পি. সুশীলা

ভারতীয় গায়িকা

পুলাপাকা সুশীলা (পি. সুশীলা নামে অধিক পরিচিত; জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৩৫)[] হলেন একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। তিনি দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশের চলচ্চিত্রের সাথে ছয় দশকের অধিক সময় ধরে সম্পৃক্ত। গায়িকা হিসেবে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় সর্বোচ্চ গান গাওয়ার জন্য গিনেজ বুক ও এশিয়া বুক অব রেকর্ডসে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।[] তিনি পাঁচবার শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একাধিক রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।[] সুশীলা দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারীবাদের প্রবর্তনের জন্য খ্যাত এবং বিভিন্ন দক্ষিণ ভারতীয় ভাষায়, তথা তেলুগু, তামিল, কন্নড়, মালয়ালম, হিন্দি, বাংলা, ওড়িয়া, সংস্কৃত, তুলু ও বাড়াগা ভাষায় ৫০,০০০-এর অধিক[] চলচ্চিত্রের গানে তার সুমধুর[][] গান পরিবেশনার জন্য প্রসিদ্ধ।[] এছাড়া তিনি সিংহলি ভাষায়ও গান গেয়েছেন। তার মাতৃভাষা তেলুগু, তিনি তামিল ভাষায়ও অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং হিন্দি ও কন্নড় ভাষায় অল্প কথা বলতে পারেন।

পি. সুশীলা
জন্ম (1935-11-13) ১৩ নভেম্বর ১৯৩৫ (বয়স ৮৯)
পেশানেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীমোহন রাও (বি. ১৯৫৭; মৃ. ২০১২)
সন্তান
সঙ্গীত কর্মজীবন
উপনামগান সরস্বতী, গন্ধর্ব গায়কী, কন্নড় কোগিল
ধরননেপথ্য সঙ্গীত, কর্ণাটকী সঙ্গীত

সুশীলা শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে প্রথমবার ১৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী,[] তিনি তামিল ভাষার ঊর্নধ্ব মণিথন (১৯৬৮) চলচ্চিত্রের "পাল পোলাভ"[] গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি ১৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এই পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি এই গানের জন্য শ্রেষ্ঠ নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী বিভাগে তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন। পরবর্তী কালে তিনি আরও চারবার ১৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আরও দুইবার তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং সাতবার নন্দী পুরস্কার অর্জন করেন। শিল্পকলার সঙ্গীত শাখায় অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে ২০০৮ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

সুশীলা ১৯৩৫ সালের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের বিজয়নগরমে (বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পুলাপাকা মুকুন্দ রাও ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিজয়নগরম জেলার একজন শীর্ষস্থানীয় অ্যাডভোকেট। সুশীলা ১৯৫৭ সালে ডাক্তার মোহন রাওয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র জয়কৃষ্ণ ও পুত্রবধূ সন্ধ্যা জয়কৃষ্ণ এবং দুই নাতনী জয়শ্রী ও শুভশ্রী। তার পুত্রবধূর সন্ধ্যা একজন গায়িকা, তার চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে এ আর রহমানের সুরে ইরুবার চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

অভিষেক (১৯৫০-১৯৫৪)

সম্পাদনা

১৯৫০ সালে সঙ্গীত পরিচালক পেন্ডিয়ালা নাগেশ্বর রাও তার নতুন চলচ্চিত্রের সঙ্গীতায়োজনে কিছু নতুন কণ্ঠের সন্ধান করছিলেন। তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওকে জানিয়েছিলেন, কিছু সেরা সঙ্গীতশিল্পীর তালিকা প্রদান করে তাঁকে সহায়তা করার জন্য। অল ইন্ডিয়া রেডিও যে পাঁচজন সঙ্গীতশিল্পীর তালিকা পাঠান তাদের মধ্য থেকে সুশীলাকে অডিশন পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয়। তৎক্ষণাৎ তাঁকে তামিল চলচ্চিত্র পেট্রা থাই (১৯৫২) চলচ্চিত্রে এ এম রাজার সাথে দ্বৈত গান "এধুকু আজাইথাই"-এ কণ্ঠ দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়।[১০] এই চলচ্চিত্রটি পরে তেলুগু ভাষায় কান্না তাল্লি নামে নির্মিত হয়, এতে তিনি ঘণ্টাসালের সাথে এই গানটির তেলুগু সংস্করণে কণ্ঠ দেন। এর ফলে তিনি এভিএম স্টুডিওজের সাথে নির্দিষ্ট মাসিক বেতনের ভিত্তিতে দীর্ঘকালীন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। স্টুডিওর মালিক এ. ভি. মেইয়াপ্পান তার তামিল উচ্চারণ ঠিক করতে তার জন্য একজন তামিল প্রশিক্ষক ভাড়া করেন। মাদিদুন্নো মারায়া (১৯৫৪) চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ প্রদানের মধ্য দিয়ে কন্নড় ভাষার চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে।[১১]

সাফল্য (১৯৫৫-৬০)

সম্পাদনা

১৯৫৫ সালে সুশীলা তামিল ও তেলুগু চলচ্চিত্রে পরপর কয়েকটি জনপ্রিয় গান গেয়ে সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তেলুগু ভাষার মিসাম্মা চলচ্চিত্রের কর্ণাটকীয় সুরে তার গাওয়া গানগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি কঠিনতম নোটগুলি সহজে গেয়ে শ্রোতাদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন। একই বছর তামিল ভাষার কানাভানে কান কান্ডা দেইবম চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে তামিলনাড়ুর গৃহস্থালী নামে পরিণত হন।[১০] এর ফলে সুশীলার সাফল্যের সূত্রপাত ঘটে এবং ১৯৫৫ থেকে শুরু করে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশক থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি নিয়মিত গান করে যান। সুশীলার কন্নড় ভাষার এডাকাল্লু গুড্ডাডা মেলে চলচ্চিত্রের "বিরহ নবু নুরু তারাহা" গানটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের চিরসবুজ গানের সেরা দশ তালিকার একটি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Happy Birthday P Susheela - Telugu News"ইন্ডিয়া গ্লিটজ। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  2. নাইগ, উধব (২৯ মার্চ ২০১৬)। "P. Susheela enters Guinness World Records"দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  3. "About"দ্য সাউদার্ন নাইটিঙ্গেল (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জুন ২০১৫। ৮ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  4. "Melody Queen P. Susheela - Interviews"পিসুশীলা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  5. "Voice defying age"দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  6. "A well composed tribute to a veteran singer"দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  7. "Accent is on novelty"দ্য হিন্দু (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ মে ২০০১। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  8. "16th National Film Awards" (পিডিএফ)চলচ্চিত্র উৎসব অধিদপ্তর। ১৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  9. ডোর, শালিনী (১৯ জুলাই ২০১৩)। "Tamil Songwriter Vaali Dies at 83"ভ্যারাইটি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  10. "Melody Queen P. Susheela - About Smt. P. Susheela"পিসুশীলা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 
  11. "Untitled Document"পিসুশীলা। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা