মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি
মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি বলতে পৃথিবীর আবহাওয়া থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO
২) শোষণের ফলে মহাসাগরের পিএইচ মান কমে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।[১] জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মহাসাগরের উপর একাধিক প্রভাবগুলির মধ্যে একটি।
সাধারণত, সাগরের পানি সামান্য ক্ষারীয় হয় (পিএইচ ৭-এর বেশি)। মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি বলতে পানির পিএইচ মান কমে নিরপেক্ষ (পিএইচ=৭) মানের দিকে সরানোর ঘটনাকে বোঝায়, তবে এটি পানিকে পুরোপুরি অম্লীয় (পিএইচ<৭) করে তোলে না।[২]
এটি উদ্বেগজনক কারণ, এর ফলে ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি খোলসবিশিষ্ট প্রাণী যেমন কম্বোজ-কবচী জাতীয় প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। বেশি অম্লীয় পানিতে এদের প্রজনন ও খোলস তৈরি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। একইসাথে, অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনধারণ ও টিকে থাকার সামর্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৩০-৪০% সমুদ্র, নদী ও হ্রদে দ্রবীভূত হয়।[৩][৪]
দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিডের একটি অংশ বিশ্লিষ্ট হয়ে বাইকার্বনেট ও হাইড্রোজেন আয়ন তৈরি করে, যা মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি করে। (আরও জানতে H+ আয়নের ঘনমাত্রা দেখুন।)
১৭৫১ থেকে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মহাসাগরের পৃষ্ঠতলের পিএইচ মান আনুমানিক ৮.২৫ থেকে ৮.১৪-এ নেমে এসেছে,[৫] যার অর্থ বিশ্বের মহাসাগরগুলিতে H+ আয়নের ঘনমাত্রা প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে (লক্ষণীয় যে পিএইচ মাপনীটি একটি লগারিদম-ভিত্তিক মাপনী, সুতরাং পিএইচ মানের ১ একক পরিবর্তন হল H+ আয়নের ঘনমাত্রায় দশ গুণ পরিবর্তনের সমান)।[৬][৭] অম্লতা বৃদ্ধি সামুদ্রিক জীবগুলির জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফলাফল বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা করা হয়। যেমন এর ফলে কিছু কিছু জীবের বিপাকীয় হার ও অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া অবদমিত হয় এবং প্রবাল বিরঞ্জনের (Coral bleaching) মতো ঘটনা ঘটে।[৮] মহাসাগরে যে অতিরিক্ত কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয়, সেগুলির কারণে মুক্ত হাইড্রোজেন আয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পরিণামে এর ফলে কার্বনেট আয়নগুলি বাইকার্বনেট আয়নে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে মহাসাগরের ক্ষারতার (যেটি মোটামুটি [HCO3−] + 2[CO32−]-এর সমান) তেমন কোনও পরিবর্তন হয় না, বরং দীর্ঘ মেয়াদে কার্বনেট খনিজের দ্রবীভবনের ফলে ক্ষারতা বৃদ্ধি পেতে পারে।[৯] কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে বিদ্যমান কার্বনেট আয়নের সংখ্যা হ্রাস পায় বলে প্রবাল ও কিছু প্লাংকটন জাতীয় জীবের জন্য ক্যালসিয়ামীভবন প্রক্রিয়াটি দুরূহ হয়ে ওঠে, ফলে তারা জৈবিকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বনেট গঠন করতে পারে না, বা তৈরি করলেও সেগুলি দ্রবীভূত হয়ে যাবার ঝুঁকি থেকে যায়।[১০] মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি চলমান থাকলে ভবিষ্যতে সামুদ্রিক খাদ্য-শৃঙ্খলগুলি হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।[১১][১২]
অম্লতা বৃদ্ধির প্রভাব
সম্পাদনাপ্রাথমিক স্তর গুলির যেমন- ডিম্বাণু/ শুক্রাণু, জাইগট, লার্ভা, ভ্রূণ, ডিম-পোনা,রেণু, জুভেনাইল ইত্যাদি)উপর বেশ প্রভাব ফেলবে কেননা এসকল স্তরে এরা বেশ সংবেদনশীল থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের ক্ষেত্রে এটা তাদের-স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রজননকে ক্ষতিগ্রস্ত-করতে পারে। হয়তো প্রাণীর জীবনরক্ষা পাবে কিন্তু তাদের স্বাভাবিক-বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটার-ফলে প্রাণীর পুনরুৎপাদন হ্রাস পেতে-পারে। সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধির ফলে-সরাসরি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন-প্রাণী ও উদ্ভিদের তালিকায়-প্রথমদিকে রয়েছে খোলস বিশিষ্ট-প্রাণী, যেমন বিশেষ ধরনের মোলাস্ক (টেরোপড, ওয়েস্টর,মাসেল, ক্ল্যাম), একাইনোডার্ম (শি আর্চিন, স্টার ফিস, ব্রিটল স্টার)জাতীয় প্রাণী এবং কোরাল ও বিশেষ ধরনের খোলস বিশিষ্ট সামুদ্রিক অ্যালজি। কেননা সমুদ্রের অম্লতা-বৃদ্ধির ফলে pH এর মান কমে যাওয়ার-সাথে সাথে পানিতে থাকাকার্বনেট আয়নের (CO 32-) পরিমাণও কমে-যাচ্ছে। এ কার্বনেট আয়ন আবার-উপরোল্লিখিত খোলস বিশিষ্ট-প্রাণীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কেননা এটা তাদের বাইরের শক্তখোলস ও মূল কাঠামো বা কঙ্কালতৈরিতে মূল ভূমিকা পালন করে।পানিতে কার্বনেট আয়নের স্বল্পতা এ \প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে-প্রাণীর বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠন-প্রক্রিয়াকে মন্থর করে ফেলবে। আতংকের ব্যাপার হল, সমুদ্রের-পানিতে এ কার্বনেট আয়নের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে-গেলে ঐ সকল প্রাণীর শরীরের-ক্যালসিয়াম কার্বনেটের শক্ত-বহিরাবরণ দ্রবীভূত হতে শুরু করবে।ফলস্বরূপ ক্যালসিয়াম কার্বনেটেরখোলস যুক্ত অন্যান্য সকল প্রাণীর সাথে সাথে কোরাল সমূহও ক্ষতিগ্রস্ত হবে জার্মানির হামবুর্গে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সটিটিউটে ক্যাথরিনা শিখ ও তার দলের এক গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের প্রেক্ষিতে দেখান যে, “সমুদ্রের পানির অম্লতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ফাইটোপ্লাঙ্কটনরা পূর্বের তুলনায় কম ডাইমিথাইল সালফাইড উৎপন্ন-করছে।""তারা নিজেদের রক্ষার করার জন্যে একটা মেকানিজম অনুসরণ করে "
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Caldeira, K.; Wickett, M. E. (২০০৩)। "Anthropogenic carbon and ocean pH"। Nature। 425 (6956): 365। এসটুসিআইডি 4417880। ডিওআই:10.1038/425365a। পিএমআইডি 14508477। বিবকোড:2001AGUFMOS11C0385C।
- ↑ "Ocean Acidification"। https://www.whoi.edu/ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৩।
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ Millero, Frank J. (১৯৯৫)। "Thermodynamics of the carbon dioxide system in the oceans"। Geochimica et Cosmochimica Acta। 59 (4): 661–677। ডিওআই:10.1016/0016-7037(94)00354-O। বিবকোড:1995GeCoA..59..661M।
- ↑ Feely, R. A.; Sabine, C. L.; Lee, K.; Berelson, W.; Kleypas, J.; Fabry, V. J.; Millero, F. J. (জুলাই ২০০৪)। "Impact of Anthropogenic CO2 on the CaCO3 System in the Oceans"। Science। 305 (5682): 362–366। এসটুসিআইডি 31054160। ডিওআই:10.1126/science.1097329। পিএমআইডি 15256664। বিবকোড:2004Sci...305..362F। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-২৫ – Pacific Marine Environmental Laboratory (PMEL)-এর মাধ্যমে।
- ↑ Jacobson, M. Z. (২০০৫)। "Studying ocean acidification with conservative, stable numerical schemes for nonequilibrium air-ocean exchange and ocean equilibrium chemistry"। Journal of Geophysical Research: Atmospheres। 110: D07302। ডিওআই:10.1029/2004JD005220। বিবকোড:2005JGRD..11007302J।
- ↑ Hall-Spencer, J. M.; Rodolfo-Metalpa, R.; Martin, S.; ও অন্যান্য (জুলাই ২০০৮)। "Volcanic carbon dioxide vents show ecosystem effects of ocean acidification"। Nature। 454 (7200): 96–9। hdl:10026.1/1345 । এসটুসিআইডি 9375062। ডিওআই:10.1038/nature07051। পিএমআইডি 18536730। বিবকোড:2008Natur.454...96H।
- ↑ "Report of the Ocean Acidification and Oxygen Working Group, International Council for Science's Scientific Committee on Ocean Research (SCOR) Biological Observatories Workshop" (পিডিএফ)।
- ↑ Anthony, KRN; ও অন্যান্য (২০০৮)। "Ocean acidification causes bleaching and productivity loss in coral reef builders"। Proceedings of the National Academy of Sciences। 105 (45): 17442–17446। ডিওআই:10.1073/pnas.0804478105 । পিএমআইডি 18988740। পিএমসি 2580748 । বিবকোড:2008PNAS..10517442A।
- ↑ Kump, L.R.; Bralower, T.J.; Ridgwell, A. (২০০৯)। "Ocean acidification in deep time"। Oceanography। 22: 94–107। ডিওআই:10.5670/oceanog.2009.10 । সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৬।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;orr05
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Cornelia Dean (৩০ জানুয়ারি ২০০৯)। "Rising Acidity Is Threatening Food Web of Oceans, Science Panel Says"। New York Times।
- ↑ Robert E. Service (১৩ জুলাই ২০১২)। "Rising Acidity Brings and Ocean Of Trouble"। Science। 337 (6091): 146–148। ডিওআই:10.1126/science.337.6091.146। পিএমআইডি 22798578। বিবকোড:2012Sci...337..146S।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Global Ocean Acidification Observing Network (GOA-ON)
- United Nations Decade of Ocean Science for Sustainable Development (2021-2030)
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |