পিঙ্ক হলো ফ্যাকাশে লাল রং যার নামটি এসেছে পিঙ্ক ফুল থেকে।[][] ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জরিপগুলোতে দেখা গেছে যে মাধুর্য, বিনয়, সংবেদনশীলতা, নাযুকতা, কমনীয়তা, শৈশব, নারীত্ব এবং রোমান্টিক ভাব বোঝাতে পিঙ্ক রঙটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। যৌন আবেদন ও মোহনীয়তা বোঝাতেও এই রং ব্যবহৃত হয়।[]

পিঙ্ক
 
About these coordinates     রঙের স্থানাঙ্ক
হেক্স ট্রিপলেট#FFC0CB
sRGBB  (rgb)(255, 192, 203)
CMYKH   (c, m, y, k)(0, 25, 20, 0)
HSV       (h, s, v)(350°, 25%, 100%)
উৎসHTML/CSS[]
B: [০-২৫৫] (বাইট)-এ নিয়মমাফিক
H: [০-১০০] (শত)-এ নিয়মমাফিক

১৭শ শতকের শেষাংশে "পিঙ্ক" শব্দটি ইংরেজি রঙনাম হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয়।[]

প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে

সম্পাদনা

ব্যুৎপত্তি ও সংজ্ঞা

সম্পাদনা

পিঙ্ক রঙটি আসলে পিঙ্ক ফুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে যা ডায়ানথাস গণের অন্তর্ভুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদ। নামটি এসেছে ফুলগুলোর কুঁচকানো কিনারা থেকে। ইংরেজিতে "to pink" ক্রিয়াটি ১৪শ শতক থেকে চলছে যার অর্থ হলো "ছিদ্র-ছিদ্র বা খোঁচা-খোঁচা প্যাটার্ন দিয়ে সাজানো" (সম্ভবত জার্মান পিঙ্কেন থেকে যার মানে "ঠোকরানো")।[] ১৭শ শতকে গোলাপী শব্দটি বিশেষ্য রূপে রঙটির নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। আর ক্রীড়ারূপে "পিঙ্ক" শব্দটির প্রতিফলন পাওয়া যায় পিঙ্কিং শিয়ার্স-এ। পিঙ্কিং শিয়ার্স একটি কাঁচি যেটার ফলাগুলো সমান নয়, করাতের মতো খাঁজকাটা।

বাংলাতে পিঙ্কের অনুরূপ রং পাটল বা পাটকিলে। দুধে-আলতা রং বলতেও এই রং বোঝায়। তবে কথ্যভাষায় প্রায়শই গোলাপির সাথে একে গুলিয়ে ফেলা হয়। দুটি রঙই লালের ছটা, তবে ভিন্ন। লাল+সাদা হলো পিঙ্ক এবং লাল+ম্যাজেন্টা হলো গোলাপি।

ইতিহাস, শিল্প ও ফ্যাশন

সম্পাদনা

প্রাগৈতিহাসিক থেকে প্রাক-ধ্রুপদী কাল

সম্পাদনা
 
কুইন্স উদ্ভিদের ফুলের কলিতে গোলাপী রঙের একটি নরম ছাপ

প্রাচীন কাল পিঙ্ক গোলাপী রঙটি সাহিত্য উল্লেখিত হয়েছে। আনুমানিক ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হোমার তার ওডিসিতে লিখেছেন "তখন, যখন সকালের সন্তান, গোলাপি-আঙুলের উষা উদিত হলো..."[] রোমান কবিরাও এ রঙের উল্লেখ করেছেন। লাতিন শব্দ Roseus মানে "গোলাপী" বা "পিঙ্ক"। লুক্রেতিউস তার অন দ্য নেচার অফ থিংস (De rerum natura) মহাকাব্যে এই শব্দটি উষার সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করেছেন।[]

মধ্যযুগের ফ্যাশনে গোলাপী রঙটি ব্যবহৃত হয়নি; অভিজাতগণ সাধারণত আরো উজ্জ্বল লাল, যেমন ক্রিমসন রং ব্যবহার করতেন। তবে নারীদের ফ্যাশনে এবং ধর্মীয় চিত্রকলায় রঙটির প্রচলন ছিল। ১৩শ ও ১৪শ শতকে চিমাবুয়ে এবং দুচ্চিওর চিত্রকর্মে শিশু খ্রিস্টকে প্রায়ই গোলাপী রঙের কাপড় পরিহিত দেখা যেতো, যে রঙটিকে খ্রিস্টের দেহের সাথে সম্পৃক্ত ভাবা হয়।

রাফায়েলের উচ্চ রেনেসাঁ চিত্রকর্ম ম্যাডোনা অফ দ্য পিঙ্কস-এ দেখা যায় শিশু খ্রিস্ট কুমারী মেরিকে একটি পিঙ্ক ফুল উপহার দিচ্ছেন। পিঙ্ক ছিল বিবাহের প্রতীক, এক্ষেত্রে সেটি মা ও সন্তানের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক পরিণয় তথা বন্ধন বোঝাচ্ছে।[]

আধুনিক ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাথমিক আধুনিক

সম্পাদনা

রেনেসাঁর সময়ে চিত্রকর্মে প্রধানত দেহের মুখমন্ডল ও হাতে গোলাপী রং ব্যবহার করা হতো। এজন্য যে রঞ্জকটি ব্যবহার করা হতো সেটিকে বলা হতো ফিকে সিনাব্রিজ; এটি ছিল সিনোপিয়া নামক লালমাটির রঞ্জক বা ভেনেসীয় লাল এবং বিয়াঙ্কো সান জেনোভেস নামের সাদা রঞ্জক বা চুন সাদার মিশ্রণ। ১৫শ শতকে সেন্নিনো সেন্নিনি তার বিখ্যাত ইল লিব্রো দেল আর্তে নামক চিত্রকলা-নির্দেশিকায় এভাবে পদ্ধতিটির বর্ণনা দিয়েছেন: "এই রঞ্জকটি তৈরি হয় সবচেয়ে সুমধুর ও হালকা সিনোপিয়া থেকে যা পাওয়া যায় সেন্ট জনের সাদার সাথে মিশিয়ে ও তাপ দিয়ে, ফ্লোরেন্সে যেমনটা বলে; এবং এই সাদা বানানো হয় পুরোপুরি সাদা ও পরিস্রুত লাইম থেকে। এরপর দুটি রঞ্জক একত্রে গরম করা হয় (সেগুলো হলো সিনাব্রিজ ও তৃতীয় সাদাটি), এ থেকে ছোট ছোট লুটির মতো হয়, আখরোটের অর্ধেকের মতো, সেগুলো শুকাতে দাও। প্রয়োজন হলে উপযুক্ত পরিমাণ নাও এবং এই রঞ্জক তোমার অনেক কাজে দেবে যদি চিত্রকর্মে মানুষের চেহারা আঁকতে চাও, বা হাত আর দেয়ালের পিঠে নগ্ন শরীর..."[১০]

আধুনিকের শেষকাল

সম্পাদনা
১৮শ শতাব্দী
সম্পাদনা

গোলাপী রঙের স্বর্ণযুগ ছিল ১৮শ শতকের রকোকো পর্ব (১৭২০-১৭৭৭), যখন ইউরোপের দরবারগুলোতে প্যাস্টেল রঙের ফ্যাশন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গোলাপী রঙটিকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন মাদাম দি পম্পেদ্যোর (১৭২১-১৭৬৪)। ফ্রান্সের রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের এই উপপত্নী ফিকে নীল ও গোলাপীর ছোপওয়ালা পোশাক পরতেন আর সেই গোলাপী রঙটি বিশেষভাবে তৈরি করা হতো সার্ভস পোর্সেলিন কারখানায়, নীল, কালো ও হলুদ রঙয়ের সামান্য পরিমাণ মিশিয়ে।[১১]

১৮ শতকে জর্জ রমনির আঁকা লেডি হ্যামিল্টন এমার প্রতিকৃতিগুলোতে গোলাপী রঙকে স্পষ্টত মোহনীয়তার রং হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে, থমাস লরেন্সের আঁকা সারা বেরট মোল্টনের প্রতিকৃতিতে গোলাপী রঙটি হয়ে উঠেছিল শৈশব, সারল্য ও নাযুকতার প্রতীক। উল্লেখ্য, ছবিটি যখন আঁকা হয়, সারা মোল্টনের বয়স তখন মাত্র ১১ এবং তার পরের বছর সে মারা যায়।

১৯শ শতাব্দী
সম্পাদনা

১৯ শতকের ইংল্যান্ডে ছোট ছোট ছেলেরা গোলাপী রঙের রিবন বা সাজ পরতো; ছেলেদেরকে ভাবা হতো ছোট পুরুষ, এবং পুরুষরা যখন লাল উর্দি পরতো, ছেলেরা পরতো গোলাপী। আসলে ১৯ শতকে শিশুদের জামাকাপড়ের রং প্রায় সবসময়ই হতো সাদা, কারণ অন্য রঙয়ের কাপড়গুলো গরম পানিতে দিলে ধুলে রং ফিকে হয়ে যেতো, যতদিন না রাসায়নিক রঞ্জকগুলো আবিষ্কৃত হয়। ১৮৫০ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার একটি প্রতিকৃতিতে তার সাথে আঁকা হয়েছিল তার সপ্তম সন্তান ও তৃতীয় ছেলে প্রিন্স আর্থারের ছবি, সাদা ও গোলাপী রঙের কাপড় পরিহিত।

২০শ শতাব্দী
সম্পাদনা

২০ শতকে গোলাপী হয়ে ওঠে আরো গাঢ়, উজ্জ্বল এবং আরো সুপ্রকাশ্য, কিছুটা রাসায়নিক রঞ্জকের উদ্ভাবনের ফলে রং স্থায়ী হওয়ায়। গোলাপীর নিত্যনতুন ধারা সৃষ্টির জনক ছিলেন ইতালীয় ডিজাইনার এলসা শিয়াপারেল (১৮৯০-১৯৭৩), পরাবাস্তব আন্দোলনের শিল্পীদের সারিতেও তিনি ছিলেন, সাথে জিন ককটিয়াও। ১৯৩১ সালে অল্প একটু সাদা রঙে ম্যাজেন্টা মিশিয়ে তিনি গোলাপীর একটি নতুন ধরন তৈরি করলেন যেটাকে বলে শকিং পিঙ্ক। তিনি পরে শকিং নামে একটি পারফিউম উৎপাদন করে বাজারে ছাড়েন। পারফিউমের বোতলটি ছিল নারীদের টর্সোর (বুক ও পেট) আকৃতির, শোনা যায় অভিনেত্রী মেই ওয়েস্টের টর্সোর আকৃতি অনুসারে তা বানানো হয়। ককটিয়াও ও অন্যান্য সহশিল্পীদের সাথে এলসার উদ্ভাবিত ফ্যাশনগুলোতে নতুন গোলাপী রঙের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।[১২]

১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে নাৎসী জার্মানিতে নাৎসী বন্দী-শিবিরে যেসব বন্দী সমকামী বলে অভিযোগ উঠতো তাদেরকে গোলাপী রঙের ত্রিভুজ চিহ্ন পরতে বাধ্য করা হতো।[১৩] একারণে গোলাপী ত্রিভুজ আধুনিক গে অধিকার আন্দোলনের একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।[১৪]

কেবল মেয়েদের জন্য গোলাপী রঙটি প্রযুক্ত হবার ধারণাটি খুব ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে, বাজারের কাটতিতে লোকের পছন্দ নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায়। ১৯২০-এর দশকেও গোলাপীকে কোনো কোনো গোষ্ঠী বলতো পুরুষদের রঙ, কারণ লালের সাথে ওটার সাদৃশ্য আছে, আর লাল যেহেতু পুরুষদের রং তাহলে গোলাপী হবে ছেলেদের। কিন্তু দোকানগুলোতে দেখা গেলো লোকজন মেয়েদের জন্যই গোলাপী কিনছে বেশি, ছেলেদের জন্য কিনছে নীল। ১৯৪০-এর দশকে এই রীতিটি সমাজে প্রচলিত হয়ে যায়।[১৫][১৬]

 
অভিষেক অনুষ্ঠানের গোলাপী-রঙা গাউন পরে ম্যামি আইজেনহাওয়ার, ১৯৫৩ সালে থমাস স্টিভেনসের আঁকা।

১৯৫৩ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারের অভিষেক অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী ম্যামি আইজেনহাওয়ার একটি গোলাপী গাউন পরেন[১৭] যেটাকে মনে করা হয় গোলাপী রঙের সাথে মেয়েদের সম্পৃক্ত হবার একটি মূল সন্ধিক্ষণ। গোলাপী রঙের প্রতি ম্যামির তীব্র আকর্ষণ জনগণের মনে এই ধারণা সৃষ্টি করে যে গোলাপী রং কেবল "লেডি বা ভদ্রমহিলাগণ পরেন।"[১৭] আমেরিকান সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্র ফ্যানি ফেসও (১৯৫৭) রঙটিকে মেয়েদের সাথে জুড়ে দিতে সহায়ক হয়েছিল।[১৭]

১৯৭৩ সালে শেইলা লেভরান্ট ডি ব্রেট্টেভিল "পিঙ্ক" নামে একটি চওড়া পোস্টার তৈরি করেন যেটায় গোলাপী রঙের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ পার্থক্যের প্রবণতাটি ব্যাখ্যা করার কথা। এটি ছিল আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ গ্রাফিক আর্টস এক্সিবিশনে জন্য এবং গোলাপী রং নিয়ে কেবল এই একটি জমা পড়েছিল। পোস্টারটিতে ফেমিনিস্ট স্টুডিয়ো ওয়ার্কশপের অনেক নারীরা তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে গোলাপী রঙের ব্যবহার সম্পর্কে বলেছেন যেগুলো একত্রে সাজান ডি ব্রেট্টেভিল এবং পরে সেগুলো ছেপে পুরো লস অ্যাঞ্জেলসে ছড়িয়ে দেয়া হয়।[১৮] She was often called "Pinky" as a result.

ক্রিস্টো এবং জিয়ান-ক্লউডের সারাউন্ডেড আইল্যান্ডমিয়ামির বিসকায়েন উপসাগরের কাঠবহুল দ্বীপগুলোকে ঘিরে রেখেছে ৬৫,০০,০০০ ফু (৬,০০,০০০ মি) উজ্জ্বল গোলাপী ফেব্রিক দিয়ে।[১৯] থমাস ভন তাসকিৎজকি বলেছেন যে "একবর্ণের গোলাপী ঘের"..."ছোট সবুজ ও কাঠবহুল দ্বীপগুলোর বিপরীত রূপ।"[২০]

ফ্রানৎস ওয়েস্টের তৈরি অনেকগুলো ভাস্কর্যই একসময় উজ্জ্বল গোলাপী রং করা হয়েছিল, যেমন Sexualitätssymbol (যৌনতার প্রতীক). ওয়েস্ট বলেছেন যে, গোলাপী রং করা হয়েছিলো "প্রকৃতির প্রতি প্রতিবাদ" হিসেবে।[২১]

বিজ্ঞান ও প্রকৃতি

সম্পাদনা

আলোকবিজ্ঞান

সম্পাদনা

একমাত্র লাল রঙেরই হালকা শেডগুলোর আলাদা নাম দেয়া হয়েছে, গোলাপী। আলোকবিজ্ঞানে "গোলাপী" বলতে নীলাভ লাল থেকে গাঢ় লালের মধ্যে বিভিন্ন উজ্জ্বলতা ও স্যাচুরেশনের ফিকে শেডগুলোকে বোঝায়।[২২] যদিও গোলাপীকে সাধারণত লাল রঙের একটি টিন্ট মনে করা হয়,[২৩][২৪] গোলাপীর অধিকাংশ হিউই হালকা নীলাভ এবং সেগুলো লাল ও ম্যাজেন্টার মধ্যে অবস্থান করে। তবে স্যামন রঙের মতো গোলাপীর কয়েকটি রূপভেদে অবশ্য কমলা রঙের ছোঁয়া আছে। [২৫][২৬][২৭][২৮]

সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের রং কখনো গোলাপী হয় কেন

সম্পাদনা

বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সাদা সূর্যালোক যাওয়ার সময় বায়ুকণার কারণে কিছু রং রশ্মি থেকে বিচ্ছুরিত হয়। এটাকে বলে রেলে বিচ্ছুরণ। ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বর্ণসমূহ, যেমন নীল ও সবুজ, অপেক্ষাকৃত বেশি বিচ্ছুরিত হয় এবং তার ফলে সেসময় চোখে যে আলো পৌঁছায় তাতে নীল ও সবুজ থাকেনা।[২৯] সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূর্যরশ্মির বায়ুমণ্ডল হয়ে চোখে পৌঁছার মধ্যে দূরত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে, ফলে নীল ও সবুজ রং প্রায় পুরোপুরিই মুছে যায়, থাকে শুধু লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রং কমলা, লাল ও গোলাপী। এই গোলপাভ সূর্যালোক আবার মেঘের কণা ও অন্যান্য কণায় লেগে বিচ্ছুরিত হতে পারে, ফলে দিগন্তপারের আকাশে ফুটে ওঠে গোলাপি বা লাল আভা। [৩০]

ভূতত্ত্ব

সম্পাদনা

জীববিজ্ঞান

সম্পাদনা

কেন রান্না-করা গরুর গোশত, শূকরের মাংস, ভাঁপ-দেয়া চিংড়ি বা স্যামন মাছের রং গোলাপী হয়?

সম্পাদনা

কাঁচা গরুর গোশত লাল রঙের হয়, কারণ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের যেমন গরু বা শূয়োরের পেশীতে মায়োগ্লোবিন নামক একটি প্রোটিন থাকে যেটা অক্সিজেন ও লৌহ পরমাণুকে যুক্ত করে। গরুর গোশত রান্না করলে এই প্রোটিন জারিত হয়ে লাল থেকে গোলাপী এবং পরে বাদামি রং ধারণ করে; কম-মধ্যম-ভালো রান্নার ক্রমানুসারে। শূকরের মাংসে তুলনামূলক কম মায়োগ্লোবিন থাকে, তাই কম লাল হয় এবং তাপ দিলে গোলাপাভ-লাল থেকে হয় হালকা গোলাপী বা তামাটে বা সাদা।

গরুর গোশতের মতো মায়োগ্লোবিন থাকলেও হ্যাম ভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। ঐতিহ্যবাহী হ্যাম, যেমন প্রশিডো, তৈরি করা হয় শূয়োরের পেছনের পা বা রানের মাংস সামুদ্রিক লবণে মেখে, আর্দ্রভাব দূর করে, তারপর প্রায় দুই বছর ধরে শুকিয়ে বা অন্য কোনোভাবে সংরক্ষণ করে। সোডিয়াম নাইট্রেট লবণটি হ্যামের আসল গোলাপী রঙটি ফিরিয়ে দেয়, এমনকি শুকিয়ে গেলেও। সুপারমার্কেটে বিক্রি করা হ্যামগুলো ভিন্ন পদ্ধতিতে আরো দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করা হয়; প্রথমে তা ব্রাইনিত করা হয়, অর্থাৎ লবণ-পানির দ্রবণে সঞ্চারিত করা হয়। দ্রবণের সোডিয়াম নাইট্রেট থেকে আসে নাইট্রিক অক্সাইড যা মায়োগ্লোবিনের সাথে বন্ধন গঠন করে এবং প্রক্রিয়াজাত হ্যাম আগের গোলাপী রং ফিরে পায়।

ক্রাস্টিশিয়ান প্রাণী, যেমন কাঁকড়া, গলদা চিংড়িকুচো চিংড়ির খোল ও মাংসে অ্যাসটাজেনথিন নামক একটি গোলাপী ক্যারটিনয়েড রঞ্জক থাকে। তাদের প্রাকৃতিকভাবে নীলচে-সবুজ রঙের খোল রান্না করলে গোলাপী বা লাল বর্ণ ধারণ করে। স্যালমন মাছেও অ্যাসটাজেনথিন থাকে, যেকারণে এর রং হয় গোলাপী। খামারে চাষকৃত স্যালমন মাছগুলোর গায়ের গোলাপী রং গাঢ় করার জন্য অনেকসময় এই রঞ্জক খাওয়ানো হয় এবং কখনোবা ডিমের কুসুমেও তা ব্যবহৃত হয়।

উদ্ভিদ ও ফুল

সম্পাদনা

ফুলের মধ্যে গোলাপী রং সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, কারণ এটি পরাগায়ণের জন্য কীটপতঙ্গ ও পাখিদের আকৃষ্ট করে এবং সম্ভবত প্রাণীদের দূরে রাখে। অ্যান্থোসায়ানিনস নামক একটি প্রাকৃতিক রঞ্জক এই রঙটি হয় যা রাস্পবেরিতেও থাকে এবং গোলাপী রঙের ফল হয়।

রঞ্জক - পিঙ্কে

সম্পাদনা

১৭শ শতকে গোলাপী বা পিঙ্কে বলতে একধরনের হলুদ রঞ্জককেও বোঝানো হতো যেটা নীলের সাদে মিশিয়ে সবুজাভ রং তৈরি করা হতো। টমাস জেনারের এ বুক অফ ড্রয়িং, লিমিং, ওয়াশিং (১৬৫২) বইয়ে গোলাপী ও নীল বাইসকে সবুজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (p.  38),[৩২] এবং নির্দিষ্ট করে পিঙ্কে দিয়ে তৈরি সবুজাভ রঙের কয়েকটি মিশ্রণের উল্লেখ করেছে, "গ্র্যাস-গ্রীন বা ঘাস-সবুজ তৈরি হয় গোলাপী ও বাইস দিয়ে, ইন্ডিগো ও গোলাপী দিয়ে এটি ছায়াবৃত হয়ে থাকে … ফ্রেঞ্চ-গ্রীন বা ফরাসি-সবুজ হয় গোলাপী ও ইন্ডিকো থেকে" (pp. 38–40)। উইলিয়াম স্যামনের পলিগ্রাফিস (১৬৭৩) বইয়ে "গোলাপী হলুদ" রঙের উল্লেখ করা হয়েছে প্রধান হলুদ রঞ্জকগুলোর মধ্যে (p. 96), এবং লেখা আছে যে রঙটির "ম্লান" বা "হালকা" শেড পাবার জন্য এর সাথে যথাক্রমে জাফরান বা সফেদা রং মেশাতে হবে।

শব্দবিজ্ঞান

সম্পাদনা
  • পিঙ্ক নয়েজ (নমুনা), 1/f নয়েজ হিসেবেও পরিচিত, হলো শব্দপ্রকৌশলের একটি সিগনাল বা পদ্ধতি যার কম্পাঙ্ক বর্ণালি এমন থাকে যে শক্তি বর্ণালি ঘনত্ব (power spectral density) কম্পাঙ্কের রেসিপ্রোকালের সমানুপাতিক।

আলোকসামগ্রী

সম্পাদনা
  • গ্রো আলোতে প্রায়শই লাল ও নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি সমন্বয় করা হয় যেটা কিনা মানুষের চোখে গোলাপী রং বলে মনে হয়।[৩৩]
  • গোলাপী রঙের নিওন সাইনগুলো সাধারণত দুভাবে তৈরি করা যায়। এক পদ্ধতিতে নিওন গ্যাস এবং একটি নীল বা পার্পল ফসফর ব্যবহার করা হয়। এতে গোলাপীর আরো উষ্ণ (মানে লালাভ) বা তীব্রতর শেড পাওয়া যায়। অন্য পদ্ধতিতে আর্গন/পারদের মিশ্রণ ও একটি লাল ফসফর ব্যবহার করে আরো শীতল (অর্থাৎ পার্পলিশ) তথা কোমলতর শেডের গোলাপী পাওয়া যায়।
  • গোলাপী এলইডি তৈরিরও দুটি উপায়; হয় দুইটি ফসফরসহ নীল এলইডি ব্যবহার করা (এক্ষেত্রে ১ম ফসফর হলুদ, ২য়টিতে লাল, কমলা বা গোলাপী), অথবা কোনো সাদা এলইডির শীর্ষে গোলাপী রং রেখে দেয়া। প্রথমদিকে গোলাপী এলইডিগুলোতে কালার শিফটিং ছিল নিয়মিত বিষয়, যেখানে সময়ের সাথে সাথে লাল, কমলা বা গোলাপী ফসফর বা ডাইগুলোর উজ্জ্বলতা কমে যেতো, ফলে গোলাপী রঙটি ঘটনাক্রমে সাদা বা নীল রঙে রূপান্তরিত হতো। সাম্প্রতিককালে উদ্ভাবিত চির-উজ্জ্বল ফসফর ব্যবহার করে এরকম সমস্যার সমাধান হয়েছে।

প্রকৌশল

সম্পাদনা
  • ওয়েনস কর্নিং কোম্পানির তৈরি অন্তরক পদার্থ হলো ডাই-করা গোলাপী আর তাদের কর্পোরেট মাসকট হলো দ্য গোলাপী প্যান্থ্যার। অন্তরক পদার্থ তৈরিতে গোলাপী রং ব্যবহারে যাতে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা না হয় সেজন্য কোম্পানি গোলাপী রঙের ট্রেডমার্ক করে নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তারাই প্রথম কোনো রং ট্রেডমার্ক করিয়েছে।[৩৪]
  • যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুয়াল অন ইউনিফর্ম ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইসেস ঘটনা ব্যবস্থাপনা (incident management) বোঝানোর ট্রাফিক চিহ্ন হিসেবে কমলা রঙের বিকল্পে ফ্লুরেসেন্ট গোলাপী ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। কারণ কমলা রঙটি সচরাচর কনস্ট্রাকশন জোনে ব্যবহৃত হয়।[৩৫]

প্রতীক এবং বিশ্ব সংস্কৃতিতে গোলাপী

সম্পাদনা

সাদৃশ্য ও জনপ্রিয়তা

সম্পাদনা

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গিয়েছে যে কমনীয়তা, বিনয়, সংবেদনশীলতা, নাজুকতা, মাধুর্য, কোমলতা, শৈশব, নারীত্ব আর রোমান্টিকতার সাথে গোলাপী রঙটিই সবচেয়ে বেশি মানায়।[৩৬] জরিপের কোনো কোনো উত্তরদাতা তাদের প্রিয় রং হিসেবে পিঙ্ক বেছে নেন, তবে তা জরিপে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। কারণ উত্তরতাদের মাত্র ২ শতাংশের প্রিয় রং পিঙ্ক, যেখানে ৪৫ শতাংশ লোকের পছন্দের রং নীল।[৩৭] বরং কম-প্রিয় রঙের তালিকায় বাদামির (২০%) পরেই পিঙ্কের অবস্থান (১৭%)। এসব ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষদের মধ্যে লক্ষণীয় পার্থক্য দেখা গিয়েছে; ৩ শতাংশ নারী প্রিয় রং হিসেবে পিঙ্ক নিয়েছেন, পুরুষেরা ১ শতাংশেরও কম। জরিপে অংশনেয়া পুরুষদের অনেকেতো পিঙ্ক রঙটিই ঠিকমতো চিনতে পারেননি, এটাকে তারা "মাভ" বা ফিকে লাল ভেবেছিলেন। আবার তরুণদের চেয়ে বয়স্কদের কাছে পিঙ্ক বেশি জনপ্রিয়; ২৫ বছরের চেয়ে কমবয়সের ২৫ শতাংশ নারী পিঙ্ককে বলেছেন তাদের সবচেয়ে কম পছন্দের রঙ, কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ নারীদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি মাত্র ৮ শতাংশ। একইভাবে, পঁচিশের কমবয়সী ছেলেদের ২৯ শতাংশের কাছে পিঙ্ক সবচেয়ে কম প্রিয় রঙ, পঞ্চাশোর্ধ পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৮%।[৩৮]

জাপানে বসন্তের গোলাপি চেরী ফুলের সাথে পিঙ্কের সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য দেখা যায়, তাই বসন্তের রং সেখানে পিঙ্ক।[৩৯][৪০] অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় সবুজকেই মনে করা হয় বসন্তের রঙ।

অন্যান্য ভাষায় পিঙ্ক

সম্পাদনা

অনেক ভাষাতেই পিঙ্ক রঙটিকে গোলাপ ফুলের নামে রাখা হয়; যেমন ফরাসিতে rose; ডাচভাষায় roze; জার্মান, লাতিন, পর্তুগিজ, কাতালান, স্প্যানিশ ও ইতালিয়ানে rosa; রুশভাষায় rozoviy; পোলিশে różowy; এবং উর্দুতে گلابی গুলাবি। বাংলাতে গোলাপি প্রচলিত থাকলেও মূলত এটা ভিন্ন, ইংরেজিতে যাকে বলে rosy। অবশ্য ইংরেজিতে প্রায়ই rose দিয়ে গোলাপ ফুল আর রং দুটোই বোঝায়।

জাপানি ভাষায় পিঙ্কের ঐতিহ্যবাহী নাম momo-iro (ももいろ) এসেছে পীচ ফলের মুকুল থেকে। আবার চেরী ফুলের রঙের জন্য আছে আরেকটি শব্দ sakura-iro। সম্প্রতি ইংরেজির অনুসরণে pinku (ピンク) শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়েছে।

মেয়েদের মেকআপের একটি উপকরণ হলো রঙিন পাউডার এবং সেখানে গোলাপি রং অপরিহার্য। এই থেকেই চীনা ভাষায় পিঙ্কের নাম দেয়া হয়েছে - 粉紅色 বা "পাউডার লাল"।

বাগধারা

সম্পাদনা
  • In the pink সুস্থ থাকা, ভালো অবস্থানে থাকা, সবচেয়ে ভালো ফর্মে থাকা। রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-এ মার্কুসিও বলে: "I am the very pink of courtesy." রোমিও: Pink for flower? মার্কুসিও: Right. রোমিও: Then my pump is well flowered."[৪১]
  • To see pink elephants মানে মাতাল হয়ে হ্যালুসিনেশন দেখা। মার্কিন ঔপন্যাসিক জ্যাক লন্ডন তার জন বার্লিকর্ন (১৯১৩) বইয়ে কথাটি ব্যবহার করেন।
  • Pink slip কাউকে পিঙ্ক স্লিপ দেয়ার মানে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এটি ব্যবহার করা হয়।
  • "pink-collar worker" ফ্রেজটি দিয়ে সেসব লোককে বোঝানো হয় যারা "নারীদের পেশা"য় কাজ করে, যেমন বাসাবাড়িতে বা রেস্তোরাঁয়।
  • Pink Money, the pink pound বা pink dollar একটি অর্থনৈতিক পরিভাষা যেটা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে।[৪২] Advertising agencies sometimes call the gay market the pink economy.
  • Tickled pink মানে অত্যন্ত খুশি।

স্থাপত্য

সম্পাদনা

প্রথমদিকে পিঙ্ক রঙের অট্টালিকা তৈরি হতো সাধারণত ইট বা বেলেপাথর দিয়ে, যেটার হেমাটাইট বা লৌহ আকরিকের কারণে ফিকে লাল রং ফুটে উঠতো। আঠারোশো শতকে পিঙ্ক ও অন্যান্য প্যাস্টেল রঙের স্বর্ণযুগে সারা ইউরোপজুড়ে অসংখ্য পিঙ্ক ম্যানশন এবং চার্চ নির্মিত হয়। আধুনিককালের বাড়িগুলোতে একটু বিদেশি ভাব আনতে বা নজর কাড়তে পিঙ্ক রং ব্যবহার করা হয়।

খাদ্য ও পানীয়

সম্পাদনা

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, মিষ্টি খাবার বা পানীয়ের সাথে পিঙ্ক রং সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়। আর পিঙ্ক সেই বিশেষ রঙগুলোর একটি যেগুলো গন্ধের সাথে সম্পর্কিত, পিঙ্কের ক্ষেত্রে তা গোলাপের ঘ্রাণ।[৪৩] অনেক স্ট্রবেরি ও র‌্যাস্পবেরির ফ্লেভার-দেয়া খাবারই পিঙ্ক বা হালকা লাল রঙের করা হয়, যাতে সেগুলোকে চেরির ফ্লেভার-দেয়া খাবার থেকে আলাদা করা যায় যেহেতু সেগুলোর রং থাকে গাঢ় লাল (অবশ্য বিশেষ করে আমেরিকাতে, র‌্যাস্পবেরি-ফ্লেভারিত খাবারের রং নীলও দেখা যায়)। ৭০ দশকের জনপ্রিয় ডায়েট কোলা 'ট্যাব' প্যাকেজ হতো পিঙ্ক রঙের ক্যানে, সম্ভবত পানকারীকে অবচেতনভাবে মিষ্টির আস্বাদ দিতে।

পিঙ্ক রঙের পণ্যজাত খাদ্য, আইসক্রীম, ক্যান্ডি এবং পেস্ট্রির অধিকাংশেই কৃত্রিম খাদ্যরং ব্যবহার করা হয়। পিঙ্ক রঙের সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্যরঙটি হলো এরিথ্রোসাইন, যা 'Red No. 3' নামেও পরিচিত। এটি একটি জৈব-আয়োডিন যৌগ, ফ্লোরনের একটি উৎপাদ এবং চেরি-পিঙ্ক রঙের সিনথেটিক।[৪৪] পণ্যের গায়ের লেবেলে এটিকে E-127 হিসেবে লেখা হয়ে থাকে। আরেকটি বহুব্যবহৃত লাল বা পিঙ্ক খাদ্যরং হলো অ্যালুরা রেড এসি (E-129), যার অন্য নাম 'Red No. 40'। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত এটি ব্যবহৃত হয়, সেখানে এরিথ্রোসাইনের ব্যবহার কম। কিছু দ্রব্যে প্রাকৃতিক লাল বা পিঙ্ক রং 'কচিনিয়েল' ব্যবহার করা হয়, যার অপর নাম 'কারমাইন'। Dactylopius coccus গোত্রের কীটপতঙ্গ গুঁড়ো করে এই রং তৈরি করা হয়।

লিঙ্গবিভেদ

সম্পাদনা
 
অল নিপ্পন এয়ারওয়েজের একটি বোয়িং ৭৬৭-৩০০তে নারীদের বিশ্রামঘরের চিহ্নে পিঙ্ক রং ব্যবহার করা হয়েছে।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পিঙ্ককে সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ভাবা হয়, আর ছেলেদের জন্য নীল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুকাল আগে থেকে এই রঙগুলোকে লিঙ্গবোধক (ছেলে/মেয়ে) হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। আর নারীবোধক রং হিসেবে পিঙ্ক প্রবর্তিত হয় ১৯৪০-এর দশকে।[৪৬][৪৭] ২০ শতকে এই চর্চাটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নরকম ছিল, যেমন কোথাও শিশুর দেহের সঙ্গে মানানসই রঙটি পরানো হতো, আবার অন্যত্র কখনো ছেলেদের কখনোবা মেয়েদের পিঙ্ক পরানো হতো।[৪৮]

অনেকেই[৪৯][৫০][৫১][৫২][৫৩] ২০ শতকের আমেরিকায় বিপরীতধর্মী অর্থাৎ ছেলেদের পিঙ্ক পরানোর প্রচলনের কথা লিখেছেন। ১৯১৮ সালে বাণিজ্যিক পত্রিকা আর্নশ'জ ইনফ্যান্টস ডিপার্টমেন্টে একটি প্রবন্ধে বলা হয়:

সাধারণত স্বীকৃত নিয়ম হলো পিঙ্ক ছেলেদের জন্য এবং নীল মেয়েদের জন্য। কারণ পিঙ্ক বেশি বিবেচিত এবং শক্রিশালী রঙ, ছেলেদের জন্যে বেশি উপযোগী, আর নীল, যেটা বেশি মনোরম ও শৌখিন, মেয়েদের জন্যেই ভালো।

মেয়েদের জন্য পিঙ্ক এবং ছেলেদের জন্য নীল রঙের ব্যবহাহ বৃদ্ধির একটি ছিল নতুন নতুন রাসায়নিক রঞ্জকের উদ্ভাবন, যার মানে ছোটদের কাপড়চোপড় প্রচুর তৈরি করা যাবে এবং গরম পানিতে ধুলেও রং উঠবে না। এর আগে ছোট ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই সাদা কাপড় পরতো কারণ সেটা সহজে বারবার ধোয়া যেত।[৫৪] আরেকটি কারণ ছিল ছোটদের জন্য নাবিকদের নীল-সাদা পোশাক পরার ফ্যাশন যা ১৯ শতকের শেষাংশে জনপ্রিয় হয়েছিল। সাধারণত ছেলেয়েদের স্কুলের ইউনিফর্মের রং হতো নীল। নীলকে গাম্ভীর্য ও জ্ঞানার্জন প্রকাশক রং বলে মনে করা হতো। অন্যদিকে পিঙ্ককে ভাবা হতো শৈশব ও কোমলতার প্রকাশ।

১৯৫০-এর পূর্বেই পিঙ্ক নারীত্বের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছিল, তবে এমন পর্যায়ে যে এটি "অপরিহার্য বা সর্বজনীন" ছিলনা, পরে যেরকম হয়েছে।[৫৫][৫৬][৫৭]

কারেন্ট বায়োলজির দুজন পুষ্টিবিজ্ঞানীর গবেষণায় বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রিয় রঙের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে লক্ষণীয় পার্থক্য দেখা গিয়েছে। নারী পুরুষ উভয়ই অন্যান্য রঙের ওপর নীলকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তবে নারীরা বর্ণলীর বেগুনি-লাল অংশের প্রতি বেশি অনুকূল মত দিয়েছেন, যেখানে পুরুষদের বেশি ঝোঁক ছিল সবুজ-হলুদে। যদিও গবেষণাটিতে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের মত নেয়া হয়েছিলো এবং নারী-পুরুষ উভয়ই নীল পছন্দ করে আর পিঙ্ক রং নিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি, তবুও জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে গবেষণাটিকে দেখানো হয় পিঙ্কের প্রতি মেয়েদের সহজাত আকর্ষণের ইঙ্গিতবহ হিসেবে। এই ভুল সংবাদটি পরে বাজার গবেষণায় উদ্ধৃত হতে থাকে, ফলে নারীদের সহজাত পিঙ্কপ্রিয়তার এই কাল্পনিক ধারণা মার্কিন সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ে।[৫৮]

মেয়েদের জন্য বানানো খেলনার মোড়ক বা খেলনাগুলোই পিঙ্ক রঙের করা হয়। লিয়োনেল ট্রেইনস কোম্পানি ১৯৫৭ সালের ক্যাটালগে মেয়েদের জন্য একটি পিঙ্ক রঙের খেলনা মালবাহী ট্রেন বিক্রির অফার রাখে। ট্রেনের বাষ্পইঞ্জিন ও কয়লার বগি ছিল পিঙ্ক রঙের আর অন্যসব মালবাহী বগিগুলো ছিল বিভিন্ন প্যাস্টেল রঙের। ট্রেনের ক্যাবুজ বা রন্ধনশালার রং ছিল বেবি ব্লু (হালকা নীল)। খেলনা ট্রেনটি ব্যবসা করতে পারেনি কারণ কোনো মেয়ে যদি ট্রেন দিয়ে খেলতে চায়, তবে সে বাস্তবের মতো রঙকরা ট্রেনই চাইবে, পিঙ্ক বা নীল নয়। অন্যদিকে, সেই পঞ্চাশের দশকের ছেলেরাও গোলাপি রঙের ট্রেন দিয়ে খেলতে চায়নি, বন্ধুদের সামনে লজ্জার ব্যাপার। যাইহোক, এখন এই ট্রেন সেটটি সংগ্রাহকদের কাছে অমূল্য বস্তু।[৫৯]

২০০৮-এ বিভিন্ন নারীবাদী দলগুলো এবং "স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস"-এ পিঙ্ক রং দিয়ে নারী ক্ষমতায়নের ইঙ্গিত করে।[৬০] সারাবিশ্বে স্তন ক্যান্সার চ্যারিটিগুলো রোগটির সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এই রঙটিকে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছে। এসব চ্যারিটির কাজের একটি কৌশল হলো এই প্রচেষ্টা সমর্থনকারী নারী ও পুরুষদেরকে পিঙ্ক রঙের পোশাক পরতে উৎসাহিত করা।[৬১]

ভারতে পিঙ্ক দিয়ে "স্বাগতম আলিঙ্গন" বোঝানো হয় আর জাপানে তা 'পুরুষত্ব' বোঝায়।[৬০]

উপরে যেমনটি বলা হয়েছে, কালো বা বেগুনির সাথে পিঙ্কের সমন্বয়ে যৌন আবেদনময়তা ও মোহনীয়তা ফুটিয়ে তোলে।

  • রাস্তার ভাষায় মাঝেমধ্যে মেয়েদের যোনি বোঝাতে পিঙ্ক শব্দটি প্রয়োগ করা হয়।[৬২]
  • রুশ ভাষায়লেসবিয়ানদের বোঝাতে পিঙ্ক (розовый, rozovyj) আর 'গে'দের জন্যে হালকা নীল (голубой, goluboj) শব্দদুটি ব্যবহৃত হয়।
  • জাপানে সস্তা বাজাটের কামোদ্দীপক একধরনের সিনেমাকে বলা হয় পিঙ্ক ফিল্মস (ピンク映画, Pinku Eiga)[৬৩]

রাজনীতি

সম্পাদনা
 
কোড পিঙ্ক মার্কিন নারী অ্যাকটিভিস্টদের একটি গ্রুপ যারা যুদ্ধ এবং বিশ্বায়নের বিরোধিতা করে।
  • পিঙ্ক যেহেতু 'পানি-মেশানো লাল', তাই কোনো কোনো সময় নমনীয় মাত্রার সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদে বিশ্বাসী কাউকে অপমান করে পিঙ্ক বলা হতে পারে (দেখুন পিঙ্কো)।
  • পিঙ্ক রেভুলেশন শব্দবন্ধটি দিয়ে কখনো কখনো ২০০৫-এ মধ্য এশিয়ায় কিরগিজিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসকার আকায়েভ ও তার সরকারের গদিচ্যুতি ইঙ্গিত করা হয়, তবে "টিউলিপ রেভুলেশন" নামেই এটি বেশি পরিচিত।
  • সুইডিশ নারীবাদী পার্টি 'ফেমিনিস্ট ইনিশিয়েটিভ' তাদের রং হিসেবে ব্যবহার করে পিঙ্ক।
  • কোড পিঙ্ক হলো মার্কিন নারীদের বিশ্বায়ন-বিরোধী ও যুদ্ধবিরোধী একটি গ্রুপ যা অ্যাকটিভিস্ট মেডিয়া বেনজামিন কর্তৃক ২০০২ সালে গঠিত হয়। দলটি কংগ্রেসের আলোচনাকালে গোলমাল করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার জনসমাবেশে বক্তৃতা চলাকালে বহুবার প্রশ্ন করেছে এবং শ্লোগান দিয়েছে।
  • প্রচলিতভাবে মানচিত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চিহ্নিত করা হতো পিঙ্ক রং দিয়ে।[৬৪]

সামাজিক আন্দোলন

সম্পাদনা

নারী, সমকামী, উভকামী বা রূপান্তরকামীদের বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পৃক্ত সংগঠনসমূহ পিঙ্ককে তাদের প্রতীকী রং হিসেবে ব্যবহার করে।

  • সমকামিতা সম্পর্কিত একটি ডাচ সংবাদসংস্থাকে বলা হয় nl.roze (ডাচভাষায় পিঙ্ককে বলে roze), যেরকম ব্রিটেনে পিঙ্ক নিউজ একটি গে সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ সার্ভিস। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য পিঙ্ক নামে একটি ম্যাগাজিনও অনেক বড় বড় শহরে প্রকাশিত হয়।[৬৫] ফ্রান্সে পিঙ্ক টিভি একটি এলজিবিটি কেবল চ্যানেল।
  • আয়ারল্যান্ডে আইরিশ পিঙ্ক পোষ্যপুত্র বা দত্তক নেয়াকে সমর্থনকারী দলটি পিঙ্ক পরিবারকে বলে তুলনামূলকভাবে একটি নিরপেক্ষ ছত্রশব্দ যা অবিবাহিত সমকামী নারী বা পুরুষ বা দম্পতি যারা কাউকে দত্তক নিয়েছে বা নিচ্ছে তাদের বোঝায়। এধরনের পরিবারে বড় হওয়া ব্যক্তিদেরও ঐ শব্দে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গ্রুপটিতে এরকম লৌকদের স্বাগত জানানো হয়।[৬৬]টেমপ্লেট:Primary source inline
  • পিঙ্কস্টিঙ্কস হলো ২০০৮-এর মে মাস লন্ডনে চালানো একটি ক্যাম্পেইন[৬৭] যেটার উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের মধ্যে লিঙ্গভেদে স্টেরিওটাইপিংয়ের তথাকথিত ক্ষতি সম্পর্কে লোকজনকে সচেতন করা।[৬৮][৬৯]
  • দ্য পিঙ্ক পিস্টলস একটি অস্ত্র অধিকারবাদী গে সংগঠন।[৭০]
  • পিঙ্ক রিবন হলো স্তন ক্যান্সার সচেতনতার আন্তর্জাতিক প্রতীক। অনেকটা নারীদের সাথে পিঙ্কের এতো সম্পৃক্ততার কারণেই রঙটি নির্বাচিত হয়েছে।[৭১]

দাপ্তরিক পোশাক

সম্পাদনা
  • ফরাসি একাডেমিক ড্রেস সিস্টেমে শিক্ষার পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রের (শিল্প, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, আইন এবং ধর্মতত্ত্ব) প্রতীক হিসেবে আলাদা আলাদা রং আছে যা সেসব ক্ষেত্রের গ্র্যাজুয়েটগণ দাপ্তরিক পোশাকে পরেন। পিঙ্কের একটি তীব্র লাল শেড 'রেডকারেন্ট' রঙটি চিকিৎসা (ও অন্যান্য স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত) ক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট fr:Groseille (couleur)

হেরাল্ড্রি

সম্পাদনা

হেরাল্ড্রিতে কোনো টিংচারের (রঙ) জন্যই পীঙ্ক শব্দটি ব্যবহার করা হয়না, তবে দুটি বেশ অপরিচিত টিংচার আছে যেগুলো পিঙ্কের কাছাকাছি:

  • গোলাপের হেরাল্ড্রির রং একটি আধুনিক সংযোজন, বেশিরভাগই কানাডীয় হেরাল্ড্রিতে, যেটাতে গোলাপির মতো লালাভ পিঙ্ক রং ব্যবহার করা হয়।
  • ফরাসি হেরাল্ড্রিতে কারণেশন রঙটি কখনো-সখনো ব্যবহৃত হয়, ফর্সা চামড়ার ককেশীয় মানুষের দেহের রঙের সাথে সাদৃশ্য রেখে। এটিকে পিঙ্ক শেড হিসেবেও দেখা যায়, তবে সাধারণত গোলাপ টিংচারের চেয়ে একটু বেশি বাদামি-পশমি রঙের।

পঞ্জিকা

সম্পাদনা
  • থাইল্যান্ডে থাই সৌরপঞ্জিকায় পিঙ্ককে মঙ্গলবারের সাথে যুক্ত করা হয়। মঙ্গলবারে যেকেউ পিঙ্ক পরতে পারে, এবং এদিন জন্মগ্রহণ করলে সে তার রং হিসেবে পিঙ্ক বেছে নিতে পারে।

প্রকাশনা/সংবাদমাধ্যম

সম্পাদনা

বাণিজ্য ও খেলাধুলা সম্পর্কিত বেশ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট কাগজে পিঙ্ক রং ব্যবহার করা হয়। আর গে সম্প্রদায়ের জন্যে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের সাথেও পিঙ্ক রং সংযুক্ত।

১৮৯৩ সালে লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার নিউজপ্রিন্টে বিশেষ এক স্যালমন পিঙ্ক রং ব্যবহার করা হতো, কারণ ধোয়া সাদা কাগজের চেয়ে রঙকরা পিঙ্ক কাগজের দাম ছিল কম।[৭২] এখন এই রঙটি ব্যবহার করা হয় নিউজ স্ট্যান্ড বা প্রেস কিসক থেকে পত্রিকাগুলো আলাদা করার জন্য। খেলাধুলা নিয়ে কিছু পত্রিকায়, যেমন ইতাদির লা গ্যাজেটটা ডেলো স্পোর্টসে পিঙ্ক ব্যবহার করা হয় অন্যসব ত্রিকা থেখে স্বতন্ত্র হবার জন্য। এছাড়াও এরা ইতালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাইসাইকেল প্রতিযোগিতা গিরো ডিইতালিয়ার বিজয়ীকে একটি পিঙ্ক রঙের জার্সি পুরস্কার দেয় (দেখুন #ক্রীড়া)।

  • ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে একজন সলিসিটার একজন ব্যারিস্টারকে যে ব্রীফ দেয় তা পিঙ্ক রিবন দিয়ে বাঁধা থাকে। অনেক আগে থেকেয় পিঙ্ক রঙকে প্রতিরক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়, আর রিবন হয়তো প্রসিকিউশনের জন্য।[৭৩]

সাহিত্য

সম্পাদনা
  • স্প্যানিশ ও ইতালীয় ভাষায় "পিঙ্ক নভেল" (স্পেনিশে novela rosa, ইতালীয়তে romanzo rosa) হলো মহিলাদের জন্য বিক্রিত আবেগাক্রান্ত উপন্যাস।
  • ন্যাথনিয়েল হ্যাথোর্নের ইয়াং গুডম্যান ব্রাউনে ফেইথ (বিশ্বাস) তার চুলে একটি পিঙ্ক রিবন পরে থাকে যা তার নিষ্পাপতা তুলে ধরে,

[৭৪]

  • কার্ল সিওরলির ডিন্সডেলস পিঙ্ক ছোটগল্পে এক তরুণের বয়ঃসন্ধিকালের কাহিনী যে ১৯৩০ দশকের বার্লিনের লিঙ্গ, যৌনতা ও রাজনীতির মধ্যে বেড়ে ওঠে।
  • যোগী হিন্দু, শাক্ত হিন্দু এবং তান্ত্রিক বৌদ্ধদের ঐতিহ্যে গোলাপ রং চতুর্থ শক্তিকেন্দ্রের রঙসমূহের একটি, হৃদচক্র অনাহতা। অন্য রঙটি সবুজ।
  • ক্যাথলিক মতে পিঙ্ক (ক্যাথলিক চার্চে বলা হয় গোলাপি) হলো আনন্দ ও সুখের প্রতীক। এটি অ্যাডভেন্টের তৃতীয় রবিবার এবং লেন্টের চতুর্থ রবিবারের এই প্রায়শ্চিত্তের সময়ের অর্ধপথ চিহ্নিত করতে। একারণে অ্যাডভান্ট পুষ্পস্তবকে একটি মোমবাতি পার্পলের বদলে পিঙ্ক রঙের রাখা হয়।
  • ভারতীয় আধ্যাত্মিক নেতা মেহেল বাবার সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত রঙটি ছিলো পিঙ্ক। তিনি তার নারী অনুসারী মেহেরা ইরানীকে খুশি করার জন্য প্রায়ই পিঙ্ক রঙের কোট পরতেন। এখন তার অনুসারীদের কাছে পিঙ্ক রঙটি তাই ভালোবাসাল প্রতীক।

ক্রীড়া

সম্পাদনা
  • মেজর লীগ বেসবলের খেলোয়াড়েরা মা দিবসে পিঙ্ক ব্যাট দিয়ে খেলেন, সুসান জে কোমেন ফর দ্য কিওরের লাভের জন্য সপ্তাহব্যাপী প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে।
  • শেয়াল শিকারে (আরেক নাম "হাউন্ডের পিছে ছোটা") যে স্কারলেট রঙের কোট অর্জন করা হয় তাকেও পিঙ্ক বলে। এই নামের উৎস সম্পর্কে এক কিংবদন্থীতে বলে যে তা পিঙ্ক (বা পিঙ্কে বা পিঙ্কিউ) নামের এক দর্জির সৃষ্টি।
  • গিরো ডি ইতালিয়া বাইসাইকেল প্রতিযোগিতার নেতা পিঙ্ক জার্সি (maglia rosa) পরে থাকে; এ দিয়ে ইঙ্গিত করা হয় যে পিঙ্করঙে ছাপা পত্রিকা লা গেজেটো ডেলো স্পোর্ট এর স্পন্সর করছে।
  • আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের 'কিনিক স্টেডিয়াম ভিজিটর্স' লকার রুম পিঙ্ক রঙের। এখানে রঙটি বিতর্ক সৃষ্টি খরেছে, কারণ অনেকের মতে এটা যৌনতা বা হোমোফোবিয়া প্রকাশ করে।[৭৫]
  • পালের্মো, ইতালির পালের্মোতে গড়ে ওঠা একটি ফুটবল দল, ঐতিহ্যগতভাবে তাদের ঘরের মাঠে পিঙ্ক জার্সি পরে থাকে।
  • ডাব্লিউডাব্লিউএফ হল অব ফেমার ব্রেট হার্ট, পাশাপাশি হার্ট রেসলিং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও তাদের পিঙ্ক ও কালো রেসলিং পোশাকের জন্য পরিচিত।
  • ওয়েস্টার্ন হকি লীগ টিম ক্যালগারি হিটম্যান আসলে পিঙ্ক পরতো পূর্বে উল্লিখিত ব্রেট হার্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যিনি কিনা একসময় দলটির পার্টটাইম মালিক ছিলেন।
  • এনআরএলের পেনরিক প্যান্থারস বাইরের মাঠে পিঙ্ক জার্সি পরে।

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. রঙের তালিকা
  2. ফিউশা (রঙ)
  3. গোলাপি
  4. পিঙ্কের শেডসমূহ

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "W3C TR CSS3 Color Module, HTML4 color keywords"। W3.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  2. Shorter Oxford English Dictionary, 5th Edition, Oxford University Press.
  3. Webster New World Dictionary, Third College Edition: "Any of a genus (Dianthus) of annual and perennial plants of the pink family with white, pink or red flowers.; its pale red color."
  4. Heller, Eva: Psychologie de la couleur – effets et symboliques, pp. 179-184
  5. "pink, n.⁵ and adj.²", Oxford English Dictionary Online
  6. Collins Dictionary
  7. The Odyssey, Book XII, translated by Samuel Butler.
  8. "CTCWeb Glossary: R (ratis to ruta)"। Ablemedia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  9. http://www.nationalgallery.org.uk/cgi-bin/WebObjects.dll/CollectionPublisher.woa/wa/work?workNumber=NG6596 The Madonna of the Pinks on the official National Gallery website
  10. Lara Broecke, Cennino Cennini's Il Libro dell'Arte: a New English Translation and Commentary with Italian Transcription, Archetype 2015, p. 62.
  11. Eva Heller, Psychologie de la couleur, effets et symboliques, pp. 182-83
  12. Eva Heller, Psychologie de la couleur - effets et symboliques, p. 184.
  13. The Pink Triangle: The Nazi War Against Homosexuals (1986) by Richard Plant (New Republic Books). আইএসবিএন ০-৮০৫০-০৬০০-১.
  14. McCormick, Joseph Patrick। "Nick Clegg calls for gay victims of the Nazis to be remembered in national Holocaust memorial"Pink Triangle। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  15. Smithsonian Magazine
    When Did Girls Start Wearing Pink?
    In 1927, Time magazine printed a chart showing sex-appropriate colors for girls and boys according to leading U.S. stores. In Boston, Filene’s told parents to dress boys in pink. So did Best & Co. in New York City, Halle’s in Cleveland and Marshall Field in Chicago.

    Today’s color dictate wasn’t established until the 1940s, as a result of Americans’ preferences as interpreted by manufacturers and retailers. “It could have gone the other way”

  16. Stamberg, Susan (এপ্রিল ১, ২০১৪)। "Girls Are Taught To 'Think Pink,' But That Wasn't Always So"npr.orgNPR। ২০১৪-০৪-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-২৬a 1918 trade catalog for children's clothing recommended blue for girls. The reasoning at the time was that it's a 'much more delicate and dainty tone,' Finamore says. Pink was recommended for boys 'because it's a stronger and more passionate color, and because it's actually derived from red.' 
  17. Jennifer Wright (১৪ এপ্রিল ২০১৫)। "How did pink become a girly color?"Vox। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৫ 
  18. "WACK! Exhibition, podcast interview with de Bretteville"। MOCA.org। ১৯৪০-১১-০৪। ২০১০-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-২৭ 
  19. Goodman, Walter (১৯৮৭-১০-১৬)। "Film: Christo, in 'Islands'"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৫ 
  20. Nemitz, Barbara; Fuse, Hideto (২০০৬)। Pink The Exposed Color in Contemporary Art and Culture। New York: Ostfildern:Hatje Cantz। পৃষ্ঠা 68। 
  21. Nemitz, Barbara। Pink The Exposed Color in Contemporary Art and Culture। Hatje Cantz। পৃষ্ঠা 69। 
  22. "Merriam Webster definition of the color "pink""। merriam-webster.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১১ 
  23. "Pink, a Tint of Red"। Landscape-guide.com। ২০১১-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  24. "For example, pink is a tint of red"। Enchantedlearning.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  25. Colors by Hue at MSDN
  26. "Creating Styles in Fireworks"। Adobe.com। ২০০৯-০৭-১৪। জুলাই ২৬, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  27. Dana Lee Ling। "x11 Colors in Hue Saturation Luminosity order"। Comfsm.fm। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  28. "Color Names"। ImageMagick। ২০১০-০১-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  29. K. Saha (২০০৮)। The Earth's Atmosphere - Its Physics and Dynamics। Springer। পৃষ্ঠা 107আইএসবিএন 978-3-540-78426-5 
  30. B. Guenther (ed.) (২০০৫)। Encyclopedia of Modern Optics। Vol. 1। Elsevier। পৃষ্ঠা 186। 
  31. [১] New Scientist, "Colorful pigs evolved through farming, not nature".
  32. Jenner, Thomas (১৬৫২)। A Book of Drawing, Limning, Washing। London: M. Simmons। পৃষ্ঠা 38। 
  33. "Indoor Vertical Farm 'Pinkhouses' Grow Plants Faster With Less Energy"Inhabitat। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৬, ২০১৫ 
  34. "Color Branding & Trademark Rights"Color Matters। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৩, ২০১৬ 
  35. "MUTCD 2009 Edition Chapter 6F. Temporary Traffic Control Zone Devices"Federal Highway Administration। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৩, ২০১৬ 
  36. Eva Heller, Psychologie de la couleur - effets et symboliques, p. 179-185
  37. Eva Heller, Psychologie de la couleur - effets et symboliques, p. 179.
  38. Eva Heller, Psychologie de la couleur - effets et symboliques, p. 179
  39. "Spring is Pink"SRI Threads। এপ্রিল ৪, ২০১১। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৭, ২০১৬ 
  40. "Season Colour – I Think Spring is Green"Calvin-C.com। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬ 
  41. Romeo and Juliet, Act 2, Scene 4
  42. "Opportunities in the Pink Economy of the United Kingdom" (পিডিএফ)। মার্চ ২৭, ২০০৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  43. Eva Heller, Psychologie de la couleur – effets et symboliques
  44. Phyllis A. Lyday "Iodine and Iodine Compounds" in Ullmann's Encyclopedia of Industrial Chemistry, 2005, Wiley-VCH, Weinheim
  45. Reported by Food Channel Editor site, July 30, 2008. Source: the International Ice Cream Association, 888 16th Street, Washington DC.
  46. Jo B. Paoletti, Pink and Blue: Telling the Girls From the Boys in America (Indiana University Press, 2012), 87
  47. "Smithsonian, When Did Girls Start Wearing Pink?, April 2011"। ৯ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৭ 
  48. "Is pink for girls or boys?"BBC Radio। ১৯ ডিসেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১২ 
  49. Smithsonian.com: Jeanne Maglaty, "When Did Girls Start Wearing Pink?," April 8, 2011 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত নভেম্বর ৯, ২০১৩ তারিখে, accessed June 4, 2011
  50. Merkin, Daphne. "Gender Trouble", The New York Times Style Magazine, March 12, 2006. Retrieved 10 December 2007.
  51. Orenstein, Peggy. "What's Wrong With Cinderella?", The New York Times Magazine, December 24, 2006, retrieved December 10, 2007. Orenstein writes: "When colors were first introduced to the nursery in the early part of the 20th century, pink was considered the more masculine hue, a pastel version of red. Blue, with its intimations of the Virgin Mary, constancy and faithfulness, was thought to be dainty. Why or when that switched is not clear, but as late as the 1930s a significant percentage of adults in one national survey held to that split."
  52. Jude Stewart (২০০৮)। "Pink is for Boys: cultural history of the color pink"Step Inside Design Magazine। ২০০৮-০২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  53. Kimmell, Michael. Manhood in America: A Cultural History, 1996, The Free Press. p.158
  54. Eva Heller, Psychologie de la couleur; effets et symboliques.
  55. Paoletti, 92
  56. Ben Goldacre (২০০৭-০৮-২৫)। "Bad Science"Out of the Blue and into the Pink। London। 
  57. Zucker, Kenneth J. & Bradley, Susan J. (১৯৯৫)। Gender Identity Disorder and Psychosexual Problems in Children and Adolescents। Guilford Press। পৃষ্ঠা 203। আইএসবিএন 0-89862-266-2 
  58. Paoletti, 97-8
  59. "Lionel's 1957 pink train for girls:"। Lionel-train-set.com। ২০১৩-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-০৭ 
  60. "Pink: The Color." "Part 2: Girl Culture A to Z" - In: Mitchell, Claudia and Jacqueline Reid-Walsh (editors). Girl Culture: Studying girl culture : a readers' guide or Girl Culture: An Encyclopedia Volume 1. ABC-CLIO (Greenwood Publishing Group), 2008. আইএসবিএন ০৩১৩৩৩৯০৯০, 9780313339097. p. 473. "It is important to note its significance to femininity as a Western phenomenon, because the color is a sign of masculinity in Japan and signifies a welcome embrace in India.[...]of pink with femininity has been strategically used in gendered terms to convey strength and pride: pink is the color of Breast Cancer Awareness Month, and many feminist groups have adopted the color pink as a sign of empowerment." - See Google Books search result
  61. "Real Men Wear Pink | NBCF"Real Men Wear Pink 2016 – The National Breast Cancer Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২১ 
  62. "What does pink mean? pink Definition"। ২০১২-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-২৯ 
  63. "Pink thrills: Japanese sex movies go global | The Japan Times Online"। Search.japantimes.co.jp। ২০০৮-১২-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-১৬ 
  64. "Why is the British Empire coloured pink on maps?"Royal Museums Greenwich। অক্টোবর ৬, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  65. "Website of Pink magazine:"। Pinkmag.com। ২০০৯-১২-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  66. irishpinkadoptions.com https://web.archive.org/web/20100331044341/http://irishpinkadoptions.com/। ৩১ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  67. Katy Guest (১৮ ডিসেম্বর ২০১১)। "Girls will be girls: The battle for our children's hearts and minds this Christmas"The Independent। London। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  68. Susanna Rustin (২১ এপ্রিল ২০১২)। "Why girls aren't pretty in pink"The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  69. Harry Wallop (৩০ নভেম্বর ২০০৯)। "Pink toys 'damaging' for girls"Daily Telegraph। London। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  70. "Pink Pistols website:"। Pinkpistols.org। ২০০১-০৩-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 
  71. Fernandez, Sandy (জুন–জুলাই ১৯৯৮)। "Pretty in Pink"। ২০০৯-০৮-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৩ 
  72. Cited by Stephen Fidler of the Wall Street Journal, formerly a correspondent for the Financial Times.
  73. O'Riordain, Aoife (১৯৯৮-১০-০৩)। "The evidence: The barrister's desk"The Independent। London। 
  74. As he moves out of the darkness, a pink ribbon blows down next to him and he sees that Faith is part of the "communion" that is taking place in the woods.
  75. "Controversy regarding pink University of Iowa locker room:"। Sports.espn.go.com। ২০০৫-০৯-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১১ 

গ্রন্থপঞ্জী

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা