শ্রীশচন্দ্র ঘোষ
শ্রীশচন্দ্র ঘোষ (১৮৮৭ - ২ মে, ১৯৪১) একজন বাঙালী সশস্ত্র বিপ্লববাদী। জন্ম বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে, তার পিতার নাম বিরাজকৃষ্ণ ঘোষ।
বাঙালী সশস্ত্র বিপ্লববাদী শ্রীশচন্দ্র ঘোষ | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮৭ জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে বর্ধমান |
মৃত্যু | ২ মে ১৯৪১ |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | বাঙালি বিপ্লবী |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন |
ছাত্র রাজনীতি
সম্পাদনাকাকা বামাচরনের কাছে হুগলী জেলার চন্দননগরে থেকে পড়াশোনা করতেন শ্রীশচন্দ্র ঘোষ। ডুপ্লে স্কুলে পড়াকালীন অধ্যক্ষ বিপ্লবী চারুচন্দ্র রায় এর সান্নিধ্য পান ও স্বদেশচেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যোগ দেন। ওই বছরই অর্থাভাবে কলেজের পড়া ছেড়ে হিতবাদী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
সশস্ত্র বিপ্লবে
সম্পাদনাহিতবাদী পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে তার সাথে বিপ্লবী সখারাম গনেশ দেউস্করের আলাপ হয়। চন্দননগরে তার প্রতিবেশী ও অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। তিনি পুলিশের নজর এড়িয়ে রাসবিহারীকে নিরাপত্তা দিয়েছেন বহুবার। অসংখ্য দু:সাহসিক কর্মের হোতা ছিলেন শ্রীশচন্দ্র। বিশ্বাসঘাতক নরেন গোঁসাই কে হত্যার জন্যে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে কানাইলাল দত্তর কাছে রিভলভার পৌঁছে দেওয়া, ডেনহ্যাম হত্যা চেষ্টা, চন্দননগরের অত্যাচারী মেয়র তার্দিভেলকে হত্যা চেষ্টা, রডা কোম্পানির লুন্ঠিত মাউজার পিস্তল ও কার্তুজ বিপ্লবীদের কাছে গোপনে পৌঁছে দেওয়া এবং রাসবিহারী বসু মতিলাল রায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে যোগাযোগ ও সংহতি রক্ষা করে সংগঠনকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য সেনানী ছিলেন বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র। ১৯১০ সাল থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত অরবিন্দ ঘোষ থেকে শুরু করে দীনেশচন্দ্র মজুমদার, বহু ফেরারি বিপ্লবীকে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন চন্দননগর শহরে। একাজে তার সহায়ক ছিলেন মতিলাল রায়। বহু চেষ্টা করেও ব্রিটিশ পুলিশ শ্রীশচন্দ্রকে ধরতে পারতনা। কারণ তিনি চন্দননগরে ফরাসী উপনিবেশের বাসিন্দা। ফরাসী সরকারের অনুমতি নিয়ে ইংরেজ পুলিশ তার বাড়ির সামনেই পুলিশ ফাঁড়ি বসিয়েছিল, গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে নির্দেশ ছিল চন্দননগর থেকে বেরোলেই যেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তবুও শ্রীশচন্দ্র বহুবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেনারস, লক্ষ্ণৌ, দিল্লী, সাহারানপুর, লাহোর গেছেন এবং নিরাপদে আস্তানায় ফিরে এসেছেন[১]।
গ্রেপ্তার
সম্পাদনা১৯১৫ সালে রাসবিহারীর বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যার্থ হয়, মৃত্যুদন্ড হয় বসন্ত বিশ্বাস সহ আরো তিনজনের। এই ঘটনার শ্রীশচন্দ্র ভেঙ্গে পড়েন। নিতান্ত পারিবারিক কাজে কাকার মেয়ে শরতকুমারীকে হাওড়া স্টেশনে পৌছে দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। বাস্তবে পলায়নের চেষ্টাও করেননি। পাঁচ বছর কারাবাসের পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধর শেষে রয়াল ক্লেমেন্সি ঘোষিত হলে মুক্তি পান[২]।
শেষ জীবন
সম্পাদনামতিলাল রায় নির্মিত প্রবর্তক সংঘের গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু মতিলাল বিপ্লবপন্থা পরিহার করেন ও পূর্ব সংগৃহীত অস্ত্রাদি নষ্ট করে ফেললে তিনি প্রবর্তক আশ্রম ত্যাগ করে ফটকগোড়ায় থাকতেন। সেখানে বনোয়ারী লাল সাহার বাড়িতে একটি কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। রাসবিহারী বসু জাপান থেকে বন্ধু শ্রীশচন্দ্রকে বহু চিঠি লেখেন বিভিন্ন নির্দেশ সহ কিন্তু ব্যার্থতার ফলে শেষ জীবনে এই বিপ্লবী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন[২]।
মৃত্যু
সম্পাদনাঅর্থাভাবে ও একাকী নির্বান্ধব অবস্থায় শ্রীশচন্দ্র ঘোষ ২ মে ১৯৪১ সালে আফিং সেবন করে আত্মহত্যা করেন। তার রচিত পুস্তিকার নাম 'শিক্ষাগুরু প্রসংগে'
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৫৩৯। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
- ↑ ক খ নারায়ন সান্যাল (১৯৭৯)। আমি রাসবিহারীকে দেখেছি। কলকাতা: করুনা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৭০।