রোসেটা প্রস্তরফলক
রোসেটা প্রস্তরফলক হচ্ছে গ্র্যানোডাইয়োরাইট পাথরে খোদাইকৃত একটি ফলক। বাংলায় এটি রোসেটা স্টোন, রোসেটা পাথর, রোসেটা ফলক, ইত্যাদি নামে পরিচিত। ১৭৯৯ সালে আবিষ্কৃত এই প্রস্তরফলকটি মূলত একটি রাজকীয় ফরমান বা ডিক্রি যা প্রাচীন মিশরের টলেমীয় রাজবংশের রাজা পঞ্চম টলেমি পিফেনিসের পক্ষে তৎকালীন মিশরের মেম্ফিস নগরে ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জারি করা হয়। জারিকৃত ফরমানটি ফলকটির ওপরে তিনটি ভিন্ন সংস্করণে শিলালিপি হিসেবে খোদাই করা হয়েছিলো যার ওপরের ও মাঝের সংস্করণ দুইটি যথাক্রমে প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিপি হায়ারোগ্লিফ ও ডেমোটিক লিপিতে, এবং নিচের অংশটি প্রাচীন গ্রিক ভাষায় খোদাইকৃত। ফরমানটি তিনটি ভিন্ন সংস্করণে লিখিত হলেও সংস্করণগুলোর মধ্যে অর্থগত পার্থক্য ছিলো খুব-ই সামান্য যার কারণে পরবর্তীতে প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারে এটি মূল চাবিকাঠির ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে গত কয়েক শত বছর ধরে অজানা থাকার পর শেষ পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়।
রোসেটা প্রস্তরফলক | |
---|---|
উপাদান | গ্র্যানোডাইয়োরাইট |
আকার | ১,১২৩ মিমি × ৭৫৭ মিমি × ২৮৪ মিমি (৪৫ ইঞ্চি × ২৮.৫ ইঞ্চি × ১১ ইঞ্চি) |
লিখন | প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ, ডেমোটিক লিপি, এবং গ্রিক লিপি |
আবিষ্কৃত | ১৭৯৯ |
আবিষ্কার করেছেন | পিয়ের-ফ্রঁসোয়া বুশার |
নির্মিত | ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে |
বর্তমান অবস্থান | ব্রিটিশ মিউজিয়াম |
ধারণা করা হয় হেলেনিস্টিক সময়কালে খোদাইকৃত এই প্রস্তরফলকটি সম্ভবত মিশরের সাইস শহরের কাছের একটি মন্দিরে সর্বপ্রথম উন্মোচিত হয়। পরবর্তীতে প্রাচীন কোনো সময়ে বা মামলুক সালতানাতের সময় এটি স্থানান্তরিত হয়, এবং অবশেষে নীল বদ্বীপের রাশিদ (পূর্বনাম রোসেটা) শহরে অবস্থিত ফোর্ট জুলিয়েন স্থাপনের সময় এক পর্যায়ে নিমার্ণ-সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো। ১৭৯৯ সালের জুলাইয়ে মিশরে নেপোলিয়নের সমরাভিযান চলাকালীন সময়ে ফরাসি সৈনিক পিয়ের-ফ্রঁসোয়া বুশার এটি আবিষ্কার করেন। রোসেটা প্রস্তরফলক হচ্ছে আধুনিক সময়ে আবিষ্কৃত হওয়া প্রথম প্রাচীন মিশরীয় দ্বিভাষিক রচনাকর্ম। যেহেতু এই প্রস্তরফলক খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত আধুনিক মানুষের কাছে হায়ারোগ্লিফ লিপি অনুবাদ করা বা অর্থ উদ্ধার করার মতো কোনো সূত্রই ছিলো না, তাই এটি আবিষ্কারের পর তা প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি করে, ফলশ্রুতিতে এটির প্রতি ব্যপকভাবে মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপীয় জাদুঘরগুলোতে ও পণ্ডিতদের মাঝে এই প্রস্তরফলকের ওপরে খোদাইকৃত শিলালিপির মুদ্রিত অনুলিপি ও ফলকের ছাঁচ ছড়িয়ে পড়ে। ১৮০১ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ার আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছে ফরাসিরা আত্মসমর্পণ করলে অন্যান্য নানা প্রত্নতত্ত্বিক নিদর্শনের সাথে প্রস্তরফলকটিও তারা লন্ডনে নিয়ে যায়। ১৮০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে। রোসেটা প্রস্তরফলক এই জাদুঘরের সর্বাধিক প্রদর্শিত নিদর্শন।
সর্বপ্রথম ১৮০৩ সালে প্রস্তরফলকটিতে থাকা ফরমানের প্রাচীন গ্রিক ভাষায় থাকা অংশটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়। আর এর পরপর-ই বাকি দুই সংস্করণের পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় গবেষণা শুরু হয়। ১৮২২ সালে ফরাসি গবেষক জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁ প্যারিসে বাকি দুইটি মিশরীয় লিপির প্রতিবর্ণীকরণ করার কথা ঘোষণা করেন। তবে নিশ্চিতভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রাচীন মিশরীয় লিপি ও রচনাকর্ম পড়তে গবেষকদের আরও অনেক সময় লেগে যায়। প্রাচীন মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধারে বড় অগ্রগতিসাধনে রোসেটা প্রস্তরফলকের মূল অবদান থাকার পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তরফলকটিতে একই রচনার তিনটি ভিন্ন সংস্করণ ছিলো (১৭৯৯ সালে আবিষ্কৃত), ফলকে থাকা ডেমোটিক লিপির সংস্করণে বিদেশি নামের বানানে ধ্বনিবর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছিলো (১৮০২ সালে আবিষ্কৃত), হায়ারোগ্লিফ লিপিতেও একই কৌশল ব্যবহৃত হয়েছিলো এবং ডেমোটিক লিপির সাথে এর পরিব্যপক সাদৃশ্যতাও ছিলো (১৮১৪ সালে আবিষ্কৃত), এবং স্বদেশি মিশরীয় শব্দগুলোর বানানেও ধ্বনিবর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছিলো (১৮২২–১৮২৪)।
রোসেটা প্রস্তরফলক আবিষ্কারের পরে একই ফরমানের আরও তিনটি টুকরো হয়ে যাওয়া অসম্পূর্ণ অনুলিপি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিক ও গবেষকদের কল্যাণে একই ধরনের আরও কিছু প্রাচীন মিশরীয় দ্বিভাষিক ও ত্রিভাষিক শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে যার মাঝে রোসেটা ফলকের চেয়েও আগে নির্মিত ও জারিকৃত তিনটি টলেমীয় ফরমান রয়েছে। জারিকৃত এসকল ফরমানগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জারিকৃত আলেক্সান্দ্রিয়ার ফরমান, ২৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জারিকৃত ক্যানোপাসের ফরমান, এবং ২১৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চতুর্থ টলেমি কর্তৃক জারিকৃত মেম্ফিসের ফরমান। বর্তমানে রোসেটা প্রস্তরফলক তার অনন্যতা হারালেও প্রাচীন মিশরের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে এটির অবদান অনস্বীকার্য। এ কারণে বর্তমানে জ্ঞানের কোনো শাখায় সমস্যা সমাধানের অপরিহার্য সূত্র খুঁজে পাওয়া গেলে তাকে বর্ণনা করতে অনেক সময় ‘রোসেটা স্টোন’ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়।
বিবরণ
সম্পাদনাফরাসি অভিযানের সময় রোসেটা প্রস্তরফলকটি যখন আবিষ্কৃত হয় তখন ফরাসিদের তৈরি ক্যাটালগে “কালো গ্র্যানোডাইয়োরেটের তৈরি একটি পাথর, যার ওপরে তিনটি খোদাইকৃত … রোসেটায় খুঁজে পাওয়া” বিবরণী সহকারে এটিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৮০১ সালে ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণের পর নিদর্শনগুলোর সাথে এই ক্যাটালগটিও ব্রিটিশদের হস্তগত হয়।[১] লন্ডনে নিয়ে আসার কিছুদিন পর খোদাইকৃত অংশগুলোকে পাঠযোগ্য করার জন্য সাদা চক দিয়ে রং করা হয়, এবং বাকি অংশ দর্শনার্থীদের আঙুলের ছাপ থেকে রক্ষা করতে জন্য কার্নোউবা মোমের প্রলেপ দেওয়া হয়।[২] এর ফলে প্রস্তরখণ্ডটির কালচে রং ধারণ করায় অনেকে ভুলবশত এটিকে কালো ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি বলে মনে করেন।[৩] ১৯৯৯ সালে ফলকটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার সময় মোমের এই আস্তর ও অন্যান্য অতিরিক্ত সাজসজ্জাগুলো অপসারণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে ফলকটির মূল গাঢ় ধূসর রংয়ের আভা ও উজ্জল স্ফটিকময় গঠন ফুটে ওঠে। এছাড়াও ফলকটির উপরের বাম পাশের অংশ জুড়ে থাকা গোলাপি রংয়ের চিড়ও দৃষ্টিগোচর হয়।[৪] ক্লেম সংগ্রশালায় থাকা মিশরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত প্রস্তরখণ্ডের নমুনার মধ্যে নীলনদের পশ্চিম তীরের গাবেল তিঞ্জার পাহাড়ে অবস্থিত একটি ছোট গ্র্যানোডাইয়োরাইট খনি ও আসওয়ান অঞ্চলের অন্তর্গত নীলনদের এলেফ্যান্টাইন দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত শিলাখনি থেকে প্রাপ্ত শিলার সাথে রোসেটা প্রস্তরফলকের শিলার তুলনামূলক সাদৃশ্যতা পাওয়া গেছে। কারণ রোসেটা ফলকে থাকা গোলাপি চিড় এই অঞ্চলগুলোতে পাওয়া গ্র্যানোডাইয়োরাইট পাথরগুলোর একটি প্রচলিত বৈশিষ্ট্য।[৫]
রোসেটা প্রস্তরফলকে সবচেয়ে লম্বা অংশটির দৈর্ঘ ১,১২৩ মিলিমিটার (৩ ফুট ৮ ইঞ্চি), এবং প্রস্থ ও পুরুত্ব যথাক্রমে ৭৫৭ মিলিমিটার (২ ফুট ৫.৮ ইঞ্চি) ও ২৮৪ মিলিমিটার (১১ ইঞ্চি)। ফলকটির ওজন প্রায় ৭৬০ কেজি।[৬] এটিতে তিনটি শিলালিপি খোদিত হয়েছে যার ওপর থেকে প্রথম অংশটি প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ লিপিতে, দ্বিতীয়টি মিশরীয় ডেমোটিক লিপিতে, ও তৃতীয়টি প্রাচীন গ্রিক লিপিতে খোদাইকৃত।[৭] ফলকটির সামনের অংশটি মসৃণভাবে পালিশ করা হয়েছে এবং লেখাগুলো হালকাভাবে খোদাই করা হয়েছে। ফলকের পাশগুলোও মসৃণ করা হয়েছে, কিন্তু পেছনের অংশটি এবড়ো-থেবড়োভাবে রাখা। ধারণা করা হয়, প্রস্তরফলকটি যখন খাড়াভাবে স্থাপন করা হয়েছিলো তখন এটির পেছনের অংশ প্রকাশ্যে দৃশ্যমান ছিলো না।[৫][৮]
মূল প্রস্তরফলক
সম্পাদনারোসেটা প্রস্তরফলক হচ্ছে আরও বড়ো একটি প্রস্তরফলকের ভগ্নাংশ। রোসেটা ফলকটি যেখানে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো সেই স্থানে পরবর্তী অনুসন্ধানগুলোতেও এর আর কোনো অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।[৯] ফলকটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে, তিনটি লিপির কোনোটি-ই সম্পূর্ণ নয়। ফলকের সবচেয়ে উপরের অংশ, যেখানে প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফে লেখা অংশটি-ই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। হায়ারোগ্লিফ অংশের শেষ ১৪ লাইন-ই কেবল দেখা যায়, যার সবগুলোরই ডান পাশের অংশ অসম্পূর্ণ, এবং ১২টি লাইন বাম পাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঝের ডেমোটিক লিপির অংশটি অন্য লিপিদ্বয়ের তুলনায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ডেমোটিক লিপিতে লেখা মোট ৩২টি লাইন রয়েছে যার মধ্যে উপরের ১৪টি লাইন ডান পাশে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলকে নিচের অংশে রয়েছে প্রাচীন গ্রিক লিপিতে লেখা ৫৪টি লাইন। এর মধ্যে প্রথম ২৭টি লাইন সম্পূর্ণ টিকে রয়েছে এবং বাকি লাইনগুলো ফলকটির নিচ থেকে কৌণিকভাবে ভেঙ্গে যাওয়ায় ডান পাশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।[১০]
পরবর্তীত বিভিন্ন সময়ে রোসেটা ফলকের মতো টিকে থাকা অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় প্রস্তরফলক ও এবং এই ফলকে থাকা একই ফরমানের অন্য কিছু অনুলিপি পাওয়া গিয়েছিলো যার মাধ্যমে এই ফলকে খোদাইকৃত হায়ারোগ্লিফ লিপির পূর্ণ দৈর্ঘ্য এবং রোসেটা ফলক যে মূল প্রস্তরফলকের ভগ্নাংশ তার পূর্ণ আকার সম্পর্কে ধারণ করা যায়। রোসেটা ফলক উন্মোচনের কিছুকাল আগে ২৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রাজা তৃতীয় টলেমির রাজত্বকালে ক্যানোপাসের ফরমান সংবলিত প্রস্তরফলক উন্মোচন করা হয়েছিলো যার উচ্চতা ছিলো ২,১৯০ মিলিমিটার (৭.১৯ ফুট), প্রস্থ ছিলো ৮২০ মিলিমিটার (৩২ ইঞ্চি)। সেই ফলকে হায়ারোগ্লিফি লিপিতে লেখা ৩৬টি লাইন, ডেমোটিক লিপিতে ৭৩টি লাইb, এবং প্রাচীন গ্রিকে ৭৪টি লাইন খোদাই করে লিখিত হয়েছিলো। ফলকটিতে লেখা অক্ষরগুলোর উচ্চতাও রোসেটা ফলকের অক্ষরগুলোর উচ্চতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো।[১১] এসকল তুলনামূলক গবেষণার মাধ্যমে ধারণা করা হয় যে, মূলক রোসেটা প্রস্তরফলকের উপরের অংশে আরও ১৪ বা ১৫ লাইন হায়ারোগ্লিফ লিপি খোদাইকৃত ছিলো যার সম্মিলিত উচ্চতা ছিলো প্রায় ৩০০ মিলিমিটার (১২ ইঞ্চি)।[১২] আরও ধারণা করা হয় যে, খোদাইকৃত লেখা ছাড়াও ফলকটির একেবারে ওপরে ক্যানোপাসের প্রস্তরফলকের মতো চিত্রকর্ম ছিলো যেখানে ডানাসহ একটি বিশাল চাকতির নিচে রাজাদেরকে ঈশ্বরের কাছে উপস্থাপন করার মতো ধারণা চিত্রায়িত করা হয়েছিলো। এই সাদৃশ্যগুলোর পাশাপাশি রোসেটা ফলকেও ফলককে নির্দেশকৃত হায়ারোগ্লিফ চিহ্ন
|
খোদাই করা ছিলো (গার্ডিঙ্গারের চিহ্ন তালিকা দেখুন), যা নির্দেশ করছে যে মূল ফলকের ওপরে অংশও গোলাকৃতি ছিলো।[৭][১৩] মূল প্রস্তরফলকটির আনুমানিক উচ্চতা ছিলো প্রায় ১৪৯ সেন্টিমিটার (৪ ফুট ১১ ইঞ্চি)।[১৩]
মেম্ফিসের ফরমান ও এর বিষয়বস্তু
সম্পাদনারাজা পঞ্চম টলেমির রাজ্যাভিষেকের পর প্রস্তরফলকটি উন্মোচন করা হয়। ফলকটিতে একটি রাজকীয় ফরমানের লেখনি খোদাই করা হয় যা মূলত নতুন শাসকের ঐশ্বরিক ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়।[১৪] আর এই উদ্দেশ্যে পুরোহিতদের একটি দল মেম্ফিস নগরে সমাগত হয়ে ফরমানটি জনসমক্ষে প্রকাশ করে। ফলকটিতে প্রকাশিত হওয়ার তারিখ লেখা হয়েছে মেসেডোনীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ‘৪ জান্ডিকোস’ ও মিশরীয় বর্ষপঞ্জীতে ‘১৮ মেখির’ যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ২৭ মার্চ। ফলকে প্রকাশের বছর হিসেবে পঞ্চম টলেমির শাসনকালের নবম বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (১৯৭/১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের সমকক্ষ) যা ঐ বছরে পৌরহিত্য করা চার জন পুরোহিতের নাম প্রকাশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই চার জন পুরোহিতের একজন ছিলেন মহান আলেকজান্ডার এবং পঞ্চম টলেমিসহ পাঁচ জন টলেমীয় শাসকের ঐশ্বরিক উপসনাকারী পুরোহিত এইটুসের পুত্র এইটুস। শিলালিপিতে উল্লেখিত অপর তিনজন পুরোহিত হচ্ছেন সেই তিনজন যারা পালাক্রমে বেরেনিস ইউয়েরজেটিস (তৃতীয় টলেমির স্ত্রী), আর্সিনো ফিলাডেলফোস (দ্বিতীয় টলেমির স্ত্রী ও বোন), এবং আর্সিনো ফিলোপ্যাটরের (পঞ্চম টলেমির মাতা) পুজায় নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন।[১৫] তবে গ্রিক ও হায়ারোগ্লিফ লিপিতে প্রস্তরফলকটির উন্মোচনের দিন হিসেবে দ্বিতীয় আরেকটি তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৭ অব্দের ২৭ নভেম্বর যা একই সাথে পঞ্চম টলেমির আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যাভিষেক গ্রহণের তারিখ।[১৬] ডেমোটিক লিপির সংস্করণে এর ব্যতয় ঘটেছে এবং সেখানে মার্চ মাসের-ই পর পর দুটি তারিখকে অভিষেক গ্রহণ ও ফলক উন্মোচনের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৬] এই অমিলের কারণ নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব না হলেও এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে ফরমানটি ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেই জারি করা হয়েছিলো এবং মিশরে টলেমীয় রাজাদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিলো এর উদ্দেশ্য।[১৭]
প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের একটি টালমাটাল সময়ে এই ফরমানটি জারি করা হয়। রাজা পঞ্চম টলেমি পিফেনিস সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ২০৪ অব্দ থেকে ১৮১ অব্দ পর্যন্ত। তিনি ছিলেন চতুর্থ টলেমি ফিলোপ্যাটর এবং তার স্ত্রী ও বোন আর্সিনোর পুত্র। তার বাবা-মার হঠাৎ মৃত্যুর পর মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। সমসাময়িক সূত্র অনুসারে একটি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে তার বাবা-মা উভয়-ই খুন হন এবং এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন রাজা চতুর্থ টলেমির রক্ষিতা আগাথোক্লেয়া। বয়স অত্যন্ত কম হওয়ায় ষড়যন্ত্রকারীরাই রাজা পঞ্চম টলেমির পক্ষে মিশরের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন।[১৮][১৯] তবে দুই বছর পর সেনাপতি টলোপ্লেমাসের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে আগাথোক্লেয়া ও তার পরিবার আলেক্সান্দ্রিয়ায় এক দাঙ্গায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে প্রাণ হারান। আগাথোক্লেয়ার মৃত্যুর পর ২০১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলিজিয়ার অ্যারিস্টোমেনেসকে সরিয়ে টলোপ্লেমাস পঞ্চম টলেমির অভিভাবকত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মেপ্ফিসের ফরমান প্রকাশের সময় আলিজিয়ার অ্যারিস্টোমেনেস ছিলেন একজন রাজপ্রতিনিধি এবং তৎকালীন মিশরের মুখ্যমন্ত্রী।[২০]
মিশরের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক শক্তিমত্ত্বা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা টলেমীয় রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছিলো। সেলিউসিড সাম্রাজ্যের রাজা মহান তৃতীয় অ্যান্টায়োকাস এবং মেসিডোনীয় রাজ্যের রাজা পঞ্চম ফিলিপ মিশরের বৈদেশিক অধিকৃত অঞ্চলগুলো দখলপূর্বক নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে একটি চুক্তি করেন। ফলস্বরূপ ফিলিপ কারিয়া ও থ্রেস অঞ্চলের অন্তর্গত কয়েকটি দ্বীপ ও শহর দখল করে নেন। অন্যদিকে ১৯৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পেনিয়ামের যুদ্ধে টলেমীয়রা সেলিউসিডদের কাছে পরাজিত হলে ইউদিয়া শহরসহ সমগ্র কোয়েলে-সিরিয়া অঞ্চল টলেমীয় রাজ্য থেকে আলাদা হয়ে সেলিউসিড সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ইতোমধ্যে মিশরের দক্ষিণে, রাজা চতুর্থ টলেমির রাজত্বের সময়[১৬] হুগরোনাফোরের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এবং পরবর্তীতে তার উত্তরসূরী আদিখালামানির নেতৃত্বে চলমান একটি দীর্ঘ-মেয়াদী বিদ্রোহও মিশরের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে প্রকট করে তুলতে ভূমিকা রেখেছিলো।[২১] যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ — এই দুই চলমান সমস্যার মাঝেই ১২ বছর বয়সী কিশোর পঞ্চম টলেমি রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন (তার রাজ্যাভিষেকের ৭ বছর পর)। আর তার দায়িত্ব গ্রহণের বছরখানেক পরেই মেম্ফিসের ফরমান জারি করা হয়।[১৯]
রোসেটা ফলকের মতো প্রস্তরফলকগুলো রাজার চেয়ে মূলত মন্দিরগুলোর উদ্যোগে স্থাপন করা হতো যা ছিলো টলেমীয় মিশরের একটি বৈশিষ্ট্যমূলক চর্চা। পূর্ববর্তী ফারাওদের সময়কালে ঐশ্বরিক শাসক ব্যতীত অন্য যে-কারও কোনো ধরনের জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তুলনা করা হলে, মন্দিরের উদ্যোগে এ রাজার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের চর্চা প্রাচীন গ্রিক শহরগুলোতে পরিলক্ষিত হয়েছিলো। প্রাচীন গ্রিক সমাজে রাজারা নিজেদের স্তুতিমূলক বক্তব্য সরাসরি নিজেরা প্রচার করার চাইতে তাদের অধীনস্তদের বা প্রতিনিধিদের অধীনস্তদের দ্বারা নিজেদের মহিমান্বিত ও কলুষিত করতেন।[২২] রোসেটা প্রস্তরফলকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পঞ্চম টলেমি মন্দিরগুলোতে উপহার হিসেবে রুপা ও শস্য প্রদান করেছেন।[২৩] ফলকটিতে রাজার পক্ষ থেকে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে তার রাজত্বের অষ্টম বছরে নীলনদের বন্যার ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত পানি তিনি চাষীদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বাঁধ দিয়ে ধরে রেখেছেন।[২৩] এর পরিবর্তে পুরোহিত সম্প্রদায় অঙ্গীকার করেন যে, তারা রাজার জন্মদিন ও রাজ্যাভিষেকের দিন প্রতি বছর উদযাপন করবেন এবং সমগ্র মিশরের সকল পুরোহিতগণ অন্যান্য দেবতাদের পাশপাশি তারও উপাসনা করবেন। অবশেষে রাজকীয় ফরমানটির শেষে এটিও উল্লেখ করা হয় যে, ফরমানে উল্লেখিত নির্দেশনাগুলোর অনুলিপির সকল মন্দিরে স্থাপন করা হবে, এবং তা একাধারে ‘দেবতাদের ভাষায়’ (মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ), ‘দলিলের ভাষায়’ (ডেমোটিক), এবং ‘গ্রিকদের ভাষায়’ (টলেমীয় সরকারের ব্যবহৃত ভাষা) খোদাইকৃত হবে।[২৪][২৫]
শাসনক্ষমতার কার্যকারীতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য পুরোহিতদের আস্থা অর্জন করা টলেমীয় রাজাদের কাছে জনসমর্থনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। মেম্ফিস শহরে — রাজা পঞ্চম টলেমি যেখানে রাজ্যভার গ্রহণ করেছিলেন — সেখানকার প্রধান পুরোহিতরা রাজার নিকট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, কারণ তারা ছিলেন তদানীন্তন সময়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় অধিকারপ্রাপ্ত সংগঠন এবং পুরো রাজ্য জুড়েই তাদের প্রভাব ছিলো।[২৬] যেহেতু ফরমানটি শাসনাধীন টলেমীয় সরকারের কেন্দ্রস্থল আলেক্সান্দ্রিয়ার বদলে প্রাচীন মিশরের রাজধানী মেম্ফিসে প্রকাশ করা হয়েছিলো, তাই ধারণা করা হয় কিশোর রাজা পুরোহিতদের সক্রিয় সমর্থন অর্জন করার ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন।[২৭] ঠিক একই কারণে রোসেটা ফলকটিতেও কিছু কাল পূর্বে প্রকাশিত অন্যান্য টলেমীয় ফরমানগুলোর মতো গ্রিক ভাষার পাশাপাশি হায়ারোগ্লিফসহ অন্য মিশরীয় ভাষাগুলোতেও (যেমন ডেমোটিক) ফরমানের লেখনী বিবৃত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, মহান আলেকজান্ডারের মিশর বিজয়ের পর থেকেই মিশরের সরকারি ভাষা ছিলো গ্রিক, তবে মিশরের সাধারণ মানুষসহ শিক্ষিত পুরোহিত সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগের রক্ষায় হায়ারোগ্লিফসহ মিশরীয় ভাষাগুলোই প্রাধান্য পেতো।[২৮]
রোসেটা প্রস্তরফলকে খোদাইকৃত ফরমানটির চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত কোনো অনুবাদ পাওয়া সম্ভব নয়। এটি এজন্য নয় যে, প্রাচীন ভাষাগুলো সম্পর্কে আধুনিক সময়ের জ্ঞানার্জন ও বোধগম্যতার বিকাশ এখনও চলমান, বরং এটি এজন্য যে, ফরমানটির তিনটি সংস্করণের মধ্যে সামান্য হলেও কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ই. এ. ওয়ালিস বাজের প্রকাশিত ১৯০৪ ও ১৯১৩ সালে দুইটি অনুবাদ[২৯] এবং এডউইন আর. বেভান কর্তৃক ১৯২৭ সালে প্রকাশিত অনুবাদ[৩০] এখন সহজলভ্য হলেও যথেষ্ট পুরোনো হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কিছু আগে প্রণীত আর. এস. সিম্পসন কর্তৃক অনুবাদের কাছে বর্তমানে আগের অনুবাদগুলো তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আর. এস. সিম্পসনের অনুবাদটি ডেমোটিক লিপির ওপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছিলো এবং অনুবাদটি অনলাইনে পাওয়া যায়।[৩১] বর্তমানে রোসেটা ফরমানের আধুনিক অনুবাদগুলোতে তিনটি সংস্করণের-ই সূচনাংশ ও ফ্যাসিমেইল অঙ্কিত চিত্রসহ স্বতন্ত্র অনুবাদ পাওয়া যায় যা ১৯৮৯ সালে কোয়ার্কি এবং অ্যান্ডারসহ কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিলো।[৩২]
এটি প্রায় নিশ্চিত যে রোসেটা ফলকটি আসলে মিশরের রোসেটা শহরে (বর্তমানে রাশিদ) স্থাপন করা হয়নি। গবেষকদের ধারণা করেন যে এটি মিশরের আরও ভেতরের দিকে, সাইসের রাজকীয় শহরের একটি মন্দির থেকে রোসেটায় নিয়ে আসা হয়েছে।[৩৩] যে মন্দির থেকে ফলকটিকে মূলত নিয়ে আসা হয়েছিলো তা সম্ভবত ৩৯২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। কারণ ঐ সময়ে রোমান সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াস অখ্রিষ্টীয় উপাসনা চলে এমন সকল মন্দিরগুলো বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৩৪] কালের বিবর্তনের এক পর্যায়ে হয়তো মূল প্রস্তরফলকটি ভেঙে যায় আর তার বড়ো একটি টুকরোই আজ রোসেটা প্রস্তরফলক নামে পরিচিত। পরবর্তীতে প্রাচীন মিশরীয় মন্দরিগুলো নতুন স্থাপনা নির্মাণের জন্য শিলার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত করা হতো, এবং ধারণা করা হয় রোসেটা প্রস্তরফলকটিও এই উদ্দেশ্যেই পুনঃব্যবহৃত হয়েছিলো। মামলুক সুলতান ক্বাইতবের রাজত্যকালে (আনুমানিক ১৪১৬/১৮–১৪৯৬) রাশিদের কাছে নীল ব-দ্বীপের বলবিটাইন শাখাকে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন, যার ভিত্তি স্থাপনের কাজে রোসেটা প্রস্তরফলকের ভগ্নাংশটি ব্যবহৃত হয়েছিলো। তার পর থেকে পুনঃআবিষ্কারের আগ পর্যন্ত তিন শতক পর্যন্ত তা সেখানেই পড়ে ছিলো।[৩৫]
রোসেটা প্রস্তরফলকের আবিষ্কারের পর এ পর্যন্ত মেম্ফিস ফরমানের সাথে সম্পর্কিত আরও তিনটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এলিফ্যান্টাইন এবং নুব তাহাতে খুঁজে পাওয়া নুবাইরাহের প্রস্তরফলক এবং ফিলি মন্দিরের ফিলি স্মারকস্তম্ভের ওপরে অবস্থিত একটি শিলালিপির ওপর খোদাইকৃত হায়ারোগ্লিফ লেখাগুলোর রোসেটা ফলকের চেয়ে অক্ষত অবস্থায় ছিলো।[৩৬] যদিও রোসেটা ফলকের পাঠোদ্ধারের অনেক পরে সেগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে, তবুও পরবর্তীতে ইজিপ্টোলজিস্টরা রোসেটা প্রস্তরফলকের হায়ারোগ্লিফ অংশের হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলো পুনরুদ্ধার করতে সেগুলোর আশ্রয় নিয়েছেন।
পুনঃআবিষ্কার
সম্পাদনা১৭৯৮ সালে নেপোলিয়নের মিশর অভিযান ইউরোপ জুড়ে, বিশেষ করে ফ্রান্সে ইজিপ্টোম্যানিয়াকে পুনরায় অনুপ্রাণিত করে। কমিশন অফ সায়েন্সেস অফ আর্টস নামে ১৬৭ জন কারিগরী বিশেষজ্ঞের (ফরাসি: savant বা সাভঁ, অর্থাৎ ‘বিজ্ঞব্যক্তি’) একটি সৈন্যদল ফরাসি বিপ্লবী সেনাবাহিনীর সাথে মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ১৭৯৯ সালের ১৫ জুলাই ফরাসি সৈন্যরা কর্নেল দ্যওতপুলের নেতৃত্বে মিশরের উত্তর-পূর্বের বন্দর নগরী রোসেটায় (বর্তমানে রাশিদ নামে পরিচিত) অবস্থিত ফোর্ট জুলিয়েনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছিলেন। কাজ চলাকালীন সময়ে লেফট্যানেন্ট পিয়ের-ফ্রঁসোয়া বুশার সৈনিকদের বের করে আনা ফলকের ন্যায় দেখতে একটি বড়ো প্রস্তরখণ্ড দেখতে পান যার এক পাশে খোদাই করে অনেক কিছু লিখিত ছিলো।[৩৭] বুশার ও দ্যওতপুল প্রস্তরখণ্ডটি দেখামাত্র এটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে তা উপলব্ধি করে সেসময় রোসেটায় অবস্থান করা ফরাসি জেনারেল জাক-ফ্রঁসোয়া ম্যেনুকে এটির ব্যপারে অবহিত করেন।[A] প্রস্তরফলকটির খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি পরবর্তীতে লিখিতভাবে কায়রোতে নেপোলিয়নের সদ্য প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান আস্তিতিউত দ্যইজিপ্টকে অবহিত করেন। কমিশনের সদস্য মিকেল অঁঞ্জ লসেঁর লিখিত ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রস্তরফলকটিতে খোদাইকৃত তিন ধরনের লিপি রয়েছে, তার প্রথমটি হায়ারোগ্লিফ ও তৃতীয় গ্রিক লিপি এবং এবং সেই সাথে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, তার ধারণা অনুযায়ী এই তিন লিপির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট লেখার তিনটি সংস্করণকে প্রকাশ করা হয়েছে। ১৭৯৯ সালে ১৯ জুলাইয়ে লেখা লসেঁর এই প্রতিবেদন কিছুদিন পর ২৫ জুলাইয়ে ইনস্টিটিউটের এক সভায় পাঠ করা হয়। ইতোমধ্যে বুশার প্রস্তরফলকটি গবেষকদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ফোর্ট জুলিয়েন থেকে কায়রোতে নিয়ে যান। একই বছরের আগস্ট মাসে ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার কিছু আগে নেপোলিয়ন নিজেও প্রস্তরখণ্ডটি পরিদর্শন করেন। ততোদিনে গবেষকরা প্রস্তরফলকটিকে পিয়ের দ্য রোসেটা বা রোসেটা প্রস্তরফলক নামে অভিহিত করা শুরু করেছিলেন।[৯]
ঐ বছরেই মিশরে ফরাসি অভিযানের আনুষ্ঠানিক পত্রিকা কুরিয়ে দ্য লেজিপ্টের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এই আবিষ্কারের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদকের নাম প্রকাশিত না হলেও তিনি তার প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেন যে এক দিন এই প্রস্তরফলকটি হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধারে মূল চাবিকাঠির ভূমিকা পালন করবে।[A][৯] ১৮০০ সালে কমিশনের তিন জন কারিগরী বিশেষজ্ঞ প্রস্তরফলকটির ওপরে খোদাইকৃত লেখার হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিন জন কারিগরী বিশেষজ্ঞের মধ্যে একজন ছিলেন ফরাসি মুদ্রাকর ও প্রতিভাবান ভাষাবিদ জঁ-জোসেফ মার্সেল, যিনি সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন যে ফলকের মাঝের অংশের লেখনিটি মিশরীয় ডেমোটিক লিপিতে লিখিত। তৎকালীন সময়ের শিলালিপিতে ডেমোটিক লিপির ব্যবহার ছিলো কদচিৎ এবং খুব অল্প কিছু গবেষক-ই ফলক ও শিলালিপিতে এই লিপির ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ডেমোটিক লিপির ব্যপারে না জানার কারণে প্রথমে ধারণা করেছিলেন যে মাঝের অংশটি সিরিয়াক ভাষায় লিখিত।[৯] ফরাসি কারুশিল্পী নিকোলা-জাক কন্তে প্রস্তরফলকটি ব্যবহার করে কাঠের ব্লকের ছাপার মাধ্যমে এর ওপরে শিলালিপির প্রতিলিপি তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।[৩৮] অপর একজন ফরাসি মুদ্রাকর আন্তোয়ানা গালা ফলকটির প্রতিলিপি তৈরির সময় কন্তের চেয়ে একটু ভিন্নতর একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীতে ফরাসি জেনারেল শার্লে দুগুয়া বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রণীত প্রতিলিপিগুলো প্যারিসে নিয়ে যান। আর এর মাধ্যমে ইউরোপীয় গবেষকরা রোসেটা প্রস্তরফলকের শিলালিপিগুলো দেখতে পান ও এর পাঠোদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন।[৩৯]
নেপোলিয়নের মিশর ত্যাগের পর ফরাসি সৈন্যবাহিনী আরও ১৮ মাস যাবৎ ব্রিটিশ ও উসমানীয় সেনাদের ঠেকিয়ে রাখে। ১৮০১ সালে মার্চে ব্রিটিশরা আবু কির সাগরের তীরে এসে উপস্থিত হয়। সেসময় ফরাসি বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল ম্যেনু। ব্রিটিশরা অগ্রসর হওয়ায় ম্যেনু কমিশনের সদস্যসহ তার পুরো সৈন্যবাহিনী সমেত ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে উত্তর দিকে রওনা হন। উত্তরে ভূমধ্যসাগরের তীরে সমবেত হওয়ার জন্য যাওয়ার সময় ফরাসিরা রোসেটা প্রস্তরফলকসহ অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোও তাদের সাথে নিয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধে ম্যেনু পরাজিত হন, এবং তার সেনাবাহিনীর বাকি অংশ পশ্চাদপসরণ করে আলেক্সান্দ্রিয়ায় এসে আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা ফরাসিদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত শহরের মাঝে অবরোধ করে রাখে। অবশেষে ১৮০১ সালের ৩০ আগস্ট ম্যেনু ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।[৪০][৪১]
ফরাসিদের কাছ থেকে ব্রিটিশদের অধিকরণ
সম্পাদনাআত্মসমর্পণের পর মিশরে ফরাসিদের প্রত্নতাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পরিণতি কী হবে তা নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয়, যার মধ্যে কমিশনের সদস্যদের দ্বারা প্রণীত ও সংগ্রকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জৈবিক নমুনা, টীকা, পরিকল্পনা, নকশা, ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ম্যেনু এগুলো ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান, কারণ তার দাবি অনুসারে এগুলোর ছিলো ইনস্টিটিউটের স্বত্বাধীন। কিন্তু ব্রিটিশ জেনারেল জন হেলি-হাচিনসন তার দাবি প্রত্যাখান করেন এবং ম্যেনু হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ব্রিটিশ অবরোধ বলবৎ রাখেন। সদ্য ইংল্যান্ড থেকে আগত গবেষক এডওয়ার্ড ড্যানিয়েল ক্লার্ক ও উইলিয়াম রিচার্ড হ্যামিল্টন আলেক্সান্দ্রিয়ায় থাকা প্রত্নতাত্ত্বিকগুলো নিদর্শনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে রাজি হন। পরীক্ষা শেষে তারা দাবি করেন যে তারা এমন অনেক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন যেগুলো ফরাসিরা আগে প্রকাশ করেনি। এ বিষয়ে বাড়িতে লেখা একটি চিঠিতে ক্লার্ক লিখেছিলেন, “আমরা তাদের দখলে তাদের বর্ণনা এবং আমাদের ধারণার চাইতেও অনেক বেশি খুঁজে পেয়েছি”।[৪২]
হাচিনসন ফরাসিদের কাছে থাকা সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে ব্রিটিশ ক্রাউনের সম্পত্তি বলে দাবি করেন, কিন্তু এতিয়েন জফ্রোয়া সাঁ-হিলের ক্লার্ক ও হ্যামিলটনকে জানান যে ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তরের চেয়ে ফরাসিরা খুঁজে পাওয়া সকল নিদর্শন পুড়িয়ে ফেলাই শ্রেয় মনে করবে। সাঁ-হিলের এই কথার মাধ্যমে মূলত আলেকজান্দ্রিয়ার প্রাচীন গ্রন্থাগারটিকে ধ্বংস করে ফেলার ইঙ্গিত করেছিলেন। ক্লার্ক ও হ্যামিলটন পরিস্থিতি বিবেচনা করে হাচিনসনের কাছে ফরাসি গবেষকদের পক্ষে তাদের দাবিদাওয়াগুলো উপস্থাপন করেন। শেষ পর্যন্ত হাচিনসন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ক নমুনাগুলোকে গবেষকদের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে ছাড় দিতে রাজি হন।[৪১][৪৩] এতে ম্যেনু সঙ্গে সঙ্গে রোসেটা প্রস্তরফলকটিকে তার নিজস্ব ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন,[৪১][৪৪] কিন্তু হাচিনসন প্রস্তরফলকটি বিশেষ মূল্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন তাই তিনি ম্যেনুর এই দাবি বাতিল করে দেন। শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা অর্জিত হয়, এবং আলেক্সান্দ্রিয়ার আত্মসমর্পণের চুক্তিতে নির্দশন হস্তান্তরের বিষয়ক বিস্তারিত নির্দেশনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা পরিশেষে ব্রিটিশ, ফরাসি, এবং উসমানীয় প্রতিনিধিদের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়।
তৎকালীন বিভিন্ন সূত্র ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদান করায় এটি ঠিক নিশ্চিত নয় যে শেষ পর্যন্ত ঠিক কীভাবে প্রস্তরফলকটি ফরাসিদের কাছ থেকে ব্রিটিশতের হস্তগত হয়েছিলো। কর্নেল টমকিন্স হিলগ্রোভ টার্নার, যিনি প্রস্তরফলকটি ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন, দাবি করেছিলেন যে তিনি নিজে এটি ফরাসি জেনারেল ম্যেনুর কাছ থেকে জব্দ করে বন্দুক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে সেটিকে স্থানান্তর করেছিলেন। আরেকটি বিস্তারিত বিবরণে এডওয়ার্ড ড্যানিয়েল ক্লার্ক বলেছিলেন যে, ফরাসি সামরিক অফিসার ও ইনস্টিটিউটের সদস্যরা তাকে, তার ছাত্র জন ক্রিপ্স, এবং হ্যামিলন্টনকে পেছনের রাস্তা দিয়ে ম্যেনুর বাসভবনে নিয়ে যান এবং ম্যেনুর মালপত্রের মধ্যে গালিচার আবরণে সুরক্ষিতভাবে রাখা ছিলো। ক্লার্কের মতে সংবাদাতার ভয় ছিলো যে, ফরাসি সৈন্যরা প্রস্তরফলকটির অবস্থান জানতে পারলে সেটি চুরির আশঙ্কা থাকতো। হাচিনসনকে এই আশঙ্কার বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গেই অবহিত করা হয়, তারপর সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তরফলকটি নিয়ে যাওয়া হয় — সম্ভব টার্নার নিজেই তার বন্দুকের গাড়িতে করে এটি নিয়ে যান।[৪৫]
কর্নেল টার্নার প্রস্তরফলকটি অধিকৃত ফরাসি ফ্রিগেট এইচএমএস ইজিপ্টিয়েন-এ করে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন, যা ১৮০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোর্টস্মাথে নোঙর করে।[৪৬] তার উপরে রোসেটা প্রস্তরফলকসহ অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রাজা তৃতীয় জর্জের সামনে উপস্থাপন করার নির্দেশ ছিলো। রাজার প্রতিনিধি হিসেবে যুদ্ধ সচিব লর্ড হোবার্ট প্রস্তরফলকটিকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থাপন করার নির্দেশ দেন। টার্নার ভাষ্যমতে, তিনি ও হোবার্ট প্রস্তরফলকটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থায়ীভাবে স্থাপনের আগে সোসাইটি অব অ্যান্টিকোয়ারিজ অব লন্ডনে গবেষকদের কাছে উপস্থাপনের বিষয়ে একমত হন। টার্নার নিজেও এই সোসাইটির একজন সদস্য ছিলেন। ১৮০২ সালের ১১ মার্চ এটি সর্বপ্রথম গবেষকদের সামনে প্রকাশিত ও আলোচিত হয়।[B][H]
সোসাইটির পক্ষ থেকে ১৮০২ সালে প্রস্তরফলকের শিলালিপির প্লাস্টারের তৈরি চারটি ছাঁচ তৈরি করা হয় এবং সেগুলো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনে পাঠানো হয়। এর কিছুদিন পরেই সেই ছাঁচেরও অনেকগুলো কপি মুদ্রিত হয় এবং সেগুলো ইউরোপীয় গবেষকদের কাছে বিতরণ করা হয়।[E] ১৮০২ সালের শেষের দিকে প্রস্তরফলকটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থানান্তর করা হয় এবং এখনও নিদর্শনটি সেখানেই রয়েছে। ফরাসিদের কাছ থেকে অধিকরণের পর প্রস্তরফলকটির বাম ও ডান পাশে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, ‘১৮০১ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কর্তৃক মিশরে অধিকৃত’ এবং ‘রাজা তৃতীয় জর্জ কর্তৃক উপহারপ্রদানকৃত’।[২]
১৮০২ সালের জুন থেকে প্রায় ধারাবাহিকভাবে রোসেটা প্রস্তরফলক ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়ে আসছে।[৬] ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাদুঘরের নিদর্শনের তালিকাভুক্তির জন্য এটিকে ‘ইএ ২৪’ বা ‘EA 24’ নামে তালিকায় অধিভুক্ত করা হয়। যেখানে ‘ইএ’ দ্বারা ‘মিশরীয় নিদর্শন’ বা ‘Egyptian Antiquities’-কে নির্দেশ করা হয়েছে। প্রস্তরফলকটি ছাড়াও এই তালিকায় ফরাসিদের মিশর অভিযানের মাধ্যমে অধিকৃত বিভিন্ন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিলো যা পরবর্তীতে যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশদের অধিকারে আসে। তালিকায় থাকা অন্যান্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় নেক্টানেবোর পাথরের শবাধার বা সারকোফ্যাগাস (ইএ ১০), আমুনের প্রধান পুরোহিতের ভাষ্কর্য (ইএ ৮১), এবং গ্রানাইট পাথরের একটি বৃহৎ মুষ্ঠি (ইএ ৯)।[৪৭] এই নিদর্শনগুলো যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছিলো — ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মূল ভবন মন্টেগু হাউজের ঐ মেঝের জন্য অতিরিক্ত ভারি হয়ে যাচ্ছিলো, সেজন্য পরে ঐ ভবনটি সম্প্রসারণ করে আরও বেশি ওজন নেওয়ার মতো একটি স্থানে নিদর্শনগুলো স্থানান্তর করে প্রদর্শন করা শুরু হয়। মন্টেগু হাউজ ভেঙ্গে ফেলার কিছুদিন পর ১৮৩৪ সালে বর্তমান ব্রিটিশ মিউজিয়াম ভবনের ভাষ্কর্য গ্যালারিতে রোসেটা প্রস্তরফলকটি স্থানান্তরিত হয়।[৪৮] জাদুঘরের রেকর্ডবুক অনুযায়ী এই প্রস্তরফলকটি জাদুঘরের সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত একক নিদর্শন[৪৯] এবং এর একটি সাধারণ চিত্র সংবলিত পোস্টকার্ড কয়েক দশক ধরে জাদুঘরের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পোস্টকার্ডের তালিকায় ছিলো।[৫০] জাদুঘরের স্যুভেনির দোকানেও এই প্রস্তরফলকের লেখা, ছাঁচসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী বিক্রিয় করা হয়।
প্রথম যখন রোসেটা প্রস্তরফলকটিকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় তখন তা সরাসরি শুইয়ে না রেখে কৌণিকভাবে একটু খাড়া করে প্রদর্শন করা হয়। এভাবে রাখার জন্য ধাতুর তৈরি একটি দোলনাসদৃশ কাঠামো তৈরি করা হয় যার উপরে ফলকটি স্থাপন করা হয়েছিলো এবং একইসাথে সাথে ধাতুর কাঠামোতে প্রস্তরফলকটি নিরাপদ ও সুগঠিতভাবে স্থাপনের জন্য এর পাশের সামান্য কিছু অংশ চেঁচে ফেলা হয়।[৪৮] প্রথমে ফলকটির উপরে কোনো সুরক্ষামূলক বাধা না থাকলেও ১৮৪৭ সালে দর্শনার্থীদের প্রস্তরফলকটি স্পর্শ করা ঠেকাতে কাচের ফ্রেমের মধ্যে এটিকে স্থাপন করার প্রয়োজন হয়।[৫১] ২০০৪ সাল থেকে রোসেটা প্রস্তরফলকটি মিশরীয় ভাষ্কর্য গ্যালিরর মাঝে বিশেষভাবে নির্মিত একটি ফ্রেমের মাঝে গ্লাস দ্বারা সুরক্ষিত অবস্থায় প্রদর্শন করা হয়। তবে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কিংস লাইব্রেরিতে প্রস্তরফলকটির একটি অবিকল নকল ঊনিশ শতকের স্টাইলে খোলাভাবে রাখা হয়েছে যা দর্শনার্থীরা চাইলে স্পর্শ করতে পারেন।[৫২]
১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে লন্ডনের ভারি বোমাবর্ষণ চলাকালীন সময়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রস্তরফলকটির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ায় রোসেটা প্রস্তরফলক ও স্থানান্তরযোগ্য অন্যান্য মূল্যবান নিদর্শনগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। পরবর্তী দুই বছর প্রস্থরফলকটিকে হেলবর্নের মাউন্ট প্লেসেন্ট মেইল সেন্টারের কাছে অবস্থিত পোস্টাল টিউব রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় ১৫ মিটার (৫০ ফুট) মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়।[৫৩] যুদ্ধের সময় ছাড়া রোসেটা প্রস্তরফলকটি শুধুমাত্র একবার-ই ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ছাড়া অন্য কোথাও রাখা হয়েছিলো, আর তা ছিলো ১৯৭২ সালের অক্টোবরে এক মাস প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরে। শাম্পোলিওঁ কর্তৃক প্রস্তরফলকের হায়ারোগ্লিফ অংশের পাঠোদ্ধারমূলক লেত্রঁ আ ম. দাঁসি নামক চিঠিটির প্রকাশনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ল্যুভর জাদুঘরে প্রদর্শিত শাম্পোলিওঁর মূল চিঠিটির পাশে প্রস্তরফলকটি ল্যুভর জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়।[৫০] এমনকী ১৯৯৯ সালে রোসেটা প্রস্তরফলকটির সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে যখন বিশেষ ধরনের কার্যপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় তা গ্যালিতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতেই করা হয়েছিলো।[৫৪]
রোসেটা প্রস্তরফলকের পঠন
সম্পাদনারোমান সাম্রাজ্যের পতনের কিছুকাল আগে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা ও লিপির বোধগম্যতা হারিয়ে যাওয়ায় তার পর থেকে রোসেটা প্রস্তরফলকের আবিষ্কার ও পরবর্তীতে এর পাঠোদ্ধারের আগ পর্যন্ত মিশরীয় হায়ারোগ্লিফের বোধগম্যতা মানুষের ছিলো না। ফারাওদের সময়কালের শেষ দিক থেকেই হায়ারোগ্লিফ লিপির ব্যবহার ক্রমবর্ধমানভাবে বিশেষায়িত করা হয়েছেছিলো, যার ফলশ্রুতিতে চতুর্থ শতকে এসে গুটিকয়েক মিশরীয় এই লিপি পড়ার ও বোঝার ক্ষমতা রাখতেন। ৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট প্রথম থিওডোসিয়াসের নির্দেশে খ্রিষ্ঠীয় নয় এমন সকল মন্দির বন্ধ করে দেওয়া শুরু হলে স্মৃতিফলক হিসেবে হায়ারোগ্লিফের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সর্বশেষ হায়ারোগ্লিফ লিপিটি লিখিত হয়েছে ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ আগস্ট যা মিশরের ফিলিতে খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা গ্রাফিতো অফ এসমেত-আখম নামে পরিচিত।[৫৫]
হায়ারোগ্লিফ চিত্রলিপি এর চৈত্রিক বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছিলো, এবং প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ভাষাবিদগণ গ্রিক ও রোমান বর্ণমালার তুলনায় হায়ারোগ্লিফের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। পঞ্চম শতাব্দীতে পুরোহিত হোরাপোলো হায়ারোগ্লিফিকা নামে একটি বই রচনা করেছিলেন যেখানে তিনি হায়ারোগ্লিফ লিপির প্রায় ২০০টি প্রতীকের অর্থ উল্লেখ করেছিলেন। এ বিষয়ে তার কাজগুলো ছিলো কর্তৃত্বমূলক এবং একই সাথে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর। তার কাজ ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য আরও কিছু রচনা হায়ারোগ্লিফ লিপির অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে বহুদিন ধরে একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছিলো।[৫৬] পরবর্তীতে নবম ও দশম শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় মিশরের আরব ঐতিহাসিকগণ হায়ারোগ্লিফের পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন। জুননুন মিসরি ও ইবনে ওয়াহশিয়া হচ্ছেন প্রথম দুই আরব ঐতিহাসিক যারা তাদের সময়কালের অন্যান্য কপ্টিক পুরোহিতদের ব্যবহৃত তদানীন্তন কপ্টিক ভাষার সাথে তুলনার মাধ্যমে হায়ারোগ্লিফের অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করেন।[৫৭][৫৮] এছাড়াও ইউরোপীয় গবেষকরাও বিভিন্ন সময়ে হায়ারোগ্লিফের অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন যার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছিলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন গবেষকের মধ্যে রয়েছেন ১৬ শতকে ওলন্দাজ ভাষাবিদ ইয়োহানেস গরোপিউস বেকানুস, ১৭ শতকে জার্মান বহুবিদ্যাবিশারদ আথানাসিউস কির্শার, এবং ১৮ শতকে ডেনীয় প্রত্নতাত্ত্বিক গেওর্গ সোয়েগা।[৫৯] ১৭৯৯ সালে রোসেটা প্রস্তরফলক আবিষ্কারের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়, যার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন গবেষকের প্রচেষ্টায় পাঠোদ্ধারের জট খুলতে শুরু করে, যা শেষ পর্যন্ত জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁকে হায়ারোগ্লিফে লেখা ফরমানের জট খুলতে সাহায্য করে যেটিকে কির্শার স্ফিংক্সের ধাঁধা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[৬০]
গ্রিক পাঠাংশ
সম্পাদনারোসেটা প্রস্তরফলকের নিচের অংশের থাকা প্রাচীন গ্রিক লিপিতে থাকা লেখনীটি ওপরের দুইটি লিপির পাঠোদ্ধারের চেষ্টায় উদ্বোধনী ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা প্রাচীন গ্রিক ভাষার সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তারা হেলিনিস্টিক সময়কালের টলেমীয় মিশরের সরকারি ভাষা হিসেবে এর ব্যবহারের খুঁটিনাটি বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন না। যদিও রোসেটা ফলক আবিষ্কারের বহুদিন পর বিরাট পরিসরে প্রাচীন গ্রিকে লেখা বহু প্যাপিরাই আবিষ্কৃত হয়েছিলো, কিন্তু তৎকালীন সময়ে গবেষকদের এ বিষয়ে জ্ঞান ছিলো সামান্য। ফলশ্রুতিতে, প্রথমবারের মতো হেলিনিস্টিক সময়কালের প্রাচীন গ্রিক লেখার অনুবাদ করতে গিয়ে ঐতিহাসিক পরিমণ্ডলীয়, প্রশাসনিক, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিভাষা বা জার্গনের অর্থ উদ্ধারে অনুবাদকদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। ১৮০২ সালের এপ্রিলে ইংরেজ পুরাতত্ত্বজ্ঞ স্টিফেন ওয়েস্টন লন্ডনের সোসাইটি অব অ্যান্টিকুয়েরিসের একটি সভায় মৌখিকভাবে রোসেটা ফলকের ইংরেজি অনুবাদ উপস্থাপন করেন।[৬১][৬২]
এদিকে মিশরে তৈরিকৃত প্রস্তরফলকের দুইটি অঙ্কিত অনুলিপি ১৮০১ সালে প্যারিসের আস্তিতুত দু ফ্রঁসে এসে পৌঁছায়। সেখানে লাইব্রেরিয়ান ও পুরাতত্ত্বজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল দে লা পর্তে দু থিয়েল ফলকের গ্রিক অংশের অনুবাদ তৈরির ওপরে কাজ করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু কাজ শুরুর প্রায় সাথে সাথেই নেপোলিয়নের নির্দেশে তাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাওয়ার আগে তিনি শুরু করা কাজগুলো তা সহকর্মী উবের্ট-পাসকেল আমেলিওঁকে বুঝিয়ে দিয়ে যান। ১৮০৩ সালে আমেলিওঁ সর্বপ্রথম গ্রিক পাঠাংশের অনুবাদ প্রকাশ করেন। বিশ্বব্যাপী তার অনুবাদকে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বার্থে তিনি তার অনুবাদটি লাতিন ও ফরাসি উভয় ভাষাতেই প্রকাশ করেন।[H] কেমব্রিজে ব্রিটিশ গবেষক রিচার্ড পোর্সন ভগ্ন প্রস্তরফলকটির নিচের বাম দিকে হারিয়ে যাওয়া গ্রিক অংশের পুনঃরুদ্ধারের ওপর কাজ করছিলেন। তিনি একটি হারিয়ে যাওয়া অংশটির একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য পুনর্গঠন তৈরি করেন যা লন্ডনের সোসাইটি অব অ্যান্টিকোয়ারিস শীঘ্রই মুদ্রিত ও খোদাইকৃত লিপি হিসেবে প্রকাশ করে ও বিভিন্ন স্থানে প্রসারের উদ্যোগ নেয়। অপরদিকে একই সময় গোয়েটিঙ্গেন শহরে জার্মান গবেষক ক্রিস্টিয়ান গটলোব হেইনে আমেলিওঁর ১৮০৩ সালে প্রকাশিত লাতিন অনুবাদের চেয়ে শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য একটি লাতিন অনুবাদ তৈরি করছিলেন।[G] ১৮১১ সালে সোসাইটি অব অ্যান্টিকোয়ারিস কর্তৃক প্রকাশিত আর্কিওলোজিয়া সাময়িকীর একটি বিশেষ সংখ্যায় পুনঃপ্রকাশিত হয়। সাময়িকীটির বিশেষ সেই সংখ্যায় হেইনের লাতিন অনুবাদের পাশাপাশি কর্নেল টার্নারের বর্ণনায় পূর্বে অপ্রকাশিত ওয়েস্টনের ইংরেজির অনুবাদ, ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বেশি কিছু কাজ প্রকাশ করা হয়েছিলো।[H][৬৩][৬৪]
ডেমোটিক পাঠাংশ
সম্পাদনাপ্রস্তরফলকটি আবিষ্কারের সময় সুয়েডীয় কুটনীতিক ও গবেষক জোহান ডাভিড ওকেরব্লাড তৎকালীন সময়ে মিশরে সদ্য খুঁজে পাওয়া অল্প পরিচিত একটি লিপির উপরে কাজ করছিলেন যেটি পরবর্তীতে ডেমোটিক লিপি হিসেবে পরিচিত পায়। তিনি লিপিটির নাম দেন ‘হাতে লেখা কপ্টিক’ কারণ তার বিশ্বাস ছিলো কপ্টিক ভাষার (প্রাচীন মিশরীয় ভাষা সরাসরি উত্তরাধিকারী) কোনো ধরনকে লিপিবদ্ধ করার জন্য এই লিপি ব্যবহৃত হয়েছিলো। তবে পরবর্তীতে পাওয়া কপ্টিক বর্ণমালার সাথে এর সাদৃশ্যতা ছিলো বেশ কম। ১৮০১ সালে তৎকালীন ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-অঁতোয়ান শাপ্তালের কাছ থেকে রোসেটা প্রস্তরফলকের শুরুর দিকের একটি ছাপাচিত্র পাওয়ার পর ফরাসি প্রাচ্যবিশারদ অঁতোয়ান-ইসাক সিলভেস্তরু দ্য সাসি এটির অর্থ উদ্ধারের কাজ শুরু করেন এবং সুয়েডীয় প্রাচ্যবিশারদ ওকেব্লাডের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সিলভেস্তরু দ্য সাসি বিশ্বাস করতেন যে মাঝের লিপিটি কপ্টিক ভাষাতেই লিখিত। তিনি ও ওকেরব্লাড দুজন মিলে মূলত মাঝের অংশটির অর্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেন। তাদের দুজনেরই ধারণা ছিলো এই লিপিটি বর্ণমালাভিত্তিক। তারা দুজনে মিলে প্রস্তরফলকের প্রাচীন গ্রিক অংশটির অনুবাদের সাথে তুলনার মাধ্যমে তৎকালীন অজানা ভাষায় লিখিত মাঝের অংশটির যেখানে গ্রিক নামগুলো খোদাইকৃত ছিলো সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৮০২ সালে শাপ্তালের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে সিলভেস্তরু দ্য সাসি জানান যে তিনি মাঝের অংশে থাকা ডেমোটিক পাঠাংশে সফলভাবে পাঁচটি নাম চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছেন। এই নামগুলো হচ্ছে আলেক্সান্দ্রোস, আলেক্সান্দ্রেইয়া, টলেমাইয়োস, আর্সিনো, এবং রাজা পঞ্চম টলেমির উপাধি পিফেনিস।[C] অপরদিকে ওকেরব্লাড ডেমোটিক লিপিতে থাকা গ্রিক নামগুলো লিখতে ব্যবহৃত ২৯টি বর্ণ ও এর কপ্টিক সমার্থক সংবলিত একটি বর্ণমালা প্রকাশ করেন যার অর্ধেকেরও বেশি পরে সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়।[D][৬১] তবে তারা দুজনের কেউ-ই ডেমোটিক লিপিতে থাকা অন্যান্য বর্ণের অর্থ উদ্ধার করতে সমর্থ হননি। পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে জানা যায় যে ধ্বনিবর্ণমালার পাশাপাশি ডেমোটিক লিপিতে চিত্রলিপি ও অন্যান্য অর্থ নির্দেশকারী প্রতীকের সংমিশ্রণ রয়েছে।[৬৫]
-
১৮০২ সালে জোহান ডাভিড ওকেরব্লাড প্রণীত ডেমোটিক ধ্বনিবর্ণমালার একটি সারণি ও তাদের কপ্টিক সমার্থক
-
রোসেটা প্রস্তরফলকের মাঝের অংশে থাকা ডেমোটিক পাঠাংশের একটি অনুলিপি
হায়ারোগ্লিফ পাঠাংশ
সম্পাদনাসিলভেস্তরু দ্য সাসি শেষ পর্যন্ত ফলকটির ওপর কাজ করা ছেড়ে দিলেও তিনি এটির হায়ারোগ্লিফ অংশের পাঠোদ্ধারে অন্য একটি অবদান রাখেন। ১৮১১ সালে তিনি তার এক চীনা শিক্ষার্থীর সাথে চীনা লিখন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার সময়, ডেনীয় প্রত্নত্তাত্ত্বিক গেওর্গ সোয়েগা প্রদানকৃত একটি পরামর্শের কথা তার মাথায় আসে। ১৭৯৭ সালে প্রদাকৃত সেই পরামর্শে সোয়েগা বলেছিলেন যে ডেমোটিক লিপির মতো মিশরীয় হায়ারোগ্লিফেও বিদেশি নাম লিখতে ধ্বনিবর্ণমালার আশ্রয় নেওয়া হতে পারে। একই সাথে তার এটিও মনে পড়ে যে সোয়গারও আগে ১৭৬১ সালে ফরাসি লেখক ও মুদ্রাসংগ্রাহক জঁ-জাক বার্থেলেমি ধারণা করেছিলেন যে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফে কার্তুশ বন্ধনীতে থাকা অক্ষরগুলো ছিলো সংজ্ঞাবাচক নাম। ফলশ্রুতিতে ১৮১৪ সালে রয়েল সোসাইটির তদানীন্তন পররাষ্ট্র সচিব থমাস ইয়াং যখন ফলকটির বিষয়ে সিলভেস্তরু দ্য সাসির কাছে পত্র লেখেন তখন এর উত্তরে তিনি ইংয়াংকে পরামর্শ দেন যে, হায়ারোগ্লিফ পাঠাংশের অর্থ উদ্ধারের সময় তিনি যেনো কার্তুশের ভেতরে থাকা অক্ষরগুলোর দিকে নজর দেন। কারণ হিসেবে সিলভেস্তরু দ্য সাসির ব্যাখ্যা করেন যে, তার ধারণা অনুযায়ী কার্তুশ বন্ধনীতে থাকা অক্ষরগুলো গ্রিক নামগুলোকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে এবং এর মাধ্যমে নামের সাথে সংশ্লিষ্ট ধ্বনিগুলো প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত অক্ষরগুলোকে চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে।[৬৬]
ইয়াং সে অনুযায়ী কাজ করলে তার ফলে তিনি চূড়ান্ত পাঠোদ্ধারের পর্যায়ে উন্নীত হন। হায়ারোগ্লিফ লিপিতে তিনি ‘p t o l m e s’ ধ্বনিবর্ণগুলো খুঁজে পান যা রাজা পঞ্চম টলেমির গ্রিক নাম ‘টলেমাইয়োস’ (গ্রিক: Ptolemaios) লিখতে ব্যবহার করতে ব্যবহৃত হয়েছিলো। বর্তমানে সংশোধিত প্রতিবর্ণীকরণ অনুযায়ী যা ‘p t w l m y s’ হিসেবে গৃহীত। তিনি এটিও লক্ষ্য করেন যে ডেমোটিক লিপিতে এই বর্ণগুলোর সমার্থকের ক্ষেত্রেও সাদৃশ্যপূর্ণ চিত্রলিপি ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তিনি প্রস্তরফলকটির ডেমোটিক ও হায়ারোগ্লিফ লিপির মধ্যে প্রায় ৮০টির মতো সাদৃশ্যতা চিহ্নিত করতে সমর্থ হন। এটি ছিলো এ বিষয়ে তৎকালীন সময়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার, কারণ তার আগ পর্যন্ত ধারণা করা হয়েছিলো ডেমোটিক ও হায়ারোগ্লিফ লিপিতে লিখিত অংশ দুইটি বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়াংয়ের এই আবিষ্কার এটিও প্রমাণ করে যে প্রস্তরফলকের ডেমেটিক লিপিতে খোদাইকৃত অংশটি কেবলমাত্র আংশিকভাবেই ধ্বনিবর্ণমালায় লিখিত, এবং সেখানে হায়ারোগ্লিফ থেকে উদ্ভূত চিত্র-ভিত্তিক বর্ণমালাও (চিত্রলিপি) ব্যবহৃত হয়েছে।[I] ইয়াংয়ের এই গবেষণালব্ধ ফলাফল ১৮১৯ সালে প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’র ‘মিশর’ নামক দীর্ঘ নিবন্ধ গুরুত্বের সাথে স্থান পায়।[J] তবে তিনি এর পর হায়ারোগ্লিফ লিপির পাঠোদ্ধারে আর আগাতে পারেননি।[৬৭]
১৮১৪ সালে ইয়াং সর্বপ্রথম তৎকালীন সময়ে ফ্রান্সের গ্রনোবল শহরের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত জঁ-ফ্রঁসোয়া শাম্পোলিওঁর সাথে কর্মরত প্রস্তরফলকের পত্র বিনিময় শুরু করেন। শাম্পোলিওঁ ইতোমধ্যেই প্রাচীন মিশরের ওপর গবেষণালব্ধ কাজ প্রকাশ করেছিলেন যা ইয়াংয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। ১৮২২ সালে শাম্পোলিওঁ নিজেও ফিলি স্মারকস্তম্ভের ওপরে হায়ারোগ্লিফ ও গ্রিক লিপিতে খোদাইকৃত লেখার অনুলিপি দেখেছিলেন। সেই অনুলিপিতে ব্রিটিশ ইজিপ্টোলজিস্ট উইলিয়াম জন ব্যাংকস উভয় ভাষাতেই ‘টলেমাইওস’ ও ‘ক্লিওপেট্রা’ নাম দুইটির সম্ভাব্য উপস্থিতি লক্ষ্য করেন।[৬৮] এর মাধ্যমে শাম্পোলিওঁ ‘k l e o p a t r a’ ধ্বনিবর্ণগুলো (বর্তমানের প্রতিবর্ণীকরণ অনুযায়ী ‘q l i҆ w p 3 d r 3.t’) চিহ্নিত করেন।[৬৯] এই ফলাফল ও রোসেটা প্রস্তরফলকে থাকা বিদেশি নামগুলোর উপর ভিত্তি করে তিনি দ্রুতই ধ্বনিমূলক হায়ারোগ্লিফ বর্ণগুলোর সমন্বয়ে একটি বর্ণমালা তৈরি করেন। ১৮২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে তার এই কাজ শেষ হয়, এবং ঐ বছরেরই ২৭ সেপ্টেম্বর আকাদেমি রয়াল দে আঁসক্রিপসিওঁ এ বেল্লে-ত্রঁ নামক ফরাসি বিদ্বৎসমাজের এক বক্তৃতায় মৌখিকভাবে উপস্থাপন করেন।[৭০] ঐ একই দিনে তিনি একাডেমির সেক্রেটারি বঁন-জোসেফ দাঁসির কাছে লিখিত তার বিখ্যাত ‘লেত্রঁ আ ম. দাঁসি’ চিঠিতে নিজের আবিষ্কারের বিস্তারিত বর্ণনা প্রেরণ করেন।[K] চিঠির পুনশ্চে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে তার অনুমান অনুসারে একই ধরনে ধ্বনিবর্ণগুলো গ্রিক ও মিশরীয় উভয় নাম লেখার ক্ষেত্রে প্রায় সময়-ই ব্যবহৃত হয়েছে। ১৮২৩ সালে তিনি যখন আবু সিমবেল মন্দিরে কার্তুশ বন্ধনীতে লিখিত ফারাও রামিসেস ও তুথমোসের নাম চিহ্নিত করেন তখন তার এই অনুমান সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়। রোসেটা প্রস্তরফলকের চেয়েও অনেক বেশি পুরোনো এই হায়ারোগ্লিফ লিপিগুলো ব্যাংক অনুলিপি তৈরি করে জঁ-নিকোলা উইয়োর মাধ্যমে শাম্পোলিওঁর কাছে পাঠান।[M] এর পর শাম্পোলিও প্রাচীন মিশরীয় ব্যাকরণ ও হায়ারোগ্লিফ অভিধান তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে অন্যান্য আরও বেশ কিছু চিত্রলিপি থেকে বর্ণ চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করেন যা ১৮৩২ সালে তার মৃত্যুর পর প্রকাশ পায়। মূলত ইতিহাসের এই সময় থেকেই রোসেটা প্রস্তরফলকের ঘটনা ও প্রাচীন মিশরীয় চিত্রলিপির পাঠোদ্ধারের গল্পগুলো আরও বিস্তৃতি লাভ করে।[৭১]
পরবর্তী কাজ
সম্পাদনাপ্রস্তরফলকটির ওপর বর্তমান গবেষণমূলক কাজ মূলত ফলকের তিন সংস্করণে লিখিত রচনাকর্মের পারস্পরিক তুলনার মাধ্যমে এগুলোর অর্থের বোধগম্যতার উন্নয়ন ও লেখার বিষয়বস্তু অনুধাবনের প্রচেষ্টার উপর কেন্দ্রীভূত। ১৮২৪ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অঁতোনি-জঁ লেত্রঁন শাম্পোলিওঁকে নতুন করে রোসেটা ফলকের গ্রিক লেখনির একটি সম্পূর্ণ আক্ষরিক অনুবাদ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন; এবং এর পরিবর্তে শাম্পোলিওঁ তার অনুবাদের ওপর ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে তিন সংস্করণের মধ্যকার পার্থক্যগুলোকে চিহ্নিত করবেন বলে লেত্রঁনকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কিন্তু ১৮৩২ সালে শাম্পোলিওঁর হঠাৎ মৃত্যুর ফলে এবং তার বিশ্লেষণী কাজের খসড়া খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় লেত্রঁনের কাজ থেমে যায়। ১৮৩৮ সালে শাম্পোলিওঁর প্রাক্তন ছাত্র ও সহযোগী ফ্রান্সেসকো সালভোলিনির মৃত্যুর হলে তার সম্পাদিত কাজের দস্তাবেজের মধ্যে শাম্পোলিওঁর করে যাওয়া বিশ্লেষণী কাজগুলো ও অন্যান্য হারিয়ে যাওয়া খসড়াগুলো খুঁজে পাওয় যায়। ঘটনাচক্রে খুঁজে পাওয়া এই আবিষ্কার প্রমাণ করে যে মৃত্যুর এক বছর আগে, ১৮৩৭ সালে রোসেটা ফলকের উপর প্রকাশিত সালভোলিনির নিজের করা গবেষণাটি ছিলো রচনাচুরি যা শাম্পোলিওঁর কাজকে চুরি করে করা হয়েছিলো।[O] লেত্রঁন শেষ পর্যন্ত গ্রিক লেখনির পূর্ণ ফরাসি অনুবাদ ও এর বিষয়বস্তুর ওপর তার ব্যাখ্যা শেষ করেন এবং ১৮৪১ সালে তা প্রকাশ করেন।[P] ১৮৫০-এর দশকের শুরুর দিকে জার্মান ইজিপ্টোলজিস্ট হাইনরিখ বুর্গশ ও মাক্স উলেমান ফলকের ডেমোটিক ও হায়ারোগ্লিফ লেখনির সংশোধিত লাতিন অনুবাদ প্রকাশ করেন।[Q][R] পরবর্তীতে পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোম্যাথিয়ান সোসাইটির তিনজন সদস্য ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রস্তরফলকটির সম্পূর্ণ ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন।[S]
প্রস্তরফলকের তিনটি লিপির মধ্যে কোনটি আদর্শ হিসেবে ধরে বাকি দুইটি লিপিতে তা অনুবাদ করা হয়েছিলো সেই প্রশ্নের উত্তরটি এখন পর্যন্ত বিতর্কিত। ১৮৪১ সালে লেত্রঁন গ্রিক সংস্করণটি ফরমানের মূল সংস্করণ হিসেবে দেখানো চেষ্টা করেন এই যুক্তিতে যে গ্রিক ছিলো তৎকালীন মেসেডোনীয় টলেমীয় সরকারের সরকারী ভাষা।[P] বর্তমানকালের গবেষকদের মধ্যে জন রে’র ভাষ্যমতে, “হায়ারোগ্লিফ লিপিতে লেখা অংশটি-ই প্রস্তরফলকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ সেগুলো দেবতাদের ও তাদের পণ্ডিত পুরোহিতগণের পড়ার উদ্দেশ্যে সেখানে স্থান পেয়েছিলো”।[৭] ফিলিপ ডারচেইন এবং হাইঞ্জ জোসেফ থিসেনের ধারণা তিনটি সংস্করণ-ই একই সাথে লিখিত হয়েছিলো; যখন স্টিফেন কোয়ার্কি ফরমানের মাঝে “তিনটি অত্যাবশ্যক পাঠগত ঐতিহ্যের একটি জটিল সম্মিলন” দেখতে পান।[৭২] রিচার্ড পার্কিনসন নির্দেশ করেন যে, হায়ারোগ্লিফ সংস্করণটি তার সেকেলে লৌকিকতা থেকে বিচ্যুত হয়ে কিছু ক্ষেত্রে নিকটবর্তী ডেমোটিক ভাষার সাথে মিশ্রিত হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, তৎকালীন পুরোহিতরা তাদের প্রাত্যাহিক জীবনে কথা-বার্তায় মূলত ডেমোটিক ভাষাই ব্যবহার করতেন।[৭৩] আদপে তিনটি সংস্করণের লেখাগুলো যে শাব্দিকভাবে হুবহু অনুদিত না হওয়ার কারণেই কারণেই রোসেটা প্রস্তরফলকের পাঠোদ্ধার করতে প্রাথমিক ধারণার চেয়েও অনেক বেশি সময় লেগে যায়। বিশেষ করে এটি প্রথম দিকের সেসকল গবেষকদের কাছে খুব-ই জটিল ছিলো যারা আশা করেছিলেন এই প্রস্তরফলকের মাধ্যমে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফের অবিকল ও নির্ভুল দ্বিভাষিক চাবিকাঠি পাওয়া সম্ভব হবে।[৭৪]
বিতর্ক
সম্পাদনাসালভোলিনির কর্মকাণ্ডের আগেও ফলকের পাঠোদ্ধারে অগ্রগণ্যতা কার এবং পাঠোদ্ধারকারীর রচনাচুরি বা প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক বিতর্ক পাঠোদ্ধারের সময়ক্রমের বিভিন্ন সময়ে তিক্ততার সৃষ্টি করেছে। গোড়ার দিককার ব্রিটিশ সমালোচকদের মতে ১৮২২ সালে শাম্পোলিওঁর লেত্রঁ আ ম. দাঁসি প্রকাশনায় থমাস ইয়াংয়ের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও তা অসম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ লেখক জেমস ব্রাউন ১৮২৩ সালে এডিনবরা ম্যাগাজিন-এ প্রকাশের উদ্দেশ্যে পর্যালোচনার জন্য অপেক্ষমাণ কিছু পরাম্বরা প্রবন্ধ বেনামে পর্যালোচনার সময় ইয়াংয়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এবং একই সাথে এই অভিযোগ করেছিলেন যে শাম্পোলিওঁ ‘বিবেকবর্জিতভাবে’ ইয়াংয়ের কাজকে চুরি করেছেন। উল্লেখ্য, এর চার বছর আগে, ১৮১৯ সালে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা-তে ইয়াংয়ের এ সম্পর্কিত কাজ প্রকাশিত হয়েছিলো আর সেসময় ব্রাউন ছিলেন এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’র একজন সহ-সম্পাদক।[৭৫][৭৬] এডিনবরা ম্যাগাজিন-এর জন্য ব্রাউনের পর্যালোচিত প্রবন্ধগুলো পরবর্তীতে জার্মান ভাষাবিদ ইউলিউস ক্লাপরথ ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন ও ১৮২৭ সালে বই হিসেবে প্রকাশ করেন।[N] ১৮২৩ সালে প্রকাশিত জেমস ইয়াং-এর নিজস্ব প্রকাশনায় তিনি পুনরায় নিজের অবদানের অগ্রগণ্যতার দাবি করেন।[L] যদিও এই বিতর্ক চলাকালীন সময়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে ইয়াং ও শাম্পোলিওঁর মৃত্যুবরণ (ইয়াং ১৮২৯ সালে ও শাম্পোলিওঁ ১৮৩২ সালে) করায় এই বিতর্কের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়নি। ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ ইজিপ্টোলজিস্ট ই. এ. ওয়ালিস বাজ এ বিষয়ে কাজ করার সময় শাম্পোলিওঁর তুলনায় ইয়াং-এর অবদানের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন।[৭৭] ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে ব্রিটিশ মিউজিয়াম পরিদর্শনকারী ফরাসি দর্শনার্থীরা অভিযোগ করেন যে রোসেটা প্রস্তরফলক সংলগ্ন তথ্যযুক্ত বোর্ডে শাম্পোলিওঁর চেয়ে ইয়াং-এর ছবি বড়োভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে, একইসাথে ইংরেজ দর্শনার্থীরাও জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে ঠিক বিপরীত অভিযোগ পেশ করে। যদিও সত্যিকার অর্থে দুটি ছবি-ই ছিলা সমআকৃতির।[৫০]
মিশরে প্রত্যাবাসনের অনুরোধ
সম্পাদনা২০০৩ সালের জুলাইয়ে মিশরের সুপ্রিম কাউন্সিল অফ অ্যান্টিকুইটিসের তৎকালীন সেক্রেটারি-জেনারেল জাহি হাওয়াস রোসেটা প্রস্তরফলকের প্রত্যাবাসনের দাবি উত্থাপন করেন। মিশরীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও প্রকাশ পাওয়া এই দাবিগুলোতে প্রস্তরফলকটিকে মিশরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এটিকে “মিশরের আত্মপরিচয়ের প্রতিমূর্তি” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিলো।[৭৮] দুই বছর পর তিনি এটি প্যারিসে তার দাবিকে আরও বিস্তৃত করে মিশরের সাংষ্কৃতিক ঐহিত্যের আরও কতোগুলো নিদর্শনকে সেখানে অধিভুক্ত করেন। তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য নিদর্শনের মধ্যে ছিলো বার্লিনের মিশর জাদুঘরে প্রদর্শিত নেফের্তিতির আবক্ষ মূতি, জার্মানির হিল্ডেসহাইমের রোয়েমের ও পেলিসেউস জাদুঘরে অবস্থিত গিজার মহা পিরামিডের স্থপতি হেমিউনুর ভাষ্কর্য, প্যারিসের লুভ্র জাদুঘরে অবস্থিত দন্দেরা মন্দিরের রাশিচক্র, এবং বস্টনের মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টসে অবস্থিত আন্খাহাফের আবক্ষ মূর্তি।[৭৯]
২০০৫ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে মিশরকে ফাইবারগ্লাসের তৈরি রোসেটা প্রস্তরফলকের রংয়ের মতোই রং ও পূর্ণ আকৃতির একটি প্রতিলিপি উপহার হিসেবে প্রদান করে। প্রতিলিপিটি প্রথমে রাশিদ জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়। রোসেটা প্রস্তরফলক যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় তার খুব নিকটেই এই রাশিদ (রোসেটা) শহরের অবস্থান। আর সেই শহরেই অবস্থিত উসমানীয় আমলে তৈরি একটি বাড়িকে পুননির্মাণ করে জাদুঘরটি স্থাপন করা হয়।[৮০] ২০০৫ সালের নভেম্বরে হাওয়াস তিন মাসের জন্য ধার হিসেবে রোসেটা প্রস্তরফলককে মিশরকে প্রদান করার সুপারিশ করেন, যদিও সে সময়ও তিনি প্রস্তরফলকের স্থায়ীভাবে মিশরে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করেন।[৮১] ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি জানান যে যদি ব্রিটিশ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে গিজায় অবস্থিত গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে তিন মাসের জন্য রোসেটা প্রস্তরফলকটি ধার হিসেবে প্রদান করেন তবে তিনি স্থায়ীভাবে এটির প্রত্যাবাসনের দাবি পরিত্যাগ করবেন।[৮২]
ব্রিটিশ ইজিপ্টোলজিস্ট জন রে’র ভাষ্যে, “এমন একটি সময় হয়তো আসবে যখন প্রস্তরফলকটি রোসেটায় না যতোদিন কাটিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি সময় ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পার করেছে।”[৮৩]
রোসেটা প্রস্তরফলকের মতো আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক গুরুত্ববহ নিদর্শনের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জাতীয় জাদুঘরগুলো দৃঢ়ভাবে বিরোধী। ব্রিটিশ মিউজিয়াম তাদের সংগ্রহে থাকা পার্থানন থেকে সংগৃহীত এলগ্রিন মার্বেলের গ্রিক প্রত্যাবাসনের অনুরোধ একাধিকবার প্রত্যাখান করেছে। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য আরও জাদুঘর বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অনুরোধ প্রত্যাখান করে এসেছে। ২০০২ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লুভ্র জাদুঘর, বার্লিনের পেরগামন জাদুঘর, এবং নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত মেট্রোপলিটান জাদুঘরসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় জাদুঘর এক যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করে যে,
- “পূর্বকালীন সময়ে সংগৃহীত নিদর্শনগুলোকে ভিন্ন স্পর্শকাতরতার সাথে ও সেগুলো যখন সংগ্রহ করা হয়েছে সেই সময়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে মূল্যায়নের আলোকে দেখা প্রয়োজন... জাদুঘরগুলো শুধুমাত্র একটি জাতির নাগরিকদের জন্যই কাজ করে না বরং তারা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য নিবেদিত।”[৮৪]
বিশেষার্থক ব্যবহার
সম্পাদনাবিভিন্ন প্রাচীন দ্বিভাষিক এমনকি ত্রিভাষিক লিপিতাত্ত্বিক দলিলাদিকে পারিভাষিক অর্থে ‘রোসেটা স্টোন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, কারণ সেগুলো প্রাচীন কোনো লিপির অর্থ উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ বা মূল ভূমিকা পালন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিক-ব্যাক্ট্রিয় রাজ্যের রাজা আগাথোক্লেস কর্তৃক চালুকৃত দ্বিভাষিক গ্রিক-ব্রাহ্মী লিপি খোদাইকৃত মুদ্রাগুলোকে ‘ছোট রোসেটা স্টোন’ বলা হয়, কারণ এর মাধ্যমে নরওয়েজীয় প্রাচ্যবিশারদ ক্রিশ্চিয়ান লাসেন ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকের প্রচেষ্টাগুলোকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান যা শেষ পর্যন্ত প্রাচীন ভারতীয় লিপিতত্ত্বের জট খুলতে গবেষকদের সহায়তা করেছিলো।[৮৫] ইরানের বেহিস্তুন পর্বতের গায়ে খোদাইকৃত ত্রিভাষিক বেহিস্তুন শিলালিপিকেও রোসেটা প্রস্তরফলকের সাথে তুলনা করা হয়, কারণ এই শিলালিপিটিতে একই লেখনী কিউনিফর্ম লিপিতে প্রাচীন ইরানীয়, এলামাইট, ও আক্কাদীয় নামক মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি প্রাচীন ভাষায় লিখিত হয়েছিলো যা পরবর্তীতে কিউনিফর্ম লিপির পাঠোদ্ধারসহ এই প্রাচীন ভাষাগুলোর পাঠোদ্ধারেও মূল ভূমিকা পালন করেছে।[৮৬]
সাংকেতিক ভাষায় লেখা তথ্যের পাঠোদ্ধারে প্রথম তাৎপর্যপূর্ণ সফলতাকে বর্ণনা করতে বাগধারা হিসেবে ‘রোসেটা প্রস্তরফলক’ পরিভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে যখন একটি ছোট কিন্তু প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা একটি বড় কোনো কিছুকে বুঝতে ভূমিকা রাখে।[৮৭] অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী ১৯০২ সালে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় এই পরিভাষাটির প্রথম আলংকারিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বকোষটির ১৯০২ সালের সংস্করণে গ্লুকোজের রাসায়নিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত একটি ভুক্তিতে পরিভাষাটি ব্যবহৃত হয়েছিলো।[৮৭] এছাড়াও ১৯৩৩ সালে এইচ. জি. ওয়েলসের দ্য শেপ অব থিংস টু কাম উপন্যাসেও ‘রোসেটা স্টোন’-এর আলংকারিক ব্যবহার পাওয়া যায়। ঐ উপন্যাসের মূল চরিত্র সাঁটলিপিতে লেখা একটি ছোট পাণ্ডুলিপি খুঁজে পান যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টাইপরাইটার ও হাতে লেখা অন্যান্য বিষয়বস্তুর অর্থ বুঝে উঠতে ভূমিকা রাখে।[৮৭]
এরপর থেকেই এই পরিভাষাটি অন্যান্য ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে নোবেল বিজয়ী থিওডোর হ্যান্শ বিজ্ঞান ম্যাগাজিন সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান-এ বর্ণালীবীক্ষণের উপর লিখিত একটি প্রবন্ধে লেখেন, “হাইড্রোজেন অণুর বর্ণালী আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের রোসেটা স্টোন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে: একবার যেহেতু লাইনগুলোর ধরন উদঘাটন করা গেছে, এর ফলে আরও অনেক কিছুই বোঝা সম্ভব হবে।”[৮৭] মানুষের লিউকোসাইট অ্যান্টিজেনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বংশাণু পরিপূর্ণভাবে বোঝাকে অনাক্রম্যবিজ্ঞানের রোসেটা স্টোন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৮৮] সপুষ্পক উদ্ভিদ অ্যারাবিডোপসিস থ্যালিয়ানা-কে সপুষ্পক উদ্ভিদের রোসেটা স্টোন বলা হয়।[৮৯] অতিনবতারার সাথে সংযোজনের সময় খুঁজে পাওয়া একটি গামা রশ্মি বিষ্ফোরণকে গামা রশ্মি বিষ্ফোরণ বোঝার রোসেটা স্টোন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।[৯০] বিভিন্ন ধরনের প্রসারক অকার্যকারিতার ফলে মানুষের হৃদপিণ্ডের বাম নিলয় রক্ত দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার জটিল প্রক্রিয়াকে বুঝতে চিকিৎসকরা ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাফি কৌশল ব্যবহার করেন যাকে এই প্রক্রিয়াটি বোঝার ক্ষেত্রে রোসেটা স্টোন হিসেবে বলা হয়ে থাকে।[৯১]
ভাষাগত ব্যবহার ছাড়াও সফটওয়্যার বা মেশিনের নামকরণের ক্ষেত্রে রোসেটা নামের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত রোসেটা মহাকাশযান, যা সৌর জগতের উৎপত্তি সম্পর্কে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণার উদ্দেশ্যে ৬৭পি/চুরিমোভ–গেরাসিমেনকো ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়। পাওয়ারপিসি প্রসেসরের জন্য লিখিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে অ্যাপলের এক্স৮৬ প্রসেসরের কম্পিউটারে চালানোর জন্য লিখিত প্রোগামটির নাম ‘রোসেটা’। পরবর্তীতে ২০২০ সালে ম্যাকওএস-এর সাথে মিলিয়ে হিসেবে একে ‘রোসেটা ২’ নামে প্রকাশ করা হয় যা নতুন অ্যাপল প্রসেসরে চালিত কম্পিউটারগুলোতেও এক্স৮৬-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশনগুলো চালাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও অ্যামিনো এসিডের ক্রম থেকে প্রোটিনের গঠন ধারণা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী পরিচালিত আবণ্টিত কম্পিউটিং প্রকল্পটির নাম এই প্রস্তরফলকের নামানুসারে রোসেটা@হোম রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের অনুবাদক সফটওয়্যারের নাম হিসেবে রোসেটা স্টোন ব্যবহৃত হয়েছে। ‘রোসেটা স্টোন’ হচ্ছে ভাষা শেখার সফটওয়্যারের একটি ব্র্যান্ড যার প্রকাশক যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠান রোসেটা স্টোন ইনকর্পোরেটেড। ক্যানোনিকাল (উবুন্টু অপারেটিং সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা) তাদের লঞ্চপ্যাড প্রকল্পের অংশ হিসেবে ‘রোসেটা’ নামের একটি অনলাইন ভাষা অনুবাদক সরঞ্জাম চালু ও পরিচালনা করে যা সফটওয়্যার অনুবাদ বা লোকালাইজেশনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
আরও ব্যাপকার্থে, রোসেটা প্রকল্প একটি কার্যকরী জরিপ ও ১,৫০০ ভাষার প্রায়-স্থায়ী আর্কাইভ তৈরি করেছে। ভাষা বিশেষজ্ঞ ও মাতৃভাষীদের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি এই আর্কাইভ বই ও ডিজিটাল ফর্মে ২০০০ থেকে ১২,০০০ সাল পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনা- বেহিস্তুন শিলালিপি – কিউনিফর্ম লিপির পাঠোদ্ধারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
- মিশর–যুক্তরাজ্য সম্পর্ক
- মেশা প্রস্তরফলক
- প্রাচীন মিশরীয় ভাষার প্রতিবর্ণীকরণ
তথ্যসূত্র
সম্পাদনারোসেটা প্রস্তরফলক বিষয়ক প্রাথমিক প্রকাশনার কালপঞ্জি
সম্পাদনা- ^ 1799: Courrier de l'Égypte no. 37 (29 Fructidor year 7, i.e. 1799) p. 3 Retrieved July 15, 2018
- ^ 1802: "Domestic Occurrences: March 31st, 1802" in The Gentleman's Magazine vol. 72 part 1 p. 270 Retrieved July 14, 2010
- ^ 1802: Silvestre de Sacy, Lettre au Citoyen Chaptal, Ministre de l'intérieur, Membre de l'Institut national des sciences et arts, etc: au sujet de l'inscription Égyptienne du monument trouvé à Rosette. Paris, 1802 Retrieved July 14, 2010
- ^ 1802: Johan David Åkerblad, Lettre sur l'inscription Égyptienne de Rosette: adressée au citoyen Silvestre de Sacy, Professeur de langue arabe à l'École spéciale des langues orientales vivantes, etc.; Réponse du citoyen Silvestre de Sacy. Paris: L'imprimerie de la République, 1802
- ^ 1803: "Has tabulas inscriptionem ... ad formam et modulum exemplaris inter spolia ex bello Aegyptiaco nuper reportati et in Museo Britannico asservati suo sumptu incidendas curavit Soc. Antiquar. Londin. A.D. MDCCCIII" in Vetusta Monumenta vol. 4 plates 5–7
- ^ 1803: Hubert-Pascal Ameilhon, Éclaircissemens sur l'inscription grecque du monument trouvé à Rosette, contenant un décret des prêtres de l'Égypte en l'honneur de Ptolémée Épiphane, le cinquième des rois Ptolémées. Paris: Institut National, 1803 Retrieved July 14, 2010
- ^ 1803: Chr. G. Heyne, "Commentatio in inscriptionem Graecam monumenti trinis insigniti titulis ex Aegypto Londinum apportati" in Commentationes Societatis Regiae Gottingensis vol. 15 (1800–1803) p. 260 ff.
- ^ 1811: Matthew Raper, S. Weston et al., "Rosetta stone, brought to England in 1802: Account of, by Matt. Raper; with three versions: Greek, English translation by S. Weston, Latin translation by Prof. Heyne; with notes by Porson, Taylor, Combe, Weston and Heyne" in Archaeologia vol. 16 (1810–1812) pp. 208–263
- ^ 1817: Thomas Young, "Remarks on the Ancient Egyptian Manuscripts with Translation of the Rosetta Inscription" in Archaeologia vol. 18 (1817) Retrieved July 14, 2010 (see pp. 1–15)
- ^ 1819: Thomas Young, "Egypt" in Encyclopædia Britannica, supplement vol. 4 part 1 (Edinburgh: Chambers, 1819) Retrieved July 14, 2010 (see pp. 86–195)
- ^ 1822: J.-F. Champollion, Lettre à M. Dacier relative à l'alphabet des hiéroglyphes phonétiques (Paris, 1822) At Gallica: Retrieved July 14, 2010 at French Wikisource
- ^ 1823: Thomas Young, An account of some recent discoveries in hieroglyphical literature and Egyptian antiquities: including the author's original alphabet, as extended by Mr. Champollion, with a translation of five unpublished Greek and Egyptian manuscripts (London: John Murray, 1823) Retrieved July 14, 2010
- ^ 1824: J.-F. Champollion, Précis du système hiéroglyphique des anciens Égyptiens. Paris, 1824 Online version at archive.org 2nd ed. (1828) At Gallica: Retrieved July 14, 2010
- ^ 1827: James Browne, Aperçu sur les hiéroglyphes d'Égypte et les progrès faits jusqu'à présent dans leur déchiffrement (Paris, 1827; based on a series of articles in Edinburgh Review beginning with no. 55 (February 1823) pp. 188–197) Retrieved July 14, 2010
- ^ 1837: François Salvolini, "Interprétation des hiéroglyphes: analyse de l'inscription de Rosette" in Revue des deux mondes vol. 10 (1937) At French Wikisource
- ^ 1841: Antoine-Jean Letronne, Inscription grecque de Rosette. Texte et traduction littérale, accompagnée d'un commentaire critique, historique et archéologique. Paris, 1840 (issued in Carolus Müllerus, ed., Fragmenta historicorum Graecorum vol. 1 (Paris: Didot, 1841)) Retrieved July 14, 2010 (see end of volume)
- ^ 1851: H. Brugsch, Inscriptio Rosettana hieroglyphica, vel, Interpretatio decreti Rosettani sacra lingua litterisque sacris veterum Aegyptiorum redactae partis ... accedunt glossarium Aegyptiaco-Coptico-Latinum atque IX tabulae lithographicae textum hieroglyphicum atque signa phonetica scripturae hieroglyphicae exhibentes. Berlin: Dümmler, 1851 Retrieved July 14, 2010
- ^ 1853: Max Uhlemann, Inscriptionis Rosettanae hieroglyphicae decretum sacerdotale. Leipzig: Libraria Dykiana, 1853 Retrieved July 14, 2010
- ^ 1858: Report of the committee appointed by the Philomathean Society of the University of Pennsylvania to translate the inscription on the Rosetta stone. Philadelphia, 1858
টীকা
সম্পাদনা- ↑ Bierbrier (1999) pp. 111–113
- ↑ ক খ Parkinson et al. (1999) p. 23
- ↑ Synopsis (1847) pp. 113–114
- ↑ Miller et al. (2000) pp. 128–132
- ↑ ক খ Middleton and Klemm (2003) pp. 207–208
- ↑ ক খ The Rosetta Stone
- ↑ ক খ গ Ray (2007) p. 3
- ↑ Parkinson et al. (1999) p. 28
- ↑ ক খ গ ঘ Parkinson et al. (1999) p. 20
- ↑ Budge (1913) pp. 2–3
- ↑ Budge (1894) p. 106
- ↑ Budge (1894) p. 109
- ↑ ক খ Parkinson et al. (1999) p. 26
- ↑ Parkinson et al. (1999) p. 25
- ↑ Clarysse and Van der Veken (1983) pp. 20–21
- ↑ ক খ গ Parkinson et al. (1999) p. 29
- ↑ Shaw & Nicholson (1995) p. 247
- ↑ Tyldesley (2006) p. 194
- ↑ ক খ Clayton (2006) p. 211
- ↑ Bevan (1927) pp. 252–262
- ↑ Assmann (2003) p. 376
- ↑ Clarysse (1999) p. 51, with references there to Quirke and Andrews (1989)
- ↑ ক খ Bevan (1927) pp. 264–265
- ↑ Ray (2007) p. 136
- ↑ Parkinson et al. (1999) p. 30
- ↑ Shaw (2000) p. 407
- ↑ Walker and Higgs (editors, 2001) p. 19
- ↑ Bagnall and Derow (2004) (no. 137 in online version)
- ↑ Budge (1904); Budge (1913)
- ↑ Bevan (1927) pp. 263–268
- ↑ Simpson (n. d.); a revised version of Simpson (1996) pp. 258–271
- ↑ Quirke and Andrews (1989)
- ↑ Parkinson (2005) p. 14
- ↑ Parkinson (2005) p. 17
- ↑ Parkinson (2005) p. 20
- ↑ Clarysse (1999) p. 42; Nespoulous-Phalippou (2015) pp. 283–285
- ↑ Benjamin, Don C. (মার্চ ২০০৯)। Stones and stories: an introduction to archaeology and the Bible। Fortress Press। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-0-8006-2357-9। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১১।
- ↑ Adkins (2000) p. 38
- ↑ Gillispie (1987) pp. 1–38
- ↑ Wilson (1803) vol. 2 pp. 274–284
- ↑ ক খ গ Parkinson et al. (1999) p. 21
- ↑ Burleigh (2007) p. 212
- ↑ Burleigh (2007) p. 214
- ↑ Budge (1913) p. 2
- ↑ Parkinson et al. (1999) pp. 21–22
- ↑ Andrews (1985) p. 12
- ↑ Parkinson (2005) pp. 30–31
- ↑ ক খ Parkinson (2005) p. 31
- ↑ Parkinson (2005) p. 7
- ↑ ক খ গ Parkinson (2005) p. 47
- ↑ Parkinson (2005) p. 32
- ↑ Parkinson (2005) p. 50
- ↑ "Everything you ever wanted to know about the Rosetta Stone" (British Museum, 14 July 2017)
- ↑ Parkinson (2005) pp. 50–51
- ↑ Ray (2007) p. 11
- ↑ Parkinson et al. (1999) pp. 15–16
- ↑ El Daly (2005) pp. 65–75
- ↑ Ray (2007) pp. 15–18
- ↑ Ray (2007) pp. 20–24
- ↑ Powell, Barry B. (২০০৯-০৫-১১)। Writing: Theory and History of the Technology of Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 91। আইএসবিএন 978-1-4051-6256-2।
- ↑ ক খ Budge (1913) p. 1
- ↑ Andrews (1985) p. 13
- ↑ Budge (1904) pp. 27–28
- ↑ Parkinson et al. (1999) p. 22
- ↑ Robinson (2009) pp. 59–61
- ↑ Robinson (2009) p. 61
- ↑ Robinson (2009) pp. 61–64
- ↑ Parkinson et al. (1999) p. 32
- ↑ Budge (1913) pp. 3–6
- ↑ E. Agazzi; M. Pauri (২০১৩)। The Reality of the Unobservable: Observability, Unobservability and Their Impact on the Issue of Scientific Realism। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 98–99।
- ↑ Dewachter (1990) p. 45
- ↑ Quirke and Andrews (1989) p. 10
- ↑ Parkinson (2005) p. 13
- ↑ Parkinson et al. (1999) pp. 30–31
- ↑ Parkinson et al. (1999) pp. 35–38
- ↑ Robinson (2009) pp. 65–68
- ↑ Budge (1904) vol. 1 pp. 59–134
- ↑ Edwardes and Milner (2003)
- ↑ Sarah El Shaarawi (৫ অক্টোবর ২০১৬)। "Egypt's Own: Repatriation of Antiquities Proves to be a Mammoth Task"। Newsweek – Middle East।
- ↑ "Rose of the Nile" (2005)
- ↑ Huttinger (2005)
- ↑ "Antiquities wish list" (2005)
- ↑ Ray (2007) p. 4
- ↑ Bailey (2003)
- ↑ Aruz, Joan; Fino, Elisabetta Valtz (২০১২)। Afghanistan: Forging Civilizations Along the Silk Road (ইংরেজি ভাষায়)। Metropolitan Museum of Art। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 9781588394521।
- ↑ Dudney, Arthur (২০১৫)। Delhi: Pages From a Forgotten History (ইংরেজি ভাষায়)। Hay House, Inc। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 9789384544317।
- ↑ ক খ গ ঘ Oxford English dictionary (1989) s.v. "Rosetta stone" আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত জুন ২০, ২০১১ তারিখে
- ↑ "International Team"
- ↑ Simpson and Dean (2002)
- ↑ Cooper (2010)
- ↑ Nishimura and Tajik (1998)
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Adkins, Lesley; Adkins, R. A. (২০০০)। The Keys of Egypt: the obsession to decipher Egyptian hieroglyphs। HarperCollins। আইএসবিএন 978-0-06-019439-0।
- Allen, Don Cameron (১৯৬০)। "The Predecessors of Champollion": 527–547।
- Andrews, Carol (১৯৮৫)। The Rosetta Stone। British Museum Press। আইএসবিএন 978-0-87226-034-4।
- Assmann, Jan; Jenkins, Andrew (২০০৩)। The Mind of Egypt: history and meaning in the time of the Pharaohs। Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-01211-0। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২১।
- "Antiquities Wish List"। Al-Ahram Weekly। ২০০৫-০৭-২০। সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৮।
- Bagnall, R. S.; Derow, P. (২০০৪)। The Hellenistic Period: historical sources in translation। Blackwell। আইএসবিএন 1-4051-0133-4। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৮।
- Bailey, Martin (২০০৩-০১-২১)। "Shifting the Blame"। Forbes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৬।
- Bevan, E. R. (১৯২৭)। The House of Ptolemy। Methuen। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৮।
- Bierbrier, M. L. (১৯৯৯)। The acquisition by the British Museum of antiquities discovered during the French invasion of Egypt। (British Museum Publications)।
- Brown, V. M.; Harrell, J. A. (১৯৯৮)। "Aswan Granite and Granodiorite": 133–137।
- Budge, E. A. Wallis (১৮৯৪)। The Mummy: chapters on Egyptian funereal archaeology। Cambridge University Press। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৯।
- Budge, E. A. Wallis (১৯০৪)। The Decrees of Memphis and Canopus। Kegan Paul। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-১০।
- Budge, E. A. Wallis (১৯১৩)। The Rosetta Stone। British Museum। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১২।
- Burleigh, Nina (২০০৭)। Mirage: Napoleon's scientists and the unveiling of Egypt। HarperCollins। আইএসবিএন 978-0-06-059767-2।
- Clarysse, G. W.; Van der Veken, G. (১৯৮৩)। The Eponymous Priests of Ptolemaic Egypt (P. L. Bat. 24): Chronological lists of the priests of Alexandria and Ptolemais with a study of the demotic transcriptions of their names। Assistance by S. P. Vleeming। Brill। আইএসবিএন 90-04-06879-1।
- Clarysse, G. W. (১৯৯৯)। Ptolémées et temples।
- Clayton, Peter A. (২০০৬)। Chronicles of the Pharaohs: the reign-by-reign record of the rulers and dynasties of Ancient Egypt। Thames & Hudson। আইএসবিএন 0-500-28628-0।
- Cooper, Keith (২০১০-০৪-১৪)। "New Rosetta Stone for GRBs as supernovae"। Astronomy Now Online। ২০১৯-০৮-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৪।
- Dewachter, M. (১৯৯০)। Champollion: un scribe pour l'Égypte (ফরাসি ভাষায়)। Gallimard। আইএসবিএন 978-2-07-053103-5।
- Downs, Jonathan (২০০৮)। Discovery at Rosetta: the ancient stone that unlocked the mysteries of Ancient Egypt। Skyhorse Publishing। আইএসবিএন 978-1-60239-271-7।
- Edwardes, Charlotte; Milner, Catherine (২০০৩-০৭-২০)। "Egypt demands return of the Rosetta Stone"। The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-০৫।
- El-Aref, Nevine (২০০৫-১১-৩০)। "The Rose of the Nile"। Al-Ahram Weekly।
- El Daly, Okasha (২০০৫)। Egyptology: the missing millennium: Ancient Egypt in medieval Arabic writings। UCL Press। আইএসবিএন 1-84472-063-2।
- Gillispie, C. C.; Dewachter, M. (১৯৮৭)। Monuments of Egypt: the Napoleonic edition। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 1–38।
- "Horwennefer"। Egyptian Royal Genealogy। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১২।
- Huttinger, Henry (২০০৫-০৭-২৮)। "Stolen Treasures: Zahi Hawass wants the Rosetta Stone back—among other things"। Cairo Magazine। ২০০৫-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-০৬।
- "International team accelerates investigation of immune-related genes"। The National Institute of Allergy and Infectious Diseases। ২০০০-০৯-০৬। ২০০৭-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-২৩।
- Kitchen, Kenneth A. (১৯৭০)। "Two Donation Stelae in the Brooklyn Museum"। ডিওআই:10.2307/40000039।
- Meyerson, Daniel (২০০৪)। The Linguist and the Emperor: Napoleon and Champollion's quest to decipher the Rosetta Stone। Ballantine Books। আইএসবিএন 978-0-345-45067-8।
- Middleton, A.; Klemm, D. (২০০৩)। "The Geology of the Rosetta Stone": 207–216।
- Miller, E. (২০০০)। The Examination and Conservation of the Rosetta Stone at the British Museum। (British Museum Publications)। পৃষ্ঠা 128–132।
- Nespoulous-Phalippou, Alexandra (২০১৫)। Ptolémée Épiphane, Aristonikos et les prêtres d’Égypte. Le Décret de Memphis (182 a.C.): édition commentée des stèles Caire RT 2/3/25/7 et JE 44901 (CENiM 12)। Université Paul Valéry।
- Nicholson, P. T.; Shaw, I. (২০০০)। Ancient Egyptian Materials and Technology। Cambridge University Press।
- Nishimura, Rick A.; Tajik, A. Jamil (১৯৯৮-০৪-২৩)। "Evaluation of diastolic filling of left ventricle in health and disease: Doppler echocardiography is the clinician's Rosetta Stone": 8–18। ডিওআই:10.1016/S0735-1097(97)00144-7। পিএমআইডি 9207615। ২০১৩-০১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-০৫।
- Oxford English Dictionary. 2nd ed.। Oxford University Press। ১৯৮৯। আইএসবিএন 978-0-19-861186-8। ২৫ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৯।
- Parkinson, Richard B.; Diffie, W. (১৯৯৯)। Cracking Codes: the Rosetta Stone and decipherment। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-22306-6। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১২।
- Parkinson, Richard B. (২০০৫)। The Rosetta Stone। British Museum objects in focus। British Museum Press। আইএসবিএন 978-0-7141-5021-5।
- Quirke, Stephen; Andrews, Carol (১৯৮৯)। The Rosetta Stone। Abrams। আইএসবিএন 978-0-8109-1572-5।
- Ray, J. D. (২০০৭)। The Rosetta Stone and the Rebirth of Ancient Egypt। Harvard University Press। আইএসবিএন 978-0-674-02493-9।
- Robinson, Andrew (২০০৯)। Lost Languages: the enigma of the world's undeciphered scripts। Thames & Hudson। আইএসবিএন 978-0-500-51453-5।
- "The Rosetta Stone"। The British Museum। ২০১২-১০-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১২।
- "Rosetta Stone row 'would be solved by loan to Egypt'"। BBC News। ২০০৯-১২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৪।
- Shaw, Ian (২০০০)। The Oxford history of Ancient Egypt। Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-280458-8।
- Simpson, Gordon G.; Dean, Caroline (২০০২-০৪-১২)। "Arabidopsis, the Rosetta Stone of Flowering Time?": 285–289। ডিওআই:10.1126/science.296.5566.285। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-২৩।
- Shaw, Ian; Nicholson, Paul (১৯৯৫)। The Dictionary of Ancient Egypt। Harry N. Abrams। আইএসবিএন 0-8109-9096-2।
- Simpson, R. S. (১৯৯৬)। Demotic Grammar in the Ptolemaic Sacerdotal Decrees। Griffith Institute। আইএসবিএন 978-0-900416-65-1।
- Simpson, R. S. (n.d.)। "The Rosetta Stone: translation of the demotic text"। The British Museum। ২০১০-০৭-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-২১।
- Solé, Robert; Valbelle, Dominique (২০০২)। The Rosetta Stone: the story of the decoding of hieroglyphics। Four Walls Eight Windows। আইএসবিএন 978-1-56858-226-9।
- Spencer, Neal; Thorne, C. (২০০৩)। Book of Egyptian Hieroglyphs। British Museum Press, Barnes & Noble। আইএসবিএন 978-0-7607-4199-3।
- Synopsis of the Contents of the British Museum। British Museum। ১৮৪৭।
- Tyldesley, Joyce (২০০৬)। Chronicle of the Queens of Egypt। Thames & Hudson। আইএসবিএন 0-500-05145-3।
- Cleopatra of Egypt। British Museum Press। ২০০১। আইএসবিএন 0-7141-1943-1।
- Wilson, Robert Thomas (১৮০৩)। History of the British Expedition to Egypt. 4th ed.। Military Library। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "দ্য রোসেটা স্টোন অনলাইন প্রজেক্ট"। ২০১৭। (ইন্টারলাইনার গ্লোসেস, টিইআই এক্সএমএল এনকোডিং, চিত্র মানচিত্র), ডি. এ. ওয়ের্নিং (এক্সসি ২৬৪ তোপোই), ই.-এস. লিংকে (এইচইউ বার্লিন), টিএইচ. গেওর্গআকোপৌলোস
- "ব্রিটিশ মিউজিয়াম অবজেক্ট ডেটাবেজ রেফারেন্স নাম্বার: ওয়াইসিএ৬২৯৫৮"। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৯।
- "হাও রোসেটা স্টোন ওয়ার্কস"। হাওস্টাফওয়ার্কস.কম।
- এই নিবন্ধটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা একটি নিদর্শন সম্পর্কে। নিদর্শনটির সূত্র হচ্ছে বিএম/বিগ নাম্বার: ২৪ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে।
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |