অভয়ারণ্য (ইংরেজি: Animal sanctuary or Wild Life Sanctuary) হল একটি সুবিধা যেখানে প্রাণীদের বসবাসের জন্য আনা হয় এবং তাদের বাকি জীবনের জন্য সুরক্ষিত করা হয়।[] এটি এমন বনাঞ্চল, যেখানে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং তাদের প্রজনন ও আবাস নিরাপদ রাখতে শিকারিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

খামার অভয়ারণ্য, যেখানে উদ্ধারকৃত ছাগল, ভেড়া, গরু, শুকর, মুরগি এবং খামারের প্রাণীকে রাখা হয়

শব্দগত ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

বাংলা 'অভয়' এবং 'অরণ্য' শব্দদ্বয়ের সন্ধিতে 'অভয়ারণ্য' শব্দটি গঠিত হয়েছে। বাংলায় 'অভয়' শব্দের অর্থ 'ভয়হীন' বা 'নির্ভয়'; আর 'অরণ্য' অর্থ 'বন' বা 'জঙ্গল'। অর্থাৎ যে জঙ্গলে প্রাণীদের নির্ভয় বিচরণ নিশ্চিত করা হয় তাকে অভয়ারণ্য বলা হয়।

সাধারণত বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ পরিবেশ, তাদের স্বাভাবিক কিংবা বর্ধিত প্রজনন পরিবেশ, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক সংখ্যা এবং বৃক্ষরাজি কিংবা ঔষধি বৃক্ষরাজির নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকার কিংবা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ভারতে এই ঘোষণা রাজ্য সরকার করে থাকেন।[]

অভয়ারণ্য ঘোষণা করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়:
১) ঐ এলাকার বন্যপ্রাণী যেন ধ্বংস না হয়।
২) পশুপাখিদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কাজ থেকে যেন এই বনাঞ্চল মুক্ত থাকে। পাশাপাশি, বাইরে থেকে শিকারিরা যাতে এই নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ না করতে পারে।[]

ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য

সম্পাদনা

রাজ্য-আসাম

নাম-কাজিরাঙ্গা, মানস অভয়ারণ্য

বন্যপ্রাণী - গণ্ডার, বাঘ, হাতী, বুনো মোষ, বুনো মুরগী, ধনেশ পাখি ইত্যাদি।

রাজ্য-পশ্চিমবঙ্গ

নাম-গরুমারা, জলদাপাড়া

বন্যপ্রাণী - গণ্ডার, বাঘ, হাতী, চিতাবাঘ, ভালুক, হরিণ, বুনো শূকর, ময়ূর, বুনো মুরগী ইত্যাদি।

রাজ্য - উত্তরপ্রদেশ

নাম - চন্দ্রপ্রভা অভয়ারণ্য

বন্যপ্রাণী - বাঘ, চিতাবাঘ, হায়না, হরিণ, বানর, ময়ূর ইত্যাদি।

রাজ্য - গুজরাট

নাম - গির অরণ্য

বন্যপ্রাণী - সিংহ, নীল গাই, হাতী, বুনো শূকর, হরিণ, ময়ূর ইত্যাদি।

রাজ্য - কর্ণাটক

নাম - বন্দীপুর অভয়ারণ্য

বন্যপ্রাণী - ভারতীয় বাইসন, হাতী, বিভিন্ন রকম পাখি ইত্যাদি।

রাজ্য - তামিলনাড়ু

নাম - মধুমালাই

বন্যপ্রাণী - হাতী, ভারতীয় বাইসন, বুনো মুরগী ইত্যাদি।

রাজ্য - কেরালা

নাম - পেরিয়ার

বন্যপ্রাণী - হাতী, বাঘ, বাইসন, বুনো শূকর, বুনো কুকুর, বিভিন্ন রকম পাখি ইত্যাদি।

রাজ্য - জম্মু ও কাশ্মীর

নাম - দাচিগাম

বন্যপ্রাণী - কস্তুরী মৃগ, লাল হরিণ, ভালুক ও বিভিন্ন ধরনের পাখি ইত্যাদি।

রাজ্য - উড়িষ্যা

নাম - শিমলিপাল অভয়ারণ্য

বন্যপ্রাণী - বাঘ, ভালুক, বিভিন্ন রকম পাখি ইত্যাদি।

রাজ্য - বিহার

নাম - পালামৌ অভয়ারণ্য

বন্যপ্রাণী - বাঘ, নানাজাতের পাখি ইত্যাদি।[]

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Tom Regan (২০০৬)। Jaulas Vacías. El Desafío de los Derechos de los Animales (স্পেনীয় ভাষায়)। Barcelona: Fundación Altarriba। পৃষ্ঠা 111। আইএসবিএন 978-84-611-0672-1 
  2. শেখ রোকন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "চিড়িয়াখানা গড়ার পিছনে স্বপ্ন থাকতে হয়"দৈনিক সমকাল। ঢাকা। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (php ওয়েবসাইট) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী,শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা,১৯৮৬, পৃঃ ১৬৫