রত্ন শিল্পরীতি
রত্ন শৈলী হল বাংলার মন্দির স্থাপত্যের একটি শৈলী, যেটি মল্লভূম রাজ্যের (যাকে মল্ল রাজবংশও বলা হয়) অধীনে ১৫তম থেকে ১৬তম শতাব্দীর মধ্যে বাংলায় উদ্ভূত হয়েছিল। এটি হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের একটি আঞ্চলিক শৈলী হিসাবে উদ্ভূত হয়েছিল। চালা শিল্পরীতির মন্দিরের উপর চূড়া বসানো থাকলে তখন তাকে রত্ন মন্দির বলা হয়। রত্ন মন্দিরের বিশেষত্ব হলো চালার বাঁকানো কার্নিশ।[১] মল্ল রাজাদের করা মন্দির ছাড়াও কান্তজিউয়ের মন্দির রত্ন ধারার উল্লেখযোগ্য মন্দির।
সমগ্র বাংলায় রত্ন-শৈলীর মন্দির রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি মন্দির বিষ্ণুপুর শহরে পাওয়া যায়। রত্ন মন্দির চালা মন্দিরের একটি সম্প্রসারিত শিল্পরীতি। বর্তমান সময়কালে, মন্দিরগুলি দুটি পৃথক জাতীয় অঞ্চলে অবস্থিত: ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, ও বাংলাদেশ।
ইতিহাস
সম্পাদনাসতেরো শতকে মল্ল রাজাদের হাতে এই ধরনের মন্দিরের উত্কর্ষতা লাভ করেছিল। এই সময় মল্ল রাজারা যে সকল মন্দির তৈরী করেন সেগুলি রত্ন স্থাপত্য শৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। আঠারো শতকের দিকে আরও রত্ন ধারার মন্দির তৈরী হলেও সেগুলি মল্ল রাজাদের করা মন্দিরের সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে নি।
প্রকারভেদ
সম্পাদনাচূড়ার সংখ্যা হিসাবে একে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।[২][৩]
- একরত্ন
- পঞ্চরত্ন
- নবরত্ন
- এগারো-রত্ন
- তেরোরত্ন
- একুশ রত্ন
- পঁচিশ রত্ন
একরত্ন
সম্পাদনাচারচালার ঠিক মাঝখানে ছাদে একটি চূড়া বা রত্ন থাকলে তাকে এক রত্ন মন্দির বলে। হুগলির বাশবেরিয়ার অনন্ত বাসুদেব মন্দির এইধরনের একটি মন্দির।
পঞ্চরত্ন
সম্পাদনাএকরত্ন মন্দিরের চার কোনায় চারটি ছোট রত্ন বসানো থাকলে তাকে পঞ্চরত্ন মন্দির বলা হয়। হুগলির বাগনানের চৈতন্য বাটির শিব মন্দির এই ধরনের একটি মন্দির।
নবরত্ন
সম্পাদনাআটচালার উপর ও নিচ মিলিয়ে মোট আটকোনে আটটি এবং উপরের চালার মধ্যখানে একটি রত্ন বসিয়ে নবরত্ন মন্দির তৈরী হয়। ব্যারাকপুরের তাল্পুকুরের অন্নপূর্ণা মন্দির এই ধরনের মন্দির।
অন্যান্য
সম্পাদনাএইভাবে ক্রমশ রত্নের সংখ্যা বাড়িয়ে তেরো, সতেরো, একুশ, পঁচিশ রত্নের করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার রত্ন মন্দির গুলির কেন্দ্রীয় চূড়াটি আকারে বড়, তবে কোনের রত্ন গুলি ছোট।
আরোও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ রায়, প্রণব (২৭ জানুয়ারী ১৯৯৯)। বাংলার মন্দির। তমলুক: পুর্বাদ্রী প্রকাশক।
- ↑ "Terracotta Temples of Bengal"। Amit Guha (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১১-১৫। ২০১৮-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১১।
- ↑ "Sthapatya" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১২।