মুসা খান
ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খান সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-২৭) বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সর্বাপাক্ষা শক্তিশালী ছিলেন। পিতা ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর মুসা খাঁ ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁয়ের মসনদের অধিকারী হন।[১] তিনি মুঘল আনগত্য অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন যুদ্ধ করেন। বৃহত্তর ঢাকা,কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলার অধিকাংশ স্থান নিয়ে তার রাজত্ব গঠিত হয়েছিল। সোনারগাঁ ছিল তার রাজধানী।
মুসা খান | |
---|---|
বাংলার বারো ভূঁইয়াদের নেতা | |
রাজত্ব | 1599–1611 |
মৃত্যু | ১৬২৩ ঢাকা |
সমাধি | |
বংশধর | মাসুম খান[৩] |
প্রাসাদ | জঙ্গলবাড়ি দুর্গ |
পিতা | ঈসা খাঁ |
ধর্ম | ইসলাম |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনামুসা খান সরাইলের এক বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঈসা খানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন, সম্ভবত তার মা ফাতিমা বিবি, যিনি ইব্রাহিম দানিশমান্দের কন্যা ছিলেন।[৪][৫] তাঁর পিতামহ, বাইস রাজপুত বংশের ভগীরথ, বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের দেওয়ান হিসাবে কাজ করার জন্য অযোধ্যা থেকে চলে আসেন। খানের দাদা কালিদাস গাজদানিও দেওয়ান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ইব্রাহিম দানিশমান্দের নির্দেশনায় ইসলাম গ্রহণ করেন, সুলাইমান খান নাম গ্রহণ করেন।[৬] সুলাইমান সুলতানের কন্যা সৈয়দা মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন এবং সরাইলের জমিদারি লাভ করেন যা মুসা খানের পিতার কাছে চলে যায়।[৭] মুসা খানের দুই ছোট ভাই ছিল, আবদুল্লাহ খান এবং মাহমুদ খান। তার মামাতো ভাই আলাউল খানের সাথে তারা তিনজন মুসা খানকে সহায়তা করেন যখন তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। ইলিয়াস খান নামে তার আরও এক ভাই ছিলেন যিনি পরে মুঘলদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।[৮]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৫৯৯ সালে পিতার মৃত্যুর পরে, মুসা খান বারো-ভূঁইয়াদের প্রধান হিসাবে বাংলার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন। তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মুঘল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলেন এবং ১৬ জুলাই ১৬১০ সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেনাপতি ইসলাম খান কর্তৃক পরাজিত হোন।[৯][১০] সুবাহদার ইবরাহিম খান ফতেহ জঙ্গ এর রাজত্বকালে (রাজত্ব: ১৬১৭-১৬২৪) তিনি মুঘলদের আনুগত্য স্বীকার করেন।[১১] পরে তিনি ত্রিপুরা বিজয় এবং কামরূপে বিদ্রোহের দমনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।
মৃত্যু
সম্পাদনামুসা খাঁ ১৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কার্জন হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত মুসা খান মসজিদের উত্তর- পূর্ব কোণে তার সমাধি রয়েছে।[১] জনশ্রুতি আছে যে, এই মসজিদটি তিনিই নির্মাণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "ঢাবি ক্যাম্পাসে মুসা খানের সমাধি ও মসজিদ"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৭।
- ↑ "মুসা খান"। বাংলাপিডিয়া।
- ↑ Muazzam Hussain Khan। "মাসুম খান"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ নভে ৩, ২০১৫।
- ↑ Society, Pakistan Historical (১৯৫৪)। Role of 'Isa Khan in the History of East Pakista (ইংরেজি ভাষায়)। Pakistan Historical Society.। পৃষ্ঠা ১২৯।
- ↑ Taifoor, Syed Muhammed (১৯৬৫)। Glimpses of Old Dhaka: A Short Historical Narration of East Bengal and Aassam [sic] with Special Treatment of Dhaka (ইংরেজি ভাষায়)। S.M. Perwez। পৃষ্ঠা ৯৪।
- ↑ Hussainy Chisti, Syed Hasan Imam (১৯৯৯)। "Arabic and Persian in Sylhet"। Sylhet: History and Heritage (ইংরেজি ভাষায়)। Bangladesh Itihas Samiti। পৃষ্ঠা ৬০০। আইএসবিএন 978-984-31-0478-6।
- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "ঈসা খান"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Dr. M. I. Borah (১৯৩৬)। Baharistan I Ghaybi Volume I। Guahati, Assam: Government of Assam। পৃষ্ঠা ৫৭।
- ↑ Sen, Sailendra. (২০১৩)। Textbook of medieval indian history.। [Place of publication not identified]: Primus Books। আইএসবিএন 93-80607-34-2। ওসিএলসি 822894456।
- ↑ Feroz, M A Hannan (২০০৯)। 400 years of Dhaka। Ittyadi। পৃষ্ঠা 12।
- ↑ খান, মুয়ায্যম হুসায়ন। "ইবরাহিম খান ফতেহ জঙ্গ"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৭।