বারাণসী

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের একটি শহর
(বেনারস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বারাণসী (হিন্দি: वाराणसी, প্রতিবর্ণীকৃত: ভ়ারাণাসী, হিন্দুস্তানি উচ্চারণ: [ʋaːˈraːɳəsi] (শুনুন)) হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বারাণসী জেলার একটি শহর। শহরটি স্থানীয়ভাবে বেনারস[] নামে এবং বাঙালিদের কাছে কাশী (Kāśī [ˈkaːʃi] (শুনুন)) নামে অধিক পরিচিত। শহরটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরের থেকে এই শহরের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার (২০০ মা)। হিন্দুধর্মজৈনধর্মের সাতটি পবিত্রতম শহরের ("সপ্তপুরী") একটি হল বারাণসী। শুধু তাই নয়, বৌদ্ধধর্মের বিকাশেও বারাণসী শহরের বিশেষ ভূমিকা ছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বারাণসীতে মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেন।[] বারাণসী ভারত তথা বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম।[]

বারাণসী
वाराणसी
وارانسی

কাশী
মহানগর
বারাণসী
বারাণসী
ডাকনাম: ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী
বারাণসী উত্তর প্রদেশ-এ অবস্থিত
বারাণসী
বারাণসী
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৬′৫৫″ উত্তর ৮২°৫৭′২৩″ পূর্ব / ২৫.২৮২° উত্তর ৮২.৯৫৬৩° পূর্ব / 25.282; 82.9563
দেশ ভারত
রাজ্যউত্তরপ্রদেশ
জেলাবারাণসী
সরকার
 • ধরনপৌরসংস্থা
 • শাসকবারাণসী পৌরসংস্থা
আয়তন
 • মহানগর১১২.১০ বর্গকিমি (৪৩.২৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা৮০.৭১ মিটার (২৬৪.৮০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১২)
 • মহানগর৩৬,৭৬,৮৪১
 • ক্রম৬৯তম
 • জনঘনত্ব২,৩৯৯/বর্গকিমি (৬,২১০/বর্গমাইল)
 • মহানগর[]১৫,৯৯,২৬০
 []
ভাষা
 • সরকারিহিন্দি, ইংরেজি, উর্দু
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন২২১ ০০১ থেকে ** (** আঞ্চলিক কোড)
টেলিফোন কোড০৫৪২
যানবাহন নিবন্ধনইউপি ৬৫
লিঙ্গানুপাত৯২৬ / ১০০০ (২০১১)
সাক্ষরতা৭৭.০৫ % (২০১১)
ওয়েবসাইটwww.nnvns.org

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে মুহাম্মাদ ঘুরি বারাণসীর অনেক মন্দির লুণ্ঠন ও ধ্বংস করেছিল। এই শহরের মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অষ্টাদশ শতাব্দীতে বর্তমান রূপ পেয়েছে।[]

কাশীর মহারাজা (ইনি "কাশী নরেশ" নামে পরিচিত) হলেন বারাণসীর প্রধান সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। বারাণসীর সব ধর্মীয় উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তিনি।[] গঙ্গানদীর সঙ্গে বারাণসীর সংস্কৃতির বিশেষ যোগ আছে। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে বারাণসী উত্তর ভারতের এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বারাণসীর ইতিহাস বিশ্বের অনেক প্রধান ধর্মসম্প্রদায়ের ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন। হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বারাণসী ঘরানার উৎপত্তি এই শহরে। এই শহরে অনেক বিশিষ্ট ভারতীয় দার্শনিক, কবি, লেখক ও সংগীতজ্ঞ বাস করেছেন। বারাণসীর কাছে সারনাথের গৌতম বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।[]

বারাণসী ভারতের আধ্যাত্মিক রাজধানী। তুলসীদাসের রামচরিতমানস সহ একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থ এই শহরে রচিত হয়েছিল। বারাণসীর সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরটিকে তার স্মরণে "তুলসীমানস মন্দির" বলা হয়। বারাণসীর কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার প্রাচীনতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি। বারাণসীকে "মন্দিরনগরী", "ভারতের পবিত্র নগরী", "ভারতের ধর্মীয় রাজধানী", "আলোকনগরী", "শিক্ষানগরী" ও "বিশ্বের প্রাচীনতম জীবন্ত নগরী"-ও বলা হয়।[]

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

"বারাণসী" নামটি[১০] সম্ভবত দুটি নদীর নাম থেকে এসেছে: বরুণা (বারাণসীতে এখনও প্রবহমান) ও অসি (অসি ঘাটের কাছে প্রবাহিত একটি ছোটো নদী) নদী। গঙ্গার উত্তর কূলে অবস্থিত বারাণসী শহরের সীমানা নির্দেশ করছে গঙ্গার এই দুটি উপনদী।[১১] অন্যমতে, বারাণসী নামটি বরুণা নদীর নাম থেকেই এসেছে। কারণ, কেউ কেউ বলেন প্রাচীন কালে এই নদীকেই বারাণসী নদী বলা হত।[১২] তবে দ্বিতীয় মতটি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। যুগে যুগে বারাণসী নানা নামে অভিহিত হয়েছে। যথা: "কাশী" (বৌদ্ধযুগের তীর্থযাত্রীরা বারাণসীকে এই নামে অভিহিত করতেন, এখনও করেন), "কাশিকা" (উজ্জ্বল), "অবিমুক্ত" (শিব যে স্থান "কখনও ছাড়েন না"), "আনন্দবন" ও "রূদ্রবাস" (রূদ্রের নিবাস)।[১৩]

ঋগ্বেদ-এ এই শহরকে "কাশী" নামে অভিহিত করা হয়েছে। উক্ত গ্রন্থে কাশীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে। [১৪] কাশী নামটির উল্লেখ স্কন্দ পুরাণ-এও পাওয়া যায়। উক্ত পুরাণের একটি শ্লোকে শিবের উক্তি রয়েছে, "তিন ভুবন আমার কাছে একটি মাত্র শহর, আর কাশী হল সেই শহরে আমার রাজপ্রাসাদ।"[১৫]

ইতিহাস

সম্পাদনা

কিংবদন্তি অনুসারে, শিব এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১৬] হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এর নায়ক পাণ্ডব ভ্রাতারা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভ্রাতৃহত্যা ও ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ থেকে উদ্ধার পেতে শিবের খোঁজ করতে করতে এই শহরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।[১৭] হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, যে সাতটি শহর মোক্ষ প্রদান করতে পারে, সেগুলির একটি হল বারাণসী:

অযোধ্যা, মথুরা, গয়া, কাশী, কাঞ্চী, অবন্তিকা ও দ্বারবতী - এই সাতটি শহরকে মোক্ষদাতা বলা হয়।

গরুড় পুরাণ, ১৬।১১৪[১৮]

বারাণসীতে যে সবচেয়ে পুরনো পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে অনুমিত হয় গাঙ্গেয় উপত্যকায় এই শহরে জনবসতি ও বৈদিক ধর্ম ও দর্শন শিক্ষাকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব একাদশ কিংবা দ্বাদশ শতাব্দীতে।[১৯] এই জন্য বারাণসীকে বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির একটি মনে করা হয়।[২০][২১] উক্ত পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ থেকে জানা যায় যে, বৈদিক ধর্মাবলম্বী আর্যরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।[২২] যদিও, প্রায় সমসাময়িককালে রচিত অথর্ববেদ থেকে জানা যায়, এই অঞ্চলে আগে স্থানীয় উপজাতির মানুষেরা বসবাস করত।[২২] তবে সেই জাতির বসতির প্রমাণ কোনো পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।[২২] খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে বিদ্যমান ২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর পার্শ্ব (ইনিই প্রথম ইতিহাস-স্বীকৃত তীর্থঙ্কর) বারাণসীর অধিবাসী ছিলেন।[২৩][২৪]

বারাণসী একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে। এই শহর মসলিন ও রেশমের বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের কাজ ও ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[২১] গৌতম বুদ্ধের (জন্ম ৫৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় বারাণসী ছিল কাশী রাজ্যের রাজধানী।[২১] ৫২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বারাণসীর কাছে সারনাথে বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেন। এই ঘটনা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস "ধর্মচক্রপ্রবর্তন" নামে পরিচিত। ৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনা পর্যটক ফা হিয়েন এই শহরে এসেছিলেন। তার রচনা থেকে এই শহরের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকাণ্ডের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন গঙ্গার পশ্চিম তীরে ৫ কিলোমিটার (৩.১ মা) দীর্ঘ অঞ্চলে বারাণসী অবস্থিত ছিল।[২১][২৫] খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং বারাণসীতে এসেছিলেন। তিনি এই শহরকে "পোলোনিসি" নামে উল্লেখ করেন এবং লেখেন এই শহরে ৩০টি মন্দির ছিল ও প্রায় ৩০ জন সন্ন্যাসী ছিলেন।[২৬] অষ্টম শতাব্দীতে বারাণসীর ধর্মীয় গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই সময় আদি শঙ্কর শিব উপাসকদের বারাণসীর প্রধান সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।[২৭]

 
সন্ত কবীর

মৌর্য যুগে তক্ষশীলা থেকে পাটলীপুত্র পর্যন্ত প্রসারিত একটি রাস্তা বারাণসীকে দুই শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। ১১৯৪ সালে তুর্কি মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবক বারাণসী জয় করেন। তিনি এই শহরের প্রায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন।[২৮][২৯] মুসলমান রাজত্বে এই শহরের সমৃদ্ধি নষ্ট হয়েছিল।[২৫] অবশ্য আফগান অনুপ্রবেশের পর ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কিছু নতুন মন্দির নির্মিত হয়েছিল।[২৭] ১৩৭৬ সালে ফিরোজ শাহ বারাণসী অঞ্চলের কিছু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন।[২৮] ১৪৯৬ সালে আফগান শাসন সিকন্দর লোদি এই অঞ্চলে হিন্দুদের প্রতি দমনপীড়ন নীতি বজায় রেখে অবশিষ্ট মন্দিরগুলির অধিকাংশই ধ্বংস করে দেন।[২৮] মুসলমান শাসনের অবদমনের পরেও মধ্যযুগে বারাণসী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তার খ্যাতি হারায়নি। এর ফলে ধর্ম ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ভক্তিবাদী আন্দোলনের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কবীর। তিনি ১৩৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কবীরকে "পঞ্চদশ শতাব্দীর ভারতের শ্রেষ্ঠ ভক্তিবাদী সন্ত কবি ও অতিন্দ্রীয়বাদী" বলা হয়।[৩০] বারাণসীর ভক্তি আন্দোলনের অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন রবিদাস। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীরই এক ভক্তিবাদী ধর্মসংস্কারক, অতিন্দ্রীয়বাদী, কবি, পর্যটক ও ধর্মগুরু। তিনি বারাণসীতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই শহরেরই এক চামড়ার কারখানায় তিনি কাজ করতেন।[৩১] ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার বহু বিশিষ্ট পণ্ডিত ও ধর্মপ্রচারক বারাণসীতে এসেছিলেন। ১৫০৭ সালের শিবরাত্রি উৎসবের সময় গুরু নানক এই শহরে আসেন। তার এই বারাণসী সফর শিখধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।[৩২]

 
এক ব্রাহ্মণ পূজা করছেন। লিথোগ্রাফ, জেমস প্রিন্সেপ, ১৮৩২।
 
বারাণসী, ১৮৮৩।

ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘম সম্রাট আকবরের সময়কাল ছিল বারাণসীর সাংস্কৃতিক নবজাগরণের যুগ। আকবর শহরটি সাজিয়ে তোলেন। তিনি এই শহরে শিব ও বিষ্ণুর দুটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন।[২৫][২৮] পুণের রাজা অন্নপূর্ণা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই যুগেই ২০০ মিটার (৬৬০ ফু) দীর্ঘ আকবরি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়।[৩৩] ষোড়শ শতাব্দী থেকে পর্যটকেরা আবার এই শহরে আসা শুরু করেন।[৩৪] ১৬৬৫ সালে ফরাসি পর্যটক জ্যঁ ব্যপ্তিস্ত তাভার্নিয়ার এই শহরের গঙ্গাতীরবর্তী বিন্দু মহাদেব মন্দিরের স্থাপত্য সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করেন। শের শাহের আমলে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত রাস্তা নির্মিত হলে এই অঞ্চলের পরিবহন পরিকাঠামোরও উন্নতি ঘটেছিল। উক্ত রাস্তাটিই ব্রিটিশ যুগে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত হয়। ১৬৫৬ সালে আওরঙ্গজেব আবার এই শহরের বেশ কিছু মন্দির ধ্বংস করার এবং মসজিদ স্থাপনের আদেশ দেন। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য আবার বারাণসীর সমৃদ্ধি নষ্ট হয়।[২৫] যদিও আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের শাসনভার হিন্দু ও হিন্দুদের প্রতি বন্ধুমনোভাবাপন্ন সামন্ত রাজাদের হাতে চলে যায়। আধুনিক বারাণসীর বেশিরভাগটাই রাজপুত ও মারাঠা রাজাদের হাতে তৈরি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলির বেশিরভাগই বর্তমান রূপ পায়।[৩৫] ব্রিটিশ যুগে (১৭৭৫-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) কাশীর রাজাই এখানকার মুখ্য শাসক হয়ে ওঠেন। ১৭৩৭ সালে মুঘল সম্রাট কাশী রাজ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশীর রাজবংশ বারাণসী শাসন করেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহম্মদ শাহ প্রচলিত পঞ্জিকার ভুলত্রুটি ধরার জন্য গঙ্গার তীরে একটি মানমন্দির তৈরির আদেশ দেন। এই মানমন্দিরটি বারাণসীর মানমন্দির ঘাটের পাশে অবস্থিত।[৩৪] অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবার বেশ কিছু পর্যটক এই শহরে আসেন।[৩৪] ১৭৯১ সালে ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও জোনাথান ডানকান এই শহরে একটি সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করেন। ১৮৬৭ সালে গঠিত হয় বারাণসী মিউনিসিপ্যাল বোর্ড।

১৮৯৭ সালে বিশিষ্ট ভারতপ্রেমিক সাহিত্যিক মার্ক টোয়েইন বারাণসী দেখে লেখেন, "বারাণসী ইতিহাসের চেয়েও পুরনো, ঐতিহ্যের চেয়েও পুরনো, এমনকি কিংবদন্তির চেয়েও পুরনো। সব কিছুকে একত্রিক করলে যা দাঁড়ায় তার চেয়ে দ্বিগুণ পুরনো।"[৩৬] ১৯১০ সালে ব্রিটিশরা বারাণসীকে একটি রাজ্যে পরিণত করে। রামনগর ছিল এই রাজ্যের সদর। তবে বারাণসী শহর এই শহরের এক্তিয়ারে ছিল না। বারাণসীর পূর্বদিকে গঙ্গাতীরে রামনগর দুর্গে কাশীর রাজা এখনও বাস করেন।[৩৭] রামনগর দুর্গ ও জাদুঘরে কাশীর রাজাদের ইতিহাস রক্ষিত আছে। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই কাশীর রাজা এখানে থাকেন। স্থানীয় মানুষেরা তাকে খুবই শ্রদ্ধা করে।[] তিনি এই অঞ্চলের ধর্মীয় প্রধান। বারাণসীর অধিবাসীরা তাকে শিবের অবতার মনে করে।[] তিনিই কাশীর সব ধর্মীয় উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।[]

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে ব্রিটিশ বাহিনী এখানে একদল বিদ্রোহী ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে।[৩৮] থিওসফির প্রচারে অ্যানি বেসান্ত এখানে এসেছিলেন। "সকল ধর্মের মানুষকে একই ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করতে এবং ভারতীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধের প্রচার ভারতবাসীর মন থেকে সকল কুপ্রথা দূর করতে"[৩৯] তিনি এখানে সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে এই কলেজটি কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ অক্টোবর কাশী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ভূগোল ও জলবায়ু

সম্পাদনা
 
বারাণসীর গঙ্গাতীর থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য
 
ভারতের মানচিত্রে বারাণসীর অবস্থান

উত্তর ভারতের মধ্য গাঙ্গেয় অববাহিকায় বারাণসী অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে গঙ্গার একটি অর্ধচন্দ্রাকার বাঁকের ধারে নদী থেকে গড় ৫০ ফুট (১৫ মি)-৭০ ফুট (২১ মি) উচ্চতায় এই শহরের অবস্থান।[৪০] বারাণসী জেলার সদর এই শহরটি। সড়কপথে বারাণসী নতুন দিল্লি থেকে ৭৯৭ কিলোমিটার (৪৯৫ মা) দক্ষিণ-পূর্বে, লখনউ থেকে ৩২০ কিলোমিটার (২০০ মা) দক্ষিণ-পূর্বে, এলাহাবাদ থেকে ১২১ কিলোমিটার (৭৫ মা) পূর্বে এবং জৌনপুর থেকে ৬৩ কিলোমিটার (৩৯ মা) পূর্বে অবস্থিত।[৪১] "বারাণসী মহানগরীয় অঞ্চল" নামক মহানগর এলাকাটি সাতটি শহরাঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের আয়তন ১১২.২৬ বর্গকিলোমিটার (প্রায় ৪৩ বর্গমাইল)।[৪২] ভৌগোলিক অবন্থান ২৫.৩৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৩.১৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।[৪১] এই শহরের অঞ্চলগুলি হল আদমপুর, কোতোয়ালি, জৈতপুরা, ধুপচাঁদি, চাকুলাঘাট, কালীগড়, গুরু নানক নগর, চৈতগঞ্জ, নাইপোখারি, সিগরা, মৌলভিবাগ, সিদ্ধগিরিবাগ, বুলানালা, চক, বাঙালিটোলা, লুক্সা, খান্না, গোপালবিহার, গিরিনগর, মাহমুরগঞ্জ, মহেশপুর, ভেলপুরা, শিবালা, আনন্দবাগ, নাগওয়ার, দুমরাওন, গান্ধীনগর, গৌতমনগর ও লঙ্কা মন্দুয়াদি।[৪১]

উত্তর ভারতের সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত বারাণসীর জমি খুবই উর্বর। গঙ্গায় প্লাবন এই উর্বরতা সব সময় বজায় রাখতে সাহায্য করে।[৪৩] বারাণসী গঙ্গা, বরুণা ও অসি নদীর তীরে অবস্থিত। যদিও অসি খুবই ছোটো একটি নদী। বরুণা ও অসির দূরত্ব ২.৫ মাইল (৪.০ কিমি)। হিন্দুরা এই দূরত্ব পরিক্রমাকে বলেন "পঞ্চক্রোশী যাত্রা"। এই পরিক্রমা হিন্দুদের দৃষ্টিতে পুণ্যার্জনের উপায়। উক্ত যাত্রাটি শেষ হয় সাক্ষীবিনায়ক মন্দিরে।

জলবায়ু

সম্পাদনা

বারাণসীর জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির হওয়ার দরুন শীত ও গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্য লক্ষিত হয়।[৪৪][৪৫] শুষ্ক গ্রীষ্মকাল শুরু হয় এপ্রিল মাসে, চলে জুন মাস পর্যন্ত। জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে ২২ এবং ৪৬ °সে (৭২ এবং ১১৫ °ফা)। শীতকালে বারাণসীতে দিন উষ্ণতর থাকে, রাতে প্রচণ্ড শীত পড়ে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে হিমালয় থেকে আগত শৈত্য প্রবাহ তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে দেয়। ৫ °সে (৪১ °ফা)তে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার ঘটনাও বারাণসীতে ঘটেছে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের হার ১,১১০ মিমি (৪৪ ইঞ্চি)। শীতকালে কুয়াশা থাকে। গ্রীষ্মকালে গরম লু হাওয়া বয়।[৪৬] সাম্প্রতিককালে বারাণসীতে গঙ্গার জলস্তরও উল্লেখযোগ্য হারে নেমে গিয়েছে। এর কারণ উজানে বাঁধ নির্মাণ, অনিয়ন্ত্রিত জলসেচ ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব।[৪৭]

বারাণসী-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১৯
(৬৭)
২৪
(৭৬)
৩১
(৮৭)
৩৭
(৯৮)
৩৮
(১০০)
৩৬
(৯৭)
৩২
(৯০)
৩১
(৮৮)
৩১
(৮৮)
৩১
(৮৭)
২৭
(৮১)
২২
(৭১)
৩০
(৮৬)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)
(৪৭)
১২
(৫৪)
১৭
(৬২)
২২
(৭২)
২৫
(৭৭)
২৭
(৮০)
২৬
(৭৮)
২৬
(৭৮)
২৪
(৭৬)
২১
(৭০)
১৫
(৫৯)
১১
(৫১)
২০
(৬৭)
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) ১৯.৩
(০.৭৬)
১৩.৫
(০.৫৩)
১০.৪
(০.৪১)
৫.৪
(০.২১)
৯.০
(০.৩৫)
১০০.০
(৩.৯৪)
৩২০.৬
(১২.৬২)
২৬০.৪
(১০.২৫)
২৩১.৬
(৯.১২)
৩৮.৩
(১.৫১)
১২.৯
(০.৫১)
৪.০
(০.১৬)
১,০২৫.৪
(৪০.৩৭)
উৎস: [৪৮][৪৯]

প্রশাসন

সম্পাদনা

রাজনীতি ও আইনব্যবস্থা

সম্পাদনা

বারাণসীর শাসনভার একাধিক সরকারি সংস্থার হাতে ন্যস্ত। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটি হল বারাণসী পৌরসংস্থা ও বারাণসী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই দুই কর্তৃপক্ষই শহরের সকল প্রকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে।

চিকিৎসা পরিষেবা

সম্পাদনা

সংস্কৃত চিকিৎসাবিজ্ঞান-সংক্রান্ত গ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতা-এর রচয়িতা তথা প্রাচীন ভারতের বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক সুশ্রুত বারাণসীতে বাস করতেন। বারাণসী আয়ুর্বেদ ও পঞ্চকর্ম চিকিৎসার একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র ছিল।[৫০] বারাণসীতে অনেক হাসপাতাল আছে: বারাণসী হসপিটার অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার, হেরিটেজ হসপিটাল, শিবপ্রসাদ গুপ্তা হসপিটাল, স্যার সুন্দরলাল হসপিটাল, রাজকীয় হসপিটাল, মাতা আনন্দময়ী হসপিটাল, রামকৃষ্ণ মিশন হসপিটাল, মারোয়ারি হসপিটাল ও ক্যান্সার ইনস্টিটিউট।[৫১] ১৯৬৪ সালে ড. বাজিনাথ প্রসাদ স্থাপিত বারাণসী হসপিটাল এই শহরের সবচেয়ে বড়ো হাসপাতাল।[৫২] ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, এই হাসপাতালে মোট ৬৬টি বেড আছে। বারাণসী ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অনেক মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করে থাকে।[৫২] এই হাসপাতালের অর্থসংকট থাকলেও এখানে এক্সরে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানোর সুবিধা আছে এবং একটি প্যাথোলজি ল্যাবও আছে।[৫২] বারাণসী জেলার শহরাঞ্চলে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জনে ৭০ জন (২০১০-১১ সালের হিসেব)।[৫৩]

সাধারণ পরিষেবা

সম্পাদনা

উচ্চ জনঘনত্ব ও পর্যটকদের সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে রাজ্য সরকার ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলি বারাণসীতে দূষণ ও পরিকাঠামোর উপর অত্যধিক চাপ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। মূলত নিকাশিব্যবস্থা, শৌচালয় ও নালাগুলির দুরবস্থা এই দুশ্চিন্তার কারণ।[৫৪] ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে ৪৩০.৫ মিলিয়ন টাকা খরচ করে ঘাটগুলি বরাবর পাঁচটি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়। সেই সঙ্গে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।[৫৪] গঙ্গায় অনিয়ন্ত্রিত স্নান ও নৌপরিবহন এখানকার নিকাশি ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে।[৫৪] বারাণসীর জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থা পরিচালনা করে পৌরসংস্থার অধীনস্থ জল নিগম। উত্তরপ্রদেশ বিদ্যুৎ নিগম বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বারাণসী প্রতিদিন ৩৫০ মিলিয়ন লিটার[৫৫] তরল বর্জ্য ও ৪২৫ লিটার কঠিন বর্জ্য নিষ্কাষণ করে।[৫৬] কঠিন বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়।[৫৭]

জনপরিসংখ্যান

সম্পাদনা
বারাণসীর ধর্মবিশ্বাস
ধর্ম শতাংশ
হিন্দু
  
৮২%
মুসলিম
  
১৬%
খ্রিস্টান
  
০.২%
জৈন
  
১.৪%
অন্যান্য†
  
০.৪%
ধর্মমত
I শিখ (০.২%), বৌদ্ধ (<০.২%).

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বারাণসীর মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ১,৪৩৫,১১৩। এর মধ্যে ৭৬১,০৬০ জন পুরুষ ও ৬৭৪,০৫৩ জন নারী।[৫৮]

২০০১ সালে বারাণসী নগরাঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ১,৩৭১,৭৪৯। লিঙ্গানুপাত ছিল প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৭৯ জন নারী।[৫৯] যদিও বারাণসী পৌরসংস্থা এলাকার জনসংখ্যা ১,১০০,৭৪৮।[৬০] এই অঞ্চলের লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৮৩ জন নারী।[৬০] মহানগর অঞ্চলে সাক্ষরতার হার ৭৭% এবং পৌরসংস্থা এলাকায় ৭৮%।[৬০] পৌরসংস্থা এলাকায় প্রায় ১৩৮,০০০ জন বস্তিতে বাস করে।[৬১]

বারাণসী পৌর কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকার ভাষা, ২০১১ সালের জনগণনা।[৬২]

  হিন্দি (৮৩.৮৭%)
  উর্দু (৯.০৩%)
  ভোজপুরি (৪.৮১%)
  বাংলা (০.৯২%)
  অন্যান্য (১.৩৭%)

ভারতের ২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বারানসী পৌর কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের মোট জনসংখ্যার ৮৩.৮৭% হিন্দি, ৯.০৩% উর্দু, ৪.৮১% ভোজপুরি ও ০.৯২% বাংলাকে তাদের প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা হিসাবে কথা বলে।

অর্থনীতি

সম্পাদনা
 
বেনারসি শাড়ি

বারাণসীর জনসংখ্যার প্রায় ২৯% কাজে নিযুক্ত।[৬৩] এদের মধ্যে ৪০% কারখানায় কাজ করে, ২৬% ব্যবসাবাণিজ্যের কাজে নিযুক্ত, ১৯% অন্যান্য কাজে নিযুক্ত, ৮% কাজ করে পরিবহন ক্ষেত্রে, ৪% কাজ করে কৃষি ক্ষেত্রে, ২% কাজ করে নির্মাণ শিল্পে এবং ২% মানুষ মরসুমি শ্রমিক (বছরের অর্ধেকের কম সময় কাজে নিযুক্ত থাকে)।[৬৪]

কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৫১% কাজ করে বস্ত্রশিল্পে, ১৫% কাজ করে ধাতুশিল্পে, ৬% কাজ করে মুদ্রণশিল্পে, ৫% কাজ করে বিদ্যুৎ যন্ত্রশিল্পে, বাকিরা অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পে কাজ করে।[৬৫] বারাণসীর শিল্পক্ষেত্রটি বিশেষ উন্নত নয়। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পই এখানকার প্রধান শিল্প।[৬৩]

বারাণসী একটি উল্লেখযোগ্য রেশম বস্ত্রশিল্প কেন্দ্র।[৬৬] এই শিল্প কুটির শিল্প। শিল্পীরা অধিকাংশ মোমিন আনসারি সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমান।[৬৭] সারা ভারতে বারাণসীর পরিচিতি এই অঞ্চলের সূক্ষ রেশমের বেনারসি শাড়ির জন্য। এই শাড়ির ব্রোকেডে সোনা ও রুপোর সুতোর কাজ থাকে। হিন্দুদের বিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এই শাড়ি ব্যবহৃত হয়। রেশম উৎপাদন করে শিশুশ্রমিকেরা। তবে তাদের মজুরি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কম।[৬৮] যান্ত্রিক তাঁত, কম্পিউটার-কেন্দ্রিক নকশা ও চীনা রেশম ব্যবসায়ীরা এখন এখানকার রেশম শিল্পের কাছে বিশেষ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।[৬৩]

ধাতুশিল্পের ক্ষেত্রে ডিজেল ইঞ্জিন শিল্পই প্রধান।[৬৫] ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড একটি বড়ো বিদ্যুৎ যন্ত্রাংশ উৎপাদন কারখানা। এরা একটি ভারি যন্ত্রাংশ মেরামতির কারখানাও চালায়।[৬৯] এছাড়া বারাণসীতে উৎপাদিত হয় হাতে বোনা মির্জাপুরি কার্পেট, মাদুর, ধুরি, পিতলের বাসন, তামার বাসন, কাঠ ও মাটির খেলনা, সোনার গয়না ও বাদ্যযন্ত্র।[৬৬] পান, ল্যাংড়া আম ও খোয়া অন্যতম কৃষিজ সামগ্রী।[৬৫][৭০]

পর্যটন

সম্পাদনা
 
ডিজেল ইঞ্জিন।
 
পর্যটকেরা বারাণসীতে গয়না কিনছেন।

পর্যটন বারাণসীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প।[৭১] ২০০৫-২০১০ সালের হিসেব অনুসারে, দেশের প্রায় ৩ লক্ষ ও বিদেশের ২০০,০০০ পর্যটক প্রতি বছর বারাণসীতে আসেন। এঁরা আসেন মূলত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।[৭২][৭১] দেশের পর্যটকেরা আসেন মূলত বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশ থেকে। বিদেশি পর্যটকেরা মূলত আসেন শ্রীলঙ্কা ও জাপান থেকে।[৭৩] প্রধানত অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই পর্যটকরা বেশি আসেন।[৭৩] শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য ১২,০০০ বিছানার ব্যবস্থা আছে। এর অর্ধেক পাওয়া যায় সুলভ মূল্যের হোটেলে এবং এক-তৃতীয়াংশ পাওয়া যায় ধর্মশালাগুলিতে।[৭৪] মোটের উপর, বারাণসীতে পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামোও খুব উন্নত নয়।[৭৪]

বারাণসীর উল্লেখযোগ্য শপিং মল ও মাল্টিপ্লেক্সগুলি হল আইপি মল (সিগরা), আইপি বিজয়া মল (ভেলুপুর), পিডিআর (লুক্সা), জেএইচভি মল (বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট)। এই শহরে বেশ কিছু ব্যাংকের শাখা আছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ওভাসসিজ ব্যাংক, ব্যাংক অফ বরোদা, কানাড়া ব্যাংক, অন্ধ্র ব্যাংক, এলাহাবাদ ব্যাংকসেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া[৭৫]

প্রধান দ্রষ্টব্য স্থল

সম্পাদনা
 
রামনগর দুর্গ

বারাণসীর ‘প্রাচীন নগরী’ এলাকাটি গঙ্গাতীরবর্তী অংশে অবস্থিত। এই অঞ্চলে অনেক সরু গলি দেখা যায়। পথের দুপাশে দোকান ও অনেক হিন্দু মন্দিরও চোখে পড়ে। এই অঞ্চলটি বেশ জনবহুল। পুরনো শহরের সংস্কৃতি বেশ সমৃদ্ধ। অনেক পর্যটক পুরনো অঞ্চলটি দেখতেই বারাণসীতে আসেন। বারাণসীর উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাসস্থান গঙ্গার ঘাটগুলির থেকে বেশ দূরে। সেই অঞ্চলটি কম জনবহুল ও বেশ খোলামেলা।

আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বারাণসীর ১৯টি স্থাপনাকে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনা বলে চিহ্নিত করেছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে সারনাথ, লাল খানের সমাধি, ধারাহরা মসজিদ, মানসিংহের মানমন্দির, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ইত্যাদি।[৭৬] বারাণসীর আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘরগুলি হল যন্তরমন্তর, সারনাথ সংগ্রহালয়, ভারত কলা ভবনরামনগর দূর্গ

যন্তরমন্তর

সম্পাদনা

যন্তরমন্তর মানমন্দিরটি (১৭৩৭) গঙ্গার দশাশ্বমেধ ঘাটের কাছে জয়পুরের প্রথম জয়সিংহের রাজপ্রাসাদের পাশে গঙ্গার জলতল থেকে অনেকখানি উপরে অবস্থিত। জয়পুর বা দিল্লির মানমন্দিরগুলির তুলনায় এখানে যন্ত্রপাতির সংখ্যা কম। তবে এখানে একটি দুষ্প্রাপ্য বিষুবীয় সূর্যঘড়ি আছে। এটি এখনও কাজ করে।[৭৭]

রামনগর দুর্গ

সম্পাদনা

তুলসী ঘাটের বিপরীতে গঙ্গার পূর্ব কুলে রামনগর দুর্গ অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাশীর রাজা এই দুর্গটি নির্মাণ করান। দুর্গটি “চুনার” বেলেপাথরের তৈরি। রামনগর দুর্গ মুঘল স্থাপত্যের একটি নিদর্শন। এই দুর্গের বৈশিষ্ট্য এর অর্ধচন্দ্রাকার বারান্দা, খোলা উঠোন ও সুন্দর প্যাভিলিয়নগুলি। দুর্গটির বর্তমান অবস্থা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খুব ভাল নয়। দুর্গ ও এর জাদুঘরটি থেকে কাশীর রাজাদের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই দুর্গ কাশীর রাজার বাসভবনও বটে। ১৯৭১ সালে ভারতে আইনবলে রাজকীয় উপাধিগুলি অবলুপ্ত করা হলেও, কাশীর রাজারা এখনও “কাশী নরেশ” নামেই পরিচিত।[৭৮][৭৯] রামনগর দুর্গের জাদুঘরটিকে বলা হয় “অদ্ভুত জাদুঘর”। এখানে পুরনো মডেলের আমেরিকান গাড়ি, সেডান চেয়ার, একটি সমৃদ্ধ অস্ত্রাগার ও একটি দুষ্প্রাপ্য অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল ক্লক আছে।[৭৯] দুর্গের সরস্বতী ভবনে বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি রক্ষিত আছে। এগুলির মধ্যে অনেক ধর্মগ্রন্থের পাণ্ডুলিপিও আছে। তুলসীদাসের স্বহস্তে লেখা পাণ্ডুলিপি এখানে রাখা আছে। অনেক বইতে মুঘল শৈলীর অলংকরণ দেখা যায়। সংগ্রহের অংশ হিসেবে অনেক সু-অলংকৃত প্রচ্ছদও এখানে রাখা হয়েছে। দুর্গ থেকে গঙ্গার সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় বলে, এখানে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং-ও হয়ে থাকে। বনারস সহ অনেক জনপ্রিয় ছবির শ্যুটিং এখানে হয়েছিল। তবে দুর্গের একটি অংশবিশেষই জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে। বাকি এলাকাটি কাশীর রাজা ও তার পরিবার বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। রামনগর দুর্গ বারাণসী থেকে ১৪ কিলোমিটার (৯ মাইল) দূরে অবস্থিত।[৭৮][৭৯]

বারাণসীতে গঙ্গার ঘাটের দৃশ্য
 
দশাশ্বমেধ ঘাট

বারাণসীর গঙ্গার ঘাটগুলি হিন্দুদের ধর্মীয় জীবন ও ধর্মচর্চার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। প্রতিটি ঘাটকেই পবিত্র মনে করা হয়।[৮০] বারাণসীতে প্রায় ৮৪টি ঘাট আছে।[৮১][৮২][৮৩] এই ঘাটগুলির মধ্যে দশাশ্বমেধ ঘাট, মনিকর্ণিকা ঘাট, পঞ্চাঙ্গ ঘাট ও হরিশ্চন্দ্র ঘাট (শ্মশান) বিখ্যাত। অনেক ঘাটের সঙ্গেই নানা কিংবদন্তি কাহিনি জড়িয়ে আছে। কয়েকটি ঘাট আবার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন।[৮৪] বারাণসীর অনেক ঘাটই মারাঠা শাসনে নির্মিত হয়েছিল। মারাঠা, সিন্ধে (সিন্ধিয়া), হোলকার, ভোঁসলে ও পেশোয়ারা ছিলেন আধুনিক বারাণসীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বারাণসীর অধিকাংশ ঘাটই স্নানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি ঘাট হল শ্মশানঘাট। সকালে ঘাটগুলির গা ঘেঁষে নৌকাবিহার পর্যটকদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়। গঙ্গার তীর ঘেঁষের ঘাটগুলির প্রসারের ফলে নদীতীরের ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এই সব ঘাটের গা ঘেঁষে অনেক মন্দির ও প্রাসাদ গড়ে উঠেছে।[২১]

দশাশ্বমেধ ঘাট বারাণসীর প্রধান ঘাট। এটিই সম্ভবত বারাণসীর প্রাচীনতম ঘাট। এই ঘাটটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে অবস্থিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, ব্রহ্মা শিবকে স্বাগত জানাবার জন্য এই ঘাট তৈরি করেছিলেন এবং এখানে দশটি অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এই ঘাটের কাছেই শূলটঙ্কেশ্বর, ব্রহ্মেশ্বর, বরাহেশ্বর, অভয়বিনায়ক, গঙ্গা ও বন্দিদেবীর মন্দির রয়েছে। এখানে প্রচুর তীর্থযাত্রী ভিড় জমান। দশাশ্বমেধ ঘাটে কোনো কোনো তীর্থযাত্রী সন্ধায় শিব, গঙ্গা, সূর্য, অগ্নি ও সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের উদ্দেশ্যে অগ্নিপূজার আয়োজন করেন। প্রতি মঙ্গলবার ও বিশেষ ধর্মীয় উৎসবে এই ঘাটে বিশেষ আরতির ব্যবস্থা করা হয়।[৮২]

বারাণসীর দৃশ্য

মনিকর্ণিকা ঘাট একটি মহাশ্মশান। এটিই শহরের প্রধান হিন্দু শ্মশান। এই ঘাটের পাশে উঁচু বেদিতে শ্রাদ্ধকার্য সম্পন্ন হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ঘাটে শিব বা তার পত্নী সতীর কানের দুল (মনিকর্ণিকা) পতিত হয়েছিল। পুরাণে এই ঘাটটির সঙ্গে তারকেশ্বর মন্দিরের যোগের কতাহ বলা হয়েছে। তারকেশ্বর মন্দিরটি এই ঘাটেই অবস্থিত। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই ঘাটে যাঁকে দাহ করা হয়, তার কানে শিব নিজে তারকব্রহ্ম মন্ত্র প্রদান করেন। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে গুপ্ত যুগের এই লেখে এই ঘাটের উল্লেখ আছে। যদিও নদীর ধার ঘেঁষে ঘাটের বর্তমান কাঠামোটি তৈরি হয়েছিল ১৩০২ সালে। এটি মোট তিন বার সংস্কার করা হয়েছে।[৮২]

মন্দির

সম্পাদনা

বারাণসীতে প্রায় ২৩,০০০ মন্দির আছে।[১৭] এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দির হল কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দির ও দুর্গামন্দির। শেষোক্ত মন্দিরটি নিকটবর্তী গাছের বাঁদরগুলির জন্য বিখ্যাত।[৮৫][৮৬][৮৭]

 
বারাণসীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির গঙ্গার তীরে অবস্থিত। এটি কাশীর প্রধান দেবতা শিবের মন্দির। মন্দিরটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম।[৮৬] হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, অন্য এগারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনে যে ফল, সেই সম্মিলিত ফলের চেয়েও বেশি পুণ্যার্জন করা যায় শুধুমাত্র কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করলে। এই মন্দিরটি একাধিকবার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে। মন্দিরের পাশে অবস্থিত জ্ঞানবাপি মসজিদ মন্দিরের আদি স্থল।[৮৮] বর্তমান মন্দিরটিকে বলা হয় স্বর্ণমন্দির।[৮৯] ১৭৮০ সালে ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকর এই মন্দিরটি নির্মাণ করান। ১৮৩৯ সালে পাঞ্জাবের রাজা রঞ্জিৎ সিং যে সোনা মন্দিরে দান করেছিলেন, তাতে এই মন্দিরের দুটি চূড়া মুড়ে দেওয়া হয়। তৃতীয় চূড়াটিও সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ১৯৮৩ সালের ২৮ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরটি অধিগ্রহণ করে নেন। মন্দির পরিচালনার ভার একটি ট্রাস্টের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কাশীর রাজা এই ট্রাস্টের সভাপতি, বিভাগীয় কমিশনার এর চেয়ারপার্সন। প্রতিদিন রাত আড়াইটে থেকে পরদিন রাত এগারোটা পর্যন্ত মন্দিরে নানা রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে।[৯০]

সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দির বারাণসীর আরেকটি বিখ্যাত মন্দির। এটি হনুমান মন্দির। এটি অসি নদীর তীরে অবস্থিত। দুর্গা মন্দির ও কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাপ্রাঙ্গনের নতুন বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার পথে এটি পড়ে।[৯১] আধুনিক মন্দিরটি বিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষাবিদ পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য[৯২] কথিত আছে, এইখানেই মধ্যযুগে হিন্দু সন্ত কবি তুলসীদাস হনুমানের দেখা পেয়েছিলেন।[৯৩] প্রতি মঙ্গল ও শনিবারে প্রচুর মানুষ এখানে হনুমান পূজা দিতে আসেন। ২০০৬ সালের ৭ মার্চ মন্দিরে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। আরতির সময় তিনটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। সেই সময় মন্দিরে অনেক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন এবং একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। এই বিস্ফোরণে বহু মানুষ আহত হন। যদিও পরদিন থেকে দৈনন্দিন পূজাপাঠ আবার শুরু হয়ে যায়। এই মন্দিরে প্রতিদিন হনুমান চালিশা (তুলসীদাসের রচনা) ও সুন্দরকাণ্ড (রামায়ণের অংশ) পাঠ হয়। বইদুটি মন্দির থেকে বিনামূল্যেও পাওয়া যায়।[৯২] জঙ্গি হামলার পর মন্দিরের মধ্যে একটি স্থায়ী পুলিশ পোস্ট বসানো হয়েছে।[৯৪]

 
অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত দুর্গাকুণ্ড ও দুর্গা মন্দির

কাশীতে দুটি মন্দিরকে দুর্গামন্দির বলা হয়। একটি ৫০০ বছরের পুরনো দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরের পাশে অষ্টাদশ শতাব্দীতে দুর্গাকুণ্ড নির্মিত হয়। হিন্দু ভক্তেরা নবরাত্রি উৎসবের সময় দুর্গাকুণ্ডে এসে দেবী দুর্গার পূজা করে। মন্দিরটি নাগারা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এতে কয়েকটি বহুতল মিনার আছে। [৮৯] মন্দিরের গায়ে লাল রং করা থাকে। কারণ লাল রংটি দেবী দুর্গার সঙ্গে যুক্ত। দুর্গাকুণ্ড পুকুরটি আয়তাকার। প্রতি বছর নাগপঞ্চমী উপলক্ষে কুণ্ডে অনন্তনাগের উপর শায়িত বিষ্ণুর মূর্তি পূজা করা হয়।

কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে অবস্থিত অন্নপূর্ণা মন্দিরে দেবী অন্নপূর্ণার পূজা হয়।[৮৬] সিন্ধিয়া ঘাটের কাছে সঙ্কটা মন্দিরে আরোগ্যের দেবী সঙ্কটার পূজা হয়। এই মন্দিরে একটি বিরাট সিংহের মূর্তি আর নবগ্রহের নয়টি ছোটো মন্দির আছে।[৮৬]

বিশ্বেশ্বরগঞ্জে হেড পোস্ট অফিসের কাছে কালভৈরব মন্দিরটিতে বারাণসীর ‘কোতোয়াল’ কালভৈরবের পূজা হয়।[৮৬] এই মন্দিরের কাছেই দারানগরে মৃত্যুঞ্জয় মহাদেব মন্দির অবস্থিত। এই মন্দিরের একটি কুয়োর জলকে পবিত্র ও আরোগ্যকারী মনে করা হয়।[৮৬]

কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রাঙ্গনের মধ্যে রয়েছে নতুন বিশ্বনাথ মন্দির, যেটি বিড়লা মন্দির নামে পরিচিত। পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য যে আধুনিক মন্দিরের পরিকল্পনা করেছিলেন সেই অনুসারে বিড়লা পরিবার এই মন্দির তৈরি করেন।[৮৬] দুর্গা মন্দিরের কাছে তুলসীমানস মন্দিরটি একটি আধুনিক রাম মন্দির। তুলসীদাস যেখানে রামচরিতমানস লিখেছিলেন সেখানে এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছে। মন্দিরের গায়ে এই বইয়ের অনেক পঙ্‌ক্তি খোদাই করা আছে।[৮৬]

১৯৩৬ সালে বারাণসীতে মহাত্মা গান্ধী ভারতমাতা মন্দিরের উদ্বোধন করেন। এই মন্দিরে শ্বেতপাথরের উপর ভারতের মানচিত্র খোদাই করা আছে। বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা শিবপ্রসাদ গুপ্ত ও দুর্গাপ্রসাদ খাতরি এই মন্দির নির্মাণের খরচ বহন করেছিলেন।[৮৬]

বারাণসীর বিখ্যাত মসজিদগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জ্ঞানবাপি মসজিদ, আলমগিরি মসজিদ, গঞ্জ-এ-শহিদান মসজিদচৌখাম্বা মসজিদ। এই চারটি মসজিদই বারাণসীর এক লক্ষ মুসলিম জনসংখ্যার ২৫% ব্যবহার করেন। দিল্লি সুলতানির আমল থেকে মুসলমানরা বারাণসীতে বাস করে আসছে।

সংস্কৃতি

সম্পাদনা
 
বারাণসীর দেওয়ালচিত্র, ১৯৭৪।

বারাণসী শহরে চারুকলা ও সাহিত্যের একটি নিজস্ব ধারা আছে। কবীর, রবিদাস, তুলসীদাস (রামচরিতমানস গ্রন্থের রচয়িতা), কুল্লুকা ভট্ট (পঞ্চদশ শতাব্দীতে মনুস্মৃতির টীকাকার) [৯৫]ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র এই শহরে বাস করতেন। জয়শঙ্কর প্রসাদ, আচার্য শুক্ল, মুন্সি প্রেমচন্দ, জগন্নাথ প্রসাদ রত্নাকর, দেবকীনন্দন কাতরি, হাজারিপ্রসাদ দ্বিবেদী, তেগ আলি, ক্ষেত্রেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাগীশ শাস্ত্রী, বলদেব উপাধ্যায় সুদাম পাণ্ডে (ধুমি) ও বিদ্যানিবাস মিশ্র প্রমুখ আধুনিক লেখকেরাও এই শহরে বাস করতেন। বারাণসী থেকে কয়েকটি সংবাদপত্র ও পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বারাণসী চন্দ্রোদয়। এই পত্রিকা পরে কাশীবার্তাপ্রকাশিকা নামে প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি ছিল পাক্ষিক পত্রিকা। পরে সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫১ সালের ১ জুন।[৯৬]

বারাণসীর প্রধান সংবাদপত্রটি হল আজ। এটি হিন্দি সংবাদপত্র। ১৯২০ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।[৯৭] অতীতে এই সংবাদপত্রটি ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখপত্র। আজও এটি উত্তর ভারতের একটি প্রধান হিন্দি সংবাদপত্র।[৯৭]

রায় কৃষ্ণদাস, তার পুত্র আনন্দ কৃষ্ণ, সংগীতজ্ঞ ওঙ্কারণাথ ঠাকুর, রবি শংকর, বিসমিল্লাহ খান, গিরিজা দেবী, সিদ্ধেশ্বরী দেবী, লালমণি মিশ্র ও তার পুত্র গোপাল শঙ্কর মিশ্র, এন. রাজাম, আনোখেলাল মিশ্র, সমতা প্রসাদ, কান্থে মহারাজ, সিতারা দেবী, গোপী কৃষ্ণ, কিশন মহারাজ, রাজন ও সাজন মিশ্র, ছন্নুলাল মিশ্র প্রমুখ এই শহরে বাস করতেন। ধ্রুপদি ও লোকসংস্কৃতি রক্ষার জন্য এখানে অনেক সংগীত উৎসব আয়োজিত হয়। সঙ্কটমোচন মন্দিরে সারা রাত খোলা আকাশের নিচে সংগীতানুষ্ঠান হয়। হোরি, কাজরি, চৈতি মেলা ও বুদওয়া মঙ্গল এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ।

বারাণসী একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র। এখানকার রেশম ও সোনা-রুপোর কাজ করা ব্রোকেড, কার্পেট বুননশিল্প (ভাদোইতে কার্পেট বয়নের কেন্দ্র আছে), কাঠের খেলনা, কাচের চুড়ি, হাতির দাঁতের কাজ, সুগন্ধি দ্রব্য, শিল্পগুণসম্মত পিতল ও তামার বাসনপত্র বিখ্যাত।[৯৮][৯৯] ব্রিটিশ যুগের পরিত্যক্ত ক্যান্টনমেন্ট কবরখানাটি এখন শিল্পদ্রব্যের বাজার।[১০০]

 
বারাণসীর কেদার ঘাটে হিন্দুরা ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।

হিন্দুধর্ম

সম্পাদনা

বারাণসী হিন্দুদের সব সম্প্রদায়ের কাছেই একটি পবিত্র তীর্থ। এই শহর হিন্দুধর্মের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম।[১০১] হিন্দুদের যে সাতটি শহর মোক্ষ প্রদানে সক্ষম (“সপ্তপুরী”), তার একটি হল বারাণসী।[১০২][১০৩] এই শহরে ৫০,০০০ ব্রাহ্মণ বাস করেন। এঁরা শহরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি পালনে সাহায্য করেন।[১০২] হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় স্নান করলে পুণ্য অর্জিত হয় এবং কাশীতে মৃত্যু হলে মৃতের আত্মা জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পায়। এই জন্য অনেক হিন্দু শেষ বয়সে বারাণসীতে থাকতে চলে আসেন।[১০৪]

বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। এটি শৈব সম্প্রদায়ের কাছে খুবই পবিত্র একটি তীর্থ। বারাণসী একটি শক্তিপীঠ। এখানকার বিশালাক্ষী মন্দিরে সতীর কানের দুল পড়েছিল বলে মনে করা হয়।[১৫] শাক্ত সম্প্রদায়ের মানুষ তাই এই শহরে তীর্থযাত্রায় আসেন।[১০৫] আদি শঙ্কর এখানে বসেই তার বিখ্যাত টীকাগ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন।,[১০৬] এর ফলে হিন্দুধর্মে নবজাগরণ আসে।

২০০১ সালের হিসেব অনুসারে, বারাণসী জেলার হিন্দুদের হার ৮৪%।[১০৭]

 
বারাণসীর আলমগিরি মসজিদের নির্মাণকাজ।

এক লক্ষ হিন্দুর পাশাপাশি বারাণসীতে আড়াই হাজার মুসলমানেরও বাস। মুসলমান সম্প্রদায় বারাণসীতে প্রায় এক হাজার বছর ধরে বাস করছে। ২০০১ সালের হিসেব অনুসারে, মুসলমানেরা বারাণসী জেলার জনসংখ্যার প্রায় ১৬%।[১০৭] দিল্লি সুলতানিমুঘল সাম্রাজ্যের যুগ থেকে এখানে মুসলমানেরা সংঘবদ্ধভাবে বাস করছেন। জ্ঞানবাপি মসজিদ, আলমগিরি মসজিদ, গঞ্জ-এ-শহিদান মসজিদচৌখাম্বা মসজিদ হল বারাণসীর প্রধান মসজিদ।

 
বারাণসীর জৈন ঘাট

অন্যান্য

সম্পাদনা

২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা বারাণসী জেলার জনসংখ্যার ০.৪%। [১০৭]

বারাণসীর শহরতলি এলাকার সারনাথ একটি বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এখানকার একটি মৃগদাবে সিদ্ধার্থ গৌতম প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেছিলেন।[১০৮] এখানকার ধামেক স্তুপ এক প্রাক-অশোক যুগের স্তুপ। তবে এই স্তুপের ভিত্তি অংশটিই এখন অবশিষ্ট আছে।[১০৯] খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে যে স্থানটিতে বুদ্ধ প্রথম তার শিষ্যদের সঙ্গে মিলিত হন সেখানে চৌকহান্ডি স্তুপের ধ্বংসাবশেষও দেখা যায়।[২৯] পরে এখানে একটি অষ্টকোণ-বিশিষ্ট মিনার নির্মিত হয়েছিল।

হিন্দু ও বৌদ্ধদের পাশাপাশি বারাণসী জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও একটি তীর্থ। জৈন বিশ্বাস অনুসারে, সুপার্শ্বনাথ, শ্রেয়াংশনাথপার্শ্বনাথ এই শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁরা জৈনধর্মের যথাক্রমে সপ্তম, একাদশ ও ২৩তম তীর্থঙ্কর। বারাণসীর ভেলপুরে শ্রীপার্শ্বনাথ দিগম্বর জৈন তীর্থক্ষেত্র (মন্দির) অবস্থিত। এটি জৈনদের একটি প্রধান মন্দির।

১৫০৭ সালে গুরু নানক বারাণসীতে এসেছিলেন শিবরাত্রি উপলক্ষে। তার এই বারাণসী সফর শিখধর্ম প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বারাণসীতে রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিস অফ বারাণসী ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি শরণার্থী সম্প্রদায়ও রয়েছে। এখানে অনেক আদিবাসী ধর্মেরও অস্তিত্ব আছে। তবে এগুলিকে সহজে চিহ্নিত করা যায় না।

ধর্মীয় উৎসব

সম্পাদনা

ফেব্রুয়ারি মাসে শিবরাত্রি উপলক্ষে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্দির থেকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পর্যন্ত শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়।[৮৫]

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ তুলসী ঘাটে ধ্রুপদ মেলা হয়। এটি ধ্রুপদ সংগীতের একটি উৎসব।[১১০]

সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দিরে মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ হনুমান জয়ন্তী পালিত হয়। এই সময় বিশেষ পূজা, আরতি ও শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়।[১১১][১১২] ১৯২৩ সালে এই উৎসব শুরু হয়। মন্দিরে আয়োজিত এইপাঁচ দিনের সংগীত উৎসবের নাম "সঙ্কটমোচন সংগীত সমারোহ"। সারা দেশেরর বিশিষ্ট শিল্পীরা এই উৎসবে অংশ নেন।[৮৫][১১৩][১১৪][১১৫]

রামনগরে রামচরিতমানস গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে রামলীলা নামে লোকনাট্যের আয়োজন করা হয়।[] এই নাটক প্রযোজনা করেন কাশীর রাজা। ৩১ দিন ধরে সন্ধ্যায় এই নাটক হয়।[] শেষ দিন রাম কর্তৃক রাবণবধের অংশটি অভিনীত হয়।[] কাশীর রাজা উদিতনারায়ণ সিংহ ১৯৩০ সাল নাগাদ রামলীলা অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেছিলেন।[][১১৬]

অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ বিজয়াদশমীর পর ভরত মিলাপ নামে একটি উৎসব আয়োজিত হয়। ১৪ বছরের বনবাসের পর রামের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও ভ্রাতা ভরতের সঙ্গে মিলিত হওয়ার স্মৃতিতে এই উৎসব আয়োজিত হয়।[৮৫] কাশীর রাজা রাজবেশ পরে এই উৎসবে অংশ নেন। অনেক ভক্ত এই উৎসবে অংশ নেন।[১১৬]

 
বারাণসীর নাগ নাথাইয়া উৎসবে কৃষ্ণের কালীয়দমন লীলার অভিনয়।

কার্তিক মাসের (অক্টোবর-নভেম্বর) কৃষ্ণা চতুর্থীর দিন বারাণসীতে নাগ নাথাইয়া উৎসব আয়োজিত হয়। এই উৎসব কৃষ্ণের কালীয়দমন লীলার স্মরণে করা হয়। এই অনুষ্ঠানে গঙ্গার তীরে একটি কদম গাছের ডাল পোঁতা হয়। একজন বালক কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। নদীতে কালীয়নাগের একটি মূর্তি বানানো হয়। অভিনেতা সেই মূর্তির মাথায় উঠে গিয়ে নৃত্যের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজায়। দর্শকেরা নদীতে নৌকায় চড়ে বা ঘাটে দাঁড়িয়ে এই অভিনয় দেখেন।[১১৭]

নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কার্তিক পূর্ণিমার (দেবদীপাবলি) আগের দিন উত্তরপ্রদেশ পর্যটন বিভাগ গঙ্গা মহোৎসবের আয়োজন করে। কার্তিক পূজার দিন বারাণসীতে দেবদীপাবলি বা গঙ্গা উৎসব পালিত হয়। এই দিন গঙ্গাকে বিশেষভাবে আরতি করা হয়। তীর্থযাত্রীরা নৌকা থেকে বা ঘাট থেকে সেই আরতি দেখেন।[৮৫][১১০]

শিক্ষা

সম্পাদনা

প্রাচীনকাল থেকেই বারাণসী ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র।[১১৮][১১৯] বারাণসীর সাক্ষরতার হার ৮০% (পুরুষ সাক্ষরতা ৮৫% ও মহিলা সাক্ষরতা ৭৫%)।[৫৮] বারাণসীতে একাধিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে।। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় বারাণসীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০,০০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। [১২০] এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।[১২১] ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (বিএইচইউ) বারাণসী বারাণসীতে অবস্থিত একটি জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি ভারতের ১৬টি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (আইটি) একটি। অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, মহাত্মা গান্ধী কাশী বিদ্যাপীঠ, ইমানিয়া আরবি কলেজ, সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ হায়ার টিবেটান স্টাডিজ (সারনাথে), কাশী ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, বারাণসী (কাশী আইটি),[১২২] ইনস্টিটিউট অফ ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, বারাণসী (আইআইএমটি), উদয়প্রসাদ অটোনমাস কলেজ, নব সাধনা কলা কেন্দ্র, হরিশ্চন্দ্র পি. জি. কলেজ, অগ্রসেন কন্যা পি. জি. কলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বারাণসীর বিদ্যালয়গুলি ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইসিএসই), সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) ও উত্তরপ্রদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত। বারাণসীর শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা খুব ভাল নয়।[১২৩]

 
অবধি হিন্দি কবি তুলসীদাস বারাণসীর ভক্তিবাদী সংগীত ঘরানার এক অন্যতম প্রবক্তা।

বারাণসীর সংগীতের সঙ্গে পৌরাণিক কিংবদন্তিগুলির যোগ পাওয়া যায়। কথিত আছে, কাশীর প্রতিষ্ঠাতা শিব সংগীত ও নৃত্যের জনক। মধ্যযুগে বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের যুগে কাশীতে ভক্তিবাদী সংগীতের উদ্ভব ঘটে। সুরদাস, কবীর, রাইদাস, মীরাতুলসীদাস প্রমুখ ভক্তিবাদী কবিরা বারাণসীতে বাস করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে গোবিন্দ চন্দ্রের রাজত্বকালে শাস্ত্রীয় সংগীতের দ্রুপদ ধারাটি রাজার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল। এই সময় বারাণসীতে ধামার, হোরি ও চতুরঙ্গ ধারার উদ্ভব হয়েছিল।[১২৪] বর্তমানকালের বিশিষ্ট ঠুমরি গায়িকা গিরিজা দেবী বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন।[১২৫]

কণ্ঠসংগীত ছাড়াও বিশিষ্ট সানাই বাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান ,[১২৪] ও বিশিষ্ট সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শংকর বারাণসীর বাসিন্দা ছিলেন। এঁরা দুজনেই ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন পেয়েছিলেন।[১২৬]

খেলাধুলা

সম্পাদনা

বাস্কেটবল, ক্রিকেটফিল্ড হকি বারাণসীর জনপ্রিয় খেলা।[১২৭] সিগরার ড. সম্পূর্ণানন্দ স্টেডিয়াম হল শহরের প্রধান ক্রীড়াঙ্গন। এখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা আয়োজিত হয়।[১২৮] স্থানীয় ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয় কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে।[১২৯] কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন ফ্যাকাল্টি অফ আর্ট থেকে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি, ক্রীড়া মনস্তত্ত্ব ও ক্রীড়া সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করার সুযোগ আছে।[১৩০] বারাণসীতে জিমনাস্টিক বেশ জনপ্রিয়। এখানে অনেকেই সকালে গঙ্গায় স্নান করে হনুমান দর্শন ও আখড়ায় ব্যায়াম অনুশীলন করেন।[১৩১] বারাণসী ডিস্ট্রিক্ট চেজ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (ভিডিসিএসএ) বারাণসীতে অবস্থিত। এটি স্থানীয় উত্তরপ্রদেশ চেজ স্পোর্টস অ্যাসোশিয়েশন (ইউপিসিএসএ) কর্তৃক অনুমোদিত।[১৩২]

পরিবহন

সম্পাদনা
 
লালবাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বারাণসী রেল, সড়ক ও আকাশপথে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত। প্রাচীন শহর, তীর্থ ও পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় বারাণসীর পরিবহন পরিকাঠামো বেশ ভাল।

বিমান পরিবহন

সম্পাদনা

লালবাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বারাণসী নগরকেন্দ্র থেকে ২৬ কিমি (১৬ মা) দূরে বাবতপুরে অবস্থিত। ২০১০ সালে এই বিমানবন্দরের একটি নতুন টার্মিনালের উদ্বোধন করা হয়। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর এই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর্যায়ে উন্নীত হয়।[১৩৩][১৩৪] এয়ার ইন্ডিয়া, বুদ্ধ এয়ারস্পাইসজেট বারাণসীর সঙ্গে দিল্লি, গয়া, কাঠমাণ্ডু, খাজুরাহো, লখনউ, মুম্বইকলকাতার বিমান-যোগাযোগ রক্ষা করে।[১৩৫] প্রতি বছর ৩৩০,০০০ যাত্রী এই বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করে।[১৩৩]

রেল পরিবহন

সম্পাদনা
 
বারাণসী জংশন রেলওয়ে স্টেশন

বারাণসী শহরে তিনটি সবচেয়ে ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন আছে: বারাণসী জংশন, বারাণসী সিটিবেনারস। তাদের মধ্যে বারাণসী জংশন শহরের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন এই স্টেশনে ৩.৬ লক্ষ যাত্রী ও ২৪০টি ট্রেন যাতায়াত করে।[১৩৬]

সড়ক পরিবহন

সম্পাদনা
 
বারাণসীর ব্যস্ত রাস্তায় সাইকেল রিকশা

বারাণসী ১৯ নং জাতীয় সড়কের উপর অবস্থিত। এই সড়কপথে বারাণসী কলকাতা, কানপুর, আগ্রাদিল্লির সঙ্গে যুক্ত।[৪১] ২৪ নং জাতীয় সড়ক বারাণসীর সঙ্গে গাজিপুরগোরক্ষপুরের যোগাযোগ রক্ষা করছে। ৩১ নং জাতীয় সড়ক বারাণসীর সঙ্গে মালদহ, কটিহার, ছাপড়া, গাজিপুর, জৌনপুররায়বরেলির যোগাযোগ রক্ষা করছে। ৭৩১ নং জাতীয় সড়ক বারাণসীর সঙ্গে জৌনপুর, সুলতানপুরলখনউয়ের যোগাযোগ রক্ষা করছে। ৩৫ নং জাতীয় সড়ক বারাণসীর সঙ্গে এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ) ও মির্জাপুর শহরের যোগাযোগ রক্ষা করছে।

অটোরিকশা ও সাইকেল রিকশা বারাণসীর পুরনো শহরের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যানবাহন।[১৩৭] শহরের বাইরের অংশে বাস ও ট্যাক্সি পাওয়া যায়।[১৩৭]

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. "Provisional Population Totals, Census of India 2011; Urban Agglomerations/Cities having population 1 lakh and above" (PDF)। Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২ 
  2. "Provisional Population Totals Paper 1 : 2011" (পিডিএফ)। Government of India। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১১ 
  3. The name that appears on the official map of the Indian Empire
  4. Bansal 2008, পৃ. 6–9, 34–35।
  5. "Varanasi"Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  6. "Ramnath [Sumeri] Temple, Benares."। British Library On Line Gallery। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  7. Mitra 2002, পৃ. 216।
  8. "District of Varanasi – Sarnath"। National Informatics Centre-Varanasi। ৮ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০০৯ 
  9. "Varanasi: The eternal city"Banaras Hindu University। ২০ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ 
  10. Viśvanātha-așhțakam, śloka 1.
  11. Cunningham 1924, পৃ. 131-140।
  12. M. Julian, Life and Pilgrimage of Hsuan Tsang, 6, 133, 2, 354.
  13. "Varanasi: About the city"। Official website of Uttar Pradesh Tourism। ৮ ২ জুলাই ০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 23 May 2013  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  14. Talageri, Shrikant G.। "The Geography of the Rigveda"। ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ 
  15. "Varanasi – Explore India Millennium Year" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Ministry of Tourism, Government of India। মার্চ ২০০৭। 
  16. The Encyclopedia of Religious Phenomena – J. Gordon Melton – Google Boeken। Books.google.com। ২০০৭-০৯-০১। আইএসবিএন 9781578592098। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৩ 
  17. Bansal 2008, পৃ. 48–49।
  18. Garuḍa Purāṇa XVI 114। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৯ 
  19. "Important Archaeological Discoveries by the Banaras Hindu University"। Banaras Hindu University। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৩ 
  20. Jayaswal 2009, পৃ. 2, 205।
  21. Pletcher 2010, পৃ. 159–160।
  22. Jayaswal 2009, পৃ. 206।
  23. Banks ও Morphy 1999, পৃ. 225
  24. Partridge 2005, পৃ. 165
  25. Berwick 1986, পৃ. 121।
  26. Eck 1982, পৃ. 57।
  27. Bindloss, Brown এবং Elliott 2007, পৃ. 278।
  28. Sahai 2010, পৃ. 21।
  29. Singh 2009, পৃ. 453।
  30. Das 1991, পৃ. 17।
  31. Merriam-Webster 1999, পৃ. 910।
  32. Gandhi 2007, পৃ. 90।
  33. Mitra 2002, পৃ. 182।
  34. Prakash 1981, পৃ. 170।
  35. Schreitmüller 2012, পৃ. 284।
  36. Twain 1897, পৃ. Chapter L।
  37. "A review of Varanasi"। Blonnet.com। ২০০৯-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৩ 
  38. Misra 2007, পৃ. 6।
  39. Sharma ও Sharma 2001, পৃ. 197।
  40. Mohanty 1993, পৃ. 316।
  41. Maps (মানচিত্র)। Google Maps 
  42. Singh, Rana P.B.। "Varanasi as Heritage City (India) on the scale the UNESCO World Heritage List: From Contestation to Conservation" (পিডিএফ)EASAS papers। Swedish South Asian Studies Network। ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০০৬ 
  43. Bhargava ও Bhatt 2005, পৃ. 32।
  44. Singh 1975, পৃ. 4।
  45. Pandey 1989, পৃ. 13।
  46. Singh ও Rana 2002, পৃ. 27।
  47. "Is River Ganges drying in Varanasi"। Aninews.in। ২০১২-০৫-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৩ 
  48. "Seasonal Weather Averages"Weather Underground। ডিসেম্বর ২০১০। ১০ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১০ , temperature data from Weather Underground
  49. "Varanasi"। Indian Meteorology Department। ৯ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১০ , precipitation data from Indian Meteorology Department
  50. Susruta The Imperial Gazetteer of India, 1909, v. 2, p. 570.
  51. "Restaurants & Hospitals"। Uttar Pradesh Tourism। ৩০ ২ অক্টোবর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  52. "Welcome to Varanasi Hospital"। Varanasi Hospital and Medical Research Centre। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  53. "Annual Health Survey 2010–2011" (11 mb PDF). Office of the Registrar General & Census Commissioner, India (2011).
  54. Mohanty 1993, পৃ. 316-7।
  55. Bhargava, Gopal। "Scheme for Varanasi"The Tribune। India। 
  56. "Waste Generation and Composition"Management of municipal solid wastes। Planning Division, Central Pollution Control Board। ১৭ জুলাই ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০০৬ 
  57. "Status of landfill sites in 59 cities"Management of municipal solid wastes। Planning Division, Central Pollution Control Board। ১৭ জুলাই ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০০৬ 
  58. "Urban Agglomerations/Cities having population 1 lakh and above" (পিডিএফ)Provisional Population Totals, Census of India 2011। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১২ 
  59. "Urban Agglomerations/Cities having population of more than one million in 2001"Census of India 2001 (Provisional)। Office of the Registrar General, India। ২৫ জুলাই ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০০৬ 
  60. "Population, Population in the age group 0–6 and literates by sex – Urban Agglomeration/Town: 2001" (PDF)Census of India 2001 (Provisional)। Office of the Registrar General, India। পৃষ্ঠা 53–54। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০০৬ 
  61. "Slum Population in Million Plus Cities (Municipal Corporations): Part A"Census of India 2001 (Provisional)। Office of the Registrar General, India। ২২ জানুয়ারি ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০০৬ 
  62. "C-16 City: Population by mother tongue (town level), Uttar Pradesh", ২০১১ ভারতের জনগণনা 
  63. JNNURM 2006, পৃ. 29।
  64. JNNURM 2006, পৃ. 28।
  65. JNNURM 2006, পৃ. 31।
  66. JNNURM 2006, পৃ. 29-31।
  67. Wood 2011, পৃ. 113
  68. Human Rights Watch 1996, পৃ. 82
  69. "About Bharat"। Bharat Heavy Electricals Limited। ১১ ২ জুন ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  70. Mitra 2002, পৃ. 117, 169।
  71. JNNURM 2006, পৃ. 57।
  72. "Foreign tourists' arrival breach 2L mark"। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১২ 
  73. JNNURM 2006, পৃ. 56।
  74. JNNURM 2006, পৃ. 58।
  75. "Bank, Post & Telegraph"। Uttar Pradesh Tourism। ৩০ ২ অক্টোবর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  76. "Alphabetical List of Monuments – Uttar Pradesh"। Archeological Survey of India। ৮ ২ মে ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 22 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  77. "18th Century Observatories of Maharaja Sawai Jai Singh II"। Hardwick University। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১২ 
  78. Mitra, Swati (২০০২)। Good Earth Varanasi city guide। Eicher Goodearth Limited। পৃষ্ঠা 124–127। আইএসবিএন 9788187780045। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১২ 
  79. "Lonely Planet review for Ramnagar Fort & Museum"। Lonely Plaanet। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১২ 
  80. "Ganga & ghats"। National Informatics Center। ১৩ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  81. "Ghats of Benares, 1–20"। National Informatics Center। ১৩ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  82. "Ghats of Varanasi, 41 to 60"। National Informatics Center। ১৩ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  83. "Ghats of Benares, 61 to 84"। National Informatics Center। ১৩ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 3 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  84. Bansal 2008, পৃ. 34–35।
  85. "Varanasi"Encyclopædia Britannica Online। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১১ 
  86. "Important temples of Varanasi"। National Informatics Center। ৫ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  87. Cunningham, Alexander (২০০২) [1924]। Ancient Geography of India। Munshiram Manoharlal। পৃষ্ঠা 131–140। আইএসবিএন 81-215-1064-3 54827171 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য)  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  88. Koenraad Elst (১৯৯০)। Ram Janmabhoomi vs. Babri Masjid, A Case Study in Hindu-Muslim Conflict 
  89. "The religious route"The Times of India। ৩ এপ্রিল ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ 
  90. "Shri Kashi Vishwanath Mandir Varanasi"। National Informatics Centre, Government of India। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০০৭ 
  91. "Temples of Varnasi"। Varanasi Official website। ২৯ ২ ডিসেম্বর ০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ২ নভেম্বর ০১৩  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  92. "Blasts in Sankatmochan temple and railway station kill dozen, several injured"Indian Express। Mar 08, 2006।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  93. Callewaert 2000, পৃ. 90।
  94. "Varanasi temple gets permanent police post"Indian Express। Mar 14 2006,।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  95. The Indian Empire The Imperial Gazetteer of India, 1909, v. 2, p. 262.
  96. Medhasananda 2002, পৃ. 653।
  97. Kasbekar 2006, পৃ. 126।
  98. "Varanasi=1 November 2012"। Encyclopedia Brittanica। 
  99. "Benares, the Eternal City"। Banaras Hindu University। ২০ ২ জুন ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  100. Tiwari 2010, পৃ. 9।
  101. Vera 2010, পৃ. 179।
  102. Shackley 2001, পৃ. 121।
  103. Kramrisch 1946, পৃ. 3।
  104. Wilder-Smith, Shaw এবং Schwartz 2012, পৃ. 273।
  105. Vishal Rathod, "Ganga and Ghats in Varanasi: Place of Purification of Sins and Salvation" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে, Ghumakkar.com. Retrieved 23 May 2013.
  106. "Adi Shankaracharya (788 CE - 820 CE)" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে, Green Message. Retrieved 23 May 2013.
  107. "Census of India – Socio-cultural aspects"। Censusindia.gov.in। ২০১১-০৫-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১১-০৩ 
  108. Mellor ও Podany 2005, পৃ. 73।
  109. Gupta 2003, পৃ. 11।
  110. Uttar Pradesh Tourism। "Fair and Festivals of Varanasi"। Uttar Pradesh Tourism। ২৯ ২ জুন ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 22 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  111. "Sankat Mochan Sangeet Samaroh from April 13"The Times of India। এপ্রিল ৮, ২০০৯। নভেম্বর ৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১৩ 
  112. "Jasraj, Birju Maharaj enthral on first night"The Times of India। এপ্রিল ১৪, ২০০৯। নভেম্বর ৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১৩ 
  113. "Glimpses of eternity"The Hindu। Chennai, India। ৭ এপ্রিল ২০০৬। ৩০ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৩ 
  114. "Sankat Mochan music concert begins"The Times of India। এপ্রিল ৪, ২০১০। নভেম্বর ৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১৩ 
  115. "Sankat Mochan Sangeet Samaroh begins"। Times of India। ১২ এপ্রিল ২০১২। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১২ 
  116. "Fairs and festivals"। National Informatics Center। ১৩ ২ নভেম্বর ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2 November 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  117. Pintchman 2005, পৃ. 69–70।
  118. Sharma 1991, পৃ. 191।
  119. Gupta 2006, পৃ. 41।
  120. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৩ 
  121. Kumar Yadav, Mithilesh (১৪ জুন ২০১১)। "From ancient to modern"Hindustan Times। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  122. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৩ 
  123. Hiroshi Sasaki. "School Choice and Divided Primary Education: Case Study of Varanasi, UP State, India" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০১৩ তারিখে (PDF). Journal of the Japanese Association for South Asian Studies no. 16 (October 2004): 17–39.
  124. "Varanasi Music"। Varanasi City.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৩ 
  125. Broughton, Simon; Ellingham, Mark; Trillo, Richard (২০০০)। World Music Volumn 2 Latin and North America Caribean India Asia and: Pacific the Rough Guide। Rough Guides। পৃষ্ঠা 91–। আইএসবিএন 978-1-85828-636-5। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৩ 
  126. Pippa de Bruyn; Keith Bain; David Allardice (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। Frommer's India। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 470–। আইএসবিএন 978-0-470-64580-2। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৩  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  127. "Varanasi team scores big win"The Hindu। ৯ নভেম্বর ২০০৫। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  128. "Dr Sampurnanda Stadium, Varanasi"। The Cricketer। ১৬ ২ জানুয়ারি ০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  129. Ray 2003, পৃ. 3।
  130. "Department of Physical Education"। Banaras Hindu University। ৭ ২ জুন ০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  131. Tiwari 2010, পৃ. 47।
  132. "Varanasi District Chess Sports Association"। Varanasi District Chess Sports Association। ৩ ২ এপ্রিল ০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  133. "Varanasi airport to get remote-control opening"The Financial Express। ৩০ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  134. "Cabinet Grants International Status to Five Airports"। Outlook India। 4 October 2012। ৯ ২ মে ০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 30 October 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  135. "Varanasi Airport"। Flight Stats। ৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  136. "With mercury soaring, Kashi is still `hot` destination"The Times of India। ১১ মে ২০১১। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১২ 
  137. Bruyn এবং অন্যান্য 2010, পৃ. 467।

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা