বিড (/bd/ BEED; ৬৭২/৩ - ২৬ মে ৭৩৫), যিনি সন্ত বিড বা পরমপবিত্র বিড নামে পরিচিত, ছিলেন একজন ইংরেজ বেনেডিক্টাইন সন্ন্যাসী। তিনি অ্যাঞ্জেলসের নর্দামব্রিয়া রাজ্যের সন্ত পিটার ও তার সাথী সন্ত পৌলের মঠের সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি সম্ভবত বর্তমান সান্ডারল্যান্ডের মঙ্কওয়্যারমাউথ মঠের অধীনস্থ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বিডকে সাত বছর বয়সে মঠে প্রেরণ করা হয় এবং পরে তিনি জ্যারো মঠে অ্যাবট কেওলফ্রাথের সাথে যোগ দেন। ৬৮৬ সালে তারা দুজনেই প্লেগের প্রাদুর্ভাব থেকে বেঁচে যান। এই প্রাদুর্ভাবে সেখানকার অধিকাংশ মানুষ মারা যায়। তিনি মঠেই তার জীবনের বেশিরভাগ সময় মনাস্ট্রিতে কাটান এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে কয়েকটি অ্যাবি এবং মঠে যাতায়াত করেন, এমনকি ইয়র্কের আর্চবিশপ ও নর্দামব্রিয়ার রাজা কেওলউলফের দেখা করেন। তিনি লেখক, শিক্ষক, ও পণ্ডিত হিসেবে সুপরিচিত। তার বিখ্যাত কর্ম হল এক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রি অব দি ইংলিশ পিপল, যা তাকে "ইংরেজ ইতিহাসের জনক" খ্যাতি পাইয়ে দেয়। তার খ্রিস্টধর্মের প্রতিনিধিত্বমূলক লেখনীগুলি ছিল বিস্তৃত এবং এগুলিতে বাইবেলের একাধিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যাধর্মী পাণ্ডিত্যপূর্ণ অন্যান্য ধর্মতাত্ত্বিক রচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিডের অধ্যয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল কম্পিউটাস-এর শিক্ষায়তনিক শাখা, যা তার সমকালীনদের কাছে বর্ষপঞ্জির তারিখ গণনার বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত ছিল। বিডের গণনার প্রচেষ্টায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ছিল ইস্টার। এই প্রচেষ্টার জন্য তিনি বিতর্কিত হয়েছিলেন। তিনি খ্রিস্টের জন্মের পরের তারিখ গণনার অনুশীলন (অ্যানো ডোমিনি) প্রবর্তন করতে সহায়তা করেন, যা মধ্যযুগীয় ইউরোপে নিয়মিতভাবে অনুশীলন করা হয়। বিড প্রারম্ভিক মধ্যযুগের অন্যতম সেরা শিক্ষক এবং লেখক ছিলেন এবং বহু ইতিহাসবিদ তাকে ৬০৪ সালে পোপ গ্রেগরির মৃত্যু থেকে ৮০০ সালে শার্লমাইনের রাজ্যাভিষেকের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য প্রাচীনকালের একক গুরুত্বপূর্ণ পণ্ডিত হিসেবে গণ্য করেন।

পরমপবিত্র সন্ত বিড
জে. ডয়েল পেনরোজের "দ্য লাস্ট চ্যাপ্টার" থেকে গৃহীত আংশিক পোট্রেট, (আনু. ১৯০২)
গির্জার প্রধান, সন্ন্যাসী, ইতিহাসবেত্তা
জন্মআনু. ৬৭৩[]
নথিভুক্ত নয়, সম্ভবত মঙ্কওয়্যারমাউথ (বর্তমান সান্ডারল্যান্ড, ইংল্যান্ড)[]
মৃত্যু২৬ মে ৭৩৫ (বয়স ৬১/৬২)
জ্যারো, নর্দামব্রিয়া রাজ্য (বর্তমান টাইন অ্যান্ড ওয়্যার, ইংল্যান্ড)[]
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনরোমান ক্যাথলিক গির্জা, প্রাচ্য গোঁড়াবাদী গির্জা, অ্যাংলিকান কমিউনিয়ন, ও লুথেরানবাদ
সিদ্ধ ঘোষণা১৮৯৯ সালে পোপ ত্রয়োদশ লিও কর্তৃক ঘোষিত ডক্টর অব দ্য চার্চ, রোম
প্রধান স্মৃতিযুক্ত স্থানডারহাম ক্যাথিড্রাল, ডারহাম, ইংল্যান্ড
উৎসব
বৈশিষ্ট্যাবলীহিস্টোরিয়া এক্লিজিঅ্যাস্টিকা জেন্টিস অ্যাংলোরাম
এর রক্ষাকর্তাইংরেজ লেখকইতিহাসবেত্তা; জ্যারো, টাইন অ্যান্ড ওয়্যার, ইংল্যান্ড, সান বেডা বিশ্ববিদ্যালয়, সান বেডা কলেজ আলাবাং

বিডের জীবন সম্পর্কে যা জানা যায় তার প্রায় সমস্ত কিছুই ইংল্যান্ডের গির্জার ইতিহাস নিয়ে তার লেখা এক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রি অব দি ইংলিশ পিপল-এর শেষ অধ্যায়ে রয়েছে। ৭৩১ সালে এই রচনা সমাপ্ত হয়েছিল,[] এবং বিড উল্লেখ করেন যে তার তখন বয়স ছিল ৫৯ বছর, ফলে তার জন্মের বছর ৬৭২ বা ৬৭৩ হতে পারে।[][][][] তার মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত একটি গৌণ উৎস হল তার শিষ্য কুথবার্টের লেখা একটি চিঠি।[][] হিস্টোরিয়ায় বিড তার জন্মস্থান হিসেবে মঠের অধীনস্থ এলাকার উল্লেখ করেন।[] তিনি যথাক্রমে বর্তমান সময়ের ওয়্যারসাইড এবং টাইনসাইডে মঙ্কওয়্যারমাউথ এবং জারোর[১০] জমজ মঠগুলির কথা উল্লেখ করেছেন। আরেকটি সূত্র অনুসারে তিনি জারো মঠ থেকে দুই মাইল দূরে মঙ্কটনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যদিও তার জন্মের সময় জারো মঠটির অস্তিত্ব ছিল না।[][১১] বিড তার পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে কিছুই বলেননি, তবে অভিজাত বংশের লোকদের সাথে তার সংযোগ থেকেই বোঝা যায় যে তার নিজের পরিবার সম্পদশালী ছিল।[১২] বিডের প্রথম মঠাধ্যক্ষ ছিলেন বেনিডিক্ট বিস্কপ এবং "বিস্কপ" এবং "বেডা" নামগুলি প্রায় ৮০০ সাল থেকে লিন্ডসে রাজাদের রাজতালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, যার ফলে আরও প্রমাণিত হয় যে বিড অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[]

বিড বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়াবলি রচনা করেছেন, এবং তার লেখনীতে সঙ্গীত থেকে শুরু করে ব্যাখ্যামূলক বাইবেলীয় ভাষ্যও তোলে ধরা হয়েছে। বিডের বাইবেলীয় ভাষ্যগুলিতে রূপক ব্যাখ্যা থাকত,[১৩] এবং তার ইতিহাস বিষয়ক রচনাগুলিতে অলৌকিক বিষয়াবলি থাকত। তিনি জ্যেষ্ঠ প্লিনি, ভের্গিল, লুক্রেতিউস, ওভিড, হোরাস ও অন্যান্য ধ্রুপদী লেখকদের সম্পর্কে জানতেন। তিনি কিছু গ্রিক ভাষাও জানতেন।

ইক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রি অব দি ইংলিশ পিপল

সম্পাদনা

বিডের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত কর্ম হল এক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রি অব দি ইংলিশ পিপল (Historia ecclesiastica gentis Anglorum)।[১৪] আনুমানিক ৭৩১ সালে এই বইটির রচনা সমাপ্ত হয়। ক্যান্টারবারির সেন্ট অগাস্টিন্‌স মঠের মঠাধ্যক্ষ আলবিনুস বিডকে বইটি লিখতে সহায়তা করেন।[১৫] তিনি এই বইটিতে লাতিন বাক্যাংশ আন্টে ইনকারনেশনিস ডোমিনিকায় টেম্পুস ("প্রভুর আবির্ভাবের সময়ের পূর্বে") ব্যবহার করার মাধ্যমে ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব ব্যবহারের দিক দিয়ে প্রথম লেখক হন।[১৬]

বিড তার ইতিহাস গ্রন্থে[১৭] ক্যাডমনের নয় লাইনের একটি কবিতা সঙ্কলন করেন- যেটার বাঙলা পাঠ-

"আমরা তার প্রতি নতি জানায়/ হে, স্বর্গের দারি,

সব কর্মের কারক/ সকল মনের পরিকল্পনা কারি,

সবই তোমার ক্রিয়া, পিতা/ আমি তাই শুধু ভাবি,

শ্বাশত পালক,/ সৃষ্টির চাবি;

তুমি করিলে সৃজন/ মানব প্রথম

স্বর্গকে বানালে ছাদ,/ কি তোমার লীলা।

পরে হল ধরার মাঝ/ হে, মোদের তাজ,

সদা প্রভু,/ দানিলে সগৌরবে,

মাটির মানুষ/ হে প্রভু স্ববিরাজ"[১৮]

ওয়্যারমাউথ-জ্যারোর মঠে সুবিশাল গ্রন্থাগার ছিল। বেনেডিক্ট বিস্কপ ও সিওলফ্রার্থ মহাদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে বই সংগ্রহণ করেছিলেন। বিডের সময়কালে এই মঠটি শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।[১৯] ধারণা করা হয় এই মঠের গ্রন্থাগারে প্রায় ২০০টি বই ছিল।[২০]

৫৯৭ সালে আগস্টিনের আগমনের পূর্বে বিড সলিনাস-সহ পূর্ববর্তী লেখকদের রচনার প্রতি আকৃষ্ট হন।[][২১] তিনি ইউসেবিয়াসের দুটি রচনা: হিস্টরিয়া এক্লিজিঅ্যাস্টিকাক্রোনিকন পাঠ করেন, যদিও তিনি মূল গ্রিক ভাষার বইটি পাননি এবং এর পরিবর্তে তিনি রুফিনাস কর্তৃক হিস্টরিয়ার লাতিন অনুবাদ এবং সেন্ট জেরোমের ক্রনিকন-এর অনুবাদ পড়েছিলেন।[২২] তিনি খ্রিস্টান ইতিহাস নিয়ে রচিত ওরোসিয়াসের অ্যাডভারসাস প্যাগানাস এবং গ্রেগরি অব ট্যুরসের হিস্টরিয়া ফ্রেঙ্কারাম পড়েছিলেন,[২২] এবং এদের পাশাপাশি একজন পৌত্তলিক ইতিহাসবিদ ইউট্রোপিয়াসের কাজও পড়েছিলেন।[২৩] তিনি জার্মানুসের ব্রিটেন সফরের উৎস হিসেবে জার্মানুসের ক্রেস্টান্টিয়াস্‌স লাইফ ব্যবহার করেছিলেন।[][২১] অ্যাংলো-স্যাক্সনসের আক্রমণ সম্পর্কে বিডের বিবরণটি মূলত গিল্ডাসের ডা এক্সিডিও এ কনকয়েস্তু ব্রিটানিয়া থেকে নেওয়া হয়েছিল।[২৪] বিড আরও সাম্প্রতিক রচনাবলির সাথে পরিচিত ছিলেন, যেমন এডিডিয়াস স্টিফানাসের লাইফ অব উইলফ্রিড এবং অজ্ঞাতনামা লেখকের গ্রেগরি দ্য গ্রেট ও কুথবার্টের জীবনী নিয়ে রচিত লাইভস[২১]

অন্যান্য ইতিহাস-আশ্রিত কর্ম

সম্পাদনা

ক্রনিকলস

সম্পাদনা

বিড তার ৭২৫ সালের অন দ্য রিকনিং অব টাইম বইয়ের ৬৬ অধ্যায়ে গ্রেটার ক্রনিকল (chronica maiora) রচনা করেন। এটি প্রায়ই ভিন্ন কাজ হিসেবে প্রকাশিত হয়। ক্রনিকলও তার এক্লিজিঅ্যাস্টিক্যাল হিস্ট্রির মত গিল্ডাসের লেখনী ও অন্যান্য উৎসের উপর নির্ভরশীল।[২৫]

তার অন্য ইতিহাস-আশ্রিত কর্ম হল ওয়্যারমাউথ ও জ্যারোর মঠাধ্যক্ষদের জীবনী, ও লিন্ডিসফার্নের সেন্ট কুথবার্টের জীবনী নিয়ে কবিতা ও পদ্য, নোলার পলিনাসের উপযোগকরণ লাইফ অব সেন্ট ফেলিক্স এবং গ্রিক অনুবাদ প্যাসন অব সেন্ট আনাস্তাসিয়ুস। তিনি মার্টিরোলজি নামে সন্তদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেন।[২৬]

  1. Bede's words are "Ex quo tempore accepti presbyteratus usque ad annum aetatis meae LVIIII ..."; which means "From the time I became a priest until the fifty-ninth year of my life I have made it my business ... to make brief extracts from the works of the venerable fathers on the holy Scriptures ..."[][] Other, less plausible, interpretations of this passage have been suggested—for example that it means Bede stopped writing about scripture in his fifty-ninth year.[]
  2. Cuthbert is probably the same person as the later abbot of Monkwearmouth-Jarrow, but this is not entirely certain.[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. রে ২০০১, পৃ. ৫৭–৫৯
  2. ব্রুকস ২০০৬, পৃ. ৫
  3. কলগ্রেভ ও মাইনর্স ১৯৬৯, পৃ. xix
  4. ক্যামবেল ২০০৪
  5. কলগ্রেভ ও মাইনর্স ১৯৬৯, পৃ. ৫৬৬–৫৬৭
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; World253 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. হুইটিং, "The Life of the Venerable Bede", in টমসন, "Bede: His Life, Times and Writing", পৃ. ৪.
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Reread9 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. বিড, Ecclesiastical History, সংখ্যা. ২৪, পৃ. ৩২৯।
  10. ফারমার ২০০৪, পৃ. ৪৭–৪৮
  11. কলগ্রেভ ও মাইনর্স ১৯৬৯, পৃ. xix–xx
  12. ব্লেয়ার ১৯৯০, পৃ. ৪
  13. হোল্ডার (অনূদিত), Bede: On the Tabernacle, (লিভারপুল: লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ১৯৯৪), পৃ. xvii–xx.
  14. ফারমার ১৯৭৮, পৃ. ২১
  15. "Albinus"। ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি। লন্ডন: স্মিথ, এল্ডার অ্যান্ড কোং ১৮৮৫–১৯০০।
  16. The full phrase may be (please verify) ante vero incarnationis dominicae tempus anno sexagesimo ("in fact in the sixtieth year before the time of the Lord's incarnation"), which is quoted from the first sentence of Book 1, Chapter 2.
  17. "Ecclesiastical History of the English People"Goodreads (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩০ 
  18. "British Library"www.bl.uk। ২০২২-০৮-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-৩০ 
  19. ক্র্যাম্প, "Monkwearmouth (or Wearmouth) and Jarrow", পৃ. ৩২৫–৩২৬।
  20. লাপিজ, মাইকেল, "Libraries", in Lapidge, Encyclopaedia of Anglo-Saxon England, পৃ. ২৮৬–২৮৭।
  21. ফারমার ১৯৭৮, পৃ. ২৫
  22. ক্যাম্পবেল, "Bede", in Dorey, Latin Historians, পৃ. ১৬২।
  23. ক্যাম্পবেল, "Bede", in Dorey, Latin Historians, পৃ. ১৬৩।
  24. লাপিজ, "Gildas", পৃ. ২০৪।
  25. ওয়ালিস (অনূদিত), The Reckoning of Time, পৃ. lxvii–lxxi, ১৫৭–২৩৭, ৩৫৩–৩৬৬।
  26. গোফার্ট ১৯৮৮, পৃ. ২৪৫–২৪৬

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা