শাঁখারিবাজার গণহত্যা
শাঁখারিবাজার গণহত্যা বলতে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পুরোনো ঢাকা শহরের শাঁখারিবাজার এলাকায় ঘটা গণহত্যাকে বোঝায়।[১] পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি হিন্দুদের ওপর এই গণহত্যা শুরু করে। যারা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন, তারা বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ওপারের গ্রামগুলোতে চলে যান। এই এলাকাটা বর্তমানে কেরাণীগঞ্জ নামে পরিচিত। শাঁখারিবাজার জনশূন্য হয়ে পড়ে। শুধু হিন্দুদের মৃতদেহগুলো রাস্তাঘাটে পড়েছিল। পাকিস্তান সরকার শাঁখারিবাজার রোডের নাম পাল্টে টিক্কা খান রোড নাম রাখে।[২]
শাঁখারিবাজার গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | শাঁখারিবাজার, ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান |
তারিখ | ২৬–২৭শে মার্চ, ১৯৭১ (ইউ.টি.সি +৬:০০) |
লক্ষ্য | বাঙালি হিন্দু |
হামলার ধরন | হত্যাকাণ্ড |
ব্যবহৃত অস্ত্র | মেশিন গান, রাইফেল |
হামলাকারী দল | পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার, আনসার |
পটভূমি
সম্পাদনাপুরোনো ঢাকার একেবারে কেন্দ্রে বাঙালি হিন্দু অধ্যুষিত শাঁখারিবাজার অবস্থিত। এখানকার মানুষ শাঁখের খোলস থেকে শঙ্খ, শাঁখা, পলা ইত্যাদি তৈরি করার সাথে যুক্ত। শাঁখারিবাজার রোদের খুব কাছেই জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজ-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘাঁটি গাড়ে। অপারেশন সার্চলাইট-এর সময় এই এলাকাটা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়।
ঘটনাবলী
সম্পাদনা২৫শে মার্চ সন্ধেবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী শাঁখারিবাজারের রাস্তাঘাট সব দখল করে ফেলে। তারা নবাবপুর রোড দিয়ে সদর ঘাট-এর দিকে এগিয়ে চলে। শাঁখারিবাজার রোড পার হওয়ার সময় তারা একটা বাড়িতে বোম মারে। বাড়িটার একটা অংশ ভেঙে পড়ে। ৩ জন তক্ষুনি মারা যায় এবং ৬ জন আহত হন।[৩]
২৬শে মার্চ বিকেলে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মূল শাঁখারিবাজার আক্রমণ করে।[৪] তারা শাঁখারিবাজার রোডের ৪৭ নং বাড়িটায় ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। বাড়ির গৃহকত্তা, গৃহিণী ও তাদের ছোটো ছেলে সেখানেই মারা যায়। বড়ো ছেলে অমর সুর বাড়ির পেছনের দরজার সরু গলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সেনারা মাইকে ঘোষণা করে এলাকার সকল বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে বলে। কিন্তু হায় !! বলির পাঁঠার মতো তারা বাইরে বেরোয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই সেনারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় ৫০ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হন। সবকটা হিন্দুবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।[১] প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে শুধু চন্দন সুরের বাড়ির আশেপাশেই ৩১ জনের মতো মারা গেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চন্দন সুর ঐ এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। ভোটের আগে ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা খইরুদ্দিন ওনাকে হাত করতে চেয়েও অসফল হন। খইরুদ্দিন, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। তো সেই রাগেই বোধহয় উনি পাকিস্তান সেনাদের চন্দন সুরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন।[৫] কালিদাস বৈদ্যের মতে, চন্দন সুরের ১২৬ জন প্রতিবেশীকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারা হয়।[৬]
এরপর
সম্পাদনাশাঁখারিবাজার জনশূন্য হয়ে পড়েছিল। সেনা, আনসার, রাজাকাররা সব সোনাদানা, বাসন ও আসবাবপত্র লুঠ করে। বিহারি মুসলিমরা গোটা এলাকাটা দখল করে। প্রত্যেকটা বাড়িতেই তারা বসবাস করতে শুরু করে দেয়। সরকার থেকে শাঁখারিবাজার রোডের নাম পাল্টে টিক্কা খান রোড করে দেওয়া হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Rahman, Rashad। একাত্তরের শাঁখারীবাজার: নাম বদলে রাখা হয়েছিল টিক্কা খান রোড। Kaler Kantho। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১২।
- ↑ Schanberg, Sidney (জুলাই ১৯, ১৯৭১)। "Pakistan kills, enslaves to crush Bengali spirit"। The Miami News। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Baidya, Kalidas (২০০৫)। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব। Kolkata: Karmakar Book Stall। পৃষ্ঠা 145।
- ↑ Shampa, Umm ul Wara (মার্চ ২৯, ২০১১)। "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" অযত্ন-অবহেলায় শাঁখারীবাজারের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ। Samakal। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১২।
- ↑ Safa, Ahmed (ফেব্রুয়ারি ২, ২০১২)। পঁচিশে মার্চ ॥ ১৯৭১ : ঢাকায় যা দেখেছি যা শুনেছি। Shaptahik। 4 (38)। মার্চ ৩০, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১২।
- ↑ Baidya, Kalidas (২০০৫)। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ মুজিব। Kolkata: Karmakar Book Stall। পৃষ্ঠা 147।