পূর্ব পাকিস্তান বিমান অভিযান ১৯৭১
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বিমান প্রতিরক্ষা, স্থল সমর্থন, সরবরাহসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্যে মিলিতভাবে পূর্ব পাকিস্তান বিমান অভিযান (অপারেশন ক্যাকটাস লিলি নামেও পরিচিত) পরিচালনা করে। আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বেই বিবাদমান বৈমানিক শক্তিধর পক্ষসমূহ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় বিমানবাহিনী মুক্তিবাহিনীকে একটি লাইট বিমান (কিলো ফ্লাইট নামে পরিচিত) সংগঠনে সাহায্য করেছিল, যা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিদ্রোহী বাঙালি বৈমানিক ও প্রকৌশলীদের দ্বারা লোকসজ্জ্বিত এবং পরিচালিত হত। ৩রা ডিসেম্বরে ভারত ও পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিমানবাহিনীর এই বিভাগটি বাংলাদেশে প্রতিরোধের জন্য আক্রমণ পরিচালনা করতো।
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই কেবল ১৪ দিন স্থায়ী হয়। এ সময়ের মধ্যে মিত্র বাহিনীর নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ সাধন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর চমৎকার সমন্ব্য় সাধিত হওয়ার কারণে যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি সম্ভব হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বিমানবাহিনীর মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে লংইয়ালার যুদ্ধ, অপারেশন ট্রাইডেন্ট এবং বিমান ঘাঁটিসমূহে আক্রমণ পরিচালিত হয় যা বিংশ শতকের যুদ্ধনীতিকে সংজ্ঞায়িত করতে সাহায্য করেছিল। অপরদিকে, পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর দ্বারা অধিকৃত হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছিল। এর দুটো কারণ ছিল। প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল বাঙালি জনগণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতিরোধে অনেকাংশে সক্ষম হয়েছিল যা পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে ফেলে। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় বিমানবাহিনী যুদ্ধের প্রথম থেকেই আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের রণাঙ্গনঃ ঐতিহাসিক পটভূমি
সম্পাদনাপাকিস্তান ও ভারত ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সময় উভয় দেশ সক্রিয় বিমানবাহিনীর অধিকারী থাকলেও, তখন পূর্ব পাকিস্তান বিমানযোগে কোনো আক্রমণ সংঘটন করেনি। সেই সময় পাকিস্তানি সকল বিমান শক্তিমত্তা পশ্চিম পাকিস্তানে মোতায়েন করা ছিল এবং ভারতও পশ্চিম রণক্ষেত্রে কর্তৃত্ব বিস্তারে নিবিষ্ট ছিল। যুদ্ধের সমাপ্তির পর ভারত পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তেও বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে শুরু করে। ১৯৫৮ সালে কলকাতায় ইস্টার্ন অপারেশনাল গ্রুপ গঠত হয় যা পরবর্তী বছর একটি কমান্ডে উন্নীত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধে ইস্টার্ন এয়ার কমান্ড সদর দপ্তর শিলংয়ে স্থানান্তরিত হয়। চীনা আক্রমণের সম্ভাব্য হুমকি প্রতিহ্ত করতে বিমানবাহিনীর কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্কোয়াড্রন ও যুদ্ধবিমানের আধুনিকায়ন এবং কর্মক্ষম অবকাঠামো গঠনের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর বিপরীতে, পাকিস্তান হাই কমান্ড পূর্ব পাকিস্তানে মাত্র ১২ টি এফ-৮৬ কানাডাইর সাবের এর স্কোয়াড্রন নিযুক্ত করে। প্রদেশটিতে যখন বিমানবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা বারবার উপেক্ষার শিকার হয়ে আসছিল, তখন ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে ঢাকায় সাবেরগুলো নিযুক্ত করা হয়।[৩] কিন্তু ১৯৬৫ সালের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডের অধীনে ৬টি যুদ্ধোপযোগী স্কোয়াড্রন ছিল।[৪]
১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তানঃ পূর্ব পাকিস্তানের রণাঙ্গন
সম্পাদনা১৯৬৫ সালে লড়াই শুরু হলে দুই দেশের বিমান বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের রণাঙ্গনে পরস্পরকে লক্ষ্য করে আক্রমণ পরিচালনা করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের (চট্টগ্রাম, ঢাকা, লালমনিরহাট ও যশোর) বিমান ঘাঁটি ও বিমানবন্দরে বোমা বর্ষণ করলে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী পশ্চিমবঙ্গে খড়গপুরের কাছে কালাইকুন্দার ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে দুইটি সফল আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়।[৫] ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বিমানবাহিনী চারটি বিমানের অনুসরণে পাঁচটি বিমানের সহযোগে আক্রমণ চালিয়ে ঘটনাস্থলে কিছু ক্যানবেরা বোম্বার এবং ভ্যাম্পায়ার বিমান ধ্বংস করে।[৬] বিধ্বস্ত বিমানের সংখ্যা ২টি বলে ভারতীয় বিমানবাহিনী দাবি করে। পাকিস্তানি সূত্র অনুযায়ী ১টি এফ-৮৬ বিমান নিখোঁজ হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুন ২০১১ তারিখে IAF 1971 Losses
- ↑ ক খ [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ মে ২০০৯ তারিখে IAF claim of PAF Losses
- ↑ * [৩]
- ↑ * [৪][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Gp Capt NA Moitra VM
- ↑ * [৫] আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে