সাইটোপ্লাজম
সাইটোপ্লাজম কাকে বলে :- সাইটোপ্লাজম গ্রিক শব্দ Cytos = কোষ এবং Plasma = সংগঠন। নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত এবং কোষ ঝিল্পী দিয়ে পরিবেষ্টিত প্রোটোপ্লাজমীয় অংশই হলো সাইটোপ্লাজম।
অর্থাৎ প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াসকে বাদ দিলে যে স্বচ্ছ, ঘন ও তরল পদার্থ থাকে, তাকেই সাইটোপ্লাজম বলে।
এটি জেলির ন্যায় অর্ধতরল হওয়ায় এবং প্রাণের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন ধরনের অঙ্গাণু ও উপাদান ধারণ করায় একে বাংলাতে কোষের প্রাণপঙ্ক বলা হয়। সাইটোপ্লাজম হচ্ছে কোষের ভেতরে বেশির ভাগ অংশ জুড়ে অবস্থিত স্বচ্ছ, সমসত্ব, জেলি-সদৃশ বা জেলির মতো পদার্থ। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোষের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট সজীব বস্তুসমূহকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বলা হয় । সাইটোপ্লাজমের (৮০ শতাংশই) পানি এবং সাধারণত বর্ণহীন।[১]
১৮৬২ সালে "বিজ্ঞানী রুডলফ ভন" কলিকার সর্বপ্রথম সাইটোপ্লাজম শব্দটি ব্যবহার করেন।[২]
গুরুত্ব বিবেচনা করে সাইটোপ্লাজমকে দেহের রাসায়নিক কারখানাও বলা হয়ে থাকে।
কোষের অধিকাংশ কার্যাবলি সাইটোপ্লাজমেই সম্পাদিত হয়। সাইটোপ্লাজমে ক্যালসিয়াম আয়নের আসা-যাওয়া বিপাক ক্রিয়ার সংকেত হিসেবে সংঘটিত হয়। উদ্ভিদকোষে কোষগহবর ঘিরে সাইটোপ্লাজমের নড়াচড়াকে সাইটোপ্লাজমিক স্ট্রীমিং বলে। সাইটোপ্লাজম এর কাজ : 1. বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিক্রিয়া বা বিপাক সাইটোপ্লাজমে ঘটে। 2. কোষের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে। 3. বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানুর কাজে সমন্বয় সাধন ঘটায়। 4. প্রোটোজোয়ার ( যেমন – অ্যামিবা) গমনে সাহায্য করে।
গঠন
সম্পাদনাসাইটোপ্লাজমে প্রধানত কোষ মাতৃকা বা সাইটোপ্লাজমিক ম্যাট্রিক্স, কোষীয় অঙ্গাণু এবং কোষীয় জড়বস্তু উপলব্ধ্য।
কোষ মাতৃকাঃ কোষের ৭০শতাংশই হচ্ছে কোষ মাতৃকা বা সাইটোপ্লাজমিক ম্যাট্রিক্স। একে সাইটোসলও বলে। সাইটোপ্লাজমের সকল অঙ্গাণু সরিয়ে নিলে যে জেলির মতো থকথকে তরল পাওয়া যায়, তাই হল সাইটোসল। এটি সাধারনতঃ ইন্ট্রা সেলুলার ফ্লুইড অর্থাৎ দুটি কোষের অন্তরবর্তী জলীয় পদার্থ। এরা ঝিল্লী পর্দার দ্বারা পৃথক অবস্থায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ মাইটোকন্ড্রিয়াল ম্যাট্রিক্সকে মাইটোকন্ড্রিয়ন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছে। এতে কোষকঙ্কাল তন্তু,বিভিন্ন ধরনের দ্রাব্য প্রোটিন থাকে। প্রোক্যারিওটিক কোষের সাইটোসল কোষের জিনোম বহন করে এবং এই গঠনযুক্ত অংশকে নিউক্লিওড বলে। এগুলি হল ডিএনএ এর অংশ এবং এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রোটিন, যারা ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজম এবং প্লাস্মিডের ট্রান্সক্রিপশন এবং রেপলিকেশন নিয়ন্ত্রণ করে। ইউক্যারিওটিকদের ক্ষেত্রে কোষ নিউক্লিয়াসের ভেতরে জিনোমের বিভিন্ন প্রক্রিয়া ঘটে এবং কোষ নিউক্লিয়াস থেকে সাইটোসলকে পৃথক করছে নিউক্লিয়ার পোরগুলি যারা ১০ ন্যন্নোমিটার আকারের বড় মলিকিউলের মুক্ত ব্যাপন প্রক্রিয়াতে বাধার সৃষ্টি করে।[৩]
কোষীয় অঙ্গানুঃ সাইটোপ্লাজমে উপস্থিত ঝিল্লীবদ্ধ অঙ্গানুসমূহকে কোষীয় অঙ্গাণুও বলা হয়। এই অঙ্গাণু তালিকায় আছে - ১.প্লাস্টিড ২.মাইটোকন্ড্রিয়া ৩.গলজি বডি ৪.এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ৫.রাইবোজোম ৬.লাইসোজোম ও ৭.সেন্ট্রিওল।
কোষীয় জড়বস্তুঃ সাইটোপ্লাজমের কোষীয় জড়বস্তু প্রকৃতপক্ষে সঞ্চিত খাদ্য এবং ক্ষরিত পদার্থ। স্টার্চ,[৪] গ্লাইকোজেন,[৫] পলিহাইড্রক্সিবিউটাইরেট[৬] সমৃদ্ধ শক্তি বহনকারী পদার্থ এতে উপস্থিত থাকে। এছাড়াও এককোষী ও বহুকোষী উভয় ধরনেরই কোষীয় জড়বস্তু হিসেবে লিপিড সমৃদ্ধ ফ্যাটি এসিড ও স্টেরল পর্যবেক্ষণ করা যায়।উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref>
ট্যাগের ক্ষেত্রে </ref>
ট্যাগ যোগ করা হয়নি এই ক্যালসিয়াম আয়নের চলাচল সাইটোপ্লাজমের উপর নির্ভরশীল।[৭] এছাড়া, বস্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, সাইটোপ্লাজম কোষের সোল-জেল হিসেবে আচরণ করে। [৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Shepherd, V. A. (২০০৬-০১-০১)। "The cytomatrix as a cooperative system of macromolecular and water networks"। Current Topics in Developmental Biology। Current Topics in Developmental Biology। 75: 171–223। আইএসবিএন 9780121531751। ডিওআই:10.1016/S0070-2153(06)75006-2। পিএমআইডি 16984813।
- ↑ Bynum, Bill; Bynum, Helen (2016-02)। "The matula"। The Lancet। 387 (10019): 638। আইএসএসএন 0140-6736। ডিওআই:10.1016/s0140-6736(16)00289-0। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Peters R (২০০৬)। "Introduction to nucleocytoplasmic transport: molecules and mechanisms"। Methods Mol. Biol.। Methods in Molecular Biology™। 322: 235–58। আইএসবিএন 978-1-58829-362-6। ডিওআই:10.1007/978-1-59745-000-3_17। পিএমআইডি 16739728।
- ↑ Ball, Steven G.; Morell, Matthew K. (জুন ২০০৬)। "FROMBACTERIALGLYCOGEN TOSTARCH: Understanding the Biogenesis of the Plant Starch Granule"। Annual Review of Plant Biology (ইংরেজি ভাষায়)। 54 (1): 207–233। আইএসএসএন 1543-5008। ডিওআই:10.1146/annurev.arplant.54.031902.134927। ৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Shearer, Jane; Graham, Terry E. (এপ্রিল ২০০২)। "New perspectives on the storage and organization of muscle glycogen"। Canadian Journal of Applied Physiology = Revue Canadienne De Physiologie Appliquee। 27 (2): 179–203। আইএসএসএন 1066-7814। পিএমআইডি 12179957।
- ↑ Anderson, A J; Dawes, E A (ডিসেম্বর ১৯৯০)। "Occurrence, metabolism, metabolic role, and industrial uses of bacterial polyhydroxyalkanoates."। Microbiological Reviews। 54 (4): 450–472। আইএসএসএন 0146-0749। পিএমআইডি 2087222।
- ↑ Parry, Bradley R.; Surovtsev, Ivan V.; Cabeen, Matthew T.; O’Hern, Corey S.; Dufresne, Eric R.; Jacobs-Wagner, Christine (২০১৪-০১-১৬)। "The bacterial cytoplasm has glass-like properties and is fluidized by metabolic activity"। Cell। 156 (0): 183–194। আইএসএসএন 0092-8674। ডিওআই:10.1016/j.cell.2013.11.028। পিএমআইডি 24361104। পিএমসি 3956598 ।
- ↑ Taylor, C. V. (এপ্রিল ১৯২৩)। "The contractile vacuole in Euplotes: An example of the sol-gel reversibility of cytoplasm"। Journal of Experimental Zoology (ইংরেজি ভাষায়)। 37 (3): 259–289। আইএসএসএন 0022-104X। ডিওআই:10.1002/jez.1400370302।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Luby-Phelps K (২০০০)। "Cytoarchitecture and physical properties of cytoplasm: volume, viscosity, diffusion, intracellular surface area" (পিডিএফ)। Int Rev Cytol। International Review of Cytology। 192: 189–221। আইএসবিএন 9780123645968। ডিওআই:10.1016/S0074-7696(08)60527-6। পিএমআইডি 10553280। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১৬।