শাকিল আহমেদ

বাংলাদেশের জেনারেল

মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাবেক ডিজি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই তারকা বিশিষ্ট জেনারেল । ১৯৫৬ সালের ১৮ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। চাকরি জীবনে তিনি ১, ২, ৩, ৯ ও ২০ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি; আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুল, ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন নিযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বিডিআরে সেক্টর কমান্ডার (রংপুর), ৬৬ আর্টিলারি ব্রিগেডে কমান্ডার, সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক সচিব ও ৬৬ পদাতিক ডিভিশনে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদেও নিয়োজিত ছিলেন। সবশেষে তিনি বিডিআরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ
মহাপরিচালক বাংলাদেশ রাইফেলস
মেজর জেনারেল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
রাষ্ট্রপতিজিল্লুর রহমান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৩ নভেম্বর ১৯৫৭ সালে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পূর্ব পাকিস্তান
মৃত্যু২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯(2009-02-25) (বয়স ৫১)
পিলখানা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণহত্যাকাণ্ড
জাতীয়তা বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীনাজনীন শাকিল শিপু
সন্তান
  • রাকীন আহমেদ (ছেলে)
  • আকীলা রাইদা আহমেদ (মেয়ে)
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
সামরিক প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, চট্টগ্রাম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফোর্ট সিল ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা
কাজের মেয়াদ১৯৭৬–২০০৯ (৩৩ বছর)
পদমেজর জেনারেল

কর্মজীবন

সম্পাদনা

মে.জে. শাকিল আহমেদ ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আর্মিতে আর্টিলারি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে মালয়েশিয়া আর্মড ফোর্সের ষ্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট লাভ করেন। আর আর্টিলারি কোর্স সম্পন্ন করেন ইউএস থেকে আর ডাইরেক্টিং ষ্টাফ গ্রাজুয়েট লাভ করেন বাংলাদেশ আর্মড ষ্টাফ কলেজ হতে। ২০০২ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ হতে গ্রাজুয়েট লাভ করে মেজর জেনারেল পদবি গ্রহণ করেন। অপারেশন ডাল- ভাত সহ ভারতের সাথে বিভিন্নধরনের সীমান্ত জটিলতা মুক্ত করেন। তাছাড়া তিনি লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন। মে.জে. শাকিল আহমেদ বাংলাদেশ আর্মিতে আর্টিলারি রেজিমেন্টে যোগদান করেন পরবর্তীকালে ডাইরেক্টিং ষ্টাফ গ্রাজুয়েশন লাভ করলে তাকে বাংলাদেশ রাইফেলসে বর্ডারে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ আর্মির আর্টিলারি স্কুলের নির্দেশক ও ফিল্ড আর্টিলারি বিগ্রেডের কমান্ডার ছিলেন। তিনি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ আমৃত্যু বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রধান (মহাপরিচালক) ছিলেন।[][]

সম্মাননা

সম্পাদনা

তার এ তেত্রিশ বছরের সামরিক জীবনীতে তার অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য দেশে বিদেশে অনেক সম্মাননা পান যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • নিরাপত্তা পদক
  • দাবানল পদক
  • ১৯৯১ সংসদ নির্বাচন পদক
  • গোল্ডেন জুবলী পদক
  • ১৯৯৮ মহাপ্লাবন পদক
  • জেষ্ঠ পদক ১

দেহাবসান

সম্পাদনা

২০০৯ সালে কিছু বিপথগামী বিডিআর সৈনিকদের হাতে ব্রাশফায়ারে শহীদ হন মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। বাংলাদেশ রাইফেলসের সৈন্যরা তাদের বেতন, জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য সুযোগ না পাওয়া সহ নানা অভিযোগ করে।[] অসন্তুষ্ট সৈন্যরা মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এবং তার কয়েকজন কমান্ডারকে সাথে দেখা করে এবং এই কর্মসূচি শেষে বা পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের অভিযোগ উত্থাপন করার আহবান জানান।[] সৈনিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে জেনারেল আহমেদকে বেসামরিক সরকারকে বার বার প্রচেষ্টার সত্ত্বেও।[] জেনারেল আহমেদ ২২ ফেব্রুয়ারি চ্যানেল আই-এর একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।[] বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে জওয়ানদের নানা ক্ষোভের কথা বলা হলেও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট হয়নি সাধারণ মানুষের কাছে।[]

ঘটনাবলী

সম্পাদনা

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিজিবির উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা বিদ্রোহ শুরু করে। ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হলেও পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে।[] ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিজিবির বার্ষিক দরবার চলাকালে দরবার হলে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী সৈনিক। মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে অস্ত্র তাক করলে পাশের কর্মকর্তারা মইনকে নিরস্ত্র করতেই জাগো স্লোগানের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে বিদ্রোহীরা।[] শুরু হয় গুলিবর্ষণ।  কর্নেল মুজিব, লে. কর্নেল এনায়েত আর মেজর মকবুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়।[১০] এদিকে, দরবার হলের ভেতরে অবস্থানরত সেনা কর্মকর্তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক পালিয়ে যাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে গুলি করা হয়। দুপুরের আগেই হত্যা করা হয় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে।[১১] এ ঘটনায় মোট ৭৪ জন সামরিক-বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়। অমানসিক অত্যাচার চালানো হয় সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ওপর।[১২] ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ পিলখানা থেকে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।[১৩] পিলখানায় এই বিদ্রোহের ঘটনায়   বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআর-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।  বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড[১৪]

উত্তরাধিকার

সম্পাদনা

তার স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়েছেন। তিনি কন্যা আকীলা রাইদা আহমেদ ও পুত্র রাকীন আহমেদকে রেখে গেছেন।[১৫]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "LIST OF FORMER DIRECTOR GENERALS"www.bgb.gov.bd। Border Guard Bangladesh। ২৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  2. Staff Correspondent। "BDR chief killed in hail of bullets"দ্য ডেইলি স্টার। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  3. "BBCBangla | খবর | তল্লাশী অভিযান চলছে"www.bbc.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  4. "The Daily Janakantha"oldsite.dailyjanakantha.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "বিদ্রোহের শুরু ও ডিজির স্ত্রীকে হত্যার বাস্তব কাহিনী | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  6. https://www.youtube.com/watch?v=NG7qerEYc1E
  7. "দরবার হলে সেদিন যা ঘটেছিল"জাগো নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  8. "Army officials lined up, killed"Priyo News। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  9. "সেদিন যাঁরা নিহত হন | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  10. "বিডিআর বিদ্রোহের ৮ বছর, যা ঘটেছিল সেদিন"প্রিয়.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  11. Staff Correspondent। "Maj Gen Shakil Ahmed was shot six times"দ্য ডেইলি স্টার। ২০ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  12. Betrayal and slaughter- BDR chief, wife killed
  13. "সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয় যেভাবে | বাংলাদেশ প্রতিদিন"Bangladesh Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  14. "রেহাই পায়নি নারী-শিশুরাও"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৬ 
  15. "BDR Massacre"। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১৯ 
পূর্বসূরী
মেজর জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯
উত্তরসূরী

মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন