বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু (বা যমুনা রেল সেতু) হচ্ছে বাংলাদেশের একটি রেলওয়ে সেতু যা সিরাজগঞ্জ জেলার সাথে টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলাকে যুক্ত করেছে। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে অবস্থিত এই পৃৃৃৃথক রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম রেলওয়ে সেতু।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৪°২৪′০৯″ উত্তর ৮৯°৪৬′০৫″ পূর্ব / ২৪.৪০২৬° উত্তর ৮৯.৭৬৮১° পূর্ব |
বহন করে | ট্রেন |
অতিক্রম করে | যমুনা নদী |
স্থান | সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা |
অন্য নাম | যমুনা রেল সেতু |
যার নামে নামকরণ | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
মালিক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
রক্ষণাবেক্ষক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
বৈশিষ্ট্য | |
উপাদান | ইস্পাত |
ভারবাহী স্তম্ভ নির্মাণ | কংক্রিট |
মোট দৈর্ঘ্য | ৪.৮ কিলোমিটার |
ইতিহাস | |
নির্মাণকারী |
|
নির্মাণ ব্যয় | ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি বাংলাদেশী টাকা |
পরিসংখ্যান | |
দৈনিক চলাচল | ৮৮ |
অবস্থান | |
২০২০ সালের অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দিনে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে।[১] সেতুটিতে পূর্ণ গতিতে ট্রেন চলতে না পারায় এবং সিঙ্গেল-ট্র্যাক রেলপথ হওয়ায় সেতু পার হতে অধিক সময় খরচ হয়, ফলে ট্রেনগুলো শিডিউল বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়ে।[১][২] ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলা একটি ট্রেন সেতুটির পূর্ব পাশের স্টেশন থেকে পশ্চিম পাশের স্টেশনে পৌঁছতে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নেয়।[৩] এছাড়াও সেতুটিতে ওজন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে ভারী পণ্যবাহী ট্রেন চলতে পারে না।[২] বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর গন্তব্যে পৌঁছার সময় গড়ে ২ ঘণ্টা কমে যাবে।[৪] পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে রেলপথে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।[২] এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রুটে সহজে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনেও এ সেতুটি কাজে লাগবে।[২] এ ছাড়াও সেতুটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ।[৫] সেতুটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর রেলপথ তুলে ফেলা হবে।[১]
প্রকল্প ও অর্থায়ন
সম্পাদনাপ্রথমে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বরে সেতুটির নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।[২] এ জন্য ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার, যার মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা দেবে।[২] ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা।[২]
তবে পরবর্তী সংশোধিত প্রকল্পে সময়সীমা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।[১] একইসঙ্গে প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।[১] নির্মাণ ব্যয়ের ৭২% ঋণ সহায়তা দেবে জাইকা।[১] বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।[২]
প্রকল্পটি পৃথক দুটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হবে।[১][৬] এর মধ্যে একটি ডব্লিউডি-১ পাকেজে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পূর্বাঞ্চলের সিভিল ওয়ার্ক এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-২ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ পশ্চিমাঞ্চলের সিভিল ওয়ার্ক।[৬] সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন এবং জেএফই।[১] এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।[১] আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ।[১] এই অংশে ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।[১] ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়।[৫] ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।[৭]
অবকাঠামো
সম্পাদনাএ সেতুটি ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ।[১][৫] উভয় প্রান্তে মোট প্রায় ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, প্রায় ৭.৬৬৭ কিলোমিটার এপ্রোচ এমব্যাংমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।[৫] সেতুটি সম্পূর্ণ ইস্পাত দিয়ে নির্মাণ করা হবে।[২] প্রায় ৫০টি পিলারের ওপর কংক্রিটের ওপর রেলপথ বসানো হবে।[৪] এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সেতুতে স্টিল পাইপ শিট পাইল (এসপিএসপি) ফাউন্ডেশন, সেতুতে স্লিপার থাকবে না, ওয়েদারিং স্টিল (যা মরিচ ও ক্ষয় প্রতিরোধী) এবং ড্রিলমে প্রিভেনশন গার্ড (দুর্ঘটনা প্রতিরোধী) এরকম নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।[৪] এতে ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাক রেলপথ থাকবে।[১] সেতুটিতে ব্রড-গেজ ট্রেন ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা এবং মিটার-গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলাচল করবে।[৮] এছাড়াও সেতুটিতে দৈনিক মোট ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে।[৮]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
সেতুর পূর্বাংশ
-
সেতুর পশ্চিমাংশ
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড "যমুনায় দ্বিতীয় রেল সেতুর কাজ শুরু নভেম্বরে, ব্যয় বাড়লো দ্বিগুণ"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-১০-১৯। ২০২০-১১-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেলসেতু হবে"। প্রথম আলো। ২০১৬-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ "যমুনায় রেলসেতু: কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে ৩,২১৬ কোটি টাকা"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০২০-০১-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ ক খ গ "১৪ মার্চ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী"। দৈনিক ইনকিলাব। ২০২০-০২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ ক খ গ ঘ "বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ভিত্তিস্থাপন ২৯ নভেম্বর"। বিডিনিউজ২৪.কম। ২০২০-১১-১২। ২০২০-১১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ ক খ "যমুনায় হচ্ছে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু'"। রাইজিংবিডি.কম। ২০২০-০১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।
- ↑ ৩৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন ২০২৪ সালে চলবে রেল, ইনকিলাব, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- ↑ ক খ "২৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন"। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২০২০-১১-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৩।