বর্গি
বর্গি অষ্টাদশ শতাব্দীর লুটতরাজপ্রিয় অশ্বারোহী মারাঠা সৈন্যদলের নাম।[১] দলটি ১৭৪১ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ বছর বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী অংশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লুণ্ঠনে লিপ্ত ছিল। বর্গিহানা এই সময় একপ্রকার বাৎসরিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠা | অজানা |
---|---|
প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল | ভারতীয় উপমহাদেশ |
সক্রিয় | অজানা |
বিচরন | ভারতীয় উপমহাদেশ |
সদস্যপদ | অজানা |
মিত্র | নাগপুর রাজ্য মারাঠা সাম্রাজ্য |
প্রতিদ্বন্দ্বী | মুঘল সাম্রাজ্য বাংলা সুবাহ দুররানি সাম্রাজ্য কোম্পানি রাজ[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] |
ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনামারাঠি ধনগর জাতীয় লোকেরা অভিযানে যাওয়ার সময় কেবলমাত্র একটি সাত হাত লম্বা কম্বল ও বর্শা নিয়ে বের হত। এই বর্শাকে মারাঠি ভাষায় বলা হত বরচি। এই নাম থেকেই ধনগররা বারগির, বর্গা ধনগর বা 'বর্গি' নামে পরিচিত হয়।[২][৩]
'বর্গি' শব্দটি মারাঠি 'বারগির' শব্দের অপভ্রংশ। বারগির বলতে মারাঠা সাম্রাজ্যের সেই সব অশ্বারোহীদের বোঝাত। এরা ছিল ধনগর জাতীয় এবং এদের ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিতেন সম্রাট। উল্লেখ্য, এই সাম্রাজ্যের শিলাদার বাহিনীকে সম্রাট ঘোড়া বা অস্ত্র জোগাতেন না, তারা নিজের রসদে যুদ্ধ করত।[৪]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৭৪০ সালের এপ্রিল মাসে আলিবর্দি খাঁন সরফরাজ খানকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার নবাব হন। সরফরাজ খাঁর শ্যালক তথা উড়িষ্যার নায়েব নাজিম (উপশাসক) রুস্তম জং আলিবর্দি খাঁর কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। আলিবর্দি বালাসোরের নিকট ফলওয়াইয়ের যুদ্ধে রুস্তম জংকে পরাজিত করে, নিজের ভাইপোকে উড়িষ্যার উপশাসক নিয়োগ করেন। রুস্তম জং এরপর নাগপুরের মারাঠা শাসক প্রথম রঘোজি ভোঁসলের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মারাঠাদের সাহায্যে রুস্তম জং উড়িষ্যার অধিকার পুনরুদ্ধার করেন। এদিকে মারাঠারা বাংলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লুটতরাজ শুরু করে। আলিবর্দি পুনরায় উড়িষ্যায় এসে রুস্তমকে পরাজিত করেন। কিন্তু তিনি মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই ভোঁসলে মারাঠা সর্দার ভাস্কর পণ্ডিতকে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতা করে বাংলায় পাঠান। তারা পাঞ্চেত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন চালাতে থাকেন।[৪][৫]
পরবর্তী দশ বছর বর্গিরা নিয়মিত বাংলায় লুটতরাজ চালাতে শুরু করে। সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ বর্গিসন্ত্রাস এবং বর্গিদের অতর্কিত আক্রমণ পদ্ধতির সামনে নবাব বাহিনীর অসহায়তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন। আলিবর্দি খাঁ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রভূত বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, কিন্তু বর্গি আক্রমণ ঠেকাতে সমর্থ হননি। নবাবের বাহিনী মারাঠা অশ্বারোহীদের গতি ও দক্ষতার সামনে অসহায় ছিল। কেবলমাত্র গঙ্গা-হুগলি নদীই বর্গি হানা ঠেকাতে সক্ষম হয়। কয়েকটি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া বর্গিরা হুগলি নদী পার হতে পারেনি।[৪]
১৭৫১ সালের মে মাসে আলিবর্দি খাঁ মারাঠাদের সঙ্গে সন্ধি করেন। এই সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী তিনি উড়িষ্যার অধিকার ছেড়ে দেন। এরপর বাংলায় বর্গি হানা বন্ধ হয়।[৪]
প্রভাব
সম্পাদনাপশ্চিম বাংলার সমাজজীবনে বর্গি আক্রমণের প্রভাব ছিল অপরিসীম। আজও এই অঞ্চলের ছেলেভুলানো ছড়ায় বর্গি আক্রমণের উল্লেখ পাওয়া যায় –
“ | খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে ধান ফুরোলো পান ফুরোলো খাজনার উপায় কি? আর কটা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি।[৬] |
” |
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, ২০০০ সং, ২০০৯ মুদ্রণ, পৃ. ৫৬৯
- ↑ The The Castes and Tribes of H.E.H. the Nizam's Dominions, by Syed Siraj ul Hassan
- ↑ The Tribes and Castes of Bombay by Reginald Edward Enthoven
- ↑ ক খ গ ঘ Sengupta, Nitish, History of the Bengali-speaking People, 2001/2002, pp.132-137, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd., আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৩৫৫-৪
- ↑ Shah, Mohammad। "Maratha Raids"। Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। ২০০৮-০১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২১।
- ↑ Ahmed, Wakil। "Folk Literature"। Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২১।