রোসেটা প্রস্তরফলক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Wikitanvir (আলোচনা | অবদান) →রোসেটা প্রস্তরফলকের পঠন: সংশোধন |
বানান সংশোধন ট্যাগ: পুনর্বহালকৃত |
||
১৪ নং লাইন:
'''রোসেটা প্রস্তরফলক''' হচ্ছে [[গ্র্যানোডাইয়োরাইট]] [[শিলা|পাথরে]] খোদাইকৃত একটি ফলক। বাংলায় এটি '''রোসেটা স্টোন''', '''রোসেটা পাথর''', '''রোসেটা ফলক''', ইত্যাদি নামে পরিচিত। ১৭৯৯ সালে আবিষ্কৃত এই প্রস্তরফলকটি মূলত একটি রাজকীয় ফরমান বা ডিক্রি যা [[প্রাচীন মিশর|প্রাচীন মিশরের]] [[টলেমীয় রাজবংশ|টলেমীয় রাজবংশের]] রাজা [[পঞ্চম টলেমি পিফেনিস|পঞ্চম টলেমি পিফেনিসের]] পক্ষে তৎকালীন [[মিশর|মিশরের]] [[মেম্ফিস, মিশর|মেম্ফিস]] নগরে ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জারি করা হয়। জারিকৃত ফরমানটি ফলকটির ওপরে তিনটি ভিন্ন সংস্করণে শিলালিপি হিসেবে খোদাই করা হয়েছিলো যার ওপরের ও মাঝের সংস্করণ দুইটি যথাক্রমে [[মিশরীয় চিত্রলিপি|প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিপি]] [[হায়ারোগ্লিফ]] ও [[ডেমোটিক লিপি (মিশরীয়)|ডেমোটিক]] লিপিতে, এবং নিচের অংশটি [[প্রাচীন গ্রিক]] ভাষায় খোদাইকৃত। ফরমানটি তিনটি ভিন্ন সংস্করণে লিখিত হলেও সংস্করণগুলোর মধ্যে অর্থগত পার্থক্য ছিলো খুব-ই সামান্য যার কারণে পরবর্তীতে [[প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারকরণ|প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারে]] এটি মূল চাবিকাঠির ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে গত কয়েক শত বছর ধরে অজানা থাকার পর শেষ পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে [[প্রাচীন মিশরের ইতিহাস]] সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়।
ধারণা করা হয় [[হেলেনিস্টিক সময়কাল|হেলেনিস্টিক সময়কালে]] খোদাইকৃত এই প্রস্তরফলকটি সম্ভবত মিশরের [[সাইস, মিশর|সাইস শহরের]] কাছের একটি [[মিশরীয় মন্দির|মন্দিরে]] সর্বপ্রথম উন্মোচিত হয়। পরবর্তীতে প্রাচীন কোনো সময়ে বা [[মামলুক সালতানাত (কায়রো)|মামলুক সালতানাতের]] সময় এটি স্থানান্তরিত হয়, এবং অবশেষে [[নীল বদ্বীপ|নীল বদ্বীপের]] রাশিদ (পূর্বনাম [[রোসেটা, মিশর|রোসেটা]]) শহরে অবস্থিত [[ফোর্ট জুলিয়েন]] স্থাপনের সময় এক পর্যায়ে নিমার্ণ-সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো। ১৭৯৯ সালের জুলাইয়ে মিশরে [[নেপোলিয়ন বোনাপার্ট|নেপোলিয়নের]] [[মিশর ও সিরিয়ায় ফরাসি সমরাভিযান|সমরাভিযান]]
সর্বপ্রথম ১৮০৩ সালে প্রস্তরফলকটিতে থাকা ফরমানের প্রাচীন গ্রিক ভাষায় থাকা অংশটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়। আর এর পরপর-ই বাকি দুই সংস্করণের পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় গবেষণা শুরু হয়। ১৮২২ সালে [[ফ্রান্স|ফরাসি]] গবেষক [[জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁ]] [[প্যারিস|প্যারিসে]] বাকি দুইটি মিশরীয় লিপির প্রতিবর্ণীকরণ করার কথা ঘোষণা করেন। তবে নিশ্চিতভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রাচীন মিশরীয় লিপি ও রচনাকর্ম পড়তে গবেষকদের আরও অনেক সময় লেগে যায়। প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারে বড় অগ্রগতিসাধনে রোসেটা প্রস্তরফলকের মূল অবদান থাকার পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তরফলকটিতে একই রচনার তিনটি ভিন্ন সংস্করণ ছিলো (১৭৯৯ সালে আবিষ্কৃত), ফলকে থাকা ডেমোটিক লিপির সংস্করণে বিদেশি নামের বানানে ধ্বনিবর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছিলো (১৮০২ সালে আবিষ্কৃত), হায়ারোগ্লিফ লিপিতেও একই কৌশল ব্যবহৃত হয়েছিলো এবং ডেমোটিক লিপির সাথে এর পরিব্যপক সাদৃশ্যতাও ছিলো (১৮১৪ সালে আবিষ্কৃত), এবং স্বদেশি মিশরীয় শব্দগুলোর বানানেও ধ্বনিবর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছিলো (১৮২২–১৮২৪)।
৫৬ নং লাইন:
[[চিত্র:Rosetta news.jpg|thumb|১৮০২ সালে ''[[দ্য জেন্টেলম্যানস ম্যাগাজিন]]''-এ রোসেটা প্রস্তরফলকের ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর খবর]]
১৭৯৮ সালে [[নেপোলিয়ন|নেপোলিয়নের]] মিশর অভিযান ইউরোপ জুড়ে, বিশেষ করে ফ্রান্সে ইজিপ্টোম্যানিয়াকে পুনরায় অনুপ্রাণিত করে। কমিশন অফ সায়েন্সেস অফ আর্টস নামে ১৬৭ জন কারিগরী বিশেষজ্ঞের ({{Lang-fr|''savant''}} বা ''সাভঁ'', অর্থাৎ ‘বিজ্ঞব্যক্তি’) একটি সৈন্যদল ফরাসি বিপ্লবী সেনাবাহিনীর সাথে মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ১৭৯৯ সালের ১৫ জুলাই ফরাসি সৈন্যরা কর্নেল দ্যওতপুলের নেতৃত্বে মিশরের উত্তর-পূর্বের বন্দর নগরী রোসেটায় (বর্তমানে রাশিদ নামে পরিচিত) অবস্থিত [[ফোর্ট জুলিয়েন|ফোর্ট জুলিয়েনের]] প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছিলেন। কাজ
ঐ বছরেই মিশরে ফরাসি অভিযানের আনুষ্ঠানিক পত্রিকা ''[[কুরিয়ে দ্য লেজিপ্টে|কুরিয়ে দ্য লেজিপ্টের]]'' সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এই আবিষ্কারের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদকের নাম প্রকাশিত না হলেও তিনি তার প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেন যে এক দিন এই প্রস্তরফলকটি হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধারে মূল চাবিকাঠির ভূমিকা পালন করবে।{{Cref2|A}}<ref name="Cracking20"/> ১৮০০ সালে কমিশনের তিন জন কারিগরী বিশেষজ্ঞ প্রস্তরফলকটির ওপরে খোদাইকৃত লেখার হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিন জন কারিগরী বিশেষজ্ঞের মধ্যে একজন ছিলেন ফরাসি মুদ্রাকর ও প্রতিভাবান ভাষাবিদ [[জঁ-জোসেফ মার্সেল]], যিনি সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন যে ফলকের মাঝের অংশের লেখনিটি মিশরীয় ডেমোটিক লিপিতে লিখিত। তৎকালীন সময়ের শিলালিপিতে ডেমোটিক লিপির ব্যবহার ছিলো কদচিৎ এবং খুব অল্প কিছু গবেষক-ই ফলক ও শিলালিপিতে এই লিপির ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ডেমোটিক লিপির ব্যপারে না জানার কারণে প্রথমে ধারণা করেছিলেন যে মাঝের অংশটি [[সিরিয়াক ভাষা|সিরিয়াক ভাষায়]] লিখিত।<ref name="Cracking20"/> ফরাসি কারুশিল্পী [[নিকোলা-জাক কন্তে]] প্রস্তরফলকটি ব্যবহার করে [[কাঠের ব্লকের ছাপা|কাঠের ব্লকের ছাপার]] মাধ্যমে এর ওপরে শিলালিপির প্রতিলিপি তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।<ref name="Adkins38">[[#Adkins69|Adkins (2000)]] p. 38</ref> অপর একজন ফরাসি মুদ্রাকর [[আন্তোয়ানা গালা]] ফলকটির প্রতিলিপি তৈরির সময় কন্তের চেয়ে একটু ভিন্নতর একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীতে ফরাসি জেনারেল [[শার্লে দুগুয়া]] বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রণীত প্রতিলিপিগুলো প্যারিসে নিয়ে যান। আর এর মাধ্যমে ইউরোপীয় গবেষকরা রোসেটা প্রস্তরফলকের শিলালিপিগুলো দেখতে পান ও এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন।<ref>[[#Gillispie87|Gillispie (1987)]] pp. 1–38</ref>
৮৪ নং লাইন:
প্রথম যখন রোসেটা প্রস্তরফলকটিকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় তখন তা সরাসরি শুইয়ে না রেখে কৌণিকভাবে একটু খাড়া করে প্রদর্শন করা হয়। এভাবে রাখার জন্য ধাতুর তৈরি একটি দোলনাসদৃশ কাঠামো তৈরি করা হয় যার উপরে ফলকটি স্থাপন করা হয়েছিলো এবং একইসাথে সাথে ধাতুর কাঠামোতে প্রস্তরফলকটি নিরাপদ ও সুগঠিতভাবে স্থাপনের জন্য এর পাশের সামান্য কিছু অংশ চেঁচে ফেলা হয়।<ref name="focus31"/> প্রথমে ফলকটির উপরে কোনো সুরক্ষামূলক বাধা না থাকলেও ১৮৪৭ সালে দর্শনার্থীদের প্রস্তরফলকটি স্পর্শ করা ঠেকাতে কাচের ফ্রেমের মধ্যে এটিকে স্থাপন করার প্রয়োজন হয়।<ref name="focus32">[[#Parkinson70|Parkinson (2005)]] p. 32</ref> ২০০৪ সাল থেকে রোসেটা প্রস্তরফলকটি মিশরীয় ভাষ্কর্য গ্যালিরর মাঝে বিশেষভাবে নির্মিত একটি ফ্রেমের মাঝে গ্লাস দ্বারা সুরক্ষিত অবস্থায় প্রদর্শন করা হয়। তবে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের [[কিংস লাইব্রেরি|কিংস লাইব্রেরিতে]] প্রস্তরফলকটির একটি অবিকল নকল ঊনিশ শতকের স্টাইলে খোলাভাবে রাখা হয়েছে যা দর্শনার্থীরা চাইলে স্পর্শ করতে পারেন।<ref name="focus50">[[#Parkinson70|Parkinson (2005)]] p. 50</ref>
১৯১৭ সালে [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধ|প্রথম বিশ্বযুদ্ধের]] শেষ দিকে [[প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির কৌশলগত বোমাবর্ষণ|লন্ডনের ভারি বোমাবর্ষণ]]
== রোসেটা প্রস্তরফলকের পঠন ==
১২৬ নং লাইন:
[[চিত্র:Place des ecritures Figeac.jpg|thumb|[[জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁ|জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁর]] জন্মস্থান ফ্রান্সের [[ফিজাক]] শহরে [[জোসেফ কোসুথ|জোসেফ কোসুথের]] নির্মিত রোসেটা প্রস্তরফলকের একটি বৃহৎ প্রতিলিপি]]
সালভোলিনির কর্মকাণ্ডের আগেও ফলকের পাঠোদ্ধারে অগ্রগণ্যতা কার এবং পাঠোদ্ধারকারীর রচনাচুরি বা প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক বিতর্ক পাঠোদ্ধারের সময়ক্রমের বিভিন্ন সময়ে তিক্ততার সৃষ্টি করেছে। গোড়ার দিককার ব্রিটিশ সমালোচকদের মতে ১৮২২ সালে শাম্পোলিওঁর ''লেত্রঁ আ ম. দাঁসি'' প্রকাশনায় থমাস ইয়াংয়ের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তা অসম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ লেখক [[জেমস ব্রাউন (লেখক)|জেমস ব্রাউন]] ১৮২৩ সালে ''[[এডিনবরা ম্যাগাজিন]]''-এ প্রকাশের উদ্দেশ্যে পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষমাণ কিছু পরাম্বরা প্রবন্ধ বেনামে পর্যালোচনার সময় ইয়াংয়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এবং একই সাথে এই অভিযোগ করেছিলেন যে শাম্পোলিওঁ ‘বিবেকবর্জিতভাবে’ ইয়াংয়ের কাজকে চুরি করেছেন। উল্লেখ্য, এর চার বছর আগে, ১৮১৯ সালে ''[[এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা]]''-তে ইয়াংয়ের এ সম্পর্কিত কাজ প্রকাশিত হয়েছিলো আর সেসময় ব্রাউন ছিলেন ''এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা''’র একজন সহ-সম্পাদক।<ref>[[#Parkinson99|Parkinson et al. (1999)]] pp. 35–38</ref><ref>[[#Robinson09|Robinson (2009)]] pp. 65–68</ref> ''এডিনবরা ম্যাগাজিন''-এর জন্য ব্রাউনের পর্যালোচিত প্রবন্ধগুলো পরবর্তীতে জার্মান ভাষাবিদ [[ইউলিউস ক্লাপরথ]] ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন ও ১৮২৭ সালে বই হিসেবে প্রকাশ করেন।{{Cref2|N}} ১৮২৩ সালে প্রকাশিত জেমস ইয়াং-এর নিজস্ব প্রকাশনায় তিনি পুনরায় নিজের অবদানের অগ্রগণ্যতার দাবি করেন।{{Cref2|L}} যদিও এই বিতর্ক
== মিশরে প্রত্যাবাসনের অনুরোধ ==
|