যৌন পরিচয়
যৌন পরিচয় বা জৈবিক লিঙ্গ পরিচয় হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা একজন আরকজনের প্রতি রোমান্টিক, যৌন উত্তেজনা বা ভালোবাসার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।.[১] যৌন পরিচয় বলতে আবার যৌন অভিমুখিতার পরিচয়কেও বুঝানোও হয়ে থাকে যেটি মানুষ তার যৌন অভিমুখিতার আচরণের মাধ্যমে কিংবা যৌন অভিমুখিতা ছাড়াও প্রকাশ করে।[২] যৌন পরিচয় বা মানব যৌনাচার শব্দটি যৌন অভিমুখিতার সাথে সংশ্লিষ্ট কিন্তু দুইটিই আলাদা।[১] এখানে আচরণ বলতে একজনের লিঙ্গের পরিচয়কে বুঝানো হয়েছে আর অভিমুখিতা বলতে বিপরীত কিংবা একই লিঙ্গের প্রতি যৌনতা বা ভালোলাগার অনুভূতিকে বোঝানো হয়েছে।
সংজ্ঞা ও পরিচয়
সম্পাদনাযৌন পরিচয়কে কোন ব্যক্তির পরিচয়ের একটি অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যা তাদের নিজ যৌনতা সম্পর্কিত স্বকীয় ধারণাকে তুলে ধরে। একটি সার্বিক বৃহত্তর পরিচয়ে নিজস্ব পরিচয় উপাদানসমূহের সমন্বয় (উদাহরণস্বরুপ. নৈতিক, ধর্মীয়, জাতীয়, পেশাগত) পরিচয়ের বহুমাত্রিক গঠন বিকাশের জন্য আবশ্যক।[৩]
যৌন পরিচয় কোন ব্যক্তির জীবনভর পরিবর্তিত হতে পারে, এবং তা তার জৈবিক যৌনতা, যৌন আচরণ ও প্রকৃত যৌন অভিমুখিতার সঙ্গে সমরেখ হতেও পারে বা নাও হতে পারে।[৪][৫][৬] উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ সমকামী, নারী সমকামী, ও উভকামী লোক হয়তো কোন সমকামবিদ্বেষী/বিপরীতকামবাদী পরিবেশে অথবা যেখানে সমকামী অধিকার দুর্বল সেখানে প্রকাশ্যে চিহ্নিত হবে না। ১৯৯০ সালে সোশাল অর্গানাইজেশন অব সেক্সুয়ালিটির একটি গবেষণায়, সমলিঙ্গের প্রতি বিভিন্ন মাত্রার আকর্ষণ অনুভব করেছেন এমন লোকদের মাত্র ১৬% নারী ও ৩৬% পুরুষের সমকামী বা উভকামী যৌন পরিচয় ছিল।[৭]
যৌন পরিচয় মূলত যৌন অভিমুখিতার চেয়ে যৌন আচরণের সঙ্গে অধিক নিকট-সম্পর্কিত। একই জরিপে দেখা গেছে যে সমকামী বা উভকামী পরিচয়সম্পন্নদের মাঝে ৯৬% নারী ও ৮৭% পুরুষ সমলিঙ্গের কারও সঙ্গে যৌন ক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে সম-যৌনতায় আকর্ষণ অনুভবকারীদের মধ্যে এ সংখ্যা নারী ৩২% ও পুরুষ ৪৩%। ফলাফল পর্যালোচনার পর, সংস্থাটি মন্তব্য করে: "সমকামী বা গে হিসেবে আত্ম-পরিচয়ের বিকাশ একটি মানসিক ও সামাজিকভাবে জটিল অবস্থা, যা এই সমাজে, কেবল সময়ের সাথে সাথে অর্জিত হয়, যাতে জড়িত থাকে যথেষ্ট ব্যক্তিগত সংগ্রাম, আত্ম-সন্দেহ ও সামাজিক অস্বস্তি।"[৭]
পরিচয়সমূহ
সম্পাদনাবিষমকামিতা বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের প্রতি আকর্ষণের একটি ধরন বর্ণনা করে।[৮] ইংরেজি স্ট্রেইট শব্দটি সাধারণত বিষমকামীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়[৯] বিষমকামীরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যৌন পরিচয় দল।[৯]
উভকামিতা পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের প্রতি,[৮] বা একাধিক লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের একটি ধরন বর্ণনা করে।[১০] উভকামী পরিচয় উভয় লিঙ্গের প্রতি সমান যৌন আকর্ষণের সমতুল্য নয়; সাধারণত, যাদের এক লিঙ্গের প্রতি কিছুটা আকর্ষণ বেশি রয়েছে তারাও নিজেদেরকে উভকামী হিসাবে চিহ্নিত করে।[১১]
সমকামিতা একই লিঙ্গের অন্যান্য ব্যক্তিদের প্রতি আকর্ষণের একটি ধরন বর্ণনা করে।[৮] লেসবিয়ান শব্দটি সাধারণত সমকামী মহিলাদের উল্লেখ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, এবং গে শব্দটি সাধারণত সমকামী পুরুষদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যদিও গে শব্দটি কখনও কখনও সমকামী মহিলাদেরও উল্লেখ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।[১২]
অযৌনকামিতা হল অন্যের প্রতি যৌন আকর্ষণের অভাব, বা যৌন ক্রিয়াকলাপের প্রতি কম বা অনুপস্থিত আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা।[১৩] এটি অযৌন উপ-পরিচয়গুলির একটি বিস্তৃত বর্ণালী অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও ব্যাপকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।[১৪] অযৌনকামিতা যৌন ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকা কিংবা ব্রহ্মচারিতা (celibacy) থেকে আলাদা।[১৫][১৬]
লেবেলবিহীন যৌনতা
সম্পাদনাতকমাবিহীন যৌনতা হল যখন কোন ব্যক্তি তাদের যৌন পরিচয়কে নির্দিষ্ট তকমা বা লেবেল দিতে অপছন্দ করে। এই পরিচয় তাদের নিজ যৌনতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা অথবা কোন যৌনতা ধারণ করতে অনিচ্ছুক হওয়া থেকে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। কারণ তারা আবশ্যকীয়ভাবে কোন তকমা পছন্দ করে না, অথবা তারা নিজস্ব যৌন পরিচয়ের কারণে জোরপূর্বক সম, বিপরীত, উভ বা সর্ব আকর্ষণ অনুভবের পরিবর্তে তাদের আকর্ষণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা অনুভব করতে চায়। তকমাবিহীন হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করার আরেকটি কারণ হতে পারে কারও "নিজ যৌনতার সংখ্যালঘু অবস্থান মেনে নেওয়ার প্রতি অনিচ্ছা।"[১৭] যেহেতু লেবেলবিহীন হওয়া কোনও যৌন পরিচয়ের উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্ত নয়, এটি উভকামিতা বা অন্য কোনও যৌন পরিচয় থেকে আলাদা। যারা লেবেলবিহীন তাদের যৌনতাকে কম স্থিতিশীল এবং তরল হিসেবে দেখার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং তারা "লিঙ্গ নয়, ব্যক্তি"র উপর আরও বেশি মনোনিবেশ করে।[১৮]
এছাড়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কিছু মহিলা নিজেদের লেবেলবিহীন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কারণ ভবিষ্যতে তাদের কী ধরনের সম্পর্ক থাকবে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। কারণ, যৌন লেবেল থেকে এই বিচ্যুতি একজন ব্যক্তিকে তার "সত্য" যৌনতাকে আরও সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারাকে সাহায্য করতে পারে। কারণ এটি যৌন পরিচয় দ্বারা নির্ধারিত লোকদের পছন্দ করা ও তাদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার চাপ থেকে তাদের মুক্তি দেয়।[১৭][১৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Reiter L (১৯৮৯)। "Sexual orientation, sexual identity, and the question of choice"। Clinical Social Work Journal। 17: 138–50।[১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Appropriate Therapeutic Responses to Sexual Orientation" (পিডিএফ)। American Psychological Association। ২০০৯: 63, 86। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫।
Sexual orientation identity—not sexual orientation—appears to change via psychotherapy, support groups, and life events.
- ↑ Luyckx, K., Schwartz, S. J., Goossens, L., Beyers, W., & Missotten, L. (2011). Processes of personal identity formation and evaluation. In S. J. Schwartz, K. Luyckx, & V. L. Vignoles(Eds), Handbook of identity theory and research (Vols 1 and 2) (pp.77-98). New York, NY: Springer Science + Business Media
- ↑ Sinclair, Karen, About Whoever: The Social Imprint on Identity and Orientation, NY, 2013 আইএসবিএন ৯৭৮০৯৮১৪৫০৫১৩
- ↑ Rosario, M.; Schrimshaw, E.; Hunter, J.; Braun, L. (২০০৬)। "Sexual identity development among lesbian, gay, and bisexual youths: Consistency and change over time"। Journal of Sex Research। 43 (1): 46–58। ডিওআই:10.1080/00224490609552298। পিএমসি 3215279 ।
- ↑ Ross, Michael W.; Essien, E. James; Williams, Mark L.; Fernandez-Esquer, Maria Eugenia. (২০০৩)। "Concordance Between Sexual Behavior and Sexual Identity in Street Outreach Samples of Four Racial/Ethnic Groups"। Sexually Transmitted Diseases। American Sexually Transmitted Diseases Association। 30 (2): 110–113। ডিওআই:10.1097/00007435-200302000-00003। পিএমআইডি 12567166।
- ↑ ক খ Laumann, Edward O. (১৯৯৪)। The Social Organization of Sexuality: Sexual Practices in the United States। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 298–301।
- ↑ ক খ গ "Sexual orientation, homosexuality and bisexuality"। American Psychological Association। আগস্ট ৮, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১০, ২০১৩।
- ↑ ক খ Bailey, J. Michael; Vasey, Paul; Diamond, Lisa; Breedlove, S. Marc; Vilain, Eric; Epprecht, Marc (২০১৬)। "Sexual Orientation, Controversy, and Science"। Psychological Science in the Public Interest। 17 (2): 45–101। ডিওআই:10.1177/1529100616637616 । পিএমআইডি 27113562।
- ↑ "Understanding Bisexuality"। American Psychological Association। ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৮, ২০১৯।
- ↑ Rosario, M.; Schrimshaw, E.; Hunter, J.; Braun, L. (২০০৬)। "Sexual identity development among lesbian, gay, and bisexual youths: Consistency and change over time"। Journal of Sex Research। 43 (1): 46–58। ডিওআই:10.1080/00224490609552298। পিএমআইডি 16817067। পিএমসি 3215279 ।
- ↑ "GLAAD Media Reference Guide" (পিডিএফ)। নভেম্বর ১২, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১।
- ↑ Robert L. Crooks; Karla Baur (২০১৬)। Our Sexuality। Cengage Learning। পৃষ্ঠা 300। আইএসবিএন 978-1305887428। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৪, ২০১৭।
- ↑ Scherrer, Kristin (২০০৮)। "Coming to an Asexual Identity: Negotiating Identity, Negotiating Desire"। Sexualities। 11 (5): 621–641। ডিওআই:10.1177/1363460708094269। পিএমআইডি 20593009। পিএমসি 2893352 ।
- ↑ Margaret Jordan Halter; Elizabeth M. Varcarolis (২০১৩)। Varcarolis' Foundations of Psychiatric Mental Health Nursing। Elsevier Health Sciences। পৃষ্ঠা 382। আইএসবিএন 978-1-4557-5358-1। সংগ্রহের তারিখ মে ৭, ২০১৪।
- ↑ DePaulo, Bella (সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১১)। "ASEXUALS: Who Are They and Why Are They Important?"। Psychology Today। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৩, ২০১১।
- ↑ ক খ Diamond, Lisa M (২০০৭)। "A dynamical systems approach to the development and expression of female same-sex sexuality"। Perspectives on Psychological Science। 2 (2): 142–161। ডিওআই:10.1111/j.1745-6916.2007.00034.x।
- ↑ ক খ Brooks, Kelly D.; Quina, Kathryn (২০০৯)। "Women's sexual identity patterns: Differences among lesbians, bisexuals, and unlabeled women"। Journal of Homosexuality। 56 (8): 1030–1045। ডিওআই:10.1080/00918360903275443।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- The End of Sexual Identity: Why Sex Is Too Important to Define Who We Are (2011) Jenell Williams Paris