মহেন্দ্রনাথ দত্ত (প্রকাশক)
মহেন্দ্রনাথ দত্ত (২ আগস্ট ১৮৯৯ – ১৮ অক্টোবর ১৯৮৭ ) ছিলেন বাংলার মুদ্রণশিল্প ও পুস্তক প্রকাশনা জগতের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব। [১] কলকাতার প্রকাশনা সংস্থা 'সাহিত্য সংসদ' ও 'শিশু সাহিত্য সংসদ'-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। [২]
মহেন্দ্রনাথ দত্ত | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৮ অক্টোবর ১৯৮৭ | (বয়স ৮৮)
পেশা | মুদ্রণ ও প্রকাশনা |
সন্তান | দেবজ্যোতি দত্ত (পুত্র) |
পিতা-মাতা | রাজকুমার দত্ত (পিতা) জ্ঞানদা দেবী (মাতা) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনামহেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার কাশীপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। পিতা রাজকুমার দত্ত ও মাতা জ্ঞানদা দেবী। মহেন্দ্রনাথের প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু তার মাতুলালয় বরিশাল জেলার রায়পাশা গ্রামের এক পাঠশালায়। পরে বর্ধিষ্ণু কলসকাঠি গ্রামে লোকের বাড়িতে থেকে এবং ছাত্র পড়িয়ে মহেন্দ্রনাথ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে আই.এ পড়তে ভর্তি হন এবং জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক বই বিক্রি করতে থাকেন। এই সময় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারতে আগমন উপলক্ষে কালা দিবস পালনের সময় বিক্ষোভ দেখানোর সময় অন্য চারজন যুবকের সঙ্গে ব্রিটিশ পতাকা 'ইউনিয়ন জ্যাক' পুড়িয়ে চোদ্দ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে নিজের খরচাদির জন্য বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করতে থাকেন। এই সময়ে শ্রীসরস্বতী প্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী অরুণ চন্দ্র গুহ তাদের কলকাতায় ছাপাখানার জন্য এক কর্মীর সন্ধান করছিলেন। মহেন্দ্রনাথ অল্প কয়েকদিনেই দুর্গামোহন সেনের স্থানীয় হিতৈষী প্রেসে কম্পোজিং এর কাজ শিখে কলকাতায় আসেন এবং বেনিয়াটোলার এক মেসবাড়িতে শহীদ বিপ্লবী গোপীনাথ সাহা এবং অনুজাচরণ সেনের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি। [১]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে শ্রীসরস্বতী প্রেস চালু হলে তিনি কম্পোজিং, মেসিনম্যান, বেয়ারার, ঝাড়ুদারসহ ম্যানেজারের সব কাজই করতে থাকেন। প্রেসের তিন প্রতিষ্ঠাতার শৈলেন্দ্রনাথ গুহরায় বাদে মনোরঞ্জন গুপ্ত এবং অরুণ চন্দ্র গুহ বিপ্লবীর কাজকর্মে অধিকাংশ সময় বাইরে বা কারাগারে থাকতেন। সেকারণে প্রেসের সব দায়িত্বই ন্যস্ত ছিল মহেন্দ্রনাথের উপর। বিশ-তিরিশের দশকে ব্রিটিশ শাসক বহুবার প্রেসে তল্লাসি চালিয়ে জামানত জব্দ করেছে এবং একসময় প্রেস বন্ধ হয়েও যায়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে একবার ব্রিটিশ পুলিশ মহেন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করে ছয় বৎসর আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, বক্সার ও দেউলি ক্যাম্পে আটক রাখে। শেষের এক বছর তিনি তার গ্রামে বাড়িতে অন্তরীণ থাকেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে পুনরায় প্রেসের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিপ্লবীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকলেও তিনি আর সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন নি। শ্রীসরস্বতী প্রেসের সবরকমের কাজেই তিনি ম্যানেজারবাবু নামে পরিচিত হন এমনকি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের পরও। [১]
অবদান
সম্পাদনাপ্রকাশনার জগতে তার খ্যাতির সূত্রপাত হয় ছোটদের জন্য ছড়ার ছবি প্রকাশের সাথে। ১৯৪৯-৫০ খ্রিস্টাব্দে একবছরের মধ্যেই রঙচঙে ছবি-সহ তিন খানি ছড়ার বই শিশু ও অভিভাবক মহলে বিপুল সাড়া জাগায়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শিশু সাহিত্য সংসদ। [২]আমৃত্যু এর পরিচালনা করেছেন সুষ্ঠুভাবে। তবে এর আগেই ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে দীনেশচন্দ্র সেনের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের রবীন্দ্র দর্শন বই দু-খানি প্রকাশ করেন সাহিত্য সংসদ নামক সংস্থা নাম দিয়ে। পরবর্তীতে সাহিত্য সংসদের ধ্রুপদি পর্যায়ের 'রচনাবলী'র প্রথম গ্রন্থ 'বঙ্কিম রচনাবলী' প্রথম খণ্ড এবং অভিধান পর্যায়ের প্রথম গ্রন্থ 'সংসদ বাংলা অভিধান' প্রকাশনা শুরু হয় যথাক্রমে ১৯৫৪ এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ হতে। ৮৩ বৎসর বয়স ধর্মীয় গ্রন্থ প্রকাশনার উদ্দেশ্যে নিজ বাসভবন 'শ্রীকৃষ্ণ নিবাস' এ স্থাপন করেন শ্রীকৃষ্ণ প্রকাশনী। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকেই বাংলা ও ইংরাজীতে প্রকাশিত হয় স্বামী প্রেমানন্দতীর্থ- জীবন ও বাণী। মহেন্দ্রনাথের ইংরাজীতে লেখা বই- লাইফ অ্যান্ড মিশন অফ স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীও প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে।
মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতের বাইরে দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপনসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে জনকল্যাণমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের আয়ের যাবতীয় অর্থ দিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন।
জীবনাবসান
সম্পাদনা১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে ১৮ অক্টোবর মহেন্দ্রনাথ দত্ত কলকাতায় ৮৮ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩০৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ "সাক্ষাৎকার: দেবজ্যোতি দত্ত"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-১৭।