনেশ পক্ষীজগতে একমাত্র পাখি যার মেরুদণ্ডের অ্যাটলাস ও প্রথম দুইটি কশেরুকা একত্রে সংযুক্ত থাকে। সম্ভবত বিশাল ঠোঁটের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এ ব্যবস্থা।[] বেশ কিছু সংখ্যক ধনেশ প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে, এদের বিপদগ্রস্ত প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই দ্বীপবাসী প্রজাতি।

বৈশিষ্ট্যাবলী

সম্পাদনা

ধনেশের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হিসেবে রয়েছে এর লম্বা, নিম্নমূখী বাঁকানো ঠোঁট। এ ঠোঁট স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে থাকে। ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম - উভয় পর্যায়েই বিউসেরাস ব্যবহার করা হয় যা গ্রীক ভাষা থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ হচ্ছে গরুর শিং। এদের দুই স্তরবিশিষ্ট কিডনী বা বৃক্ক রয়েছে।

একমাত্র পাখি হিসেবে ধনেশের প্রথম দুইটি ঘাড়ের হাড় এক্সিসএটলাস একে-অপরের সাথে মিশে রয়েছে। এরফলে অনেক লম্বা ঠোঁটকে আরো স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে ও ধারণ করতে পেরেছে।[] পক্ষীগোত্রীয় এ পরিবারের পাখিগুলো সর্বভূক হিসেবে পরিচিত। ফলমূল খাওয়া থেকে শুরু করে ছোট ছোট প্রাণীও এদের প্রধান খাবার। এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে ভালবাসে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গাছের গর্ত এবং কখনোবা সমুদ্রমূখী পর্বতের গর্তে এরা বাসা বাঁধে। অনেক প্রজাতির ধনেশ বিলুপ্তবিপদগ্রস্ত অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। ফলে স্বল্পসংখ্যক ধনেশ পাখিগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র গণ্ডীতে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে।

ধনেশের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতিভেদে এদের শারীরিক কাঠামোও ভিন্নতর লক্ষ্য করা যায়। কাল বামুনাকৃতির ধনেশের (Tockus hartlaubi) ওজন মাত্র ১০২ গ্রাম (৩.৬ আউন্স) এবং লম্বায় ৩০ সে.মি. (১ ফুট)। আবার সাউদার্ন গ্রাউন্ড হর্নবিলের (Bucorvus leadbeateri) ওজন প্রায় ৬.২ কিলোগ্রাম (১৩.৬ পাউন্ড) এবং লম্বায় ১.২ মিটার (৪ ফুট) হতে পারে।[]

স্ত্রীজাতীয় ধনেশের তুলনায় পুরুষ ধনেশ সবসময়ই বড় হয়ে থাকে। প্রজাতি ও পরিবেশের ভিন্নতাজনিত কারণে এদের দেহের কাঠামো নির্ভর করে। বংশবিস্তার কার্যক্রমেও এদের শারীরিক পার্থক্যতা দেখা যায়। পুরুষ ও স্ত্রীজাতীয় ধনেশের শারীরিক পার্থক্য ১-১৭%। কিন্তু ঠোঁট ও পাখার দৈর্ঘ্যের ব্যবধান যথাক্রমে ৮-৩০% ও ১-২১%।

ধনেশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে তার শক্তিশালী ও ভারী ঠোঁট যা ঘাড়ের মাংসপেশীর সহায়তাসহ মেরুদণ্ডের সাথে সম্পর্কিত। এ ঠোঁট দিয়ে বিপদ মোকাবেলা করা, আহারের সংস্থান, বাসা তৈরীসহ শিকার কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।

প্রজাতির তালিকা

সম্পাদনা

শ্রেণী করণের সূত্র অনুযায়ী প্রজাতির তালিকা

সম্পাদনা
 
লালঠুঁটি ধনেশ
 
দেশি পুটিয়াল ধনেশ
 
পালাবান ধনেশ
 
হেলমেটওয়ালা ধনেশ
 
 
দক্ষিণী মেঠো ধনেশ

উপশ্রেণী বিউসেরোটিনি

Subfamily Bucorvinae

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ganeri, Anita (2000). Jungle Animals Over 100 Questions and Answers to Things You Want to Know. Dubai, U.A.E. আইএসবিএন ০-৭৫২৫-৪৯০৯-X.
  2. Kemp, Alan (১৯৯১)। Forshaw, Joseph, সম্পাদক। Encyclopaedia of Animals: Birds। London: Merehurst Press। পৃষ্ঠা 149–151। আইএসবিএন 1-85391-186-0 
  3. Kemp, A C (2001). "Family Bucocerotidae (Hornbills)". In Josep, del Hoyo; Andrew, Elliott; Sargatal, Jordi. Handbook of the Birds of the World. Volume 6, Mousebirds to Hornbills. Barcelona: Lynx Edicions. pp. 436–487. আইএসবিএন ৮৪-৮৭৩৩৪-৩০-X.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা