শিম

ফাবাসিয়া শ্রেণীভুক্ত উদ্ভিদ যা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়

শিম (ইংরেজি: Bean) একটি অতি পরিচিত লতাজাতীয় বড়গাছের বীজ যা বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে ও এটি ফাবাসিয়া শ্রেণীভুক্ত। শিম মানুষ ও পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পেকে শুকিয়ে যাবার আগে যদি শিমের বীচি তোলা যায় তবে তা হয় সতেজ কাঁচা বা রান্না করে খাওয়ার মতো। সবুজ শিম মানে পেকে না যাওয়া শিম, এটা রঙ বোঝায় না।

দেশি জাতের সীম
শিম গাছ

প্রকারভেদ

সম্পাদনা
শিম, সাধারণ, কৌটাজাত, চিনিমুক্ত
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি৩৩৪ কিজু (৮০ kcal)
১০.৫ g
০.৫ g
৯.৬ g
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।

পৃথিবীতে অনেক জাতের শিম আছে, যেমন:

  • ভিসিয়া
    • ফাবা বা বড় শিম
       
      ভিসা ফাবা বা বড় শিম আমেরিকাতে যা ফাবা শিম নামে পরিচিত
  • ভিগনা
    • মথ শিম
    • আজুকি শিম
    • ইউরাড শিম
    • মাংগ শিম
    • রাইস শিম
    • কাউপি
  • সিসার
    • গারব্যাঞ্জো শিম
  • পিসাম
    • মটর
  • লাথিরাস
  • ইন্ডিয়ান মটর
  • টুবারাস মটর
  • লেন্স
    • কালিনারিস
       
      লেন্টিলস
  • ল্যাবলাব
    • হাইয়াসিন্থ শিম
       
      হাইয়াসিন্থ শিম
  • ফাসিউলুস
    • টপারি শিম
    • রানার শিম
    • লিমা শিম
    • কমন শিম
  • গ্লাইসিন
    • সয়াবীন
  • পসোফোকারপুস
  • কাজানুস
    • কবুতর শিম
  • স্টিজোলোবিয়াম
    • ভেলভেট শিম
  • সাইয়াম্পোসিস
    • গুয়ার
  • কানাভালিয়া
    • জ্যাক শিম
    • তলোয়ার শিম
  • ম্যাক্রোটাইলোমা
    • ঘোড়া গ্রাম
  • লুপিন
    • টারুই
    • লুপিনি শিম
  • ইরাইথ্রিনা
    • কোরাল শিম

বিষাক্ততা

সম্পাদনা

কিছু শিম আবার বিষাক্ত যেগুলো লাল রংয়ের এবং কিডনী শিম। এতে একটি বিষাক্ত পদার্থ ল্যাক্টিন আছে যা রান্না করার মাধ্যমে নষ্ট করা উচিত। প্রায় দশ মিনিট সিদ্ধ করে বিষাক্ত শিমকে খাবার উপযোগী করা যায়।[] শিম রান্না একটি ধীর রান্না পদ্ধতি, কারণ এখানে কম তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়, যা বিষ ধ্বংস করতে পারে না যদিও শিমটা খেতে খারাপ লাগে না বা বাজে গন্ধ থাকে না।[] (যদিও এটা সমস্যা হওয়া উচিত না যদি তা রান্নার সময় সিদ্ধ করা হয় ও আরো কিছুক্ষণ রেখে দেওয়া যায়।)

দেশি শিম

সম্পাদনা

ফ্রেঞ্চ বিন (French bean)শিমের অন্যতম প্রজাতি Phaseolus vulgaris, স্থানীয়ভাবে নানা নামে পরিচিত। যেমন চট্টগ্রাম এর স্থানীয় ভাষায় শিমকে চঁই নামে ডাকা হয়। এসব নামের অধিকাংশই শুধু প্রজাতির মধ্যেকার নির্দিষ্ট প্রকারগুলির (forms) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, প্রকারের গোটা লহরীর জন্য নয়। স্নাপবিন, সালাদ বিন, গ্রীন বিন, কিডনি বিন, হ্যারিক্ট বিন ইত্যাদি সবজি হিসেবে ব্যবহার্য জাতগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, আর ডাল হিসেবে ব্যবহার্যগুলি হলো ড্রাইবিন, নাভাল বিন ইত্যাদি।

বাংলাদেশে ফেঞ্চ বিনের চাষ না হলেও বাড়ির সবজি বাগানে প্রায়ই লাগানো হয়। বর্ষজীবী এই লতানো বা খাড়া গুল্মের মুখ্য মূল দ্রুত এক মিটার গভীরে পৌঁছে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে। লতানো জাতের কাণ্ড ১-৩ মিটার লম্বা, তাতে ১৫-৩০টি লম্বা পর্ব। পাতাগুলি একান্তর, ত্রিপত্রিক, কিছুটা রোমশ, দীর্ঘবৃন্তক; উপপত্র ক্ষুদ্র; পত্রিকা ডিম্বাকার, অখন্ড, দীর্ঘ। ফল সাধারণত সরু ও লম্বা, ৫-৭ বীজীয়। অঙ্কুরোদ্গম মৃদভেদী।

কচিফল ও পাকা শুকনো বীজের জন্যই ফ্রেঞ্চ বিনের চাষ হয়। অনেক প্রজাতির জাবপোকা (aphid) ও পাতার শোষক পোকা (leafhopper) শিমের ক্ষতি করে। সাধারণ রোগের মধ্যে অ্যানথ্রাকনোজ, রাস্ট, মোজাইক ও গোড়াপচা উল্লেখযোগ্য।

পুষ্টিগুণ

সম্পাদনা

শিমের মধ্যে প্রোটিন, জটিল শর্করা, ফোলেট এবং আয়রন বেশি থাকে।[] শিমেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার (তন্তু, আঁশ) এবং দ্রবণীয় ফাইবার থাকে।এক কাপ রান্না করা শিম ৯ থেকে ১৩ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে।[] দ্রবণীয় ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে।[]

উৎপাদন

সম্পাদনা

বিশ্বে শুকনো শিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ব্রাজিল, ভারত, চীন। ইউরোপে সেরা হলো জার্মানি

 
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের জামালপুরে শিম ফুল
শীর্ষ দশটি শুকনো সীম উৎপাদক — ১১ই জুন ২০০৮
দেশ উৎপাদন (টন) পাদটীকা
  ব্রাজিল ৩,৩৩০,৪৩৫
  ভারত ৩,০০০,০০০ F
  গণচীন ১,৯৫৭,০০০ F
  মিয়ানমার ১,৭৬৫,০০০ F
  মেক্সিকো ১,৩৯০,০০০ F
  যুক্তরাষ্ট্র ১,১৫০,৮০৮
  কেনিয়া ৫৩৫,০০০ F
  উগান্ডা ৪৩৫,০০০
  আর্জেন্টিনা ৩২৮,২৪৯
  ইন্দোনেশিয়া ৩২০,০০০ F
 সারা বিশ্বে ১৯,২৮৯,২৩১ A
প্রতীক ছাড়া = আধিকারিক চিত্র, P = আধিকারিক চিত্র, F = ফাও-এর হিসাব, * = আধা-আধিকারিক তথ্য, C = গণনাকৃত চিত্র, A = একত্রিত (আধা-আধিকারিক তথ্য, আধিকারিক বা হিসাব অনুযায়ী);

উৎস: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা: অর্থনীতি ও সামাজিক বিভাগ: পরিসংখ্যান বিভাগ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জুন ২০১২ তারিখে

সবুজ শিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্ক

শীর্ষ দশটি সবুজ শিম উৎপাদক — ১১ই জুন ২০০৮
দেশ উৎপাদন (টন) পাদটীকা
  গণচীন ২,৪৮৫,০০০ F
  ইন্দোনেশিয়া ৮৩০,০০০ F
  তুরস্ক ৪৯৯,২৯৮
  ভারত ৪২০,০০০ F
  স্পেন ২২৫,০০০ F
  মিশর ২১৫,০০০ F
  ইতালি ১৮৭,১৯০
  বেলজিয়াম ১০৫,০০০ F
  মরক্কো ১০০,০০০ F
  যুক্তরাষ্ট্র ১০০,০০০ F
 সারাবিশ্ব ৬,৩৭১,৩৩৩ A
প্রতীক ছাড়া = আধিকারিক চিত্র, P = আধিকারিক চিত্র, F = ফাও-এর হিসাব, * = আধা-আধিকারিক তথ্য, C = গণনাকৃত চিত্র, A = একত্রিত (আধা-আধিকারিক তথ্য, আধিকারিক বা হিসাব অনুযায়ী);

উৎস: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা: অর্থনীতি ও সামাজিক বিভাগ: পরিসংখ্যান বিভাগ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জুন ২০১২ তারিখে

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Foodborne Pathogenic Microorganisms and Natural Toxins Handbook: Phytohaemagglutinin"Bad Bug Book। United States Food and Drug Administration। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১১ 
  2. Mixed Bean Salad (information and recipe) from The Mayo Clinic Healthy Recipes ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে. Accessed February 2010.
  3. Dietary fiber: Essential for a healthy diet. MayoClinic.com (17 November 2012). Retrieved on 2012-12-18.

পাদটীকা

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা