ভোলানাথ চন্দ্র
ভোলানাথ চন্দ্র ( সেপ্টেম্বর ১৮২২ - ১৭ জুন ১৯১০) ছিলেন একজন পর্যটক ও সমাজ সংস্কারক। দেশীয় শিপ্লের উন্নতির জন্য তিনিই প্রথম ইংল্যান্ডের পণ্য বর্জনের প্রস্তাব করেন।[১]
ভোলানাথ চন্দ্র | |
---|---|
জন্ম | কলকাতা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ভারত) | সেপ্টেম্বর ১৮২২
মৃত্যু | ১৭ জুন ১৯১০ | (বয়স ৮৭)
ভাষা | ইংরাজী |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
দাম্পত্যসঙ্গী | কামিনীসুন্দরী দেবী |
সন্তান | অঘোরনাথ চন্দ্র (পুত্র) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাভোলানাথ চন্দ্রের জন্ম ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে (১২২৯ বঙ্গাব্দের ১০ আশ্বিন) ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিমতলা স্ট্রিটের মাতুলালয়ে এক সুবর্ণ বণিক পরিবারে। পিতা রামমোহন চন্দ্র ও মাতা ব্রহ্মময়ী দেবী। ভোলানাথের জন্মের পূর্বেই তার পিতৃবিয়োগ হয়। তার মাতামহ নিতাইচরণ সেন ঢাকায় ইংরেজ রেসিডেন্টের দেওয়ান ছিলেন। তার মাতামহও অল্প বয়সেই মারা যান।[২]১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও পরে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সতীর্থদের মধ্যে ছিলেন গোবিন্দচন্দ্র দত্ত, কিশোরীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, গৌরদাস বসাক প্রমুখেরা।[১][২] অন্যান্য বন্ধুরা ছিলেন রায় বাহাদুর শশীচন্দ্র দত্ত, দুর্গাচরণ লাহা, আনন্দকৃষ্ণ বসু প্রমুখেরা। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মাতুলালয়ে থেকেই পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। ১৯ বৎসর বয়সে বিদ্যালয় পরিত্যাগের কিছুদিন আগে তিনি বিশ্বনাথ লাহা অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী বিশ্বনাথ লাহার কন্যা কামিনীসুন্দরীকে বিবাহ করেন। ভোলানাথ তার সহপাঠী ও বন্ধুদের ন্যায় উদার, পরোপকারী, নির্ভীক, মুক্তমনা ও সাহিত্যরসিক ছিলেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাস্বাধীনচিত্ত ভোলানাথের দাসত্ব প্রতি অশ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু সাংসারিক অভাবের কারণে তিনি কিছুদিন ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে চাকরি করেন।[২] ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে হাওড়ার হাউম্যান অ্যান্ড কোম্পানিতে শিক্ষানবিস হয়ে ঢুকে ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ওই কোম্পানি চিনি কলের এজেন্ট হিসাবে তিরিশ বছর ছিলেন। কর্মজীবনে ব্যবসা করলেও তিনি সাহিত্যসাধনাকে জীবনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তার সমস্ত রচনা ইংরাজী ভাষায় রচিত হয়। ব্যবসার কারণে বিভিন্ন স্থানে জলপথে ভ্রমণ করেছেন। ১৮৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত ভ্রমণবৃত্তান্ত ধারাবাহিকভাবে সানডে জার্নাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তার সেই সমস্ত রচনা হতে বাংলার তৎকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের ও উত্তর ভারতের ভ্রমণবৃত্তান্ত ট্যাল্ বয়েস হুইলার সাহেবের ভূমিকাসহ ট্রাভেল্স অফ এ হিন্দু শীর্ষক একটি গ্রন্থ ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হয়। ইতিহাস ও গবেষণামূলক রচনা ছিল ভোলানাথ চন্দ্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন সংগঠিত অন্ধকূপ হত্যার বিবরণ যে নিছকই রটনা - একথা গণিত ও বিজ্ঞানের সাহায্যে তিনিই প্রথম ব্যক্ত করেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশীয় শিল্পের সর্বনাশের কারণে দারিদ্র বৃদ্ধির প্রতিকারে ইংল্যান্ডের পণ্য বর্জনের প্রস্তাব তিনিই উত্থাপন করেন। সেসময়ে আয়ারল্যান্ডে বয়কট শব্দটির ব্যবহার জনপ্রিয় হয় নি। ভ্রমণকথার সঙ্গে তিনি সমসাময়িক পত্র পত্রিকায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জ্ঞান ও গবেষণার পরিচায়ক বহু প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে রচনা করে গেছেন।[১]
তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দুটি হল -
- রাজা দিগম্বর মিত্রের জীবনচরিত - ২ খণ্ড
- এ ভয়েস ফর দ্য কমার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অফ ইন্ডিয়া - ৫ খণ্ড
পাঠকমহলের অনেকেই মনে করেন তার শেষোক্ত গ্রন্থ থেকেই স্বদেশী আন্দোলন ও বিদেশী বর্জনের বীজ সঞ্চারিত হয়। ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক অর্থনৈতিক শোষণ এবং জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রয়োজনীতার কথা তিনিই প্রথম বলেন।[১]
জীবনাবসান
সম্পাদনাভোলানাথ চন্দ্র ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন ( ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ৩ আষাঢ়) পরলোক গমন করেন। তার একমাত্র পুত্র অঘোরনাথও তিন বৎসর পর ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি অকালেই প্রয়াত হন।[২]
ভোলানাথ চন্দ্রের মৃত্যুর পর ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত জীবনীকার মন্মথনাথ ঘোষ মনীষী ভোলানাথ চন্দ্র শীর্ষক জীবনকাহিনী রচনা করেন।