মুঘল সাম্রাজ্য
মুঘল সাম্রাজ্য (আরবী: سَلْطَنَة اَلْهِنْدِيَّة সালতানাতাল হিন্দিয়া,[১১] ঐতিহাসিক হিন্দী: ہِنْدوسْتان হিন্দস্তান,[১২] ফার্সি: بلادِ هِنْدوسْتان বিলাদ-ই-হিন্দুস্তান[১৩]) ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য।[১৪][১৫] প্রায় দুই শতাব্দী ধরে সাম্রাজ্য পশ্চিমে সিন্ধু অববাহিকার বাইরের প্রান্ত, উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান এবং উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশের উচ্চভূমি এবং দক্ষিণ ভারতের ডেকান মালভূমির উপভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য মূলত পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।[১৬][১৭]
হিন্দুস্তান সাম্রাজ্য বিলাদ-ই-হিন্দুস্তান | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৫২৬–১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ | |||||||||||||
আওরঙ্গজেবের আমলে আনু. ১৭০০-এর দিকে সাম্রাজ্য শীর্ষে ছিল | |||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||||||
রাজধানী |
| ||||||||||||
প্রচলিত ভাষা |
| ||||||||||||
ধর্ম | রাষ্ট্রধর্ম:
| ||||||||||||
সরকার | সংঘবদ্ধ কাঠামোর অধীনে একক নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র
| ||||||||||||
সম্রাট[ক] | |||||||||||||
• ১৫২৬–১৫৩০ | বাবর (প্রথম) | ||||||||||||
• ১৮৩৭–১৮৫৭ | দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (শেষ) | ||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাক-আধুনিক | ||||||||||||
২১ এপ্রিল | |||||||||||||
১৭ মে ১৫৪০–২২ জুন ১৫৫৫ | |||||||||||||
৫ নভেম্বর ১৫৫৬ | |||||||||||||
১৫২৬–১৭৫২ | |||||||||||||
১৬৮০–১৭০৭ | |||||||||||||
১০ মে ১৭৩৮–১৭৪০ | |||||||||||||
২১ সেপ্টেম্বর | |||||||||||||
• মুঘল সম্রাটকে বার্মায় নির্বাসন | ১৮৫৮ | ||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||
১৬৯০[৬][৭] | ৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৫,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||
জনসংখ্যা | |||||||||||||
• ১৬৫০[৮] | ১,৪৫,০০,০০০০ | ||||||||||||
মুদ্রা | রুপি, টাকা, দাম[৯]:৭৩–৭৪[১০] | ||||||||||||
| |||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | আফগানিস্তান বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান |
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়।[১৮] মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাঘতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৫৫৬ সালে আকবরের ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্রূপদী যুগ শুরু হয়।[১৯] আকবর ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ভারতে অর্থনৈতিক প্রগতি বহুদূর অগ্রসর হয়। আকবর অনেক হিন্দু রাজপুত রাজ্যের সাথে মিত্রতা করেন। কিছু রাজপুত রাজ্য উত্তর পশ্চিম ভারতে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জারি রাখে কিন্তু আকবর তাদের বশীভূত করতে সক্ষম হন। মুঘল সম্রাটরা মুসলিম ছিলেন তবে জীবনের শেষের দিকে শুধুমাত্র সম্রাট আকবর ও তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর নতুন ধর্ম দীন-ই-ইলাহির অনুসরণ করতেন।[২০]
মুঘল সাম্রাজ্যর কাঠামো, যাইহোক, কখনও কখনও বাবরের নাতি আকবরএর শাসনের তারিখ ১৬০০ থেকে ধরা হয়।[২১] এই সাম্রাজ্যিক কাঠামো ১৭২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, শেষ প্রধান সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।[২২] তার রাজত্বকালে সাম্রাজ্যতার সর্বোচ্চ ভৌগোলিক ব্যাপ্তি অর্জন করে। পরবর্তীতে হ্রাস, বিশেষ করে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনামলে, পুরাতন দিল্লি এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে, ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ রাজ দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়।
মুঘল সাম্রাজ্য স্থানীয় সমাজে হস্তক্ষেপ করত না তবে প্রশাসনিকভাবে এসববের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হত।[২৩][২৪] অনেক বেশি কাঠামোগত, কেন্দ্রীভূত শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুঘল শাসনামলে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন মারাঠা, রাজপুত ও শিখরা সামরিক শক্তি অর্জন করে।
শাহজাহানের যুগে মুঘল স্থাপত্য এর স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। তিনি অনেক স্মৃতিসৌধ, মাসজিদ, দুর্গ নির্মাণ করেন যার মধ্যে রয়েছে আগ্রার তাজমহল, মোতি মসজিদ, লালকেল্লা, দিল্লি জামে মসজিদ। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। শিবাজী ভোসলের অধীনে মারাঠাদের আক্রমণের ফলে সাম্রাজ্যের অবনতি শুরু হয়। আওরঙ্গজেবের সময় দক্ষিণ ভারত জয়ের মাধ্যমে ৩.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এসময় সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫০ মিলিয়নের বেশি যা তৎকালীন পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং জিডিপি ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।[২৫][২৬]
১৮শ শতাব্দীর মধ্যভাগ নাগাদ মারাঠারা মুঘল সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সফলতা লাভ করে এবং দক্ষিণাত্য থেকে বাংলা পর্যন্ত বেশ কিছু মুঘল প্রদেশে বিজয়ী হয়। সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয় যার ফলে বিভিন্ন প্রদেশ কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। ১৭৩৯ সালে কারণালের যুদ্ধে নাদির শাহের বাহিনীর কাছে মুঘলরা পরাজিত হয়। এসময় দিল্লি লুন্ঠিত হয়। পরের শতাব্দীতে মুঘল শক্তি ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে পড়ে এবং শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের কর্তৃত্ব শুধু শাহজাহানাবাদ শহরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিপাহী বিদ্রোহের সমর্থনে তিনি একটি ফরমান জারি করেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহীতার অভিযোগ এনে কারাবন্দী করেছিল। শেষে তিনি রেঙ্গুনে নির্বাসিত হন এবং সেখানেই মারা যান।
নাম সমূহ
সম্পাদনাসমসাময়িকেরা বাবরের প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যকে 'তিমুরি' বা 'তৈমুরী' সাম্রাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন যা মুঘলরা নিজেরাও ব্যবহার করতেন।[২৭][২৮] মুগল সাম্রাজ্যের অন্য একটি নাম ছিল হিন্দোস্তান هندوستان, যা আইন-ই-আকবরীতে নথিভুক্ত রয়েছে এবং যা সাম্রাজ্যটির জন্য একটি সরকারী নামের নিকটতম হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।[২৯] মুগল প্রশাসনিক নথিতে সাম্রাজ্যকে বিলাদ-ই-হিন্দোস্তান (ফার্সি: بِلادِ هندوستان), বা হিন্দুস্তান দেশ এবং বিলায়ত-ই-হিন্দোস্তান (ফার্সি: وِلايتِ هندوستان) বা হিন্দোস্তান আধিপত্য হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।[১৩] বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর এর স্বরচিত উর্দু শায়েরীতে এ সাম্রাজ্যটিকে আমরা হিন্দোস্তান (উর্দূ:ہندوستان) হিসেবে চিহ্নিত হতে দেখি৷[১২] এছাড়াও আরবী ভাষায় এ সাম্রাজ্যের নাম ছিল সল্তনাত আল হিন্দীয়া (আরবী:سلطنة الهندية) যা সম্রাট আরঙ্গজেবের শাহী উপাধী হতে প্রমাণিত হয়৷[১১]
পাশ্চাত্যে 'মুঘল' (বা 'মোঘুল' Mogul) শব্দটি সম্রাট ও বৃহৎ অর্থে সাম্রাজ্য বোঝাতে ব্যবহৃত হত।[৩০] মঙ্গোল শব্দের আরবি ও ফারসি অপভ্রংশ থেকে 'মোগল' (বা মুগুল/মোগুল "مغول") শব্দটি এসেছে।[৩১] তবে সম্রাট বাবরের পূর্বপুরুষরা সাবেক মঙ্গোলদের চেয়ে ফারসি সংস্কৃতি দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন।
দিল্লী সালতনাতের আফগান বংশোদ্ভূত বাদশাহান এবং স্থানীয় জনসাধারণ হতে পৃথকী করণে মুঘল শব্দের প্রয়োগ শুরু হয়৷[৩১] মুঘল রাজবংশের পূর্ববর্তী সদস্যবৃন্দ চাগ্তাই তুর্কি ছিলেন, মোঙ্গল ছিলেন না৷ ঊনবিংশ শতকে এই শব্দের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়, এমন মত ইন্দোলজিস্টদের মাঝে অবিসংবাদিত নয়৷[৩২] মার্শাল হজসন এর মতে, এ রাজবংশটিকে ইন্দো-তৈমুরী বলাই অধিক শ্রেয়৷[৩১]
ইতিহাস
সম্পাদনাবাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত শাসক। বাবার দিক থেকে তিনি তৈমুর লং ও মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন।[৩৩] মধ্য এশিয়া থেকে বিতাড়িত হয়ে বাবর ভারতে ভাগ্য নির্মাণে নিয়োজিত হন। তিনি নিজেকে কাবুলের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং আফগানিস্তান থেকে খাইবার পাস হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন।[৩৩] পানিপথের যুদ্ধে বিজয়ের পর বাবরের সেনাবাহিনী উত্তর ভারতের অধিকাংশ এলাকা জয় করে নেয়।[৩৩] তবে শাসন পাকাপোক্ত করতে অনেক সময় লেগে যায়।[৩৩] অস্থিতিশীলতা তার ছেলে হুমায়ুনের সময়ও ছড়িয়ে পড়ে। হুমায়ুন দিগ্বিজয়ী সেনাপতি শেরশাহ কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত থেকে পারস্যে পালিয়ে যান।[৩৩] হুমায়ুনের সাথে পারস্যের সাফাভিদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং মুঘল সাম্রাজ্যে পারসীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাফাভিদের সহায়তায় হুমায়ুন মুঘলদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কিছুকাল পর নিজস্ব গ্রন্থাগারে ঘটা এক দুর্ঘটনায় হুমায়ুনের মৃত্যু হলে[৩৩] তার ছেলে আকবর অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় সিংহাসনে বসেন। আকবরের অভিভাবক বৈরাম খান ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করতে আকবরের সহায়তা করেছেন।[৩৩]
যুদ্ধ ও কূটনীতির মাধ্যমে আকবর সাম্রাজ্যকে সবদিকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। তিনি ভারতের সামাজিক গোষ্ঠীর সামরিক অভিজাতদের থেকে তার প্রতি অনুগত নতুন অভিজাত শ্রেণী গড়ে তোলেন। তিনি উন্নত সরকার ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।[৩৩] আকবর ইউরোপীয় বাণিজ্য কোম্পানিগুলোর সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পার্থক্য দূর করার জন্য আকবর দীন-ই-ইলাহি নামক নতুন ধর্ম তৈরি করেছিলেন। তবে এই ধর্ম প্রসিদ্ধ হয়নি। আকবরের ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর সমৃদ্ধির সাথে শাসন করেছেন। তবে জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিলেন। তার রাষ্ট্রীয় কাজে অনীহা দেখে দরবারের প্রভাবশালীরা তার সন্তান খুররম ও শাহরিয়ারের পক্ষ নিয়ে দু'দলে বিভক্ত হয়ে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের প্রভাবে পড়ে যান জাহাঙ্গীর। অবশেষে খুররম শাহজাহান হিসেবে মুঘল সিংহাসনে আরোহণ করেন[৩৩] শাহজাহানের শাসনকাল মুঘল দরবারের জাকজমকের জন্য প্রসিদ্ধ। এসময় অনেক বিলাসবহুল ইমারত নির্মিত হয় যার মধ্যে তাজমহল অন্যতম।[৩৩] এসময় দরবারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি ছিল।[৩৩]
বৃদ্ধ সম্রাট অসুস্থ হবার পর তার বড় ছেলে দারা শিকোহ উত্তরাধিকারী হন। সিংহাসন নিয়ে শাহজাহানের ছেলেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্যান্যদের পরাজিত করে শেষপর্যন্ত আওরঙ্গজেব জয়ী হন। দারা শিকোহকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[৩৩] মারাত্মক অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করায় আওরঙ্গজেব শাহজাহানকে গৃহবন্দী করেন। আওরঙ্গজেবের সময় মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে মুঘল সাম্রাজ্যের সরাসরি অধীনে নিয়ে আসেন। ১৭০৭ সালে তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের অনেক অংশ বিদ্রোহ করতে শুরু করে।[৩৩] আওরঙ্গজেবের ছেলে প্রথম বাহাদুর শাহ প্রশাসন সংস্কার করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তবে ১৭১২ সালে তার মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়ে। ১৭১৯ সালে চারজন দুর্বল সম্রাট পরপর শাসন করেছেন।[৩৩]
মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। মধ্য ভারতের অধিকাংশ মারাঠা সাম্রাজ্যের হাতে চলে যায়। নাদির শাহ দিল্লি আক্রমণ করেন এবং এতে মুঘল শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।[৩৩] সাম্রাজ্যে অনেক স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়।[৩৩] তবে মুঘল সম্রাটকে সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হত।[৩৪]
সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম মুঘল কর্তৃত্ব পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তাকে বাইরের শক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। এদের মধ্যে ছিলেন আফগানিস্তানের আমির আহমেদ শাহ আবদালি। ১৭৬১ সালে আবদালির নেতৃত্বাধীন আফগান ও মারাঠা সাম্রাজ্যের মধ্যে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হলেও ১৭৭১ সালে মারাঠারা আফগান-মুঘলদের কাছ থেকে দিল্লি পুনর্দখল করে নেয় এবং ১৭৮৪ সালে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে সম্রাটের রক্ষক হয়ে উঠে।[৩৫] তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় ছিল। এরপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল রাজবংশের রক্ষক হয়।[৩৪] সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর শেষ মুঘল সম্রাটকে ক্ষমতাচ্যুত করে নির্বাসনে পাঠানো হয়। এরপর ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়াকে ভারত সম্রাজ্ঞী ঘোষণা করা হয়।[৩৩]
পতন
সম্পাদনাইতিহাসবিদরা মুঘল সাম্রাজের পতনের বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে সাম্রাজ্যে প্রধান কর্মচারী, আমিরদের বেতন দিতে প্রয়োজনীয় রাজস্ব ছিল না(তথ্যসূত্র প্রয়োজন)। আঞ্চলিক শাসকদের উপর সম্রাট নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেনাবাহিনীকে অধিক মাত্রায় আগ্রাসী মারাঠাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনব্যপী চলমান যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় ফলে তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। ফররুখসিয়ারের মৃত্যুর পর স্থানীয় শাসকরা ক্ষমতা নিতে শুরু করে।[৩৬]
১৯৭০ এর দশক থেকে ইতিহাসবিদরা বেশ কয়েকভাবে পতনকে ব্যাখ্যা করেছেন। মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় দেখা যায় উচ্চশ্রেণীর মধ্যে অসাধুতা, অত্যধিক বিলাসিতা এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি শাসকদের বাহ্যিক হুমকির ব্যাপারে অপ্রস্তুত করে তোলে। একটি মার্ক্সবাদী মতানুযায়ী, ধনীদের হাতে কৃষকদের নিপীড়নের কারণে শাসনের প্রতি জনসমর্থন কমে যায়।[৩৭] আরেকটি মতানুযায়ী হিন্দু ধনী সম্প্রদায় মুঘল সাম্রাজ্যের বদলে মারাঠা ও ব্রিটিশদের অর্থসহায়তা প্রদান করে।[৩৮] ফলে নানান আঞ্চলিক শক্তির উত্থান হয় । তৃতীয়়়ত তরা ধর্মীয় মতানুসারে শাসনে রাজপুতরা মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।[৩৯] তবে চূড়ান্ত মত হিসেবে অন্যান্য পণ্ডিতরা বলেন যে সাম্রাজ্যের অত্যধিক সমৃদ্ধি প্রদেশগুলোকে অধিক মাত্রায় স্বাধীনতা অর্জনে উৎসাহ যোগায় এবং রাজ দরবারকে দুর্বল করে তোলে।[৪০]
সম্রাটদের তালিকা
সম্পাদনাপোর্ট্রেট | অলংকারিক নাম | জন্ম নাম | জন্ম | শাসনকাল | মৃত্যু | টীকা |
---|---|---|---|---|---|---|
বাবর بابر |
জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ ظہیر الدین محمد |
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৪৮৩ | ৩০ এপ্রিল ১৫২৬ – ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ | ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ (৪৭ বছর) | বাবা ও মায়ের দিক থেকে যথাক্রমে তৈমুর লং ও চেঙ্গিস খানের বংশধর। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। | |
হুমায়ুন ہمایوں |
নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ نصیر الدین محمد ہمایوں |
১৭ মার্চ ১৫০৮ | ২৬ ডিসেম্বর ১৫৩০ – ১৭ মে ১৫৪০ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ১৫৫৫ - ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ | ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ (৪৭ বছর) | সুরি সম্রাট শের শাহ সুরির হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৫৫৫ সালে পুনরায় ক্ষমতাদখলে সক্ষম হন। এর অল্পকাল পর দুর্ঘটনায় মারা যান। | |
আকবর-এ-আজম اکبر اعظم |
জালালউদ্দিন মুহাম্মদ جلال الدین محمد اکبر |
১৪ অক্টোবর ১৫৪২ | ২৭ জানুয়ারি ১৫৫৬ – ২৭ অক্টোবর ১৬০৫ | ২৭ অক্টোবর ১৬০৫ (৬৩ বছর) | আকবর ও বৈরাম খান পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করেন। চিতোরগড় অবরোধে আকবর সফল হন। আকবর সাম্রাজ্যকে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করেন এবং মুঘল শাসকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিবেচিত হন। রাজপুত রাজকন্যা মরিয়ম উজ জামানিকে আকবর বিয়ে করেছিলেন। লাহোর দুর্গ আকবরের সময় নির্মিত অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা।তিনি দ্বীন-ই-ইলাহি ধর্মের প্রবর্তক। | |
জাহাঙ্গীর جہانگیر |
নূরউদ্দিন মুহাম্মদ সেলিম نور الدین محمد سلیم |
২০ সেপ্টেম্বর ১৫৬৯ | ১৫ অক্টোবর ১৬০৫ – ৮ নভেম্বর ১৬২৭ | ৮ নভেম্বর ১৬২৭ (৫৮ বছর) | মুঘল সম্রাটদের মধ্যে জাহাঙ্গীর সর্বপ্রথম পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি মদ্যপ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী নূর জাহান এসময় মূল ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেন। | |
শাহজাহান-এ-আজম شاہ جہان اعظم |
শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ খুররম شہاب الدین محمد خرم |
৫ জানুয়ারি ১৫৯২ | ৮ নভেম্বর ১৬২৭ – ২ আগস্ট ১৬৫৮ | ২২ জানুয়ারি ১৬৬৬ (৭৪ বছর) | শাহজাহানের যুগে মুঘল শিল্প ও স্থাপত্য সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌছায়। তিনি তাজমহল, দিল্লি জামে মসজিদ, লালকেল্লা, জাহাঙ্গীরের মাজার, শালিমার বাগান নির্মাণ করেছেন। | |
আলমগীর عالمگیر |
মুহিউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব محی الدین محمداورنگزیب |
৪ নভেম্বর ১৬১৮ | ৩১ জুলাই ১৬৫৮ – ৩ মার্চ ১৭০৭ | ৩ মার্চ ১৭০৭ (৮৮ বছর) | আওরঙ্গজেব শরিয়া আইনের প্রচলন পুনরায় শুরু করেন। ফতোয়া-ই-আলমগীরি নামক আইন সংকলন তার সময় প্রণীত হয়। গোলকুন্ডা সালতানাতের হীরার খনি তিনি জয় করেছিলেন। জীবনের শেষ ২৭ বছরের অধিকাংশ সময় আওরঙ্গজেব বিদ্রোহী মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন। তার শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। ব্যাপক বিস্তৃত সাম্রাজ্য মনসবদারদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হত। তার মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য বিভিন্ন দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। নিজের হাতে কুরআন লিপিবদ্ধ করার জন্য আওরঙ্গজেব অধিক পরিচিত। দক্ষিণাত্যে মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তিনি মারা যান। | |
আজম শাহ اعظم شاہ |
কুতুবউদ্দিন মুহাম্মদ مرزا محمد معظم |
২৮ জুন ১৬৫৩ | ১৪ মার্চ ১৭০৭ – ৮ জুন ১৭০৭ | ৮ জুন ১৭০৭ (৫৩ বছর) | ||
প্রথম বাহাদুর শাহ پہلے بہادر شاہ প্রথম শাহ্ আলম پہلے شاہ عالم |
মির্জা মুহাম্মদ মুয়াজ্জম قطب الدین محمد |
১৪ অক্টোবর ১৬৪৩ | ১৯ জুন ১৭০৭ – ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ (৬৮ বছর) | তিনি মারাঠাদের সাথে সমঝোতা করেন, রাজপুতদের শান্ত করেন এবং পাঞ্জাবের শিখদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানে আসেন। | |
জাহানদার শাহ جہاندر شاہ |
মুইজউদ্দিন মুহাম্মদ معین الدین محمد |
৯ মে ১৬৬১ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭১২ – ১১ ফেব্রুয়ারি ১৭১৩ | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৭১৩ (৫১ বছর) | ||
ফররুখসিয়ার فرخ سیار |
মুইনউদ্দিন মুহাম্মদ معیز الدین محمد |
২০ আগস্ট ১৬৮৫ | ১১ জানুয়ারি ১৭১৩ – ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৭১৯ | ২৯ এপ্রিল ১৭১৯ (৩৩ বছর) | ১৭১৭ সালে একটি ফরমানের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শুল্ক ছাড়া বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। সৈয়দ ভাইরা তার সময়ে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠে। | |
রাফি উল-দারজাত رفیع الدراجات |
শামসউদ্দিন মুহাম্মদ رفیع الدین محمد |
৩০ নভেম্বর ১৬৯৯ | ২৮ ফেব্রুয়ারি – ৬ জুন ১৭১৯ | ৯ জুন ১৭১৯ (১৯ বছর) | ||
দ্বিতীয় শাহজাহান شاہ جہاں ثانی |
রাফি-উদ্দিন মুহাম্মদ شمس الدین محمد |
জুন ১৬৯৬ | ৬ জুন ১৭১৯ – ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ | ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ (২৩ বছর) | ---- | |
মুহাম্মদ শাহ محمد شاہ |
নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ مجاہد الدین محمد |
১৭ আগস্ট ১৭০২ | ২৭ সেপ্টেম্বর ১৭১৯ – ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ | ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ (৪৫ বছর) | সৈয়দ ভাইদের হাত থেকে নিস্কৃতি পান। মারাঠাদের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ে দক্ষিণাত্য ও মালওয়া হারান। শাসনামলে নাদির শাহের আক্রমণ হয়। সাম্রাজ্যের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম শেষ সম্রাট। | |
আহমেদ শাহ বাহাদুর احمد شاہ بہادر}} |
মুজাহিদউদ্দিন মুহাম্মদ ناصر الدین محمد |
২৩ ডিসেম্বর ১৭২৫ | ২৬ এপ্রিল ১৭৪৮ – ২ জুন ১৭৫৪ | ১ জানুয়ারি ১৭৭৫ (৪৯ বছর) | সিকান্দারাবাদের যুদ্ধে মারাঠাদের বিপক্ষে মুঘলদের পরাজয় | |
দ্বিতীয় আলমগীর عالمگیر ثانی |
আজিজউদ্দিন মুহাম্মদ عزیز الدین محمد |
৬ জুন ১৬৯৯ | ২ জুন ১৭৫৪ – ২৯ নভেম্বর ১৭৫৯ | ২৯ নভেম্বর ১৭৫৯ (৬০ বছর) | উজির গাজিউদ্দিন খান ফিরোজ জঙের আধিপত্য | |
তৃতীয় শাহজাহান شاہ جہاں سوم |
মুহিউল মিল্লাত محیۃ ملت |
১৭১১ | ১০ ডিসেম্বর ১৭৫৯ – ১০ অক্টোবর ১৭৬০ | ১৭৭২ | ||
দ্বিতীয় শাহ আলম شاہ عالم ثانی |
জালালউদ্দিন মুহাম্মদ আলি গওহর جلال الدین محمد علی گوہر |
২৫ জুন ১৭২৮ | ১০ অক্টোবর ১৭৬০ – ৩১ জুলাই ১৭৮৮ এবং ১৬ অক্টোবর ১৭৮৮ - ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ | ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ (৭৮ বছর) | মারাঠারা তাকে মুঘল সম্রাট হিসেবে মেনে নেয়।[৪১] পরে ১৭৬১ সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর আহমেদ শাহ দুররানি কর্তৃক ভারতের সম্রাট স্বীকৃত হন।[৪২] ১৭৬৪ সালে মুঘল সম্রাট, আওধের নবাব এবং বাংলা ও বিহারের নবাবের সম্মিলিত শক্তি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়। যুদ্ধে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় শাহ আলম এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করেন। এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে হানাহানি বন্ধ হয়। ১৭৭২ সালে মারাঠা নিরাপত্তায় তাকে মুঘল সিংহাসনে বসানো হয়।[৪৩] তার শাসনামলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় মুঘল নিজামত বিলুপ্ত করে। | |
চতুর্থ শাহজাহান جہاں چہارم |
বিদার বাখত মাহমুদ শাহ বাহাদুর জাহান শাহ بیدار بخت محمود شاہ بہادر جہاں شاہ |
১৭৪৯ | ৩১ জুলাই ১৭৮৮ – ১১ অক্টোবর ১৭৮৮ | ১৭৯০ (৪০-৪১ বছর) | ||
দ্বিতীয় আকবর শাহ شاہ ثانی |
মুইনউদ্দিন মুহাম্মদ معین الدین محمد |
২২ এপ্রিল ১৭৬০ | ১৯ নভেম্বর ১৮০৬ – ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ (৭৭ বছর) | ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পর দ্বিতীয় আকবর শাহ ব্রিটিশ পেনশনভোগী হয়ে পড়েন। ব্রিটিশ নিরাপত্তায় তিনি আনুষ্ঠানিক প্রধান ছিলেন। | |
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ شاہ ثانی |
আবু জাফর সিরাজউদ্দিন মুহাম্মদ ابو ظفر سراج الدین محمد |
২৪ অক্টোবর ১৭৭৫ | ২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৩৭ – ১৪ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ (১৯ বছর ৩৫১ দিন) | ৭ নভেম্বর ১৮৬২ | শেষ মুঘল সম্রাট। সিপাহী বিদ্রোহের পর তাকে বন্দী করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেয়া হয়। এর মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে। তিনি রেঙ্গুনে মারা যান। |
ভারত উপমহাদেশে প্রভাব
সম্পাদনাদক্ষিণ এশিয়ার শিল্প ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাভারত উপমহাদেশে মুঘলরা অনন্য স্থাপত্য শৈলী দান করেছে। এসময়ে নির্মিত অনেক স্থাপত্য নিদর্শন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। তাজমহল মুঘল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যান্য বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে হুমায়ুনের মাজার, ফতেহপুর সিক্রি, লালকেল্লা, আগ্রা দুর্গ ও লাহোর দুর্গ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চল যেমন আগ্রা, আওরঙ্গবাদ, দিল্লি, ঢাকা, ফতেহপুর সিক্রি, জয়পুর, লাহোর, কাবুল, শেখপুরে মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে।[৪৪]
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মুঘলদের অবদান রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থায় অনেক ক্ষুদ্র রাজ্য পরস্পর নিকটে আসে।[৪৫] পারস্যের শিল্প ও সংস্কৃতি ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে যুক্ত হয়।[৪৬] আরব ও তুর্কীয় অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে নতুন বাণিজ্য রুট চালু হয়। মুঘল রান্না ভারত উপমহাদেশের একটি বিশেষত্ব। ভারতীয় স্থাপত্য যেমন রাজপুত ও শিখ শাসকদের প্রাসাদে মুঘল স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও বাগান তৈরিতে মুঘলদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। মুঘল সাম্রাজ্যের অংশসমূহ বর্তমানে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হলেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
উর্দু ভাষা
সম্পাদনাফারসি প্রধান এবং সরকারি ভাষা হলেও পরবর্তী সময়ে উর্দু অভিজাত শ্রেণীর ভাষা হয়ে উঠে। উর্দু ভাষা ফারসি ও আরবি প্রভাবিত এবং তা নাস্তালিক লিপিতে লেখা হয়। হিন্দি ও উর্দুর মিল থাকলেও শব্দভান্ডারের দিক থেকে দুইটি ভাষা পৃথক। হিন্দি শব্দ সংস্কৃত প্রভাবিত আর উর্দু আরবি, ফারসি, তুর্কীয় ভাষা প্রভাবিত।[৪৭] বর্তমানে উর্দু পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা এবং ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহসরকারি ভাষা।
মুঘল সমাজ
সম্পাদনামুঘল শাসনামলে ভারতের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী ছিল। এসময় সড়ক নির্মাণ, একক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু ও রাষ্ট্রের একত্রীকরণ হওয়ায় অর্থনীতি লাভবান হয়।[৪৮] কৃষি ও উৎপাদিত পণ্য বিশ্বব্যপী বিক্রি হত। জাহাজ নির্মাণ, কাপড় প্রস্তুতি ইত্যাদি এসময় গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ছিল। মক্কায় হাজিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য মুঘলদের ক্ষুদ্র নৌবহর ছিল। এছাড়া এর মাধ্যমে আরব ঘোড়া আমদানি করা হত। নদীপথে সেনা পরিবহন এবং বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ের জন্য নদীতে নৌবহর ছিল। এর নৌ সেনাপতিদের মধ্যে ছিলেন ইয়াহিয়া সালেহ, মুনাওয়ার খান ও মুহাম্মদ সালেহ কামবোহ। মুঘলদের সময় সিদি সম্প্রদায়ের নাবিকেরা চীন ও পূর্ব আফ্রিকান উপকূলগামী জাহাজে ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য বণিকদের নিয়ে জাহাজ চালনা করত।
মুঘল আমলে শহরের উন্নতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে শহরগুলো ছিল সামরিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র, উৎপাদন বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়।[৪৯] সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদকরা শহরাঞ্চলে বসবাস করত। অধিকাংশ শিল্প ছিল শহরের বাইরে গ্রাম অঞ্চলে। মুঘলরা প্রত্যেক প্রদেশে মক্তব গড়ে তোলে। এখানে কুরআন ও ইসলামি আইন শিক্ষা দেয়া হত।
মুঘলদের অধীনে বাংলা প্রদেশ বিশেষভাবে সমৃদ্ধশালী হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই সমৃদ্ধি বজায় ছিল।[৫০]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
সম্পাদনাতাত্ত্বিক জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম গুরুত্ব প্রদান করা হলেও মুঘল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যান। এ বিষয়ে অনেক বিবরণ তারা রচনা করেছেন। সম্রাট হুমায়ুন দিল্লিতে ব্যক্তিগত মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মুঘলদের ব্যবহৃত জ্যোতির্বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতিগুলো ইসলামি ঐতিহ্য থেকে আগত।[৫১][৫২] এসময়ের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল সংযুক্তিহীন একক ভূগোলক নির্মাণ।
আলকেমি
সম্পাদনাশেখ দীন মুহাম্মদ মুঘল আলকেমি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। শ্যাম্পু তৈরির প্রক্রিয়া তার জানা ছিল। এছাড়াও তিনি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এবং দিল্লি ও এলাহাবাদের সমৃদ্ধ বর্ণনার নিয়ে লেখার জন্য পরিচিত। মুঘল সাম্রাজ্যের জৌলুসের কথা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। শেখ দীন মুহাম্মদ রাজা চতুর্থ জর্জ এবং চতুর্থ উইলিয়াম উভয়ের শ্যাম্পু সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৫৩]
প্রযুক্তি
সম্পাদনাপারসিয়ান পণ্ডিত ও যন্ত্রপ্রকৌশলী ফতুল্লাহ শিরাজী সম্রাট আকবরের জন্য কয়েক ব্যারেল বিশিষ্ট বন্দুক তৈরি করেছিলেন।[৫৪] আকবর সর্বপ্রথম ধাতব সিলিন্ডারের রকেট ব্যবহার করেন। সানবালের যুদ্ধের সময় যুদ্ধ হাতির বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহৃত হয়।[৫৫] ১৬৫৭ সালে মুঘল সেনাবাহিনী বিদার অবরোধের সময় রকেট ব্যবহার করে।[৫৬] আওরঙ্গজেবের সেনারা দেয়ালের উপর রকেট ও গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। বারুদের ভান্ডারে রকেট আঘাত করলে সিদি মারজান মারাত্মকভাবে আহত হন। ২৭ দিন তুমুল লড়াইয়ের পর বিদার মুঘলদের হাতে আসে।[৫৬]
পরবর্তীতে মুঘল রকেটের উন্নত সংস্করণ মহীশুর রকেটের উদ্ভব হয়। হায়দার আলির বাবা ফাতাহ মুহাম্মদ আরকোটের নবাবের পক্ষে রকেট চালাতে সক্ষম ৫০ জন সেনার নেতৃত্ব দেন। হায়দার আলি রকেটের গুরুত্ব অনুধাবন করে ধাতব সিলিন্ডারের উন্নত সংস্করণের সূচনা করেন। দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশুর যুদ্ধের সময় এই রকেট ব্যবস্থা মহীশুর সালতানাতের জন্য সুবিধা নিয়ে এসেছিল।[৫৭]
স্থাপত্য
সম্পাদনামুঘলরা ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের অনন্য ইন্দো-ফার্সি স্থাপত্যের বিকাশের সঙ্গে বড়সড় অবদান রেখেছে। মুঘল শাসনামলে অনেক স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছিল মুসলিম সম্রাটদের দ্বারা, বিশেষ করে শাহ জাহান, যেমন তাজ মহল — ভারতের মুসলিম শিল্পের রত্ন হিসেবে বিবেচিত ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এবং বিশ্বের ঐতিহ্যের সর্বজনীন সমাদৃত মাস্টারপিস। , বছরে ৭০-৮০ লাখ অনন্য দর্শক আকর্ষণ করে। রাজবংশের তৈরি প্রাসাদ, সমাধি, উদ্যান ও দুর্গগুলি আজ আগ্রা, ঔরঙ্গাবাদ, দিল্লি, ঢাকা, ফতেপুর সিক্রি, জয়পুর, লাহোর, কাবুল, শেখপুরা সহ ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের আরও অনেক শহরে দাঁড়িয়ে[৫৮]।
ভারত | পাকিস্তান | বাংলাদেশ | আফগানিস্তান |
---|---|---|---|
|
|
|
|
আরও দেখুন
সম্পাদনানোট
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sinopoli, Carla M. (১৯৯৪)। "Monumentality and Mobility in Mughal Capitals"। Asian Perspectives। 33 (2): 294। আইএসএসএন 0066-8435। জেস্টোর 42928323। ১ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ Conan 2007, পৃ. 235।
- ↑ "Islam: Mughal Empire (1500s, 1600s)"। BBC। ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯। ১৩ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৯।
- ↑ Pagaza ও Argyriades 2009, পৃ. 129।
- ↑ Morier 1812, পৃ. 601।
- ↑ Rein Taagepera (সেপ্টেম্বর ১৯৯৭)। "Expansion and Contraction Patterns of Large Polities: Context for Russia"। International Studies Quarterly। 41 (3): 500। ডিওআই:10.1111/0020-8833.00053। ২৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ Turchin, Peter; Adams, Jonathan M.; Hall, Thomas D. (২০০৬)। "East–West Orientation of Historical Empires and Modern States"। Journal of World-Systems Research। 12 (2): 219–229। আইএসএসএন 1076-156X। ডিওআই:10.5195/JWSR.2006.369।
- ↑ Colin McEvedy; Richard Jones (১৯৭৮)। Atlas of World Population History। New York: Facts on File। পৃষ্ঠা 148।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Richards1995
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Richards, James (২৬ জানুয়ারি ১৯৯৬)। The Mughal Empire। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 73–74।
- ↑ ক খ https://web.archive.org/web/20150923175254/http://www.asiaurangabad.in/pdf/Tourist/Tomb_of_Aurangzeb-_Khulatabad.pdf
- ↑ ক খ "Discover Bahadur Shah Zafar's Timeless Poetry Pratha"। ২০২৪-০৫-২১। ২০২৪-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ Levtzion, Nehemia; Levtsiyon, Neḥemyah, সম্পাদকগণ (১৯৭৯)। Conversion to Islam (1. publ সংস্করণ)। New York, NY: Holmes & Meier। আইএসবিএন 978-0-8419-0343-2।
- ↑ Balfour, E.G. (১৯৭৬)। Encyclopaedia Asiatica: Comprising Indian-subcontinent, Eastern and Southern Asia। New Delhi: Cosmo Publications। S. 460, S. 488, S. 897। আইএসবিএন 978-81-7020-325-4।
- ↑ Richards, John F. (১৯৯৫)। The Mughal Empire (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ২। আইএসবিএন 978-0-521-56603-2।
- ↑ John Walbridge। God and Logic in Islam: The Caliphate of Reason। পৃষ্ঠা 165।
Persianate Mogul Empire.
- ↑ John Barrett Kelly। Britain and the Persian Gulf: 1795–1880। পৃষ্ঠা 473।
- ↑ Gilbert, Marc Jason (২০১৭-০৩-১০)। South Asia in World History (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা ৭৫। আইএসবিএন 978-0-19-066137-3।
- ↑ Stein, Burton (২০১০-০২-০৪)। A History of India (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। আইএসবিএন 978-1-4443-2351-1।
- ↑ Roy Choudhury, Makhan Lal। The Din-i-Ilahi:Or, The Religion of Akbar।
- ↑ Stein, Burton (২০১০-০২-০৪)। A History of India (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা ১৫৯। আইএসবিএন 978-1-4443-2351-1।
- ↑ Richards, John F. (১৯৯৫)। The Mughal Empire (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা xv। আইএসবিএন 978-0-521-56603-2।
- ↑ Asher ও Talbot 2008, পৃ. 115।
- ↑ Robb 2001, পৃ. 90–91।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Richards1993
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Warrior Empire: The Mughals (DVD)। The History Channel। ৩১ অক্টোবর ২০০৬। ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৫।
- ↑ Bose, Sugata Bose; Ayesha Jalal (২০০৪)। Modern South Asia: History, Culture, Political Economy। Routledge। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 978-0-203-71253-5।
- ↑ Avari, Burjor (২০০৪)। Islamic Civilization in South Asia: A History of Muslim Power and Presence in the Indian Subcontinent। Routledge। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 978-0-415-58061-8।
- ↑ Vanina, Eugenia (২০১২)। Medieval Indian Mindscapes: Space, Time, Society, Man। Primus Books। পৃষ্ঠা 47। আইএসবিএন 978-93-80607-19-1।
- ↑ Fontana, Michela (২০১১)। Matteo Ricci: A Jesuit in the Ming Court। Rowman & Littlefield Publishers। পৃষ্ঠা 32। আইএসবিএন 978-1-4422-0588-8।
- ↑ ক খ গ Dodgson, Marshall G. S. islamologists (২০০৯)। The Venture of Islam, Volume 3: The Gunpowder Empires and Modern Times, Volume 3। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 978-0-226-34688-5। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Hodgson" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ Huskin, Frans Husken; Dick van der Meij (২০০৪)। Reading Asia: New Research in Asian Studies। Routledge। পৃষ্ঠা 104। আইএসবিএন 978-1-136-84377-8।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ Berndl, Klaus (২০০৫)। National Geographic visual history of the world। University of Michigan। পৃষ্ঠা 318–320। আইএসবিএন 978-0-521-52291-5।
- ↑ ক খ Bose, Sugata Bose; Ayesha Jalal (২০০৪)। Modern South Asia: History, Culture, Political Economy। Routledge। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 978-0-203-71253-5।
- ↑ N. G. Rathod, The Great Maratha Mahadaji Scindia, (Sarup & Sons, 1994),8:[১]
- ↑ J. F. Richards, "Mughal State Finance and the Premodern World Economy," Comparative Studies in Society and History, (1981) 23#2 pp. 285–308 in JSTOR ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ মে ২০১৬ তারিখে
- ↑ Irfan (২০২২-০৭-১২)। "Filogeni Irfan (60300119031)"। dx.doi.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৩।
- ↑ Norwood, Karen (২০১৯-১১-০৫)। "Karen Norwood"। Authors group। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৩।
- ↑ Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B.; Scott, Robert B. (২০১০-১২-৩১)। "Satellite Altimetry and Key Observations: What We've Learned, and What's Possible with New Technologies"। Proceedings of OceanObs'09: Sustained Ocean Observations and Information for Society। European Space Agency। ডিওআই:10.5270/oceanobs09.cwp.76।
- ↑ Claude Markovits (২০০৪)। A History of Modern India, 1480–1950। পৃষ্ঠা 172–3।
- ↑ Mehta, Jaswant Lal (২০০৫-০১-০১)। Advanced Study in the History of Modern India 1707-1813 (ইংরেজি ভাষায়)। Sterling Publishers Pvt. Ltd। আইএসবিএন 978-1-932705-54-6।
- ↑ S.R. Sharma। Mughal Empire in India: A Systematic Study Including Source Material। 3। পৃষ্ঠা 767।
- ↑ N. G. Rathod, The Great Maratha Mahadaji Scindia, (Sarup & Sons, 1994), 8:[২]
- ↑ "Alexander Ross, Hugh Ross, Thomas Ross"। Christian-Muslim Relations 1500 - 1900। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৩।
- ↑ Mughal Empire – MSN Encarta। ১ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৫।
- ↑ "Indo-Persian Literature Conference: SOAS: North Indian Literary Culture (1450–1650)"। SOAS। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "A Brief Hindi – Urdu FAQ"। sikmirza। ২ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০০৮।
- ↑ Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John; Calder, John (২০১০-১২-৩১)। "An Integrated International Approach to Arctic Ocean Observations for Society (A Legacy of the International Polar Year)"। Proceedings of OceanObs'09: Sustained Ocean Observations and Information for Society। European Space Agency। ডিওআই:10.5270/oceanobs09.cwp.14।
- ↑ K. N. Chaudhuri, "Some Reflections on the Town and Country in Mughal India," Modern Asian Studies (1978) 12#1 pp. 77–96
- ↑ Tirthankar1 Roy, "Where is Bengal? Situating an Indian Region in the Early Modern World Economy," Past & Present (Nov 2011) 213#1 pp 115–146
- ↑ Sharma, Virendra Nath (১৯৯৫), Sawai Jai Singh and His Astronomy, Motilal Banarsidass Publ., পৃষ্ঠা 8–9, আইএসবিএন 81-208-1256-5
- ↑ Baber, Zaheer (১৯৯৬), The Science of Empire: Scientific Knowledge, Civilization, and Colonial Rule ভারত, State University of New York Press, পৃষ্ঠা 82–9, আইএসবিএন 0-7914-2919-9
- ↑ Teltscher, Kate (২০০০)। "The Shampooing Surgeon and the Persian Prince: Two ভারতns Early Nineteenth-century Britain"। Interventions: International Journal of Postcolonial Studies, 1469-929X। 2 (3): 409–23। ডিওআই:10.1080/13698010020019226।
- ↑ Bag, A. K. (২০০৫)। "Fathullah Shirazi: Cannon, Multi-barrel Gun and Yarghu"। ভারতn Journal of History of Science। New দিল্লি: ভারতn National Science Academy। 40 (3): 431–436। আইএসএসএন 0019-5235।
- ↑ MughalistanSipahi (১৯ জুন ২০১০)। "Islamic Mughal Empire: War Elephants Part 3"। YouTube। ২২ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ ক খ The Mughal Empire – Ishwari Prasad – Google Books। Books.google.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ Roddam Narasimha (১৯৮৫)। "Rockets Mysore and Britain, 1750–1850 A.D."। National Aerospace Laboratories, ভারত। ৩০ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ Ross Marlay; Clark D. Neher (১৯৯৯)। Patriots and Tyrants: Ten Asian Leaders। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা 269। আইএসবিএন 978-0-8476-8442-7।
আরও দেখুন
সম্পাদনা- Alam,22 Muzaffar. Crisis of Empire in Mughal North India: Awadh & the Punjab, 1707–48 (1988)
- Ali, M. Athar. "The Passing of Empire: The Mughal Case," Modern Asian Studies (1975) 9#3 pp. 385–396 in JSTOR, on the causes of its collapse
- Asher, C. B.; Talbot, C (১ জানুয়ারি ২০০৮), India Before Europe (1st সংস্করণ), Cambridge University Press, আইএসবিএন 978-0-521-51750-8
- Black, Jeremy. "The Mughals Strike Twice," History Today (April 2012) 62#4 pp 22–26. full text online
- Blake, Stephen P. "The Patrimonial-Bureaucratic Empire of the Mughals," Journal of Asian Studies (1979) 39#1 pp. 77–94 in JSTOR
- Dale, Stephen F. The Muslim Empires of the Ottomans, Safavids and Mughals (Cambridge U.P. 2009)
- Dalrymple, William (২০০৭)। The Last Mughal: The Fall of a Dynasty : Delhi, 1857। Random House Digital, Inc.।
- Faruqui, Munis D. "The Forgotten Prince: Mirza Hakim and the Formation of the Mughal Empire in India," Journal of the Economic and Social History of the Orient (2005) 48#4 pp 487–523 in JSTOR, on Akbar and his brother
- Gommans; Jos. Mughal Warfare: Indian Frontiers and Highroads to Empire, 1500–1700 (Routledge, 2002) online edition ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে
- Gordon, S. The New Cambridge History of India, II, 4: The Marathas 1600–1818 (Cambridge, 1993).
- Habib, Irfan. Atlas of the Mughal Empire: Political and Economic Maps (1982).
- Markovits, Claude, ed. (২০০৪)। A History of Modern India, 1480–1950। Anthem Press। পৃষ্ঠা 79–184।
- Metcalf, B.; Metcalf, T. R. (৯ অক্টোবর ২০০৬), A Concise History of Modern India (2nd সংস্করণ), Cambridge University Press, আইএসবিএন 978-0-521-68225-1
- Richards, John F. (১৯৯৬)। The Mughal Empire। Cambridge University Press।
- Majumdar, Ramesh Chandra (১৯৭৪)। The Mughul Empire। B.V. Bhavan।
- Morier, James (১৮১২)। "A journey through Persia, Armenia and Asia Minor"। The Monthly Magazine। 34। R. Phillips।
- Richards, John F. The Mughal Empire (The New Cambridge History of India) (1996) excerpt and online search
- Richards, J. F. "Mughal State Finance and the Premodern World Economy," Comparative Studies in Society and History (1981) 23#2 pp. 285–308 in JSTOR
- Robb, P. (২০০১), A History of India, London: Palgrave, আইএসবিএন 978-0-333-69129-8
- Stein, B. (১৬ জুন ১৯৯৮), A History of India (1st সংস্করণ), Oxford: Wiley-Blackwell, আইএসবিএন 978-0-631-20546-3
- Stein, B. (২৭ এপ্রিল ২০১০), Arnold, D., সম্পাদক, A History of India (2nd সংস্করণ), Oxford: Wiley-Blackwell, আইএসবিএন 978-1-4051-9509-6
সংস্কৃতি
সম্পাদনা- Berinstain, V. Mughal India: Splendour of the Peacock Throne (London, 1998).
- Busch, Allison. Poetry of Kings: The Classical Hindi Literature of Mughal India (2011) excerpt and text search
- Preston, Diana and Michael Preston. Taj Mahal: Passion and Genius at the Heart of the Moghul Empire Walker & Company; আইএসবিএন ০-৮০২৭-১৬৭৩-৩.
- Schimmel, Annemarie. The Empire of the Great Mughals: History, Art and Culture (Reaktion 2006)
- Welch, S.C.; ও অন্যান্য (১৯৮৭)। The Emperors' album: images of Mughal India। New York: The Metropolitan Museum of Art। আইএসবিএন 0-87099-499-9।
সমাজ ও অর্থনীতি
সম্পাদনা- Chaudhuri, K. N. "Some Reflections on the Town and Country in Mughal India," Modern Asian Studies (1978) 12#1 pp. 77–96 in JSTOR
- Habib, Irfan. Atlas of the Mughal Empire: Political and Economic Maps (1982).
- Habib, Irfan. Agrarian System of Mughal India (1963, revised edition 1999).
- Heesterman, J. C. "The Social Dynamics of the Mughal Empire: A Brief Introduction," Journal of the Economic and Social History of the Orient, (2004) 47#3 pp. 292–297 in JSTOR
- Khan, Iqtidar Alam. "The Middle Classes in the Mughal Empire," Social Scientist (1976) 5#1 pp. 28–49 in JSTOR
- Rothermund, Dietmar. An Economic History of India: From Pre-Colonial Times to 1991 (1993)
প্রাথমিক উৎস
সম্পাদনা- Bernier, Francois (১৮৯১)। Travels in the Mogul Empire, A.D. 1656–1668। Archibald Constable, London।
- Hiro, Dilip, ed, Journal of Emperor Babur (Penguin Classics 2007)
- The Baburnama: Memoirs of Babur, Prince and Emperor ed. by W.M. Thackston Jr. (2002); this was the first autobiography in Islamic literature
- Jackson, A.V. et al., eds. History of India (1907) v.9. Historic accounts of India by foreign travellers, classic, oriental, and occidental, by A.V.W. Jackson online edition
- Jouher (১৮৩২)। The Tezkereh al vakiat or Private Memoirs of the Moghul Emperor Humayun Written in the Persian language by Jouher A confidential domestic of His Majesty। Translated by Major Charles Stewart। John Murray, London।
পুরনো ইতিহাস
সম্পাদনা- Elliot, Sir H. M., Edited by Dowson, John. The History of India, as Told by Its Own Historians. The Muhammadan Period; published by London Trubner Company 1867–1877. (Online Copy at Packard Humanities Institute – Other Persian Texts in Translation; historical books: Author List and Title List)
- Adams, W. H. Davenport (১৮৯৩)। Warriors of the Crescent। London: Hutchinson।
- Holden, Edward Singleton (১৮৯৫)। The Mogul emperors of Hindustan, A.D. 1398- A.D. 1707। New York : C. Scribner's Sons।
- Malleson, G. B (১৮৯৬)। Akbar and the rise of the Mughal empire। Oxford : Clarendon Press।
- Manucci, Niccolao; tr. from French by François Catrou (১৮২৬)। History of the Mogul dynasty in India, 1399–1657। London : J.M. Richardson।
- Lane-Poole, Stanley (১৯০৬)। History of India: From Reign of Akbar the Great to the Fall of Moghul Empire (Vol. 4)। London, Grolier society।
- Manucci, Niccolao; tr. by William Irvine (১৯০৭)। Storia do Mogor; or, Mogul India 1653–1708, Vol. 1। London, J. Murray।
- Manucci, Niccolao; tr. by William Irvine (১৯০৭)। Storia do Mogor; or, Mogul India 1653–1708, Vol. 2। London, J. Murray।
- Manucci, Niccolao; tr. by William Irvine (১৯০৭)। Storia do Mogor; or, Mogul India 1653–1708, Vol. 3। London, J. Murray।
- Owen, Sidney J (১৯১২)। The Fall of the Mogul Empire। London, J. Murray।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Mughals and Swat
- Mughal India an interactive experience from the British Museum
- The Mughal Empire from BBC
- Mughal Empire
- The Great Mughals[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Gardens of the Mughal Empire
- Indo-Iranian Socio-Cultural Relations at Past, Present and Future, by M. Reza Pourjafar, Ali
- A. Taghvaee, in Web Journal on Cultural Patrimony (Fabio Maniscalco ed.) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে, vol. 1, January–June 2006
- Adrian Fletcher's Paradoxplace — PHOTOS — Great Mughal Emperors of India
- A Mughal diamond on BBC
- Some Mughal coins with brief history