ফুয়াদ মাসুম
মুহাম্মদ ফুয়াদ মাসুম (আরবি: محمد فؤاد معصوم هورامي, রোমান: Muhammad Fū'ād Ma'ṣūm; কুর্দি: محەممەد فوئاد مەعسوم, জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৩৮) একজন ইরাকি কুর্দি রাজনীতিবিদ যিনি ইরাকের সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২৪ জুলাই ২০১৪ তারিখ থেকে ০২ অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন[১]। মাসুম হলেন ইরাকের দ্বিতীয় অ-আরব রাষ্ট্রপতি। জালাল তালাবানীর যোগ্য উত্তরসূরি মাসুম একজন কুর্দি ছিলেন এবং তালাবানীর আস্থাভাজনও ছিলেন।
ফুয়াদ মাসুম | |
---|---|
৭ম ইরাকের প্রেসিডেন্ট | |
কাজের মেয়াদ ২৪ জুলাই ২০১৪ – ২ অক্টোবর ২০১৮ | |
প্রধানমন্ত্রী | নুরি আল মালিকি হায়দার আল-আবাদি |
উপরাষ্ট্রপতি | খোদাইর আল-খোজাই নুরি আল মালিকি, ওসামা আল-নুজাইফি আইয়াদ আলাভী |
পূর্বসূরী | জালাল তালাবানী |
উত্তরসূরী | বারহাম সালিহ |
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ভারপ্রাপ্ত | |
কাজের মেয়াদ ১৪ জুন ২০১০ – ১১ নভেম্বর ২০১০ | |
রাষ্ট্রপতি | জালাল তালাবানী |
পূর্বসূরী | আয়াদ আল-সামাররাই |
উত্তরসূরী | ওসামা আল-নুজাইফি |
১ম কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৪ জুলাই ১৯৯২ – ২৬ এপ্রিল ১৯৯৪ | |
রাষ্ট্রপতি | সাদ্দাম হোসেন |
পূর্বসূরী | প্রযোজ্য নয় |
উত্তরসূরী | কসরত রসুল আলী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | মুহাম্মদ ফুয়াদ মাসুম محەممەد فوئاد مەعسووم ১ জানুয়ারি ১৯৩৮ কয়া, ইরাক রাজ্য |
রাজনৈতিক দল | প্যাট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান (১৯৭৪–বর্তমান) |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | ইরাকি কমিউনিস্ট পার্ (১৯৬২–১৯৬৪) কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (১৯৬৪–১৯৭৪) |
দাম্পত্য সঙ্গী | রওনক আব্দুল ওয়াহিদ মোস্তফা (১৯৬৭–বর্তমান) |
সন্তান | শেরীন জুয়ান শোয়ান জোজান শিলান ভিয়ান |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় |
Religion | সুন্নি ইসলাম |
স্বাক্ষর |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাকয়া শহরে জন্ম নেয় ফুয়াদ মাসুম ছিলেন কুর্দিস্তানের মুসলিম পণ্ডিতদের সংগঠনের প্রাক্তন প্রধান শেখ মোহাম্মদ মোল্লা ফুয়াদ মাসুমের ছেলে। তার পরিবার হাওরামনের অংশ খাবানেন গ্রামে বসবাস করতেন[২]। তিনি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ইরাকি কুর্দিস্তানের বিভিন্ন ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পরিণত বয়সে তিনি বাগদাদ ইউনিভার্সিটিতে আইন ও শরিয়া নিয়ে পড়াশোনা করেন[৩]। ১৯৫৮ সালে, মাসুম আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে কায়রো যান। তিনি ১৯৬৮ সালে বসরাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৭৫ সালে আল-আজহার থেকে ইসলামিক দর্শনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন[৪]।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাকমিউনিস্ট পার্টি
সম্পাদনামাসুম ১৯৬২ সালে ইরাকি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন, ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এই পার্টির সাথে সম্পৃক্ত থাকেন, যেখানে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি খালিদ বাকদাশের সাথে দেখা করতে সিরিয়া যান। কুর্দিদের বিরুদ্ধে বাকদাশের মনোভাব আবিষ্কার করার পর, মাসুম কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন[৫][৬] ।
কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি
সম্পাদনা১৯৬৮ সালে, মাসুম বসরায় কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কায়রোতে কুর্দি বিপ্লবের একজন প্রতিনিধিও ছিলেন।
প্যাট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান
সম্পাদনা১৯৭৬ সালে প্যাট্রিওটিক ইউনিয়ন অফ কুর্দিস্তান নামে নতুন একটি দলের জন্ম হয়, মাসুম এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৯২ সালে, তিনি কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে, যুক্তরাস্ট্র কর্তৃক ইরাক আক্রমণের পর, মাসুম কুর্দিস্তানের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য হতে বাগদাদে ফিরে আসেন এবং সংবিধানের খসড়া কমিটিরও সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে, মাসুম প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে
সম্পাদনা২০১৪ সালে, তিনি ইরাকের সপ্তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে সংসদের প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হন[৭]। মাসুম ২১১ ভোট পেয়েছিরেন যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বারহাম সালিহ, যিনি অক্টোবর ২০০৯ থেকে এপ্রিল ২০১২ পর্যন্ত কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মাত্র ১৭ ভোট পান[৮]। রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে ঐতিহ্যগতভাবে রাষ্ট্রপতি পদে নিয়ন্ত্রণকারী কুর্দি এমপিদের গোপন ভোটের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন তখন ইরাকে উপস্থিত ছিলেন যখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির সাথে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বৈঠক করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। ২৬ আগস্ট মাসুম হায়দার আল-আবাদী নামে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন[৯] রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি যে "বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার" মুখোমুখি হয়েছেন তা উল্লেখ করে মাসুম এই অবস্থান গ্রহণ করেন।[১০]।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনামাসুম রৌনক আব্দুল ওয়াহিদ মুস্তাফার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের পাঁচটি কন্যা রয়েছে: শেরীন (জন্ম ১৯৬৯), জুওয়ান (জন্ম ১৯৭২), জোজান (জন্ম ১৯৭৭), শিলান (জন্ম ১৯৭৯) এবং ভিয়ান (জন্ম ১৯৮২)। তার একমাত্র ছেলে শোয়ান (১৯৭৩-১৯৮৮), শৈশবকালীন অসুস্থতায় মারা গিয়েছিল[১১]।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Moderate Kurd leader elected as Iraq president"। Iraq Sun। ১০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Who is Fuad Masum, the President of Iraq?"। ALSUMARIA। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Who is Fuad Masum, the new Iraqi President?"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Talabani's old time friend becomes candidate for Iraqi President | BAS NEWS"। Bas News। ২৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Who is the new Iraqi president, Fuad Masum Hawrami?"। Al Hayat। ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Heath-Brown, Nick (২০১৭-০২-০৭)। The Statesman's Yearbook 2016: The Politics, Cultures and Economies of the World (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। আইএসবিএন 9781349578238।
- ↑ "Iraq selects senior Kurdish politician Fuad Masum president"। World Bulletin। ২৪ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Iraq parliament elects Fuad Masum president: speaker"। InterAksyon। Agence France-Presse। ২৪ জুলাই ২০১৪। ২৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Iraq gets new president in Fuad Masum, UN chief Ban Ki-moon seeks more urgency"। The Times of India। Agence France-Presse। ২৫ জুলাই ২০১৪। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Iraq elects Fuad Masum as president"। The Hindu। Associated Press। ২৫ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Who is Dr. Fuad Masum? | Iraqi Dinar News Today"। Iraqi Dinar News Today। ২৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৪।