বোলেটাস এডুলাস

ছত্রাকের প্রজাতি

বোলেটাস এডুলিস (ইংরেজি: cep, penny bun, porcino বা porcini) হচ্ছে একটি ব্যাসিডিওমাইসেট ছত্রাক, এবং বোলিটাস গণের নমুনা প্রজাতি। ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় উত্তর গোলার্ধে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, দক্ষিণ গোলার্ধে একে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না, যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে একে প্রবর্তিত করা হয়েছে। কাছাকাছি সম্পর্কিত কিছু ইউরোপীয় মাশরুমকে আগে বি. এডুলিসেপ্রভেদ বা রূপ বলে করা হত তাদের মলিকিউলার ফাইলোজেনেটিক সংশ্লেষের মাধ্যমে ভিন্ন প্রজাতির বলে, এবং আলাদা প্রজাতির বলে শ্রেণীভুক্তদের এর একই প্রজাতি বলে প্রমাণিত হয়েছে। পশ্চিম উত্তর আমেরিকান প্রজাতি সাধারণভাবে ক্যালিফোর্নিয়া কিং বলেটে নামে পরিচিত (Boletus edulis var. grandedulis) হচ্ছে একটি বৃহৎ, গাড় রঙের আলাদা প্রভেদ যা ২০০৭ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা হয়।

বোলেটাস এডুলাস
মাটিতে জন্মানো বাদামী মাথা এবং হালকা বাদামী রঙের দণ্ডসহ দুইটি মাশরুম, পতিত পাতা এবং বনের অন্যান্য আবর্জনার মাঝে। একটি মাশরুমকে তুলে ফেলা হয়েছে এবং অন্যটির পাশে শোয়ান; এর নিচের মাটি স্পষ্ট, এবং একটি হালকা হলুদ রঙের।
র‍্যাম্বুইলেট, ফ্রান্সের কাছে একটি বনে
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: ছত্রাক
বিভাগ: Basidiomycota
শ্রেণী: Agaricomycetes
বর্গ: Boletales
পরিবার: Boletaceae
গণ: Boletus
প্রজাতি: বি. এডুলাস
দ্বিপদী নাম
বোলেটাস এডুলাস
বুল. (১৭৮২)
প্রতিশব্দ[]
  • Ceriomyces crassus Battarra (১৭৭৫)
  • Boletus solidus Sowerby (১৮০৯)
  • Leccinum edule (বুল.) Gray (১৮২১)
  • Dictyopus edulis (বুল.) Forq. (১৮৯০)
বোলেটাস এডুলাস
View the Mycomorphbox template that generates the following list
float
Mycological characteristics
pores on hymenium
cap is convex
hymenium is adnate
stipe is bare
spore print is brown
ecology is mycorrhizal
edibility: choice

ছত্রাকটি পর্ণমোচী এবং সরলবর্গীয় বন এবং গাছের বাগানে জন্মে, সজীব গাছের ভূগর্ভস্থ মূলকে ছত্রাক টিস্যুর শীষ দিয়ে পেঁচিয়ে সাথে মিথোজীবী এক্টোমাইকোরিজাল সংযোগ গঠন করে। গ্রীষ্ম এবং শরতে ছত্রাকটি মাটির ওপরে স্পোর-বাহক ফল তৈরি করে। ফলের একটি বৃহৎ বাদামী টুপির মত মাথা থাকে যাতে মাঝেমাঝে ৩৫ সেমি (১৪ ইঞ্চি) ব্যাস এবং ওজন ৩ কেজি (৬.৬ পাউন্ড) পর্যন্ত পৌছাতে পারে। অন্যান্য বোলিটের মত, এর মাথার নিচ থেকে নল নিচের দিকে প্রলম্বিত হয়, কানকুয়ার পরিবর্তে; পরিপক্ব হলে, নলের উন্মুক্ত স্থান থেকে স্পোর, অথবা লোমকূপ নির্গত হয়। কচি অবস্থায় বি. এডুলিসের ফলের লোমকূপের পৃষ্ঠতল সাদা থাকে, কিন্তু পরিপক্বতার সাথে সাথে সবুজাভ-হলুদে পরিণত হয়। স্থুলাকার স্টাইপ, অথবা ডাঁটা সাদা বা হলুদাভ রঙের হয়, ২৫ সেমি (১০ ইঞ্চি) লম্বা এবং ১০ সেমি (৪ ইঞ্চি) পুরু হয়, এবং আংশিকভাবে উত্থিত জালের মত বিন্যাস বা রেটিকুলেশন দ্বারা আবৃত থাকে।

বিভিন্ন খাদ্যের একটি উপাদান হিসেবে বিশিষ্ট, বি এডুলিস বহু রান্নায় উচ্চ প্রশংশিত বলে গণ্য একটি ভোজ্য মাশরুম, এবং সুপ, পাস্তা, বা রিজোটোতে ব্যবহৃত এবং খাওয়া হয়। মাশরুমটিতে চর্বি এবং পাচ্য শর্করার মাত্রা কম, এবং প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থখাদ্যতন্তুতে সমৃদ্ধ। যদিও বাণিজ্যিকভাবে একে বিক্রি করা হয়, এর চাষ খুবই কষ্টকর। মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তর ইউরোপে শরৎকালে একে তাজা অবস্থায় পাওয়া যায়, একে বেশিরভাগ সময়েই শুকিয়ে প্যাকেটজাত করে পুরো বিশ্বে বাজারজাত করা হয়। শোকানোর পর এর স্বাদ বজায় থাকে, এবং একে তারপর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বি. এডুলিস হচ্ছে অল্পসংখ্যক ছত্রাকগুলোর একটি যাকে জারান হয়।

শ্রেণিবিন্যাস

সম্পাদনা
 
১৭৮২ সালে পিয়ের বুলিয়ারড সর্বপ্রথম বি. এডুলিসের বর্ণনা দেন

১৭৮২ সালে ফরাসী উদ্ভিদবিদ পিয়ের বুলিয়ারড বোলিটাস এডুলিস বর্ণীত করেনতাই এবং এখনও এর আসল নাম বহন করে।[] ছত্রাকের শ্রেণিবিন্যাসের সূচনার তারিখ ১ জানুয়ারি, ১৮২১ নির্ধারিত হয়েছে, "মাইকোলোজির জনক" সুইডিশ প্রকৃতিবিদ এলিয়াস ম্যাগনাস ফ্রাইস কর্মের তারিখের অনুরূপ, যার অর্থ বৈধ বিবেচিত হওয়ার জন্যে ফ্রাইসের অনুমতি আবশ্যক ছিল (কোলন দ্বারা নামে ইঙ্গিত করা), যেহেতু বুলিয়ারডের কর্ম এই তারিখের আগে ঘটে। এইজন্যে এটি এভাবে লেখা হয়েছিল Boletus edulis Bull.:Fr। ১৯৮৭ সালের আন্তর্জাতিক কোড অফ বোটানিকাল নমেনক্লেচার-এর একটি সংস্করণ শুরুর তারিখ ১ মে ১৭৫৩ নির্ধারিত করে, লিনিয়াসের বই, দ্যা স্পেসিস প্ল্যান্টেরাম এর প্রকাশনার তারিখ।[] তাই, নামটির আর ফ্রাইসের অনুমোদনের দরকার পড়ে না। পুরনো বিকল্প নামগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৮০৯ সালে ইংরেজ প্রকৃতিবিদ জেমস সোয়ারবি কর্তৃক Boletus solidus,[] এবং গ্রে-এর Leccinum edule[] গ্রে প্রজাতিটি লেকিনাম-এ পরিবর্তন করেন যা পরবর্তীতে শ্রেণিবিন্যাসের নিয়মানুযায়ী অসঙ্গত বলে বিবেচিত হয়, এবং তিনি ফ্রাইয়ের আগের কাজগুলোর সাথে স্পষ্টতই অপরিচিত ছিলেন যখন তিনি বোলেটে প্রজাতির বিন্যাস প্রকাশ করেন।[]

বি. এডুলিস বোলেটাস গণের নমুনা প্রজাতিরোলফ সিংগারের এগারিকেলস মাশরুমের শ্রেনিবিন্যাসে, এটি বোলিটাস অনুচ্ছেদেরও একটি নমুনা প্রজাতি, কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সঙ্ঘবদ্ধ ৩০টি সম্পর্কযুক্ত বোলেটাসের একটি উপদলঃ একটি মধ্যম-স্বাদের, সাদা দেহ যা বাতাসে উন্মুক্ত হওয়ার পরেও রঙ পরিবর্তন করেনা; মসৃণ থেকে স্বতন্ত্রভাবে উত্থিত, ডাঁটার অন্তত সবচেয়ে ওপরের অংশে জালের ন্যায় বিন্যাস; একটি হলুদ-বাদামী অথবা জল্পাই-বাদামী স্পোর ছাপ; সাদা নল যা পরবর্তীতে হলুদাভ তারপর সবুজাভ রঙ ধারণ করে, যা প্রাথমিকভাবে তুলা ভর্তি বলে মনে হয়; এবং সিস্টিডিয়া যা গভীর রঙের নয়।[][] ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত আণবিক সংশ্লেষ এটি প্রতিষ্ঠিত করে যে বোলেটে মাশরুম একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত, এবং প্রতিষ্ঠিত করে যে বোলেটেল এগারিকেল বর্গ থেকে আলাদা।[]

বর্গীয় নামটি ল্যাটিন নাম bōlētus "মাশরুম" থেকে উদ্ভূত, যা প্রাচীন গ্রিক βωλίτης "স্থলজ ছত্রাক" থেকে ধার নেওয়া হয়েছে।[১০] শেষ পর্যন্ত, এই শেষ শব্দটি বোলোস/βῶλος "পিণ্ড," "ঢেলা," এবং রূপকার্থে, "মাশরুম" থেকে উদ্ভূুত হয়।[১০] গ্যালেনের βωλίτης, মার্শাল, সেনেকা এবং পেট্রোনিয়াসদের[১১] মত ল্যাটিন লেখকদের বোলিটাস-এর মত, প্রায়ই Amanita caesarea বলে গণ্য।[১২] ল্যাটিনে এডুলিস বর্গীয় বিশেষণটির অর্থ "ভক্ষ্য" অথবা "ভোজ্য।"[১৩]

সাধারণ নামসমূহ

সম্পাদনা

বি. এডুলিসেপ্রচলিত নাম এলাকাভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে। ইতালিয় নাম, পরচিনো (বহুবচন পরচিনি), যার অর্থ শুকরতুল্য;[১৪] fungo porcino-তে, ইতালিয় ভাষায়, সুইলি শব্দের প্রতিধ্বনি আছে, আক্ষরিক অর্থে "শুকর মাশরুম", প্রাচীন রোম্যানদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি শব্দ[১৫] এবং এই প্রজাতির জন্যে এখনও দক্ষিণ ইতালিতে ব্যবহৃত হয়।[১৬] উৎপত্তিটি আরোপ করা হয়েছে শুকরছানাদের কচি ফলের সাথে, অথবা সেগুলো খাওয়ার জন্যে শূকরদের আগ্রহের জন্যে।[১৭] এটি "রাজা বোলেটে" বলেও পরিচিত।[১৮] ইংরেজি পেনি বান এর গোল বাদামী আকৃতিকে ইঙ্গিত করে। জার্মান নাম স্টাইনপিলজ (পাথুরে মাশরুম) ইঙ্গিত করে প্রজাতিটির শক্ত মাংসের প্রতি।[১৯] অস্ট্রিয়াতে, একে হেরেনপিলজ, "মহান মাশরুম"[১৭] বলা হয়, মেক্সিকোতে, স্প্যানিশ নামটি হচ্ছে পানজা, যার অর্থ "পেট।"[২০] আরেকটি স্প্যানিশ নাম, রডেলন, অর্থ "ছোট গোল নুড়ি," ডাচ নাম ইখুরন্তজসব্রুড মানে হচ্ছে "কাঠবিড়ালের রুটি।"[২১] রাশিয়ান নামগুলো হচ্ছে বেলী গ্রিব ("সাদা মাশরুম" স্বল্পমূল্যের "কাল মাশরুমের" বিপরীত হিসেবে) এবং বরোভিক (বর- "পাইন বন" থেকে)। স্বদেশীয় নাম সেপ ক্যাটালান সেপ বা এর ফরাসী নাম সেপে থেকে এসেছে, যদিও পরের নামটি কয়েকটি সাদৃশ্যপূর্ণ প্রজাতির জন্যে ব্যবহৃত বর্গীয় নাম, পূর্ণভাবে এটি cèpe de Bordeaux, গ্যাস্কন সেপ "গুঁড়ি" থেকে উদ্ভূত, এর মোটা ডাঁটার জন্যে,[২২] শেষ পর্যন্ত ল্যাটিন সিপাস "খুঁটি"[২৩] থেকে। Ceppatello, ceppatello buono, ceppatello bianco, giallo leonato, ghezzo, এবং moreccio হচ্ছে ইতালীয় উপভাষা থেকে উদ্ভূত,[২৪][২৫] এবং ciurenys বা surenys হচ্ছে আরেকটি ক্যাটালান শব্দ।[২৬] ফরাসী- বংশোদ্ভূত রাজা চার্লস চতুর্দশ জন ১৮১৮ সালের পরে সুইডেনে বি. এডুলিসকে জনপ্রিয় করে তোলেন,[২৭] এবং স্থানীয় দেশজ নাম কার্লজোহান্সভ্যাম্প-এ আদৃত হয়েছেন, ডেনিশ নাম কার্ল জোহান সভ্যাম্প নামেও। রাজা তার বাসভবন, রোজারবারগ প্রাসাদের চারপাশে ছত্রাক চাষ করেন।[২৮] ফিনিশ নাম herkkutatti, herkullinen থেকে herkku , যার অর্থ সুস্বাদু, এবং tatti, মাশরুমটির প্রকার ইঙ্গিত করে।

 
প্রস্থচ্ছেদে সাদা দেহ, প্রশস্ত দণ্ড, এবং মাথার নিচে পাশে স্পোর নল

মাশরুমটির টুপির মত মাথাটি পূর্ণ বয়সে ৭-৩০ সেমি (২.৮-১১.৮ ইঞ্চি) প্রশস্ত হয়। অল্প আঠালো, অপূর্ণ বয়সে এটি উত্তলাকার এবং বয়সের সাথে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। এর রঙ সাধারণত লালচে-বাদামী হয়, প্রান্তের কাছের স্থানগুলোতে ফ্যাঁকাসে হয়ে সাদা হয়ে যায়, এবং পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে তা গাড় হয়। স্টাইপ, অথবা বোঁটা, ৮-২৫ সেমি (৩.১-৯.৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ হয়, এবং ৭ সেমি (২.৮ ইঞ্চি) মোটা হয়- মাথার তুলনায় বেশ বড়;[২৯] এর আকৃতি মুগুর আকৃতির, অথবা মাঝখানে ফোলা থাকে। উপরের অংশে এটি নিখুঁতভাবে জালিকাকার, কিন্তু নিচের অংশে মসৃণ অথবা অনিয়মিতভাবে শৈলশিরাময়। মাথার নিচের পৃষ্ঠতল সুক্ষ নল দ্বারা তৈরি, স্পোর উৎপাদনের স্থান; সেগুলো ১ থেকে ২ সেমি (০.৪ থেকে ০.৮ ইঞ্চি) গভীর, এবং কচি অবস্থায় সাদাটে রঙের, কিন্তু পরিণত অবস্থায় সবুজাভ-হলুদ।[৩০] কৌণিক লোমকূপগুলো, যেগুলোতে আঘাত লাগলেও দাগ পড়ে না, হচ্ছে ক্ষুদ্র- মোটামুটিভাবে প্রতি মিলিমিটারে ২ থেকে ৩টি লোমকূপ থাকে।[৩১] তরুণাবস্থায়, লোমকূপগুলো সাদা থাকে আর তুলা ভর্তি বলে মনে হয় (যেগুলো আসলে মাইসেলিয়া); বয়স বাড়ার সাথে সাথে, তাদের রঙ পরিবর্তন হয়ে হলুদ এবং পরবর্তীতে বাদামী হয়। স্পোরের দাগ হচ্ছে জলপাই-বাদামী রঙের। অপরিণত অবস্থায় ফলের দেহ হচ্ছে সাদা, পুরু এবং দৃঢ়, কিন্তু বয়সের সাথে সাথে কিছুটা স্পঞ্জের ন্যায় ছিদ্রবহুল হয়ে যায়। আঘাত পেলে বা কেটে গেলে, এর রঙ পরিবর্তন হয় না, অথবা খুব হালকা বাদামী বা হালকা লাল রঙ ধারণ করে।[৩২] পূর্ণ বয়সের নমুনাগুলো ১ কেজি (২.২ পাউন্ড) ওজনের হয়; ১৯৯৫ সালে আইল অফ স্কাই, স্কটল্যান্ডে থেকে সংগৃহীত একটি বিশাল নমুনার ৪২ সেমি (১৬.৫ ইঞ্চি)-এর একটি মাথা, ১৮ সেমি (৭.১ ইঞ্চি)-এর একটি স্টাইপ এবং ১৪ সেমি (৫.৫ ইঞ্চি) প্রশস্ত, এবং ৩.২ কেজি (৭.১ পাউন্ড) ওজনের।[২৯] ২০১৩ সালে পোল্যান্ডে আবিষ্কৃত একই রকম একটি নমুনা আন্তর্জাতিক সংবাদে আসে।[৩৩]

দণ্ডের আকৃতি মুগুর আকৃতি থেকে কন্দাকার হতে পারে

বি এডুলিসকে বন্য মাশরুমগুলোর মধ্যে খাওয়ার জন্যে নিরাপদ মাশরুমগুলোর একটি বিবেচনা করা হয়, যেহেতু কোন বিষাক্ত প্রজাতির সাথে এর মিল নেই।[১৭] সবচেয়ে কাছাকাছি সদৃশ মাশরুম সম্ভবত ডেভিল'স বোলেটে (Rubroboletus satanas), যার আকৃতি একই রকম, কিন্তু গোঁড়া লাল এবং আঘাত পেলে নীল হয়ে যায়।[১৭] একে প্রায়ই অনেক তিক্ত এবং বিস্বাদ Tylopilus felleus-এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়, কিন্তু ডাঁটায় জালিকা আকৃতি দ্বারা স্বতন্ত্র; পোরচিনি'তে, এটি বাদামী ডাঁটায় একটি সাদা, জালের মত বিন্যাস, পরবর্তীটিতে এটি সাদায় একটি গাড় বিন্যাস। পোরচিনিতে সাদা ছিদ্র থাকে যেখানে অন্যটিতে তা গোলাপি। সন্দেহ হলে, দেহের অল্প একটি অংশের আস্বাদন করলে একটি তিক্ত স্বাদ পাওয়া যাবে।[১৭] এটি "বোলেটের মত" Gyroporus castaneus সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে। যা সাধারণত ক্ষুদ্রাকৃতির, এবং একটি বাদামী ডাঁটা আছে।

স্পোরগুলো উপবৃত্তাকার থেকে টাকু আকৃতির, আয়তনে ১২-১৭ বাই ৫-৭ µmব্যাসিডিয়া, স্পোর-বহনকারী কোষসমূহ, নলের পার্শ্ববর্তী একটি স্তরে উৎপন্ন হয়, এবং নিজেদের এমনভাবে সাজায় যেন তাদের প্রান্ত নলের কেন্দ্রের দিকে থাকে; কোষের এই স্তর প্রায়োগিকভাবে একটি হাইমেনিয়াম নামে পরিচিত। ব্যাসিডিয়াগুলো পাতলা-্প্রাচীরের, প্রায়শ চারটি স্পোরের সাথে সংযুক্ত, এবং ২৫-৩০ পাশে ৮-১০ µm পরিমাপের। হাইমেনিয়ামে আরেক ধরনের উপস্থিত কোষ হল সিস্টিডিয়া, বৃহদাকার নির্বীজ কোষ যা ব্যাস্টিডিয়া থেকে মাইমেনিয়ামের লুমেনের ভেতরে প্রসারিত হয়, এবং বায়ুফাঁদ হিসেবে কাজ করে, আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।[৩৪] বি এডুলিসের প্লুরোসিস্টিডিয়া থাকে (লোমকূপের মুখে অবস্থিত সিস্টিডিয়া) যা পাতলা-প্রাচীরযুক্ত, ভেন্ট্রিকোজে মোটামুটিভাবে টাকু- আকৃতির, এবং পরিমাপে ৩০-৪৫ পাশে ৭-১০ µm; হাইমেনিয়ামের পূর্ণতা বৈশিষ্ট্যটি কেইলোসিস্টিডিয়া'র কারণে হয়- লোমকূপের প্রান্তে প্রাপ্ত কোষ।[৩০] বি এডুলিসেহায়ফি'র বন্ধনী সংযোগ নেই।[৩১]

সংশ্লিষ্ট প্রজাতি

সম্পাদনা
B. edulis var. grandedulis
B. regineus

অনুরূপ বেশ কিছু বাদামী রঙের প্রজাতিদের মাঝেমাঝে এই মাশরুমের উপপ্রজাতি বা প্রভেদ বলে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপে, বি এডুলিসের (অথবা cèpe de Bordeaux) পাশাপাশি, সবচেয়ে জনপ্রিয়গুলো হলঃ

  • টেটে দে নেগ্রে ("নিগ্রো'র মাথা"; বোলিটাস এয়ারাস), বি এডুলিস থেকে তুলনামূলক বেশ দুর্লভ, ভোজনবিলাসীদের কাছে উচ্চ প্রশংসিত, এবং দামি। বি এডুলিসের চেয়ে সাধারণত ক্ষুদ্রাকৃতির, এটি স্বতন্ত্রভাবে গাড় রঙের।[১৭] এটি বিশেষভাবে শুকানোর উপযজগি।[১৮]
  • কেপ দে পিনস ("পাইন গাছের কেপ") বোলিটাস পাইনোফিলাস অথবা বোলিটাস পিনিকোলা) পাইন গাছের মাঝখানে জন্মে। বি এডুলিস থেকে দুর্লভ, এটি ভোজনবিলাসীদের অন্য দুই প্রকারের পোরচিনির মত প্রশংসিত নয়, কিন্তু অন্য অনেক মাশরুমের চেয়ে উচ্চ স্থানীয়।[১৮]
  • কেপে দ'এতে ("গ্রীষ্ম কেপ"; বোলিটাস রেটিকুলাটাস)-ও, আরও কম প্রচলিত এবং আরও আগে পাওয়া যায়।[১৭]

আণবিক ফাইলোজেনেটিক বিশ্লেষণ প্রমাণ করেছে যে এই তিন প্রজাতির সবগুলো স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন প্রজাতি;[৩৫] অন্যান্য ট্যাক্সা যাদের পূর্বে মনে করা হত অনন্য প্রজাতি বা উপপ্রজাতি, যেমন B. betulicola, B. chippewaensis, B. persoonii, B. quercicola এবং B. venturii, তারা বর্তমানে বি. এডুলিস-এর অঙ্গসংস্থান, বাস্তুসংস্থান এবং ভৌগোলিক ব্যাপ্তিসহ ব্যাপক প্রজাতি জটিলের একটি অংশ বলে জ্ঞাত,[৩৬][৩৭] এবং এই জটিলে জেনেটিক পরিবর্তনশীলতা নিম্ন।[৩৮] দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে বি. এডুলিস এবং অন্যান্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্মপূর্ণ ফাঙ্গাস চিহ্নিত করার জন্যে অনুরূপ আণবিক প্রযুক্তি গড়ে তোলা হয়েছে।[৩৯][৪০]

চায়নার ইয়ুনান প্রদেশে প্রাপ্ত তিনটি অপসরণশীল প্রজাতি যা সাধারণভাবে বি এডুলিস হিসেবে বাজারকরণ এবং বিক্রয় করা হয় (এবং আসলে B. aereus-এর সাথে আরও কাছাকাছি সম্পর্কিত) ২০১৩ সালে B. bainiugan, B. meiweiniuganjun এবং B. shiyong হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[41][42]

 
বি. রেক্স-ভেরিস

পশ্চিম উত্তর আমেরিকায় বি. এডুলিসের সাথে কাছাকাছি সম্পর্কিত বেশ কয়েক প্রজাতি আছে। সাদা রাজা বোলেটে (Boletus barrowsii), কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, অ্যারিজোনা এবং ক্যালিফোরনিয়া-এর অংশে পাওয়া যায় (এবং সম্ভবত অন্যান্য অংশে), এর আবিষ্কারক চাক ব্যারোওস-এর নামানুসারে নামাঙ্কিত।[43] বি. এডুলিস-এর চেয়ে এটির রঙ হালকা, গোলাপি ছোপের ক্রিম-রঙের মাথাসহ; প্রায়শ পন্ডেরোসা পাইন-সহ মাইকোরাইজাল, এটি স্বল্প বৃষ্টির এলাকায় জন্মে। কেউ কেউ এর স্বাদ বি. এডুলিসের চেয়ে ভাল না হলেও এর সমান ভাল মনে করেন।[৪৫] দ্যা ক্যালিফোর্নিয়া কিং বোলেটে (Boletus edulis var. grandedulis) বিশাল অনুপাতের দীর্ঘ হয়, এবং বি. এডুলিস থেকে আলাদা এর পরিণত লোমকূপের উপরিতল যা বাদামী থেকে হালকা লাল বর্ণের জন্য স্বতন্ত্র। বিকাশের সময়ে প্রাপ্ত আলোর পরিমাণ দ্বারা মাথার রং প্রভাবিত হয় বলে মনে হয়, এবং ঘন আচ্ছাদনের নিচে জন্মানো অপূর্ণ নমুনাগুলো সাদা থেকে বেশি পরিমাণে আলো প্রাপ্ত নমুনাগুলো ঘন বাদামী, লাল-বাদামী অথবা হলুদ বাদামী রঙের পরিসরের হয়।[৪৬] কুইন বোলেটে (Boletus regineus)-ও, পূর্বে বি. এয়ারিয়াসের একটি প্রভেদ বলে বিবেচিত, একটি নির্বাচিত খাদ্য বলে বিবেচিত। এটি বি. এডুলিসের তুলনায় ক্ষুদ্র, এবং এই প্রজাতির অসদৃশ, মিশ্র বনে পাওয়া যায়।[৪৭] স্প্রিং কিং বোলেটে (Boletus rex-veris), পূর্বে বি. এডুলিস অথবা B. pinophilus-এর একটি প্রকার বলে গণ্য, পুরো পশ্চিম উত্তর আমেরিকাতে পাওয়া যায়। বি. এডুলিসের বিপরীত, B. rex-veris গুচ্ছাকারে ফল দেয়, এবং এর সাধারণ নাম যা ইঙ্গিত করে, এটি বসন্তে জন্মায়।[৪৮]

বাসস্থান এবং বিন্যাস

সম্পাদনা
 
লিথুয়ানিয়ায়

বোলেটাস এডুলিস-এর ফলগুলো একাকী বা দুই বা তিনটি নমুনার ছোট গুচ্ছে জন্মাতে পারে। মাশরুমটির আবাস পাইন (Pinus spp.), স্প্রুস (Picea spp.), হেমলক (Tsuga spp.) এবং ফার (Abies spp.) গাছবহুল এলাকায় বিস্তৃত, যদিও অন্যান্য পোষকদের মধ্যে আছে চেস্টনাট, চিনকুয়াপিন, বীচ, Keteleeria spp., Lithocarpus spp., এবং ওক। ক্যালিফোর্নিয়াতে, পোরচিনি বিভিন্ন রকম বন যেমন উপকূলবর্তী জঙ্গল, শুষ্ক অভ্যন্তরের ওকের বন এবং নিস্পাদপ প্রান্তর এবং উঁচু টিলার অভ্যন্তরের পার্বত্য মিশ্র বন,[৪৯] ৩,৫০০ মি. (১১,৫০০ ফুটের) উচ্চতায় সংগ্রহ করা হয়েছে।[৫০] উত্তরপূর্ব স্পেনে, এরা পাথুরে গোলাপের প্রজাতি Cistus ladanifer এবং Halimium lasianthum বহুল ঝোপ এলাকায় সাধারণ।[৫১]

বোলেটাস এডুলিস-এর বিস্তৃতি বিশ্বজনীন, নাতিশীতোষ্ণ থেকে প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় কেন্দ্রীভূত।[49] এটি ইউরোপে সুলভ- উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে, গ্রিস এবং ইতালির প্রান্তসীমার দক্ষিণ পর্যন্ত- এবং উত্তর আমেরিকা, যেখানে এর দক্ষিণ এলাকা মেক্সিকোর দক্ষিণ পর্যন্ত প্রসারিত।[32] এটি ইতালির পারমা'র বোরগোতারো এলাকাতে সুপরিচিত, এবং সেখানে এর PGI পদমর্যাদা আছে। ইউরোপীয় বিস্তার উত্তরে স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং দক্ষিণে দক্ষিণ ইতালি ও মরক্কো পর্যন্ত প্রসারিত।[৪৯] চীনে, মাশরুমটিকে উত্তরপূর্ব হেইলংজিয়াং প্রদেশ থেকে ইয়ুনান-গুইঝ মালভূমি এবং তিব্বত পর্যন্ত পাওয়া যায়।[৩২] নেপালের স্যাগারমাথা জাতীয় পার্কে পাইনাস এবং তেসুগা'র নিচে এর জন্মানোর দলিল আছে,[৫২] এমনকি ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বনেও। পশ্চিম এশিয়াতে, এই প্রজাতি ইরানের উত্তরপশ্চিম জঙ্গলে পাওয়া গেছে।[৫৪]

বিদেশে প্রবর্তন

সম্পাদনা

বোলেটাস এডুলিস এমন কিছু এলাকায় জন্মে যেখানে তারা স্বদেশী বলে বিবেচনা করা হয়না। একে প্রায়শই নিউজিল্যান্ডের মধ্য ক্রাইস্টচার্চের হেগলি পার্কে ওক এবং সিলভার বার্চের নিচে পাওয়া যায়, যেখানে সম্ভবত একে প্রবর্তিত করা হয়েছিল,[৫৫] সম্ভবত ১৯শ শতাব্দীতে পাত্রে জন্মানো বীচ, বার্চ এবং ওকের শেকড়ে- সময়ের সাথে সাথে ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বিদেশী গাছ রোপণ শুরু হয়।[৩২] একইভাবে, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইড পাহাড়ে প্রবর্তিত তিন প্রজাতির গাছের সাথে সংযুক্ত এলাকায় সংগৃহীত হয়েছে।[৫৬] এটি ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণে কোয়াজুলু-ন্যাটাল মিডল্যান্ডের পাইন বন সংলগ্নে অসংখ্যভাবে জন্মে এবং বিশ্বাস করা হয় যে পাইন গাছ আমদানির মাধ্যমে এর প্রবর্তন হয়।[৫৭][৫৮] এটি পার্শ্ববর্তী জিম্বাবুয়ের পাইন বাগানেও জন্মে।[৫৯]

বাস্তুসংস্থান

সম্পাদনা
বি. এডুলিস এক্টোমাইকোরাইজাল এবং Pinus radiata-এর সাথে সহাবস্থান করতে পারে

ফল উৎপাদন

সম্পাদনা

ইতালীয় লোককথায় বিশ্বাস করা হয় যে পোরচিনি অমাবস্যার রাতে অঙ্কুরিত হয়;[১৭] গবেষণায় ফল উৎপাদনে প্রভাবকারী কারণগুলো আরও বৈজ্ঞানিকভাবে বের করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। যদিও গ্রীষ্ম থেকে শরত (যুক্তরাজ্যে জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে) যে কোন সময়ে ফল উৎপন্ন হতে পারে, তাদের বিকাশ উষ্ণ সময়ে বৃষ্টিপাত পরবর্তীতে ঘন শরৎকালীন বৃষ্টির মাধ্যমে মাটির তাপমাত্রা কমে যাওয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়।[৪৯] গড়ের অধিক বৃষ্টিপাতের পরিণামে এক "বোলেট সাল" হিসেবে পরিচিত কিছু চক্রে অধিক সংখ্যক বোলেটের দ্রুত আবির্ভাব হতে পারে।[৬০] ২০০৪-এর একটি ক্ষেত্র সমীক্ষা ইঙ্গিত করে যে ফল উৎপাদন একটি উন্মুক্ত এবং সূর্যালোকিত বন দ্বারা বৃদ্ধি পায়,[৬১] জিম্বাবুয়ের একটি গবেষণায় প্রণীত পূর্বের একটি পর্যবেক্ষণে প্রতিপাদক, বনের মেঝের আবর্জনার স্তর অপসারণ ফল উৎপাদনে একটি নেতিবাচক প্রভাব রাখে, কিন্তু পূর্বের গবেষণা এর বিপরীত ফলাফল প্রতিপাদন করে।[৬২][৬৩] ২০০১ সালে পরিচালিত একটি লিথুয়ানিয় গবেষণা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে টুপির ন্যায় মাথার সর্বোচ্চ দৈনিক বৃদ্ধির হার (প্রায় ২১ মি.মি. বা ০.৮ ইঞ্চি) সঙ্ঘটিত হয় যখন আপেক্ষিক বায়ু আদ্রতা সর্বোচ্চ ছিল, এবং ফল উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয় যখন বাতাসের আদ্রতা ৪০%-এর নিচে নেমে যায়। ফলের আবির্ভাবকে বাধা দেওয়ার উপাদানগুলোর অন্তর্গত হচ্ছে দীর্ঘায়িত খরা, অপর্যাপ্ত বায়ু এবং মাটির আদ্রতা, রাতের বাতাসের তাপমাত্রায় আকস্মিক হ্রাস, এবং প্রথম তুষারপাতের আবির্ভাব।[৬৪] উত্তরদিকে মুখ করা মাঠগুলো দক্ষিণ মুখি সমতুল্য মাঠগুলোর তুলনায় বেশি মাশরুম উৎপাদন করে।[৬৫]

মাইকোরাইজাল সংলগ্নতা

সম্পাদনা

বোলেটাস এডুলিস একটি মাইকোরাইজাল- এটি গাছের (পোষকের) শেকড়ের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কিত, যাতে ছত্রাকটি নাইট্রোজেন এবং পোষকের জন্যে স্থায়ী কার্বনের জন্যে পরিবেশ থেকে নিষ্কাশিত অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিনিময় করে। গাছের জন্যে অন্যান্য উপকার স্পষ্টঃ চাইনিজ চেস্টনাটের ক্ষেত্রে, বি. এডুলিস-এর সাথে মাইকোরাইজি সৃষ্টি গাছের চারার পানির চাপ প্রতিহত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এবং পাতার রসালতা, পাতার ক্ষেত্র এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।[৬৬] ছত্রাকটি প্রান্ত, পুষ্টি শোষক শেকড়ের আগায় চারপাশে টিস্যুর একটি খাপ তৈরি করে, প্রায়শই পোষকের ডগায় একটি উচ্চমাত্রার শাখাবিন্যাস প্রবর্তন করে, এবং শেকড়ের টিস্যুর ভেতরে প্রবেশ করে, কিছু মাইকোলজিস্টদের জন্যে, এক্টোমাইকোরাইজাল সম্পর্কের নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য একটি হারটিগ জাল গঠন করে।[৬৭] এক্টোমাইকোরাইজাল ছত্রাকটি তখন গাছের সাথে পুষ্টি উপাদান বিনিময় করতে পারে, কার্যকরভাবে পোষক গাছের মূলতন্ত্র থেকে মিথোজীবী ছত্রাকের সর্বাধিক দূরত্ব পর্যন্ত প্রসারিত হয়।[৬৭] উপযুক্ত পোষক সংবাহী উদ্ভিদের বহুবিধ দলের সদস্য হতে পারে যা উত্তর গোলার্ধের সর্বত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃত; ১৯৯৫এর একটি হিসাব অনুযায়ী, সেখানে অন্তত ৩০টি পোষক উদ্ভিদ প্রজাতি ১৫এর অধিক বর্গে বিস্তৃত।[৩২] মাইকোরাইজাল সংলগ্নতার উদাহরণের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে চাইনিজ রেড পাইন,[৬৮] মেক্সিকান উইপিং পাইন,[৬৯] স্কটস পাইন, নরওয়ে স্প্রুস,[৭০] কোস্ট ডাগলাস-ফার,[৭১] মাউন্টেইন পাইন[৭২] এবং ভার্জিনিয়া পাইন[৭৩]। ছত্রাকটির গাম পাথুরে গোলাপের-এর সাথেও সংলগ্নতা আছে, একটি অগ্রণী প্রথমদিকের ধাপের ঝোপ যা অধঃপতিত এলাকা যেমন পোড়া জঙ্গলে জন্মানোর জন্যে উপযোগী।[৭৪] এইসব এবং আরও পাথুরে গোলাপের প্রজাতিসমূহ ছত্রাক আধার হিসেবে পরিবেশগতভাবে গুরুত্মপূর্ণ, যেসব গাছ বনের পুনঃবৃদ্ধির চক্রের পরবর্তীতে মাইকোরাইজাল ছত্রাকের কলাম বজায় রেখে।[৭৫]

ছত্রাকটিকে প্রায়শ Amanita muscaria অথবা A. rubescens এর সাথে সহ-সঙ্ঘটিত হয় বলে সুপরিচিত, যদিও এটি অস্পষ্ট যে এটি প্রজাতিদের মধ্যে কোন জৈবিক সংলগ্নতার জন্যে, নাকি বৃদ্ধিকালের সময়ে ঋতু, আবাস, অথবা বাস্তুসংস্থান প্রয়োজনীয়তার জন্যে ঘটে। B. edulis এবং নিউজিল্যান্ডে Pinus radiata-তে এক্টোমাইকোরাইজি Amanita excelsa -এর সাথেও সংলগ্নতা খুঁজে পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে যে পোরচিনি'র জীবন চক্রে অন্যান্য ছত্রাকের প্রভাব থাকতে পারে।[৭৬] ২০০৭ সালের একটি গবেষণা প্রমাণ করে যে ফলের প্রাচুর্য এবং এমনকি সরাসরি মাশরুমের নিচের মাটির নমুনা নেওয়ার পরেও ভূ নিম্নস্থ মাইসেলিয়ার উপস্থিতি, একটি ছোট সম্পর্ক আছে; গবেষণাটি এই সমাপ্তি টানে যে মাইকোরাইজি'র সৃষ্টি এবং ফল উৎপাদনের জন্যে দায়ী প্রভাবগুলো আরও বেশি জটিল।[৭৭]

ভারী-ধাতু দূষণ

সম্পাদনা

বোলেটাস এডুলিস বিষাক্ত ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত মাটি, যেমন ধাতু গলানোর চুল্লির আশেপাশে প্রাপ্ত মাটিতে, সহ্য করার এবং এমনকি তেমন মাটিতে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যে সুপরিচিত। মাশরুমটির ভারী ধাতুর বিষাক্ততার সহ্য ক্ষমতা ফাইটোশেলাটিন নামে একটি প্রাণরাসায়নিক দ্বারা প্রস্তুত- একটি অলিগোপেপ্টাইড যা ধাতুর সংস্পর্শে আসলে প্রস্তুত হয়।[৭৮] ফাইটোশেলাটিনগুলো হচ্ছে শেলাটিং এজেন্ট, ধাতুর সাথে একাধিক বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম; এই অবস্থায়, ধাতুটি সাধারণত অন্য কোন ধাতু অথবা আয়নের সাথে প্রতিক্রিয়া করেনা এবং মাশরুম টিস্যুতে ডিটক্সিফাইড আকারে সঞ্চিত থাকে।

বালাই এবং শিকারী

সম্পাদনা

বি. এডুলিস-এর ফলদেহগুলো পরজীবী শৈবালের-মত ছত্রাক Hypomyces chrysospermus, বোলেটে খাদক নামে পরিচিত, যা মাশরুমের ওপরে নিজেকে সাদা, হলুদ, অথবা লালচে-বাদামী তুলার মত স্তরে প্রকাশ করে, তার দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।[৭৯] শুষ্ক পোরচিনি খাওয়ার পর পেট ব্যাথার কিছু প্রতিবেদিত ঘটনার কারণ হিসেবে ফলদেহে এই শৈবালের উপস্থিতিকে দায়ী করা হয়।[৮০] বেশকিছু মাশরুম মাছির,[৪৯] সাথে অন্যান্য পতঙ্গ এবং তাদের লার্ভার খাদ্যের উৎস হিসেবেও এই মাশরুমটি ব্যবহৃত হয়।[৮১] প্রতিবেদন অনুযায়ী নেদারল্যান্ড এবং ইতালিতে প্রাপ্ত সংক্রমিত নমুনায় ভাইরাসের একটি সনাক্তহীন প্রজাতি পাওয়া গেছে; ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত ফলদেহগুলো তুলনামূলক মোটা ডাঁটা এবং ক্ষুদ্র বা মাথাবিহীন থাকে, "ক্ষুদ্র-মাথা রোগ" নামকরণের দিকে নিয়ে গিয়ে।[৮২][৮৩]

বোলেটাস এডুলিস কলার স্লাগ (Ariolimax columbianus),[৮৪] দীর্ঘ-লোমের ঘাসের ইঁদুর[৮৫], লাল কাঠবিড়াল[৮৬], এবং একটি একক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিয়াল চড়ুই[৮৭]-এর মত প্রাণীদের একটি খাদ্য উৎস।

রান্নায় ব্যবহার

সম্পাদনা

বোলেটাস এডুলিস, প্রজাতি বিশেষণ এডুলিস সরাসরি যা ইঙ্গিত করে, হচ্ছে একটি ভোজ্য মাশরুম। ইতালীয় পাচক এবং রেস্তরাঁর মালিক অ্যান্টোনিও কারলুকিয়ো একে "শ্রেষ্ঠ বন্য মাশরুম" বলে বর্ণনা করেছেন, এবং একে এর স্বাদ এবং বহুমুখিতার জন্যে সকল ছত্রাকের মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ বলে প্রশংসা করেন।[১৭] একটি পছন্দনীয় বলে বিবেচিত, বিশেষত ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং ইতালি-তে[১৮], প্লিনি দ্যা এল্ডার এবং মার্শাল-এর মত রোমান লেখকেরা ব্যাপকভাবে এটিকে নিয়ে লিখেছেন, যদিও মর্যাদায় এটি খ্যাতনামা Amanita caesarea এর নিচে অবস্থিত।

sunt tibi boleti; fungos ego sumo suillos (Ep. iii. 60)
("আপনারা নির্বাচিত বোলেটাস খান, আমার কাছে এমন মাশরুম আছে যা শূকর খায়।")[১৪]

অসন্তুষ্ট মার্শাল লেখেন যখন তাকে সুইলি-এর বদলে বোলেটি পরিবেশন করা হয়।[৮৮] সুইলি নামটি সম্পর্কিত Leccinum scabrum[৮৯] কে পরিবেষ্টন করে বলেও মনে করা হয়।

মাশরুমটির স্বাদ বাদাম এবং কিছুটা মাংসের মত বলে বর্ণিত হয়েছে, একটি মসৃণ, কোমল গঠনের, এবং গাঁজান রুটির একটি স্বতন্ত্র সুগন্ধ-সহ। কচি, ক্ষুদ্র পোরচিনি রন্ধন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রশংসিত, যেহেতু বৃহদাকৃতিরগুলোতে প্রায়শ শূককীট (পতঙ্গ লার্ভা) থাকে, এবং পরিণত হওয়ার সাথে সাথে আঠালো, নমনীয় এবং কম সুস্বাদু হয়ে ওঠে। ফলদেহগুলো মূলের কাছে স্টাইপ ধরে এবং হালকাভাবে মুচড়িয়ে সংগ্রহ করা হয়। একটি ছুরি দিয়ে স্টাইপটি কাটলে উদ্বৃত্ত অংশটি পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং মাইসেলিয়াম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।[১৭] খোসা না ছাড়াতে এবং ধুতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলগুলো অত্যন্ত পচনশীল, উচ্চ পরিমাণে পানি (প্রায় ৯০%), উচ্চমাত্রার এনজাইম সক্রিয়তা, এবং মাইক্রোঅরগানিজমের উপস্থিতির কারণে।[৯০] সম্ভাব্য দূষিত অথবা কলুষিত স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহের সময়ে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেহেতু বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ফলগুলো মার্কারি[৯১], ক্যাডমিয়াম[৯২], কেসিয়াম এবং পোলোনিয়াম[৯৩][৯৪]-এর মত বিষাক্ত ভারী ধাতু সঞ্চিত করে রাখতে পারে। সঞ্চিত ধাতু অথবা তেজস্ক্রিয় ফিশন ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থগুলো রাসায়নিক সাক্ষরের মতঃ রাসায়নিক এবং রেডিওকেমিক্যাল বিশ্লেষণ বহিরাগত নমুনার উৎস চিহ্নিত করতে,[৯৫] এবং দূষিত এলাকার দীর্ঘকালীন রেডিওইকোলজিকাল পর্যবেক্ষণের জন্যে ব্যবহৃত হতে পারে।[৯৬]

 
একটি পোলিশ রেস্তরাঁয় রুটির পাত্রে পরিবেশিত পোরচিনি মাশরুম এবং নুডলস সুপ

মধ্য এবং দক্ষিণ ইউরোপে পোরচিনি গ্রীষ্মকাল এবং শরতকালে তাজা, এবং বছরের অন্যান্য সময়ে শুষ্ক বা টিনজাত করে বাজারে বিক্রি করা হয়, এবং পুরো বিশ্বে যেসব দেশে এটি অন্যকোন ভাবে পাওয়া যায় না সেখানে বিতরিত করা হয়।[৯৭] এগুলো কাঁচা অবস্থায়, মাখন দিয়ে সাঁতলে, কিমা করে পাস্তা, সুপে এবং অন্য অনেক রান্নায় খাওয়া যায়। ফ্রান্সে, এদেরকে cèpes à la Bordelaise, cèpe frits and cèpe aux tomates-এর মত রান্নায় ব্যবহার করা হয়।[৯৮] পোরচিনি রিজোটো একটি ঐতিহ্যবাহী ইতালীয় শরৎকালীন রান্না।[৯৯] পোরচিনি অনেক রান্নার একটি উপাদান, যেমন প্রভেন্সাল[১০০] এবং ভিয়েনিজ[১০১] থাইল্যান্ডে এদের সুপে এবং সালাদে পাণ্ডুবর্ণের করে ব্যবহার করা হয়।[১০২] পোরচিনিকে হিমায়িতও করা যায়- কাঁচা অথবা প্রথমে মাখনে রান্না করে। হিমায়িত পোরচিনির রঙ, সুগন্ধ, এবং স্বাদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় যদি চারমাসের বেশি সময় হিমায়িত রাখা হয়। হিমায়িত করার পূর্বে পাণ্ডুবর্ণ করে অথবা ভিজিয়ে এবং পাণ্ডুবর্ণ করলে হিমায়িতকাল ১২ মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়।[৯০] জারিত করে বাজারজাত করা যায় এমন অল্প কয়েকটি মাশরুমের মধ্যে এটি একটি।[১০৩]

 
বোরগোতারো, ইতালি-এর উৎসবে শুষ্ক পোরচিনির একটি স্তুপ

বোলেটাস এডুলিস শুকানোর উপযুক্ত - এটির স্বাদ-গন্ধ তীব্রতর হয়, এটিকে সহজেই পুনঃগঠন করা যায়, এবং এর চূড়ান্ত স্বাদ মনোরম।[১০৪] পুনঃগঠন করা যায় প্রায় বিশ মিনিট গরম, কিন্তু ফুটন্ত পানিতে নয়, ভিজিয়ে; ব্যবহৃত পানিটি মাশরুমের সুগন্ধে প্রবিষ্ট হয়ে যায় এবং এটিও পরবর্তী রান্নায় ব্যবহার করা যায়। সয়াবিন ব্যতীত অন্যান্য সাধারণভাবে খাওয়ার সব্জি থেকে শুষ্ক পোরচিনিতে অধিক প্রোটিন থাকে। এর কিছু অংশ দুষ্পাচ্য, যদিও রান্না করলে এর পাচ্যতা বৃদ্ধি পায়।[১০৫]

অন্যান্য বোলেটের মত, পোরচিনিকে আলাদা সুতায় বিদ্ধ করে এবং রান্নাঘরের ছাদের কাছাকাছি শুকিয়ে শুষ্ক করা যায়। অন্যভাবে, একটি ব্রাশ দিয়ে মাশরুমগুলো পরিষ্কার করে (না ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়), এবং তারপর এদের একটি ফোটানোর পাত্র বা গরম পানির বড় পাত্রের ওপরে কঞ্চির ঝুড়ি অথবা বাঁশের বাস্পোতপাদকে রেখে এদের শুকানো যায়।[১০৬] আরেকটি পদ্ধতি হল একটি চুলায় ২৫ থেকে ৩০° সে. (৭৭ থেকে ৮৬° ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত শুকানো, তারপর মচমচে বা ভঙ্গুর না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা ৫০° সে. (১২২° ফারেনহাইট) বৃদ্ধি করে।[১০৭] একবার শুষ্ক হলে, তাদের একটি বায়ুনিরোধী বয়ামে রাখা হয়।[১০৬] বাণিজ্যিক উৎপাদনে গুরুত্মপূর্ণ, শিল্পজাত প্রস্তুতিতে প্রেশার কুকার অথবা টিনজাত বা বোতলজাত করার পরে পোরচিনির স্বাদ বজায় থাকে, এবং এভাবে সুপ বা স্টু নির্মাতাদের জন্যে উপযোগী। শুষ্ক কয়েক টুকরো পোরচিনো যোগ করলে উল্লেখযোগ্যভাবে স্বাদ বৃদ্ধি পায়, এবং এরা carrettiere (কার্টারের সস) নামে পরিচিত একটি পাস্তা সসের প্রধান উপাদান।[১০৮] শুকানোর পদ্ধতিটি বেশকিছু উদ্বায়ী উপাদান যা মাশরুমের সুগন্ধে অবদান রাখে তার গঠন প্রভাবিত করে বলে জ্ঞাত। রাসায়নিক বিশ্লেষণ প্রমাণ করেছে যে শুষ্ক মাশরুমের দুর্গন্ধ ৫৩টি উদ্বায়ী উপাদানের একটি জটিল মিশ্রণ।[১০৯]

বাণিজ্যিক ফসল

সম্পাদনা
 
পোরচিনি'র আকার বিভিন্নরকম হতে পারে।

১৯৯৮ সালের একটি হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে বোলেটাস এডুলিস এবং এর কাছাকাছি সম্পর্কিত প্রজাতিগুলো (B. aereus, B. pinophilus, এবং B. reticulatus)-এর সর্বমোট বার্ষিক ব্যবহার ২০,০০০ থেকে ১০০,০০০ টনের মধ্যে।[49] ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানিতে প্রায় ২,৭০০ টন (৩,০০০ টন) বিক্রি হয়, সরকারি হিসাব অনুযায়ী। ব্যবহারের সঠিক হিসেব এর চেয়ে অনেক বেশি, যেহেতু বেসরকারি বিক্রয় অথবা সংগ্রাহকদের দ্বারা ব্যবহৃত সংখ্যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।[50] শুস্কাবস্থায় ব্যাপকভাবে একে রপ্তানি এবং বিক্রি করা হয়, যেসব দেশে এরা প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় না, যেমন অস্ট্রেলিয়া এবন নিউজিল্যান্ড। স্পেনের ক্যাস্টিল এবং লিওন-এর স্বশাসিত সম্প্রদায়গুলো বছরে ৭,৭০০ টন (৮,৫০০ টন) উৎপাদন করে।[74] শরৎকালে, উত্তর গোলার্ধে পোরচিনির মূল্য সাধারণত প্রতি কেজি $২০ থেকে $৮০ পর্যন্ত হয়, যদিও ১৯৯৭ সালে নিউ ইয়র্কে ফলের ঘাটতি পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি $২০০-এর বেশি বৃদ্ধি করেছিল।[50]

উত্তর ইতালির পারমা প্রদেশের বোরগোতারো-এর সংলগ্ন এলাকায়, Boletus edulis, B. aereus, B. aestivalis and B. pinophilus-এর চারটি প্রজাতিকে তাদের উচ্চতর স্বাদের জন্য পরিচিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে Fungo di Borgotaro নামাঙ্কিত। এখানে এই মাশরুমগুলো শত বছর ধরে সংগ্রহীত এবং বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করা হয়। মাশরুমের বিশ্বায়নের কারণে পোরচিনির বেশিরভাগই ইতালিতে বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য অথবা ইতালির দ্বারা রপ্তানিকৃত আর সেখানে উৎপন্ন হয় না। বিভিন্ন স্থান, বিশেষত চীন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়; তারপর এদের প্রায়শই "ইতালীয় পোরচিনি" লেবেলে পুনরায় রপ্তানি করা হয়।[110][111]

ইতালিতে স্থানীয় উৎপাদন বিযুক্ত হওয়ার একটি প্রতিকূল প্রভাব পড়ে গুণমানের ওপরে; উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০ সালে শুষ্ক পোরচিনি মাশরুমের কিছু ইতালি থেকে চীনে রপ্তানি হয় যাতে Tylopilus গণের প্রজাতি ছিল, যাদের রূপ কিছুটা অনুরূপ এবং শুস্কাবস্থায় মাশরুম শ্রমিক এবং মাইকোলজিস্টদের জন্যে বোলিটাস থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। Tylopilus প্রজাতি সাধারণত বেশ তিক্ত স্বাদের, যার কারণ ধরা হয় পোরচিনির সাথে মেশানোর জন্যে।[১১২]

লৌহ যবনিকার পতনের এবং এর পরবর্তী অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাধার পরে, স্থানীয়ভাবে মাশরুম ফলানোর ঐতিহ্যসহ মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেমন আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, ম্যাকিডনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া এবং স্লোভেনিয়া, পোরচিনির রপ্তানিকারকে পরিণত হয়, প্রধানত ইতালীয় বাজারের প্রতি কেন্দ্রীভূত হয়ে।[১১১] রপ্তানিকৃত পোরচিনি এবং অন্যান্য বন্য ছত্রাক ফ্রান্স, জার্মানি এবং অন্যান্য পশ্চিমা ইউরোপীয় বাজারে যায়, যেখানে তাদের চাহিদা ছিল, কিন্ত বাণিজ্যিকভাবে এর সংগ্রহ ছিলনা।[১১১] বুলগেরিয়া, বিশেষত প্রচুর রোমানি সম্প্রদায় এবং বেকারদের জন্যে বি. এডুলিস তোলা একটি বার্ষিক মৌসুমি উপার্জন এবং অবসর সময় কাটানোর উপায় হয়ে দাঁড়ায়। নিয়ন্ত্রণের অভাব মাশরুমের সংস্থানের একটি গুরু শোষণের দিকে নিয়ে যায়।[১১৪]

অন্য আরও যথাযথ মাইকোরাইজাল ফাঙ্গাসের মত, বি. এডুলিস এখন পর্যন্ত আবাদ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে।[১০৫][১১৫] কিছু গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করে যে মাটির অজ্ঞাত উপাদান মাইক্রোফ্লোরা হয়তবা বি. এডুলিস -এর সাথে পোষক গাছের মাইকোরাইজাল সম্পর্ক স্থাপন করে।[১১৬][১১৭][১১৮]

Boletus edulis, fresh[১৫]
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি৩৪২.৪ কিজু (৮১.৮ kcal)
১.৭০ g
৭.৩৯ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
থায়ামিন (বি)
৯%
০.১০৫ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৮%
০.০৯২ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৪০%
৬.০৭ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
৫৩%
২.৬৪ মিগ্রা
ভিটামিন বি
৪%
০.০৫১ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
৭৩%
২৯০ μg
ভিটামিন সি
৫%
৪.২১ মিগ্রা
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
০%
১.১৯৫ মিগ্রা
লৌহ
৬%
০.৭৩৯ মিগ্রা
ফসফরাস
৩%
২২.২৬ মিগ্রা
পটাশিয়াম
৪%
২০৩.৪ মিগ্রা
জিংক
৪৪%
৪.১৭২ মিগ্রা
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল

পুষ্টিবিধান

সম্পাদনা

বোলেটাস এডুলিস মাশরুমে ৯% শর্করা, ৩% চর্বি, এবং ৭% প্রোটিন (টেবিল) থাকে। তাজা মাশরুমে ৮০%-এর বেশি আদ্রতা থাকে,[১১৯] যদিও বর্ণীত মূল্য কিছুটা ভিন্ন হতে পারে যেহেতু আদ্রতা পরিবেশের তাপমাত্রা এবং আপেক্ষিক আদ্রতার জন্যে ভিন্ন হতে পারে বিকাশ এবং সংরক্ষণের সময়ে।[১২০] শর্করা উপাদানে মনোস্যাকারাইড গ্লুকোজ, ম্যানিটল এবং α,α-ট্রেহালজ, পলিস্যাকারাইড গ্লাইকোজেন, এবং পানিতে অদ্রবণীয় সংগঠনি পলিস্যাকারাইড চিটিন, যা মাশরুমের কোষের দেয়ালের শুষ্ক পদার্থের ৮০-৯০% গঠন করে। চিটিন, হেমিসেলুলোজ, এবং পেক্টিন-এর মত শর্করা- মানুষের জন্য দুষ্পাচ্য- বি. এডুলিস-এর অদ্রবণীয় আঁশের উচ্চ অনুপাত গঠন করে।[১২১]

মাশরুমের ৩% শুষ্ক উপাদান সর্বমোট লিপিড, অথবা অশোধিত চর্বি দ্বারা গঠিত। ফ্যাটি এসিডের অনুপাত (সর্বমোট ফ্যাটি এসিডের শতকরা হিসেবে প্রকাশিত) হলঃ পামিটিক এসিড, ১০%; স্টিয়ারিক এসিড, ৩%; ওলিক এসিড, ৩৬%, এবং লাইনোলিক এসিড, ৪২%।[১২২]

এগারটি পর্তুগিজ বন্য ভক্ষণীয় মাশরুম প্রজাতির অ্যামিনো এসিডের একটি তুলনামূলক গবেষণা প্রমাণিত করে যে বোলেটাস এডুলিস-এর সর্বোচ্চ পরিমাণের অ্যামিনো এসিড উপাদান আছে।[১২৩][১২৪]

বি. এডুলিস মাশরুম খাদ্যের খনিজ পদার্থ, সোডিয়াম, লৌহ, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, মাশরুমের উপাদান অনুযায়ী এবং চীনের ভৌগোলিক এলাকায় যেখান থেকে তাদের সংগ্রহ করা হয় সেখানকার মাটির গঠন উপাদানের জন্যে বিভিন্নরকম হয়।[১২১][১২৫] তারা বি ভিটামিনসমূহ এবং টোকোফেরল সমৃদ্ধ। বি. এডুলিস উচ্চ পরিমাণে সেলেনিয়াম, একটি ট্রেস মিনারেল থাকে,[১২৭] যদিও মাশরুম উদ্ভূত সেলেনিয়াম সহজলভ্য নয়।[১২৮]

ফাইটোকেমিক্যাল

সম্পাদনা
 
বি. এডুলিস-কে ক্যাডমিয়ামের মত বিষাক্ত ভারী ধাতু প্রতিরোধ করার শক্তি দেয় ফাইটোশেলাটিন।

বোলেটাস এডুলিস-এর ফলে প্রতি ১০০ গ্রাম শুষ্ক মাশরুমে ৫০০ মিলিগ্রাম এরগোস্টেরল-সহ বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল বিদ্যমান।[১২৯]সুগন্ধি যৌগ বি. এডুলিস মাশরুমকে তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুবাস দেয় যার প্রায় ১০০টি উপাদান আছে, যেমন এস্টার এবং ফ্যাটি এসিড[১৩০] ফলগুলোতে অসংখ্য পলিফেনল, বিশেষত অধিক পরিমাণে রোজমেরিনিক এসিড[১৩১[ এবং অরগ্যানিক এসিড (যেমন অক্স্যালিক, সাইট্রিক, ম্যালিক, সাচিনিক এবং ফিউম্যারিক এসিড)[১৩২] এবং অ্যাল্কালোয়েড[১৩৩] সংবলিত। কাঁচা ফলে এরগোথায়োনিন[১৩৪]-ও থাকে।

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Boletus edulis Bull. 1782"MycoBank। International Mycological Association। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-২১ 
  2. Bulliard JBF. (১৭৮২)। Herbier de la France. Vol 2 (French ভাষায়)। Paris, France: P.F. Didot। পৃষ্ঠা 49–96, plate 60। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-২৪ 
  3. Esser K, Lemke PA (১৯৯৪)। The Mycota: A Comprehensive Treatise on Fungi as Experimental Systems for Basic and Applied Research। Heidelberg, Germany: Springer। পৃষ্ঠা 81আইএসবিএন 3-540-66493-9 
  4. Sowerby J. (১৮০৯)। Coloured Figures of English Fungi। Volume 4। London: J. Davis। পৃষ্ঠা 199।  This entire work is available in Commons here, but the reference is to plate 419 with textual description on page 697. Sowerby described the same modern species as B. edulis on plate 111 (description on page 57).
  5. Gray SF. (১৮২১)। A Natural Arrangement of British Plants। London: Baldwin, Cradock, and Joy, Paternoster-Row। পৃষ্ঠা 647। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-২৪ 
  6. Šutara J. (১৯৮৫)। "Leccinum and the question of superfluous names (Fungi: Boletaceae)"। Taxon34 (4): 678–86। জেস্টোর 1222214ডিওআই:10.2307/1222214 
  7. Singer R. (১৯৮৬)। The Agaricales in Modern Taxonomy (4th rev. সংস্করণ)। Koenigstein, Germany: Koeltz Scientific Books। পৃষ্ঠা 779। আইএসবিএন 3-87429-254-1 
  8. Smith AH, Thiers HD (১৯৭১)। The Boletes of Michigan। Ann Arbor, Michigan: University of Michigan Press। পৃষ্ঠা 221। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-০২ 
  9. Binder M, Besl H, Bresinsky A (১৯৯৭)। "Agaricales oder Boletales? Molekularbiologische Befunde zur Zuordnung einiger umstrittener Taxa"। Zeitschrift für Mykologie63: 189–196। 
  10. Simpson DP. (১৯৭৯) [1854]। Cassell's Latin Dictionary (5 সংস্করণ)। London: Cassell Ltd। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 0-304-52257-0 
  11. Peter Howell, A Commentary on Book One of the Epigrams of Martial, The Athlone Press, 1980 p.152-3. Howell doubts the identification, and mentions the view advanced by Augusta A. Imholtz Jr., 'Fungi and piace- names, thè origin of boletus,' in AJP Vol.98, 1977 pp.71f., that the Latin word may derive from the Spanish town Boletum, modern-day Boltaña, south of the Pyrenees, which is still famous for its mushrooms.
  12. Ramsbottom J. (১৯৫৩)। Mushrooms & Toadstools। London, England: Collins। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 1-870630-09-2 
  13. Jamieson A, Ainsworth R, Morell T (১৮২৮)। Latin Dictionary: Morell's Abridgment। London: Moon, Boys & Graves। পৃষ্ঠা 121, 596। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-০২ 
  14. Morford M. (১৯৭৭)। "Juvenal's Fifth Satire"The American Journal of Philology98 (3): 219–45। জেস্টোর 293772ডিওআই:10.2307/293772 
  15. Nutritional values are based on chemical analysis of Turkish specimens, conducted by Çaglarlrmak and colleagues at the Agricultural Faculty, Food Engineering Department, Gaziosmanpaşa University. Source: Çaglarlrmak N, Ünal K, Ötles S (২০০১)। "Nutritional value of edible wild mushrooms collected from the Black Sea region of Turkey" (PDF)Micologia Aplicada International14 (1): 1–5। 

উদ্ধৃত গ্রন্থ

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা