মাহফুজুল হক
মুহাম্মদ মাহফুজুল হক (জন্ম: নভেম্বর ১৯৬৯) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় বক্তা। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব, আঞ্চলিক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া মুহাম্মদপুরের সভাপতি এবং মাসিক রহমানী পয়গামের তত্ত্বাবধায়ক। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকার মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। আইন অনুসারে, তিনি আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য।
মুহাম্মদ মাহফুজুল হক | |
---|---|
মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০২০ | |
পূর্বসূরী | আব্দুল কুদ্দুস |
মহাপরিচালক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০০২ | |
পূর্বসূরী | আজিজুল হক |
আল হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী কমিটির সদস্য | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০১৮ | |
মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস | |
অফিসে ২০১৩ – ২০২০ | |
পূর্বসূরী | হুমায়ুন কবীর |
উত্তরসূরী | মামুনুল হক |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | নভেম্বর ১৯৬৯ (বয়স ৫৪–৫৫) |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
সন্তান | আহমদুল হক |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদিস, শিক্ষা সংস্কার, ইসলামের ইতিহাস, রাজনীতি, লেখালেখি, তাসাউফ |
উল্লেখযোগ্য কাজ | ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া মুহাম্মদপুর |
যেখানের শিক্ষার্থী | |
আত্মীয় |
|
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
জন্ম ও বংশ
সম্পাদনামাহফুজুল হক ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে ঢাকা জেলার আজিমপুরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজিজুল হক ছিলেন বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত ইসলামি পণ্ডিত ও সহিহ বুখারীর প্রথম বাংলা অনুবাদক, যিনি শায়খুল হাদিস নামে সমাধিক পরিচিত। মামুনুল হক তার অনুজ, একজন প্রভাবশালী ইসলামি বক্তা ও রাজনীতিবিদ। ২০১২ সালে তার পিতা ও ২০১৯ সালের শেষ দিকে তার মা মৃত্যুবরণ করেন। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ৮ম।[১][২][৩]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাপিতা আজিজুল হকের নিকট তিনি প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা করেন। তারপর আজিমপুর চাঁন-তারা মসজিদ সংলগ্ন হেফজ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। আবদুল মতিনের তত্ত্বাবধানে ১১ বছর বয়সে তিনি কুরআনের হেফজ (মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে কিতাব বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে নাহবেমির (নিম্ন মাধ্যমিক) শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জীর ডাকে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন, তখন তার বয়স ছিল ১৪। ১৯৮৬ সালে তিনি ঢাকার বড় কাটারা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে পিতা আজিজুল হকের প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মোহাম্মদপুরে চলে আসেন। পরবর্তীতে এটি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, ঢাকা নামে সাত গম্বুজ মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৯১ সালে জামিয়া রাহমানিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করেন। ১৯৯২ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করে ২য় বার দাওরায়ে হাদিস ( মাস্টার্স ) অধ্যয়ন করেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাশিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর ১৯৯৩ সালে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। পাশাপাশি তিনি জামিয়ার “ইসলামি আইন ও গবেষণা” বিভাগে অধ্যয়ন করে মুফতি সনদ লাভ করেন। ২০০০ সালে আজিজুল হক জামিয়া হাকিকিয়া নামে একটি মাদ্রাসার কার্যক্রম চালু করলে তিনি এর পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে তিনি জামিয়া রাহমানিয়ার সহকারী পরিচালক ও ২০০২ সালে মহাপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এবং ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর মহাসচিব নির্বাচিত হন।[৪][৫][৬] জামিয়া রহমানিয়ার শিক্ষক নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রাজনীতিতে যুক্ত হন।[৭] ২০০৫ সালে দলের মজলিসে শুরার সদস্য, ২০১২ সালে সহ-সভাপতি এবং ২০১৩ সালে মহাসচিব নির্বাচিত হন। বেফাকের মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর তিনি খেলাফতের মহাসচিব হিসেবে পদত্যাগ করেন। পদাধিকার বলে তিনি আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য।[৮] ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া মুহাম্মদপুরের তিনি সভাপতি, এই আঞ্চলিক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৪০টি মাদ্রাসা রয়েছে।[৯] এছাড়াও তিনি জামিয়া রহমানিয়া থেকে প্রকাশিত মাসিক রহমানী পয়গামের তত্ত্বাবধায়ক।[১][১০] ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি নায়েবে আমীর বা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।[১১]
পরিবার
সম্পাদনাপারিবারিক জীবনে তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক এবং পরিবারের সবাই কুরআনের হাফেজ।[১]
বিতর্ক
সম্পাদনা২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি যুবায়ের আহমদ আনসারী মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাযায় লকডাউন ভেঙে কয়েক লক্ষ মানুষ অংশগ্রহণ করে।[১২] মাহফুজুল হক ও একটি দলের নেতা এই বিপুল পরিমাণ লোক সমাগমের পূর্ব পরিকল্পনা করছে সময় টিভির এমন একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।[১৩] এই ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় মাহফুজুল হক সমালোচনার শিকার হন। পরবর্তীতে সময় টিভি কর্তৃপক্ষ এটি তাদের ভিডিও নয় বলে নিশ্চিত করেন এবং সময় টিভির লোগো ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।[১৪] কিন্তু ফোনালাপের রেকর্ডটি সর্বপ্রথম ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল রাতে সময় টিভি তাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে বি.বাড়িয়ার জানাজায় লাখো মানুষের জমায়েত পূর্ব পরিকল্পিত ! শিরোনামে প্রচার করেছিল, যার প্রমাণ এখনো আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। পরে সময় টিভি ফোনালাপ ফাঁসের ভিডিওটি তীব্র সমালোচনার মুখে তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরিয়ে নেয়। ভিডিওটি সরিয়ে নিলেও ভিডিওটির যাবতীয় তথ্যের স্ক্রিনশটের রেকর্ড এখনো আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে।[১৫] এর পূূর্বে যমুনা টিভি মাহফুজুল হকের পিতা আজিজুল হককে জঙ্গিনেতা হিসেবে প্রচার করে।[১৬] তিনি যমুনা টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলে টিভি কর্তৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে এবং ক্ষমা চায়।[১৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ এনায়েতুল্লাহ, মুফতি (২৯ অক্টোবর ২০২০)। "মাওলানা মুফতি মাহফুজুল হকের সংক্ষিপ্ত জীবনী"। কওমিপিডিয়া।
- ↑ ডেস্ক, ইনকিলাব। "শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর স্ত্রীর ইন্তেকাল"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১১।
- ↑ তুহিন মালিক, ডক্টর (২ ডিসেম্বর ২০১৯)। "শায়খুল হাদিসের বিরুদ্ধে এ কেমন অপপ্রচার!"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১১।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, মহাসচিব মাহফুজুল হক"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব পদ ছাড়লেন মাহফুজ, দায়িত্ব পেলেন মামুন | banglatribune.com"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-১০-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ আকবর হোসেন, চৌধুরী (৪ অক্টোবর ২০২০)। "দলীয় পদ ছাড়ার শর্তে বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুল হক"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ পারভেজ, আলতাফ (৯ ডিসেম্বর ২০১৮)। "'ইসলামি রাজনীতি' যেখানে থমকে আছে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১২।
- ↑ "কওমি মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)- এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান আইন, ২০১৮"। bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ (২১ অক্টোবর ২০১৯)। "মোহাম্মদপুরে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিক্ষোভ"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০২০-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১২।
- ↑ "মাসিক রাহমানী পয়গাম"। sites.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১২।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (১৬ নভেম্বর ২০২০)। "হেফাজতের নতুন আমির বাবুনগরী, মহাসচিব কাসেমী, নায়েবে আমীর মাহফুজুল হক"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৫।
- ↑ আনোয়ারুল ইসলাম, মুহাম্মদ (২ জুলাই ২০২০)। "আলোচিত জানাজা"। দৈনিক মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ প্রতিবেদক, জাগরণ (২০ এপ্রিল ২০২০)। "জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধন ছিল, ফোনালাপ ফাঁস"। দৈনিক জাগরণ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "সময় টিভি'র লোগো ব্যবহার করে অপপ্রচার, থানায় জিডি"। সময় টিভি। ২১ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ News Archive, Somoy TV (২০ এপ্রিল ২০২০)। "বি.বাড়িয়ার জানাজায় লাখো মানুষের জমায়েত পূর্ব পরিকল্পিত !"। Archived from the original on ২০ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০২৩।
- ↑ তুহিন মালিক, ডক্টর (ডিসেম্বর ২০১৯)। "শায়খুল হাদিসের বিরুদ্ধে এ কেমন অপপ্রচার!"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "ক্ষমা চাইলো যমুনা টিভি! -"। দৈনিক আমাদের প্রতিদিন। ২০১৯-১২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- শ্বেতপত্র: বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন। মহাখালী, ঢাকা-১২১২: মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। ফেব্রুয়ারি ২০২২। পৃষ্ঠা ১০১–১০৪।
- এনায়েতুল্লাহ, মুফতি (২৯ অক্টোবর ২০২০)। "মাওলানা মুফতি মাহফুজুল হকের সংক্ষিপ্ত জীবনী"। কওমিপিডিয়া।
- আমিন, নেয়ামতুল্লাহ (৫ অক্টোবর ২০২০)। "বেফাকের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক: একজন মুখলিস কর্মবীরের সহজ-সরল এর সংক্ষিপ্ত জীবনী-১"। দৈনিক যুবকণ্ঠ। ১৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।