ফার্মগেট
ফার্মগেট ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক এলাকা। এটি ঢাকা শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং সর্বাধিক জনবহুল একটি এলাকা।
ফার্মগেট | |
---|---|
ঢাকা শহরের বাণিজ্যিক এলাকা | |
দেশ | বাংলাদেশ |
শহুর | ঢাকা |
বিভাগ | ঢাকা |
ওয়াড নং | ২৭নং ওয়ার্ড, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ১২১৫ |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, এই এলাকায় বিশাল ভবন নির্মাণ হতে থাকে। ফলস্বরূপ, এলাকাটি বাণিজ্যিক গুরুত্ব অর্জন করেছে এবং ঢাকা শহরের প্রধান পরিবহন কেন্দ্রস্থলের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। এখানে ঢাকা মেট্রো রেল লাইনের ৬-এর একটি স্টেশন আছে। বর্তমানকালে ফার্মগেট আবাসিক এলাকার তুলনায় একটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
অবস্থান
সম্পাদনাফার্মগেটে আশেপাশের স্থানগুলি হচ্ছে কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা সিটি, রাজাবাজার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, মণিপুরিপাড়া, ইন্দিরা রোড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মোস্তফা রোড, স্কয়ার হাসপাতাল, জাহানারা গার্ডেন, ম্যাবস গলি, তেজতুরি বাজার, তেজকুনি পাড়া, নাখাল পাড়া, গার্ডেন রোড, চন্দ্রিমা উদ্যান, শেরে বাংলা নগর এলাকা ইত্যাদি।
নামকরণ
সম্পাদনাকৃষি উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য ব্রিটিশ সরকার এখানে একটি ফার্ম বা খামার তৈরি করেছিল। সেই ফার্মের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম ফার্মগেট হয়।[১] খামারের ফটক ময়মনসিংহ সড়ক (এখন পুরাতন বিমানবন্দর সড়ক নামে পরিচিত) এ অবস্থিত ছিল। ঢাকার বর্তমান গ্রীন রোড থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত বিরাট এলাকা জুড়ে তখন তৎকালীন কৃষি বিভাগের অধীনে একটি ফার্ম ছিলো। তার নাম ছিল 'মণিপুর ফার্ম'। ফার্মের প্রধান প্রবেশ পথ থেকেই 'ফার্মগেট' নামের উৎপত্তি। মণিপুর ফার্মে তখন বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য এবং দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন হতো। ফার্মের অধীনে ছিল হাজার খানেক উন্নত জাতের গোরু। গো-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং কৃষি কাজের জন্য ছিল বহু মনিপুরী ও সাঁওতাল শ্রমিক। তাদের একাংশ বিভিন্ন স্থানে কুলীর কাজও করতো। ফার্মগেটের আশেপাশের এলাকা এবং বর্তমান গ্রীন রোডের দু'পাশে ছিল তাদের বসতি। মণিপুরি নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকেরা সেখানে বসবাস করতো, সেই স্থানটি পরবর্তীতে 'মণিপুরী পাড়া' নামে পরিচিতি লাভ করে। আর বর্তমান গ্রীন রোডের নাম ছিল তখন 'কুলী রোড'। মেঠো রাস্তার দু'পাশে ছিল বাঁশবন ঘেরা জঙ্গল। সেই আমলে সমগ্র ভারতে 'মণিপুর ফার্ম' ছিল সবচেয়ে বড় এবং একটি স্বনামধন্য কৃষি প্রতিষ্ঠান।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- হলি রোজারি চার্চ: ১৬৭৭ সালে নির্মিত এই চার্চটি ঢাকার অন্যতম খ্রিস্টান চার্চ। পর্তুগীজ ও রোমান স্থাপত্য শিল্পের অদ্ভুত মিশেলে তৈরি করা হয়েছিল চার্চটি। ঢাকায় পর্তুগীজদের এইটাই শেষ স্মৃতি। ফার্মগেট থেকে তেজগাঁওমুখী রাস্তা ধরে সামান্য এগোলেই হলিক্রস স্কুলের ঠিক পাশেই এবং বটমলী হোমস গার্লস হাই স্কুলের বিপরীতে এই হলি রোজারি চার্চ অবস্থিত। এর আরেক নাম 'পবিত্র জপমালা রাণীর গির্জা' যা জনসাধারণের কাছে 'তেজগাঁও গির্জা' হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায় পর্তুগীজ আমলে এই গির্জা তখন পর্তুগীজদের দুর্গ ছিল, পরে এখানে গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি আছে যে, এককালে এই গির্জার ঠিক পেছনেই বুড়িগঙ্গা নদী প্রবাহিত হতো।
- বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স: এটি ফার্মগেট সংলগ্ন মণিপুরীপাড়ায় অবস্থিত একটি বৃহত্তর ইসলামী প্রতিষ্ঠান। যেখানে একই ছাদের নিচে একই সাথে মসজিদ, উন্নতমানের মাদ্রাসা, এতিমখানা, লাইব্রেরি ও ইসলামিক সামগ্রীর দোকান রয়েছে। পবিত্র শবে বরাত, শবে কদর ও ঈদে মিলাদুন্নবী সহ বিভিন্ন ইসলামিক পর্ব উপলক্ষ্যে বড় পরিসরে বিভিন্ন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এখানে 'মাসিক দ্বীন দুনিয়া' নামের একটি ইসলামী বিষয়ক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। বহুতল বিশিষ্ট এই ইসলামী ভবনের ঠিক নিচেই 'মল্লিকা রেস্টুরেন্ট' নামের একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে বাংলা, চাইনিজ ও ফাস্টফুড সহ বিভিন্ন খাবার আইটেম পাওয়া যায়।
- বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর: বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ইতিহাস সাফল্য ও সক্ষমতা তুলে ধরতে ১৯৮৭ সালে ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসের প্রবেশমুখে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি সামরিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থান সংকুলান ও দর্শকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে জাদুঘরটি ফার্মগেটের সন্নিকটে বিজয় সরণি মোড়ের নিকট স্থানান্তর করা হয়। ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণি অভিমুখে এগিয়ে বাম দিকে একটুখানি হাঁটলেই হাতের বাম পাশে সামরিক জাদুঘর এর অবস্থান।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার: রাজধানী ঢাকা শহরের বিজয় সরনিতে অবস্থিত একটি স্থাপনা। এখানে নভোমন্ডল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এবং নভোমন্ডলের ধারণা পাওয়ার জন্য কৃত্রিম নভোমন্ডল তৈরি করা আছে। ৫.৪ একর জায়গায় স্থাপিত নভোথিয়েটারটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় চলছে। ১৯৯৫ সালে গৃহীত সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার এটি স্থাপনের ব্যবস্থা নেন। এর নকশা করেন তৎকালীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপপ্রধান আলী ইমাম। নকশাটি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে অনুমোদিত হয় এবং ২০০০ সালের ১৭ জুলাই এর নির্মাণকাজ আরম্ভ হয়। শুরুতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পাশে এটি স্থাপিত হবার কথা ছিল। এর যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ ভেতরের সব গুরুত্বপূর্ণ কারিগরী কাজ জাপানের অপটিকস্ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি করেছে। স্থাপনা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশী মাসুদ এন্ড কোম্পানি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক আলমগীর হাবিবের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি নির্মাণকাজ তদারকীতে অংশ নেয়। ২০০০ সালের ১৭ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করার পর তা বন্ধ হয় এবং পরে ২০০২ সালের মাঝামাঝি পুনরায় চালু হয়ে ২০০৩ সালের মে মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তা উদ্বোধন করেন। এটির নির্মাণব্যয় ১২০ কোটি টাকা।
- আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হল: ফার্মগেট এলাকায় উল্লেখযোগ্য আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এখানকার একই ছাদের নিচে দুটি সিনেমা হল। 'আনন্দ' এবং 'ছন্দ' নামের এই সিনেমা হল দুটিতে সারা বছরই নানান ধরনের ঢাকাই বাংলা সিনেমা প্রদর্শিত হয়, যার অধিকাংশ দর্শক হচ্ছে নিম্নবিত্তের ব্যক্তিগণ। তবু এই সিনেমা হলদুটি ফার্মগেটের একটি অতি পরিচিত স্থান হিসেবে বিশেষভাবে সমাদৃত। এর ঠিক পেছনেই গ্রামীণফোন সেন্টার, যেখানে এর গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় মোবাইলভিত্তিক সেবা দেয়া হয়।
শিক্ষা
সম্পাদনাফার্মগেটে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সর্বাধিক পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে:
স্কুল
সম্পাদনা- গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুল
- তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
- বটমলি হোম গার্লস হাই স্কুল
কলেজ
সম্পাদনা- সরকারি বিজ্ঞান কলেজ
- হলি ক্রস কলেজ
- তেজগাঁও কলেজ
- আইডিয়াল কমার্স কলেজ
গ্রাম এবং মফস্বল এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা সুবিধার তাগিদে এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে অবস্থিত হোস্টেলে অবস্থান করেন। এছাড়া এই এলাকা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল এর জন্য জনসাধারণের কাছে সুপরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার: উদ্ভাস-উন্মেষ, উন্মেষ, ফোকাস, ইউ.সি.সি, আইকন প্লাস, লুমিনাস, ম্যাবস কোচিং সেন্টারের প্রধান শাখা রয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "যেভাবে হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নামকরণ"। BD Times365। ২৯ মে ২০১৭। ২১ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৮।