মুজামা আল ইসলামিয়া
মুজামা আল-ইসলামিয়া (অর্থ: ইসলামিক কেন্দ্র) হলো একটি ইসলামি দাতব্য সংস্থা, যা ১৯৭৩ সালে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন, যিনি মিশর ভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুডের ফিলিস্তিন শাখার সাথে জড়িত ছিলেন। মুজামা আল ইসলামিয়া জনকল্যাণমুখী কাজের অংশ হিসেবে ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাঙ্ক, ডে কেয়ার, দরিদ্রদের মাঝে খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ এবং বিভিন্ন যুব সংগঠন তৈরি করা শুরু করে। তারা জনগণকে, বিশেষ করে শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারীদের সামাজিক সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। তরুণদের মধ্যে যারা সৌদি আরব এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে পড়াশোনা করতে চায়, এমন তরুণদের আর্থিক সহায়তা এবং বৃত্তি প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৭৩ |
---|---|
ধরন | এনজিও |
অবস্থান | |
এলাকাগত সেবা | ফিলিস্তিন |
মূল ব্যক্তিত্ব | আহমেদ ইয়াসিন |
আল-মুজামা আল-ইসলামিয়া ১৯৭৯ সালে ইসরায়েল সরকার কর্তৃক একটি দাতব্য সংস্থা হিসাবে পরিচালনা করার সনদ লাভ করে। ইসরায়েল সরকার সংস্থাটিকে সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গাজাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং গাজার বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, ক্লাব, বিদ্যালয়, [১] ও একটি গ্রন্থাগার নির্মাণের অনুমতি প্রদান করে। [২] ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে এবং আশির দশকে আল-মুজামা আল-ইসলামিয়া গাজার শহুরে শিক্ষিত মহিলাদেরকে ইসলামী পোশাক বা হিজাব পরতে অনুপ্রাণিত করতো বলে জানা যায়। [৩]
১৯৮৪ সালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি সন্দেহভাজন মসজিদে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং অস্ত্রের বিপুল মজুদ খুঁজে পেয়েছিল। এরপর শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং অন্যান্য সংগঠকদের অবৈধ অস্ত্র মজুদ করার অপরাধে জেলে বন্দী করে রাখা যায়। কিন্তু পরবর্তীতে জিবরিল চুক্তির অংশ হিসাবে ১৯৮৫ সালে তিনি মুক্তি পান। [৪] মুক্তির পর থেকে তিনি গাজা জুড়ে সংগঠনটির পরিধি আরও প্রসারিত করতে থাকেন। [১]
হামাস গঠন
সম্পাদনা১৯৮৭ সালে যখন প্রথম ইন্তিফাদার চলছিলো তখন শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং মুজামা আল ইসলামিয়ার আরও ছয়জন ব্যক্তি হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত এটি ফিলিস্তিনে অবস্থিত মুসলিম ব্রাদারহুডের আধাসামরিক শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে এবং শেখ ইয়াসিন এর প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা হয়ে উঠেন। তিনি ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার দায়ও স্বীকার করেন। ক্রমবর্ধমান হামলার প্রেক্ষিতে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। [৫] সেই সময়ের মধ্যে মুজামা আল ইসলামিয়া গাজার আনুমানিক চল্লিশ শতাংশ মসজিদ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। মুজামা আল ইসলামিয়ার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও হামাসের কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। তারা তহবিল সংগ্রহ করতো। বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য গ্রহণ, সংগঠনের প্রচার-প্রসার ইত্যাদি কাজ করতো। হামাসের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ, বিদ্যমান সদস্যদের চাকুরী দেয়া, তাদের সাহায্য করাও ছিলো অন্যতম কাজ। [৬]
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফাতাহ মিলিশিয়া বাহিনী গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায়। সেখানে মজুত করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করে। ফিলিস্তিনি টেলিভিশন সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায় কয়েক ডজন রকেট চালিত গ্রেনেড লঞ্চার, রকেট এবং অ্যাসল্ট রাইফেল, সেইসাথে হাজার হাজার বুলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে পাওয়া গেছে। [৭] [৮] ২০০৮ সালের গাজা যুদ্ধ চলাকালীন ডিসেম্বরে মাসে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর দ্বারা ছয়টি বিমান হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বোমা হামলা করা হয়েছিল। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী দাবি করেছিল যে, হামাস যে সমস্ত রকেট ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বেসামরিক মানুষের উপর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতো, সে সমস্ত অস্ত্র সংরক্ষণ এবং কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদন করা হতো বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে। এরমধ্যে ছিলো হামাসের সর্বাধিক ব্যবহৃত কাসাম রকেট। হামাস এই সকল অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করে। [৭][৯] এর পূর্বে ২০০৪ সালেও ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবী করেছিলো যে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি "অস্ত্র উন্নয়ন" কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। [১০]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Higgins, Andrew (২০০৯-০১-২৪)। "How Israel Helped to Spawn Hamas"। The Wall Street Journal। সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৪।
- ↑ Hamas Victory Is Built on Social Work. Los Angeles Times, March 2, 2006.
- ↑ "Women and the Hijab in the Intifada", Rema Hammami Middle East Report, May–August 1990
- ↑ "HAMAS and Israel: Conflicting Strategies of Group-Based Politics" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১০।
- ↑ "Sheikh Yassin: Spiritual figurehead"। BBC Online। ২২ মার্চ ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০০৭।
- ↑ Hamas: Politics, Charity, and Terrorism in the Service of Jihad (2006) by Matthew Levitt. pp 23-25 আইএসবিএন ৯৭৮-০৩০০১২২৫৮৯
- ↑ ক খ "IRAN'S GAZA GOONS CAUGHT AT HELM OF BOMB FACTORY," by ANDY SOLTIS with Post Wire Services, New York Post, Feb. 3, 2007 [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-১২-০৪ তারিখে
- ↑ "Gaza is hit with more Israeli airstrikes," by Steven Erlanger, New York Times, Friday, May 18, 2007 [২]
- ↑ Jerusalem Post, Dec 29, 2008, IAF bombs Islamic University's R&D labs, By YAAKOV KATZ [৩][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Israel strikes university in Gaza City"। Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৫।