রায়ান ওনিল

মার্কিন অভিনেতা

চার্লস প্যাট্রিক রায়ান ওনিল (ইংরেজি: Charles Patrick Ryan O'Neal; জন্ম: ২০ এপ্রিল ১৯৪১)[] হলেন একজন মার্কিন অভিনেতা ও সাবেক মুষ্টিযোদ্ধা। ওনিল ১৯৬০ সালে তার অভিনয় জীবন শুরুর পূর্বে মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি এবিসির রাত্রীকালীন সোপ অপেরা পেটন প্লেস-এ রোডনি হ্যারিংটন চরিত্রে অভিনয় করেন। ধারাবাহিকটি হিট তকমা লাভ করে এবং ওনিল এই কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি পরবর্তী কালে লাভ স্টোরি (১৯৭০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে অস্কারসেরা নাট্য চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং পেপার মুন (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সেরা সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

রায়ান ওনিল
Ryan Oneal
১৯৬৮ সালে ওনিল
জন্ম
চার্লস প্যাট্রিক রায়ান ওনিল

(1941-04-20) ২০ এপ্রিল ১৯৪১ (বয়স ৮৩)
পেশাঅভিনেতা
কর্মজীবন১৯৬০-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীজোঅ্যানা মুর
(বি. ১৯৬৩; বিচ্ছেদ. ১৯৬৭)

লেই টেলর-ইয়ং
(বি. ১৯৬৭; বিচ্ছেদ. ১৯৭৩)
সঙ্গীফেরা ফসেট[] (১৯৭৯-১৯৯৭;
২০০১-২০০৯)
সন্তান৪, ট্যাটুম ওনিল-সহ
পিতা-মাতাচার্লস ওনিল (পিতা)
প্যাট্রিশিয়া ওলগা (মাতা)

তিনি পিটার বগদানভিচের হোয়াট্‌স আপ, ডক? (১৯৭২), স্ট্যানলি কুবরিকের ব্যারি লিন্ডন (১৯৭৫) ও রিচার্ড অ্যাটনবারার আ ব্রিজ টু ফার (১৯৭৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সফলতা অর্জন করেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগ থেকে তার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং তিনি টাফ গাইজ ডোন্ট ড্যান্স (১৯৮৮) ও বার্ন হলিউড বার্ন (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বাজে অভিনেতা বিভাগে রাসবেরি পুরস্কারে মনোনীত হন। তাকে টিভি ধারাবাহিক বোনস (২০০৫-২০১৭)-এ ধারবাহিকটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের পিতা চরিত্রে দেখা যায়। এছাড়া ২০১৫ সালে তিনি নাইট অব কাপস চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং ইউনিটি প্রামাণ্যচিত্র বর্ণনাকারী হিসেবে কাজ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

ওনিল ১৯৪১ সালের ২০শে এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার চার্লস ওনিল ও অভিনেত্রী প্যাট্রিশিয়া রুথ ওলগা (ক্যালাগান; ১৯০৭-২০০৩)-এর জ্যেষ্ঠ সন্তান।[] তার পিতা আইরিশ ও ইংরেজ বংশোদ্ভূত এবং মাতা তার মাতামহের দিক থেকে আইরিশ ও মাতামহীর দিক থেকে আশকেনাৎসি ইহুদি বংশোদ্ভূত।[] তার ভাই কেভিন একজন অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার।[]

ওনিল লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং সেখানে গোল্ডেন গ্লোবস মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫০-এর দশকের শেষভাগে তার পিতা সিটিজেন সোলজার টেলিভিশন ধারাবাহিকের লেখনীর কাজ পান, এবং তারা সপরিবারে মিউনিখে চলে যায়। সেখানে রায়ান মিউনিখ আমেরিকান হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

পেটন প্লেস

সম্পাদনা

১৯৬৪ সালে তিনি এবিসির রাত্রীকালীন সোপ অপেরা পেটন প্লেস-এ রোডনি হ্যারিংটন চরিত্রে কাজের জন্য নির্বাচিত হন। ওনিল বলেন তিনি এই চরিত্রে কাজের সুযোগ পান কারণ স্টুডিওটি তরুণ ডগ ম্যাক্লুরের খোঁজ করছিল।[] ধারাবাহিকটি ব্যাপক সফলতা লাভ করে এবং ওনিল এই কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। এই ধারাবাহিকের অন্যান্যরা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ডাক পান, যেমন মিয়া ফ্যারো (রোজাম্যারিস বেবি) ও বারবারা পারকিন্স (দ্য ভ্যালি অব দ্য ডলস) এবং ওনিলও চলচ্চিত্রে কাজের ইচ্ছা পোষণ করেন।[]

লাভ স্টোরি

সম্পাদনা

১৯৭০ সালের তিনি দ্য গেমস চলচ্চিত্রের অলিম্পিক মল্লক্রীড়াবিদ চরিত্রে অভিনয় করেন, ছবিটি তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। তবে দ্য গেমস-এর সহ-রচয়িতা এরিক সেগাল তার উপন্যাস ও চিত্রনাট্যে লাভ স্টোরি (১৯৭০) চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্রে কাজের জন্য ওনিলের নাম সুপারিশ করেন। বিউ ব্রিজেস ও জন ভইট-সহ আরো কয়েকজন অভিনেতা এই চরিত্রে কাজের প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পর ওনিলকে এই কাজের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার পারিশ্রমিক ছিল ২৫,০০০ মার্কিন ডলার; ওনিল বলেন জেরি লুইসের একটি চলচ্চিত্রে কাজের জন্য তিনি এর পাঁচগুণ পারিশ্রমিকের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি জানতেন লাভ স্টোরি তাকে বেশির সমৃদ্ধি এনে দিবে এবং তিনি এই কাজের প্রস্তাবটিই গ্রহণ করেন।[] প্যারামাউন্ট পিকচার্সের স্টুডিও প্রধান রবার্ট ইভান্স, যিনি এই চলচ্চিত্রের মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয়কারী অ্যালি ম্যাকগ্রকে বিয়ে করেছিলেন, জানান যে তারা ১৪ জন অভিনেতার পরীক্ষা নেন, কিন্তু কেউই ওনিলের সাথে তুলনাযোগ্য ছিলেন না। তিনি বলেন, এই চরিত্রটি ছিল "ক্যারি গ্র্যান্টের চরিত্রের মত - একজন অনুভূতিসম্পন্ন সুদর্শন মুখ্য পুরুষ চরিত্র।"[]

এই চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তির মধ্যবর্তী সময়ে তিনি এরিক অ্যাম্বলার রচিত টিভি চলচ্চিত্র লাভ হেট লাভ (১৯৭১)-এ অভিনয় করে ভালো রেটিং অর্জন করেন। এছাড়া তিনি পরিচালক ব্লেক এডওয়ার্ডসের পশ্চিমা ধাঁচের ওয়াইল্ড রোভারস (১৯৭২) চলচ্চিত্রে উইলিয়াম হোল্ডেনের সাথে অভিনয় করেন।

লাভ স্টোরি বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করে এবং ওনিল তারকা খ্যাতি অর্জন করেন ও তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে অস্কারসেরা নাট্য চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তবে ওনিল তাকে তার সহ-শিল্পী ম্যাকগ্রর মত লভ্যাংশ না দেওয়ায় তিনি অপ্রসন্ন ছিলেন।[][১০]

পেপার মুন

সম্পাদনা

তিনি পেপার মুন (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে তার কন্যা ট্যাটুম ওনিলের সাথে অভিনয় করেন। ট্যাটুম তার কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার অর্জন করেন এবং রায়ান সেরা সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে রায়ান প্রদর্শকদের ভোটে ক্লিন্ট ইস্টউডের পরে দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় তারকার খ্যাতি অর্জন করেন।[১১]

পুরস্কার ও মনোনয়ন

সম্পাদনা
বছর পুরস্কার বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল সূত্র
১৯৭০ দাভিদ দি দোনাতেল্লো শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেতা লাভ স্টোরি বিজয়ী
একাডেমি পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মনোনীত [১২]
গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার সেরা নাট্য চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোনীত [১৩]
১৯৭৩ সেরা সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র অভিনেতা পেপার মুন মনোনীত [১৪]
১৯৮৮ গোল্ডেন রাসবেরি পুরস্কার সবচেয়ে বাজে অভিনেতা টাফ গাইজ ডোন্ট ড্যান্স মনোনীত
১৯৯০ ১৯৮০-এর দশকের সবচেয়ে বাজে অভিনেতা মনোনীত
১৯৯৮ সবচেয়ে বাজে অভিনেতা বার্ন হলিউড বার্ন মনোনীত
২০০৫ রজতজয়ন্তীর সবচেয়ে বাজে রাজি পরাজিত মনোনীত

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ড্রেক, সামান্থা (২১ নভেম্বর ২০১৭)। "Farrah Fawcett and Ryan O'Neal's Relationship Was As Real As It Gets"কান্ট্রি লিভিং (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৯ 
  2. "Ryan O'Neal, Television Actor, Film Actor, Actor (1941–)"বায়োগ্রাফি (ইংরেজি ভাষায়)। এঅ্যান্ডই টেলিভিশন নেটওয়ার্কস। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৯ 
  3. "Charles O'Neal Biography (1904-1996)"ফিল্ম রেফারেন্স। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৯ 
  4. ব্লুম, নেট (৩ জানুয়ারি ২০১৪)। "celebrity jews"জে উয়িকলি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৯ 
  5. "Ryan O'Neal-Iron Man of Television"। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। ১৮ মার্চ ১৯৬৬। পৃষ্ঠা c15। 
  6. ক্রফোর্ড, লিন্ডা। (১০ জুলাই ১৯৬৬)। "'Who Wants to See Happiness?' Asks Ryan O'Neal of Peyton Place"। শিকাগো ট্রিবিউন। পৃষ্ঠা j13। 
  7. হ্যাভার, জয়েস (৬ ডিসেম্বর ১৯৭০)। "Ryan O'Neal Has Plenty of Stories"। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। পৃষ্ঠা v31। 
  8. "Ryan O'Neal, Ali to Play 'Love Story"। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। ৪ নভেম্বর ১৯৬৯। পৃষ্ঠা e12। 
  9. "Ryan O'Neal: Does Father Know Best?"। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। ২৩ জুলাই ১৯৭৮। পৃষ্ঠা v24। 
  10. সিস্কেল, জিন (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪)। "Movies: Ryan revives--what happened to this guy, anyway?"। শিকাগো ট্রিবিউন। পৃষ্ঠা l5। 
  11. স্টেইনবার্গ, কবেট (১৯৮০)। Film Facts। নিউ ইয়র্ক: ফ্যাক্টস অন ফাইল ইনকর্পোরেটেড। পৃষ্ঠা ৬০। আইএসবিএন 0-87196-313-2 
  12. "THE 43RD ACADEMY AWARDS 1971"অস্কার (ইংরেজি ভাষায়)। একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৯ 
  13. "Winners & Nominees 1971"গোল্ডেন গ্লোব (ইংরেজি ভাষায়)। হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৯ 
  14. "Winners & Nominees 1974"গোল্ডেন গ্লোব (ইংরেজি ভাষায়)। হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা