বজলুল হুদা

বাংলাদেশি সামরিক ব্যক্তিত্ব
(মোহাম্মদ বজলুল হুদা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মোহাম্মদ বজলুল হুদা ছিলেন একজন বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা, যাকে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয়।[] বজলুল হুদা ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টির হয়ে মেহেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[]

মেজর
বজলুল হুদা
মেহেরপুর-২ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৩ মার্চ ১৯৮৮ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০
পূর্বসূরীমোহাম্মদ নুরুল হক
উত্তরসূরীআব্দুল গনি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমোহাম্মদ বজলুল হুদা
(১৯৪৯-০১-১৯)১৯ জানুয়ারি ১৯৪৯
হাটবোয়ালিয়া গ্রাম, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা
মৃত্যু২৮ জানুয়ারি ২০১০(2010-01-28) (বয়স ৬১)
পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশি
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ ফ্রীডম পার্টি
পেশারাজনীতিবিদ
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য বাংলাদেশ
শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
পদমেজর
ইউনিটফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্ট
যুদ্ধবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

বজলুল হুদা মেহেরপুরের আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উহার রাজ্যের (সিলেট) শেষ বারো ভূঁইয়া নেতা উসমান খান লোহানীর সরাসরি বংশধর। তার মাতামহ একজন বিধায়ক ছিলেন। তার পিতা রিয়াজউদ্দিন আহমদ ১৯৫৪ সালে পূর্ববঙ্গ আইনসভার সদস্য ছিলেন।

কর্মজীবন

বজলুল হুদা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি ক্যাপ্টেন ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে চাকরিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে মেজর হন।

১৯৭৩ সালে ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ বজলুল হুদাকে মেজর শরিফুল হক ডালিমের সাথে কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রথম ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে পোস্ট করা হয়েছিল। ডালিম সহ কয়েকজন অফিসার খুব শীঘ্রই ভালো অনুশাসনের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।[] ১৯৭৫-এ আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলের সাথে ডালিমের ধস্তাধস্তি হয়। কিছু কর্মকর্তা ও সৈন্য মোস্তফার বাসায় আক্রমণ করে। পরে, ডালিমসহ অফিসাররা উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে কমিশন হারিয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

হুদা অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বৈঠক করেছিলেন। হুদা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় আক্রমণকারী বিদ্রোহী সেনাদের একজন ছিলেন।

শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পরে মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান শেখ মুজিবের বাড়িতে ক্যাপ্টেন হুদাকে মেজর পদোন্নতি দিয়েছিলেন।[][][]

ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে লে. কর্নেল) খন্দকার আব্দুর রশিদ, কর্নেল সাঈদ ফারুক রহমান ও মেজর বজলুল হুদা ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টির হয়ে মেহেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[][]

বিচার ও ফাঁসি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির বাসায় পরিবারসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার অন্যতম ছিলেন মেজর বজলুল হুদা।[]

১৯৯৬ সালে হুদাকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তখন হুদা নিজেকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করেছিলেন এবং শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘ শরণার্থী হাই কমিশনে আবেদন করেছিলেন।[]

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা দায়রা আদালত হুদাসহ ১৪ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ হাইকোর্টে আপিল করেন। ১৪ ডিসেম্বর ২০০০ সালে হাইকোর্ট এক বিভক্তিমূলক রায় দেয়, রায়ে একজন বিচারপতি সকলের মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেন এবং অন্য বিচারক ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেন। তৃতীয় বিচারপতি কেবল অভিযুক্ত ১২ জনের সাজার কথা বলেন। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে রায় দেয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।[১০] তবে মেজর বজলুর হুদার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারী ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শেখ হাসিনা তাকে নিজ হাতে গলা কেটে হত্যা করেন।[১১] ২০২৪ সালে হুদার পরিবার শেখ হাসিনাসহ আরো কয়েকজনকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন।[১২]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "সেই রাতে যা ঘটেছিল ফিরে দেখা"সমকাল। ২০২০-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৭ 
  2. "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  3. "Shahriar's confession"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  4. "Major Noor, Capt Bazlul Huda shot Bangabandhu dead"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জুলাই ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  5. "Pasha shot dead Begum Mujib, Jamal, 2 in-laws"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  6. "Shame darker than the night"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  7. "সেই ২৩৪ এমপি প্রার্থী এখন কোথায়"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৫ 
  8. এজাজ, রাহীদ (১৫ আগস্ট ২০২১)। "ঢাকায় আপনাকে দেখে নেব: রাষ্ট্রদূতকে বজলুল হুদা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪ 
  9. শেখ শাহরিয়ার জামান। "বজলুল হুদা ছিল 'হাই ভ্যালু প্রিজনার'"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪ 
  10. "ফাঁসি হলো ফারুক, শাহরিয়ার, হুদা ও দুই মহিউদ্দিনের"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। ২৮ জানুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ 
  11. "মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে নিয়ে পরিবারের বিস্ফোরক মন্তব্য"দৈনিক ইত্তেফাক। ২৪ আগস্ট ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  12. "বিপ্লবী মেজর বজলুল হুদাকে জেলখানায় জবাই করেছিলো"সুপ্রভাত সিডনী। ২০ আগস্ট ২০২৪। ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৪