ব্যবহারকারী:Lakshmikanta Manna/পুষ্পময়ী বসু

পুষ্পময়ী বসু
জন্ম(১৯০৮-০৯-০৩)৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৮
মুক্তাগাছা ময়মনসিংহ ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৯ মে ১৯৮৬(1986-05-29) (বয়স ৭৭)
পেশাশিক্ষয়িত্রী
পিতা-মাতাহরিচরণ বসু (পিতা)
সরোজিনী বসু (মাতা)

পুষ্পময়ী বসু ( ৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৮ - ২৯ মে ১৯৮৬ ) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি আদর্শবাদী শিক্ষাব্রতী, অনুবাদিকা তথা সুলেখিকা ও নিষ্ঠাবতী সমাজসেবী। [] অনাসক্ত, নির্মোহ এক দর্শনের অধিকারী তিনি বামপন্থী প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ থেকে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন সাধারণ মানুষের জন্য।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন

সম্পাদনা

পুষ্পময়ী বসুর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায় এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে। পিতা হরিচরণ বসু ছিলেন মুক্তাগাছা জমিদারের নায়েব, মাতা সরোজিনী দেবী। পুষ্পময়ী ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী গার্লস্ স্কুলের কৃতি ছাত্রী ছিলেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বৃত্তিসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু ইডেন হস্টেলে আশালতা সেন সহ দেশনেত্রীদের সংস্পর্শে এসে স্বদেশী আন্দোলনের প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পরে তিনি কলকাতায় এসে বেথুন কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বি.এ. পরীক্ষায় মহিলাদের মধ্যে প্রথম হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্মাবতী স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সঙ্গে সংস্কৃতে এম.এ পাশ করেন বারাণসীর কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

এম.এ পাশের পর পুষ্পময়ী রাজশাহীর প্রমথনাথ গার্লস্ স্কুলে শিক্ষিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং প্রধান শিক্ষিকা হন। তবে সেখানে স্বদেশসেবী তরুণ-তরুণীদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকের রোষে পড়ে তাকে প্রধান শিক্ষিকার পদ এমনকি রাজশাহী জেলা ছেড়ে যেতে হয়। যোগাযোগ ঘটে শান্তিময় রায় প্রমুখ বিপ্লবীদের সঙ্গে। কিছুদিন তিনি মোরদাবাদের এক মিডিল স্কুলে (বর্তমানে হিন্দু কলেজ, মোরদাবাদ) শিক্ষকতা করার পর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারিবারিক কারণে কলকাতায় ফিরে আসেন। কয়েক বছর তিনি দমদমের প্রাতঃবিভাগের এক স্কুলে এবং দুপুরে একটি মাড়োয়ারি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বহরমপুরের কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিযুক্ত হন এবং বিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি হিন্দুদের উপর নোয়াখালী দাঙ্গার সময় মহাত্মা গান্ধীর অবস্থানের সময় তিনিও সেখানে দু'মাস কাটান। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় পারিবারিক কারণে তাকে বহরমপুর ছেড়ে কলকাতায় আসতে হয়। তিনি কলকাতার বালিগঞ্জে বালিকাদের স্কুল 'বালিগঞ্জ শিক্ষা সদন'-এ প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণের পরও তিনি বিদ্যালয়ের 'রেক্টর' হিসাবে যুক্ত ছিলেন। বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানের পরীক্ষাগার, জাদুঘর, প্রেক্ষাগৃহ সবই তার চেষ্টায় ও তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। অবসরের সময় বালিগঞ্জ শিক্ষাসদন হতে প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটির সমস্ত অর্থ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের কল্যাণ তহবিলে এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ তার পূর্বের কাশীশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মায়ের নামাঙ্কিত 'সরোজিনী বসু প্রেক্ষাগৃহ' নির্মাণে দান করেন।

পুষ্পময়ী বসু শিক্ষক আন্দোলনে একসময় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[] পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম ভারতীয় মহিলা প্রতিনিধিদের অন্যতম ছিলেন। পরে একাধিকবার তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ বর্মা ও চীন ভ্রমণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহিলা সংসদের প্রথম ভারতীয় সভানেত্রী ছিলেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের মহিলা ফেডারেশনের (ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেন-এর) প্রথম সভানেত্রী নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ভারতের শিশু আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসাবে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। []

পুষ্পময়ী বসু সুলেখিকাও ছিলেন। বিশেষকরে অনুবাদকর্মে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রুশ কথাসাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির কালজয়ী উপন্যাস মাদার বাংলা ভাষায় প্রথম মা অনুবাদ করেন তিনি।[]তার অনূদিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল-

  • গুড আর্থ
  • পেট্রিয়ট
  • কুলি
  • মন্নাভন্না , রাড়িক্যাল বুক ক্লাব, কলকাতা
  • দুটি পাতা একটি কুঁড়ি
  • জাঁ ক্রিস্তভ, রাড়িক্যাল বুক ক্লাব, কলকাতা
  • স্পার্টাকাস
  • লু-শুন-এর গ্রন্থাবলী
জীবনীগ্রন্থ-
  • ছোটদের রমেশচন্দ্র - মহারাষ্ট্রজীবন-প্রভাত ডি এম লাইব্রেরি, কলকাতা

[]

সম্মাননা

সম্পাদনা

একজন দক্ষ শিক্ষক হিসাবে শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষের অবদান রাখার জন্য ভারত সরকারের জাতীয় শিক্ষক -এর সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন।

জীবনাবসান

সম্পাদনা

আদর্শবাদী শিক্ষয়িত্রী পুষ্পময়ী বসু ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২২০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "ABTA completes 100 years"GetBengal। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-১০ 
  3. গোর্কি, ম্যাক্সিম অনুবাদক- পুষ্পময়ী বসু (১৯৮১)। মাদার (মা)। প্রগতি প্রকাশন, মস্কো। পৃষ্ঠা ৪২২। 
  4. "পুষ্পময়ী বসু"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-০৩