শীতলা
শীতলা হিন্দু ধর্মের একজন দেবীবিশেষ।[১] শীতল, অন্যমতে যাকে শীতলা নামেও অভিহিত করা হয়। ইনি একজন লোক দেবী, ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বহু ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা উপাসনা করা হয়। আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার অবতার হিসাবে, তিনি পক্স, ঘা, ব্রণ, ফুস্কুড়ি প্রভৃতি রোগ নিরাময় করেন এবং পিশাচ (মড়া খেকো ভুত) এর হাত থেকেও রক্ষা করেন। দোলযাত্রা থেকে আট বা অষ্টম (৮) দিন পরে শীতলা অষ্টমীর দিন দেবী শীতলার আরাধনা করা হয়। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাসানুসারে এই দেবীর প্রভাবেই মানুষ বসন্ত, প্রভৃতি চর্মরোগাক্রান্ত হয়। এই কারণেই গ্রামবাংলায় বসন্ত রোগ মায়ের দয়া নামে অভিহিত হয়ে থাকে। তাই কেউ বসন্তে আক্রান্ত হলে দেবী শীতলাকে পূজা নিবেদন করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির আরোগ্য কামনা করা গ্রামীণ হিন্দু সমাজের প্রধান রীতি। যেমনঃবসন্তবুড়ী ব্রত। মাঘ মাসের ৬ষ্ঠ দিনে দেবী শীতলার পূজা করা হয়। শীতলা দেবীর বাহন গাধা বা গর্ধব। প্রচলিত মূর্তিতে শীতলা দেবীর এক হাতে জলের কলস ও অন্য হাতে ঝাড়ু দেখতে পাওয় যায়। ভক্তদের বিশ্বাস কলস থেকে তিনি আরোগ্য সূধা দান করেন এবং ঝাড়ু দ্বারা রোগাক্রান্তদের কষ্ট লাঘব করেন।
শীতলা দেবী | |
---|---|
পিশাচ, ঘা, ফুস্কুড়ি এবং রোগের দেবী | |
দেবনাগরী | शीतला देवी |
তামিল লিপি | ஷீதலா தேவி ṣītalā tēvi |
অন্তর্ভুক্তি | দেবী |
মন্ত্র | ওঁ নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাং দিগম্বরীম্। মার্জ্জনীকলসোপেতাং সূর্পালঙ্কৃতমস্তকাম্। |
অস্ত্র | ঝাড়ু |
বাহন | গাধা |
সঙ্গী | জ্বরাসুর |
গল্প
সম্পাদনা১. একটি গল্পে বলা হয়েছে যে, দেবী পার্বতী, কাত্যায়নী নামে একটি ছোট্ট কন্যা রুপে মর্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন (ঋষি কাত্যায়নের কন্যা) পৃথিবীর সমস্ত অহংকারী দুষ্ট পৈশাচিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য, যিনি দৈত্যরাজ কালকেয় দ্বারা প্রেরিত বহু অসুরকে হত্যা করেছিলেন।
জ্বরাসুর নামে এক অসুর (জ্বরের দানব),কাত্যায়নীর শৈশবকালীন বন্ধুদের মধ্যে কলেরা, আমাশয়, হাম এবং গুটি বসন্তের মতো দুরারোগ্য রোগ ছড়াতে শুরু করে। কাত্যায়নী তার কয়েকজন বন্ধুর রোগ নিরাময় করেছিলেন। বিশ্বকে সমস্ত কুসংস্কার ও রোগ থেকে মুক্তি দিতে কাত্যায়নী শীতলা দেবীর রূপ ধারণ করেছিলেন। ওনার চারটি হাতের একটি হাতে ছোট ঝাড়ু, একটি হাতে কুলো (ধান ঝাড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়), এবং অপর দুটি হাতে শীতল জলও একটি পানীয় কাপ ধরেছিলেন। তার শক্তি দিয়ে তিনি বাচ্চাদের সমস্ত রোগ নিরাময় করেছিলেন। তারপরে কাত্যায়নী তার বন্ধু বটুককে (শিবের রূপ) জ্বরাসুর দৈত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য অনুরোধ করে। যুবক বটুক এবং রাক্ষস জ্বরাসুরের মধ্যে অসীম যুদ্ধ হয় এবং জ্বরাসুর বটুককে পরাস্ত করতে সফল হন। তারপরে, বটুক, মৃত অবস্থায় পরে থাকার পর, যাদুকরীভাবে ধুলোয় পরিণত হয়েছিলেন। জ্বরাসুর হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে বটুক অদৃশ্য হয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে বটুক তিনটি চোখ এবং চারটি বাহুতে যুদ্ধের কুড়াল, তরোয়াল, ত্রিশূল এবং দানবের কাটামুণ্ড নিয়ে এক ভয়াবহ পুরুষ ব্যক্তিত্বের রূপ ধারণ করে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এই ভয়াবহ পুরুষ ব্যক্তিত্বের গায়ের রঙ ছিল কালো রঙের এবং পরনে বাঘের চামড়া ও গলায় মুণ্ডমালা পরা ছিল – কারণ বটুক ভগবান শিব এর উগ্র রূপ ভয়ানক ভৈরব রূপ ধারণ করেছিলেন। ভৈরব জ্বরাসুরকে তিরস্কার করে এবং বলে যে তিনি দেবী পার্বতীর (কাত্যায়নী রূপে অবতার) দাস। দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও আবারও যুদ্ধ সংগঠিত হয়। জ্বরাসুর তাঁর ক্ষমতা থেকে অনেক ভূত সৃষ্টি করেছিলেন তবে ভৈরব তাদের সকলকে ধ্বংস করতে সক্ষম হন। অবশেষে ভৈরব জ্বরাসুরের সাথে কুস্তি করে তার ত্রিশূল দিয়ে তাকে হত্যা করে।
২. একদা জ্বরাসুর নামে এক রাক্ষস ছিল। তাকে জ্বরাসুর নামে ডাকা হতো কারণ তিনি ছিলেন জ্বরের রাক্ষস। তিনি যখনই কোথায়ও যেতেন সেখানেই আশেপাশে সমস্ত বাচ্চাদের মধ্যে অসহনীয় জ্বর ছড়িয়ে দিতেন। তাঁর ভয়াবহ উপস্থিতি আশেপাশের যারা ছিল তাদেরকে আশঙ্কিত করেছিল এবং তার কারণে শিশুরা কেউই স্বস্তি পায় নি। মায়েরা তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে চিৎকার করে কেঁদে উঠতেন, এবং ডাক্তারও শিশুদের দুরারোগ্য জ্বর জন্য একটি প্রতিকারও খুঁজে পেতেন না। জ্বরাসুরেরসন্ত্রাসবাদের রাজত্ব ছড়িয়ে পড়বে এই জেনে, মহাদেব এবং পার্বতী তাকে থামানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পার্বতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে তাঁর শীতলতার শক্তি সমস্ত বাচ্চা এবং তাদের পিতামাতার জন্য স্বস্তি এনে দেবে। মহাদেব নিজেকে ভৈরব রুপে রূপান্তরিত করেছিলেন এবং যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছেছিলেন যেখানে তিনি জ্বরাসুরের মুখোমুখি হয়েছিলেন যাতে সে আর ঘুরে বেড়াতে না পারে এবং বাচ্চাদের আর ক্ষতি করতে না পারে। এবং পরস্পর দুর্দান্ত এবং বিশাল এক কুস্তি যুদ্ধে জড়িয়ে পরে।
অন্যদিকে পার্বতী নিজেকে শীতলা দেবীতে রূপান্তরিত করেছেন। সর্বশক্তিমান আদ্যাশক্তি পার্বতীর অবতার রূপে শীতলা দেবী একজন ত্রিনয়নি যুবতী মেয়ের মতো করে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন, যার গাত্রবর্ণ ফর্সা, পরনে হালকা এবং গাঢ় নীল রঙের পোশাক, অঙ্গে অলঙ্কার এর পরিমাণ ন্যূনতম। তার চার হাতে, একটি বাটি, একটি পাখা, একটি ছোট ঝাড়ু বা হাতপাখা ধরেছিলেন এবং তিনি একটি পাত্র শীতল জল বহন করেছিলেন, যাতে তিনি রোগীদের নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করেন। তিনি তার বাহন হিসাবে গাধা বা গর্দভকে গ্রহণ করেছিলেন। দেবী শীতলা শিশুদের ত্রাণ সরবরাহের লক্ষ্যে তাঁর কার্য শুরু করেছিলেন। দেবী শীতলা তার সবচেয়ে কার্যকর সরঞ্জাম দিয়ে সারা বিশ্বে ভ্রমণ করেছিলেন এবং যেখানেই গেছিলেন, তার শীতলতা এবং শীতল জল সমস্ত বাচ্চাদের জন্য এবং সমস্ত আকার, রঙ এবং বয়সের ভক্তদের জন্য স্বস্তি এনেছিলেন। তারা সকলেই সম্পূর্ণরূপে তাদের সুস্বাস্থ্যের সাথে রোগমুক্ত হয়েছিল, যা সমস্ত পিতামাতার জন্য আনন্দ এনেছিল। দেবী শীতলাকে দেখে প্রত্যেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন এবং সমস্ত বাচ্চা তাদের অসাধ্য জ্বর নিরাময়ের জন্য এবং তাদের শুচি করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাল।
তারপরে, দেবী শীতলা যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন, যেখানে ভৈরব এবং জ্বরাসুর একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। শীতলা দেবী ছোট বাচ্চাদের প্রতি তার অপব্যবহারের জন্য জ্বরাসুরকে শাস্তি দিয়েছিলেন কারণ তিনি তাদের মধ্যে জ্বর ছড়িয়েছিলেন। ভৈরব জ্বরাসুরকে জানায় যে দেবী শীতলাকে কেবল ঘা, ভূত, বসন্ত এবং রোগ নিরাময় করতে পারে না, তিনি ঘা, ভূত এবং রোগের দেবী এবং তিনি সেগুলিও প্রদান ও করতে পারেন এবং পাশাপাশি নিরাময়ও। অবশেষে শীতলা দেবী জ্বরাসুরকে গুরুতর সংক্রামিত রোগের সাথে সংক্রমিত করেছিলেন, এবং এভাবেই তাঁর সন্ত্রাসের রাজত্বটি সর্বকালের জন্য শেষ করে দিয়েছিলেন। এরপর মহাদেব ভৈরব রুপ থেকে এবং পার্বতী দেবী শীতলা দেবী রুপ থেকে নিজেকে মুক্তি দেন। অতঃপর তারা দুজনেই কৈলাশের বাড়ি ফিরেছিলেন।
নাম এবং রূপগুলি
সম্পাদনাশীতলার আক্ষরিক অর্থ সংস্কৃততে "শীতল হওয়া"। শীতলাকে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। শীতলাকে প্রায়শই মা ও মাতা (‘মা’) বলা হয় এবং হিন্দু, বৌদ্ধ এবং উপজাতি সম্প্রদায় তাঁর উপাসনা করে। তান্ত্রিক ও পুরাণ সাহিত্যে তাঁর উল্লেখ রয়েছে এবংপরবর্তী ভাষাগত গ্রন্থ (যেমন সতেরো শতকের বাঙালি সাহিত্য ‘শীতলা-মঙ্গল-কাব্য’, মানিকরাম গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘শুভ কবিতা’) তাঁর মর্যাদার অক্ষুণ্ণতা বজায় রাখতে অবদান আছে।
শীতলা উত্তর ভারতের অঞ্চলে ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়। কিছু ক্ষেত্রে তাঁকে শিবের সঙ্গী পার্বতী বলে চিহ্নিত করা হয়। শীতলাকে মাতা, মরশুমি দেবী (বসন্ত) হিসাবে সম্বোধন করা হয় এবং ঠাকুরানী, জগৎরানী ('বিশ্বের রাণী'), করুণাময়ী ('যিনি করুণায় পূর্ণ'), মঙ্গলা ('শুভ'), ভগবতী ('দেবী'), দয়াময়ী ('যিনি দয়া ও করুণায় পূর্ণ') নামে অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ ভারতে দেবী শীতলার ভূমিকাটি অবতার মারিয়ম্মান বা মারিয়াত্থা নিয়েছেন, যাকে দ্রাবিড় ভাষী লোকেরা উপাসনা করেন।
হরিয়ানা রাজ্যের গুড়গাঁওয়ে শীতলাকে কৃপী (গুরু দ্রোণাচার্যের স্ত্রী) বলে মনে করা হয় এবং গুড়গাঁওয়ের শীতলা মাতা মন্দিরে পূজা করা হয়।
শীতলা পূজা
সম্পাদনাশীতলা পূজা ব্রাহ্মণ ও পূজারী উভয়ই পরিচালনা করেন। শীত ও বসন্তের শুকনো মরসুমে শীতলা অষ্টমী নামে খ্যাত এই দিনটিতে প্রধানত তাঁর পূজা হয়।
তবে পুরোবাংলায় শুধু ফাল্গুন নয় চৈত্র মাসেও মঙ্গলবার, শনিবার শীতলা পূজা হয়।হাওড়ার শ্যামপুরের শিবগঞ্জ গ্রাম ও কলকাতার বেলেগাছার শ্রী শ্রী শীতলা মন্দিরে সারা চৈত্র মাস ধুমধাম করে পূজা হয়। হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার রতনপুর গ্রামের শীতলাদেবী প্রতিষ্ঠিত হন বাংলা ১১৩৪ (ইংরাজি ১৭২৭ সালে) সনে। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে, পরম নিষ্ঠাভরে অথচ অনাড়ম্বর ভাবে বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আবার হুগলীর খানাকুল থানার রঞ্জিৎবাটী কেটেদল গ্রামের শীতলা ও মনসা মাতা মন্দিরের পূজা প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। শীতলা মায়ের পূজা তিন দিন ধরে চলে মায়ের মন্দিরে,এই পুজোর আগের দিনে মায়ের জাগরন গান হয়,তার পরের দিন রুপনারায়ন নদী থেকে জল এনে শীতলা মায়ের মন্দিরে ঢালা হয়, এরপর হয় দণ্ডী কাটা, মায়ের আরতি হয়,ধুনো পুরানো মাধ্যম দিয়ে চলে শীতলা মায়ের পূজা, শীতলা মায়ের পূজা গোটা গ্রামের নিয়ে শুরু হয়,এবং পূজা দেখার জন্য বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা সমাগম হয় মায়ের মন্দিরে।দক্ষিণ সুন্দরবনের শীতলা মন্দির বা কাঁকড়া মায়ের মন্দিরে সাত দিন ধরে মা শীতলার পূজা হয়।এ সময় মেলা বসে।মায়ের ভোগে দেয়া হয় কাঁকড়া,মাছ,সবজি।এ মন্দিরে সপ্তাহে দু দিন মার পূজা হয় [২]।
মা শীতলার পুজোর জন্য অনেক আরতি সংগ্রহ ও স্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলেন শ্রী শীতলা মাতার চল্লিশা, শীতলা মায়ের আরতি এবং শ্রী শীতলা মাতা অষ্টক।
শীতলা মাতার স্নানযাত্রা
সম্পাদনাউত্তর হাওড়ার সালকিয়ায় প্রতি বছর মাঘি পূর্ণিমাতে বেশ ঘটা করে শীতলা মাতার স্নানযাত্রা করা হয়।এখানে বড়,মেজ,সেজ ও ছোট শীতলা মাতার মন্দির আছে।ছোট শীতলা মাতা ছাড়া সব শীতলা মা সাজানো পালকিতে করে গঙ্গার ঘাটে যান।লৌকিক মতে এখানকার শীতলা দেবীরা সাত বোন। এঁদের মধ্যে হরগঞ্জ বাজার এলাকায় পাসে অরবিন্দ রোডের মন্দিরে রয়েছেন শীতলা দেবীর বড় বোন। যা ‘বড়মার মন্দির’ নামে খ্যাত। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত সমাগম হয়। সাত বোনের মূর্তির কোনওটির কাঠ নির্মিত, কেউ হাঁড়িতে আঁকা। একমাত্র কয়েল বাগানের কয়েলেশ্বরী মা শীতলার মূর্তিটি পাথরের। শীতলা মাতার স্নানযাত্রা সালকিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত ধর্মীয় শোভাযাত্রা[৩]। এ উৎসবে সালকিয়া ও আশপাশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত আসে।
প্রতীকতা
সম্পাদনাশীতলাকে একটি যুবতী মেয়ের মতো উপস্থাপন করা হয় যিনি হাতপাখা দিয়ে তৈরি মুকুট পরে থাকেন, বাহন গাধা, একটি ছোট ঝাড়ু ধরে থাকেন (জীবাণু ও ধূলিকণা পরিষ্কার করার জন্য) এবং ডাল ভর্তি একটি পাত্র (ভাইরাস এর প্রতিকৃতি) বা ঠান্ডা জল (রোগ নিরাময়ের সরঞ্জাম)। নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে ওনাকে স্ল্যাব-পাথরে খোদাই করা একটি মাথার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। কখনও কখনও বলা হয় যে তিনি নিমের একগুচ্ছ পাতা (আজাদিরিচতা ইন্ডিকা) বহন করেন, এটি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতজুড়ে ব্যবহৃত একটি ঔষধি ভেষজ যা আজও বেশিরভাগ ত্বকের রোগের কার্যকর প্রতিকার বলে মনে করা হয়।
লোকদেবী শীতলা হলেন আধা দেবী কাত্যায়নীর রূপ। তিনি জ্বরের রোগীদের শীতলতা প্রদান করেন। দেবী মাহাত্ম্য অনুযায়ী, যখন জ্বরাসুর নামে এক অসুর সমস্ত বাচ্চাদের জীবাণু জ্বর দিয়েছিল, তখন দেবী কাত্যায়নী শীতলার রুপে এসেছিলেন বাচ্চাদের রক্ত শুদ্ধ করার জন্য এবং রক্তে জ্বরের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য। সংস্কৃতের 'জ্বরা' অর্থ "জ্বর" এবং 'শীতল' অর্থ "শীতলতা"। শীতলাকে মাঝে মাঝে জ্বরাসুর, জ্বরের অসুর; ঘেঁটু দেবতা, চর্মরোগের দেবতা; রক্তবতী, রক্ত সংক্রমণের এবং চৌষট্টি মহামারীর দেবী; সাথে চিত্রিত করা হয় এবং প্রায়শই ওলাদেবীর সাথে পূজা করা হয়, যিনি অন্য রোগের দেবী (মত্যান্তরে কলেরা রোগের দেবী বলা হয়ে থাকে)।
তিনি আটটি (৮) হাতে ত্রিশুল, ঝাড়ু, চক্র, জীবাণু ভর্তি পাত্র বা জলে ভরা পাত্র, নিম পাতা, বাঁকানো তরবারি, শঙ্খ এবং ভদ্র মুদ্রার সাথে চিত্রিত হয়েছেন। তার দুই পার্শ্বদেশে দুটি গাধার অবস্থান ও লক্ষ্য করা যায়। এই চিত্রণই তাকে সুরক্ষা, সৌভাগ্য, স্বাস্থ্য এবং শক্তির দেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বৌদ্ধধর্ম
সম্পাদনাবৌদ্ধ সংস্কৃতিতে জ্বরাসুর এবং শীতলাকে কখনও কখনও পার্ণশবরীর সহযোদ্ধা হিসাবে দেখানো হয়, বৌদ্ধ ধর্ম মতে যিনি রোগ নিরাময়ের দেবী। জ্বরাসুর এবং শীতলাকে যথাক্রমে তার ডান এবং বাম দিকে সজ্জিত করে দেখানো হয়েছে। কিছু ছবিতে বৌদ্ধ দেবী বজ্রযোগিনীর ক্রোধ থেকে বাঁচতে এই দেবদেবীদের পলায়নরতা অবস্থায় দেখানো হয়েছে।
মন্দির
সম্পাদনাকয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির:
শীতলা মাতার জন্মস্থান মাগ্ধা, বিহার শরীফ, নালন্দা শীতলা মাতা মন্দির, ময়নপুরী, উত্তর প্রদেশ শীতলা মাতা মন্দির, মিরুত, উত্তর প্রদেশ শীতলা চৌকিয়া ধাম মন্দির, জৌনপুর শীতলা মাতার মন্দির, খন্দ, সোনিপাট মা শীতলা মাকারা ধাম, জৌনপুর শীতলা মাতা মন্দির, জালোর, রাজস্থান শীতলা মাতার মন্দির, রাজস্থান এর রেঙ্গাস শীতলা মাতার মন্দির , বাঁধাঘাট, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ বড়,মেজ,সেজ ও ছোট শীতলা মায়ের মন্দির, সালকিয়া,উত্তর হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ শীতলা ও মনসা মাতা মন্দির,রঞ্জিৎবাটী কেটেদল গ্রাম,হুগলী,পশ্চিমবঙ্গ শ্রীশ্রীশীতলা মন্দির,বেল্গাছিয়া,কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ শীতলা মাতা মন্দির, গড়িয়া, কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ শীতলা মন্দির বা কাঁকড়া মায়ের মন্দির, দক্ষিণ সুন্দরবন,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,পশ্চিমবঙ্গ শীতলা মাতা মন্দির, উনা, হিমাচল প্রদেশ শীতলা মাতা মন্দির, পালামপুর, হিমাচল প্রদেশ হারুলংগফের শীতলবাড়ি, লুমডিং, নাগাঁও, আসাম শীতলা মাতা মন্দির, যোধপুর, রাজস্থান শীতলা মাতা মন্দির, কাউশম্ভী, উত্তর প্রদেশ শীতলা মাতা মন্দির, নিজামবাদ, আজমগড়, উত্তর প্রদেশ শীতলা মাতা মন্দির, বার্মার, রাজস্থান শীতলা মাতা মন্দির, বিদলান, সোনিপাট শীতলা দেবী মন্দির, গুড়গাঁও শীতলা মা মন্দির, সমতা শীতলা মা মন্দির মান্ড, মন্ডলা, মধ্য প্রদেশ
তথ্য উৎস
সম্পাদনা- ↑ "বাংলাপিডিয়া"। ২৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৫।
- ↑ Bangla, Aaj (২০১৯-০৪-০৩)। "ভক্তের ভক্তি আর বিশ্বাসে পূজিত হন দক্ষিণ সুন্দরবনের মা শীতলা । - Aaj Bangla"। Aaj Bangla | Bengali online News| Latest News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২।
- ↑ প্রবন্ধ। "মহামারী অতীত, মা শীতলা কালজয়ী"। anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১২।