প্রজনন (বা জনন) হল একটি জৈব প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে নতুন স্বতন্ত্র জীব - "অপত্য" - তৈরি হয়।

পাথরকুচি গাছের পাতার কিনারা বরাবর নতুন স্বতন্ত্র চারার জন্ম। ছবিতে দৃশ্যমান ছোট চারাটি ১ সেমি (০.৪ ইঞ্চি) মতো লম্বা। এই অযৌন জনন প্রক্রিয়া স্বতন্ত্র জীবের ধারনাকে বিস্তৃত করে।

প্রজনন সকল জীবের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য; প্রত্যেকটি জীবই প্রজননের ফসল। গ্যামেট তৈরি এবং দুটি গ্যামেটের সংযুক্তির ফলে জনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে ।

প্রকারভেদ

সম্পাদনা

জনন প্রধানত দুই প্রকারের হয় : - 1) অযৌন জনন 2) যৌন জনন

  • অযৌন জনন: অযৌন জনন[] প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির কোন জীব একই প্রজাতির অপর একটি জীবের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই প্রজনন করতে সক্ষম হয়| একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে দুটি নতুন ব্যাকটেরিয়া কোষ উৎপন্ন হওয়া অযৌন প্রজননের একটি উদাহরণ| তবে অযৌন প্রজনন শুধু এককোষী জীবে সীমাবদ্ধ নয়| অধিকাংশ উদ্ভিদ অযৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং মাইকোসেপাস স্মিথি নামক প্রজাতির পিঁপড়া অযৌন প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ প্রজনন ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অ্যামিবার দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়া অযৌন প্রজননের একটি উদাহরণ, এছাড়া জেলীফিশ এবং কিছু পতঙ্গ নিষেক ব্যতিরেকেই অসংখ্য ডিম পাড়তে পারে যা অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
 
হোভারফ্লাই মাছির যৌন প্রজনন
  • যৌন জনন: যৌন জননের জন্য একই প্রজাতির পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের দুটি জীবের সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন হয়| এছাড়া, ক্লোনিং পদ্ধতিতেও জীবের বংশবিস্তার ঘটানো যায়|[][] অধিকাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণীই এই প্রক্রিয়ায় প্রজননকর্ম সম্পাদন করে। এ ক্ষেত্রে পৃথক দুটি লিঙ্গের প্রাণীদেহে প্রজননের জন্য মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় দুটি পৃথক ধরনের কোষ উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘটে, পুংদেহে উৎপাদিত কোষকে শুক্রাণু এবং স্ত্রীদেহে উৎপাদিত কোষকে ডিম্বাণু বা ডিম্ব বলে| এই দুটি কোষ পরস্পর সম্মিলিত হয়ে নিষিক্ত হয় এবং তা থেকে জাইগোট সৃষ্টি হয়| এই জাইগোটই পরবর্তীকালে নতুন সন্তান হিসেবে আবির্ভূত হয়| যে সকল প্রাণী একই দেহে পুং ও স্ত্রী উভয় প্রকারের জনন কোষ উৎপন্ন করে তাদের হারমাফ্রোডাইট বলে। উদ্ভিদ জগতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, অধিকাংশ প্রজাতির শামুক এবং প্রায় সকল প্রজাতির উদ্ভিদ প্রজাতি হল হারমাফ্রোডাইট।

এছাড়া কিছু কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাঝে যৌন ও অযৌন উভয় প্রকার প্রজনন দেখা যায়।

প্রজননের গুরুত্ব

সম্পাদনা

(১) প্রজনন বা জনন-পদ্ধতির মাধ্যমে জীব বংশবিস্তার করে।

(২) জননের মাধ্যমে জীবের জীবনধারা অব্যাহত থাকে।

(৩) জননের ফলে জীবের সংখ্যা বাড়ে। মৃত্যুতে জীবের সংখ্যা কমে। তাই প্রকৃতির বুকে জীবকূল বজায় রাখতে জনন অপরিহার্য।

(৪) জননে একই রকম অপত্য জীব সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে জীবগোষ্ঠীর সমতা ও ভারসাম্য জনন নিয়ন্ত্রণ করে।

(৫) জননে নির্দিষ্ট সংখ্যক জীবগোষ্ঠী তৈরি হয় যা বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) ঠিক- মতো বজায় রাখতে সাহায্য করে।

(৬) যৌন জননের সময় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অপত্যের সৃষ্টি হতে পারে

(৭) প্রজননের ফলে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণে প্রজাতির মধ্যে প্রকারণ(Variation) ঘটে। প্রকারণ বিবর্তনে( Evolution)সাহায্য করে।[]

তুলনামূলক উপযোগিতা

সম্পাদনা

যৌন প্রজননের তুলনায় অযৌন প্রজনন অধিকতর সহজ, কিন্তু এক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধা উভয় বিদ্যমান রয়েছে:

  • অযৌন পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া একটি জীব শুধুমাত্র তার মাতৃদেহের জিন বহন করে।
  • যৌন পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া জীব জিনগতভাবে তাঁর পিতামাতা থেকে কিছুটা আলাদা হয়, তারা পিতামাতা উভয়ের কাছ থেকে জিনগত বৈশিষ্ট্য লাভ করে।

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. Halliday, Tim R. (১৯৮৬)। Reptiles & Amphibians। Torstar Books। পৃষ্ঠা 101আইএসবিএন 0-920269-81-8  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  2. S. P. Otto and D. B. Goldstein. "Recombination and the Evolution of Diploidy". Genetics. Vol 131 (1992): 745-751.
  3. Bernstein H, Hopf FA, Michod RE. (1987) The molecular basis of the evolution of sex. Adv Genet. 24:323-370. Review. PMID 3324702
  4. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর: এপ্রিল ১৯৮৬, পৃঃ ৭৮,৭৯

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • Tobler, M. & Schlupp,I. (2005) Parasites in sexual and asexual mollies (Poecilia, Poeciliidae, Teleostei): a case for the Red Queen? Biol. Lett. 1 (2): 166-168.
  • Zimmer, Carl. Parasite Rex: Inside the Bizarre World of Nature's Most Dangerous Creatures, New York: Touchstone, 2001.
  • "Allogamy, cross-fertilization, cross-pollination, hybridization"। GardenWeb Glossary of Botanical Terms (2.1 সংস্করণ)। ২০০২। 
  • "Allogamy"। Stedman's Online Medical Dictionary (27 সংস্করণ)। ২০০৪। 

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা