পারভেজ মেহেদী কোরেশী

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত বৈমানিক

এয়ার চীফ মার্শাল পারভেজ মেহেদী কোরেশী (জ. ১ অক্টোবর ১৯৪৩), নিশান-ই-ইমতিয়াজ (মিলিটারি), সিতারা-ই-বাসালাত, সাধারণভাবে পিকিউ মেহেদী নামে পরিচিত, একজন অবসরপ্রাপ্ত চার-তারকা বিমান বাহিনী কর্মকর্তা এবং সাবেক লড়াকু বৈমানিক যিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ৮ম প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যে পদে নিয়োগ পান ১৯৯৭ সালে এবং ২০০০ সালে অবসরপ্রাপ্ত হন। এয়ার চীফ মার্শাল মেহেদী পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের বন্ধু ছিলেন।[]

পারভেজ মেহেদী কোরেশী
پرویز مهدی قریشی
পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রধান
কাজের মেয়াদ
৭ নভেম্বর ১৯৯৭ – ২০ নভেম্বর ২০০০
পূর্বসূরীএয়ার চীফ মার্শাল আব্বাস খাট্টাক
উত্তরসূরীএয়ার চীফ মার্শাল মুশাফ আলী মীর
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মপারভেজ মেহেদী কোরেশী
(1943-10-01) ১ অক্টোবর ১৯৪৩ (বয়স ৮১)
ফলিয়া, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
সামরিক পরিষেবা
ডাকনামপিকিউ মেহেদী
আনুগত্য পাকিস্তান
শাখা পাকিস্তান বিমানবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৬১-২০০০
পদএয়ার চীফ মার্শাল
ইউনিটনং ১৬ স্কোয়াড্রন (ব্ল্যাক প্যান্থার্স)
কমান্ডবিমান বাহিনী প্রধান
উপ বিমান বাহিনী প্রধান (সমরাভিযান)
এয়ার অধিনায়ক, সারগোদা বিমান ঘাঁটি
পাবিবা ঘাঁটি নুর খানের অধিনায়ক
আকাশ প্রতিরক্ষা কমান্ড এর অধিনায়ক
যুদ্ধভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ (পূর্ব পাকিস্তান বিমান সমর অভিযান)
কার্গিল যুদ্ধ
পুরস্কারনিশান-ই-ইমতিয়াজ (সামরিক)
সিতারা-ই-বাসালাত
সোর্ড অব অনার (পাকিস্তান)

পূর্ব জীবন

সম্পাদনা

১৯৪৩ সালের ১ই অক্টোবর এক দরিদ্র চাষা পরিবারে মেহেদী জন্ম নেন পাঞ্জাব প্রদেশে।[] একটা গ্রাম্য উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কোনো রকমে ম্যাট্রিক পাশ করে ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরি পেয়ে যান মেহেদী, ক্যাডেট হিসেবে তিনি প্রথমে কাকুলস্থিত পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন, ওখানে তিনি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন যিনি সেনাবাহিনীতে কমিশনের জন্য পড়ছিলেন। আব্দুল আজিজ মীর্জা নামের আরো একজন ছিলেন যিনি মেহেদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হন তবে ইনি নৌবাহিনীতে কমিশনের জন্য অধ্যায়নরত ছিলেন।[]

মেহেদীকে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ শেষে রিসালপুরে বিমান বাহিনীর বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়, এখান থেকে তিনি ১৯৬৪ সালে ৩৮তম বৈমানিক ক্যাডেট ব্যাচ থেকে বের হন।[]

মেহেদী কমিশন পান পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কালো চিতা বলে খ্যাত নং ১৬ স্কোয়াড্রনে, লড়াকু বৈমানিক হিসেবে প্রথমেই তিনি এফ-৮৬ স্যাবর জঙ্গিবিমান চালানোর বিরল কৃতিত্ব লাভ করেন।[]

যুদ্ধ এবং বন্দীত্ব

সম্পাদনা
 
১৯৭১ সালে মেহেদীর এই এফ-৮৬ স্যাবর জেট জঙ্গিবিমানই ভূপাতিত করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী।:cont.[]

১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের একটি বড় যুদ্ধ শুরু হলে মেহেদীকে যুদ্ধে নামানো হয়, মেহেদী ছিলেন পাইলট অফিসার পদবীতে সবচেয়ে অধস্তন কর্মকর্তা। তিনি এফ-৮৬ জঙ্গিবিমান নিয়ে ভারতীয় বিমান ফল্যান্ড ন্যাটের সঙ্গে ডগফাইট করেন।[] ১৯৬৬ সালে মেহেদী ফ্লাইং অফিসার এবং ১৯৬৯ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হন।

ঊনসত্তর সালেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানে বদলী হন, তাকে নং ১৪ স্কোয়াড্রনে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।[] পরের বছর এই একই স্কোয়াড্রনের একটি ফ্লাইটের নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা পান তিনি।[] মেহেদী বয়রার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যেটা যশোর এলাকায় ছিলো।

২২ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মেহেদী গরিবপুরের যুদ্ধতে (যশোর জেলা) তার বিমান চালান।[] পরের দিন ২৩ তারিখ মেহেদী বিমান চালাতে চালাতে ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি (যশোরের চৌগাছা উপজেলা) চলে আসলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিমানবিধ্বংসী গোলার আঘাতে প্যারাশুট দিয়ে নিচে অবতরণ করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাকে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ২৩শে নভেম্বর মেহেদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সৈনিকেরা তাকে রাইফেল দিয়ে পেটায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন তার সঙ্গে ভালো আচরণ করে তাকে সৈনিকদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন।[] ভারতীয় সংবাদপত্র এবং রেডিওতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পারভেজ মেহেদী কোরেশী নামের একজন বৈমানিক ধরা পড়েছেন - এ খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়; তাছাড়া ঢাকা বিমানঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক (এয়ার অফিসার কমান্ডিং) এয়ার কমোডোর এনামুল হক এই খবরটি পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমান বাহিনী সদর দপ্তরে পাঠান এবং রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানও এই সংবাদটি পেয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের ঐ পাইলটটাকে হত্যা করতে পারে।

ভারতীয় সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় অবস্থিত নং ১৪ স্কোয়াড্রনকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।[১০]

যুদ্ধ পরবর্তী জীবন

সম্পাদনা

১৯৭৩ সালে মেহেদী ভারতের যুদ্ধবন্দ্বীত্ব থেকে রক্ষা পান, তিনি পাকিস্তানে এসে আবার যুদ্ধবিমান চালানোর অনুশীলন করেন, এবং ১৯৭৬ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনী ওয়ার কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[১১] এরপর মেহেদী বদলী হন পাঞ্জাবের সারগোদার কমব্যাট কমান্ডার্স স্কুলে পড়তে, তখন তার পদবী ছিলো স্কোয়াড্রন লিডার। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত মেহেদী উইং কমান্ডার পদবীতে সারগোদা বিমান ঘাঁটির নং ৯ স্কোয়াড্রনের অধিনায়কের দায়িত্ব পান।[১২] ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত মেহেদী গ্রুপ ক্যাপ্টেন মদমর্যাদায় সারগোদা বিমান ঘাঁটির অধিনায়ক ছিলেন। এই সময়ই মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জঙ্গিবিমান এফ-১৬ চালানোর অনুমতি পান।[১৩]

১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মেহেদী সিন্ধু প্রদেশের সাউদার্ন এয়ার কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন এয়ার কমোডোর পদবীতে। এয়ার ভাইস মার্শাল পদবীতে তিনি নর্দান এয়ার কমান্ডের অধিনায়ক হন; ১৯৯৫ সালে চাকলালা বিমান ঘাঁটির অধিনায়ক হন।[] ১৯৯৭ সালে বিমান বাহিনী প্রধান হওয়ার আগ পর্যন্ত মেহেদী এয়ার মার্শাল পদবীতে বিমান বাহিনী সদর দপ্তরেই ছিলেন, তার নিয়োগ ছিলো উপ-বিমান বাহিনী প্রধান (সামরিক অভিযান) এর।[][১৪]

কার্গিল যুদ্ধের সময় এয়ার চীফ মার্শাল মেহেদী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নির্দেশে তার বিমান বাহিনীকে ভারতে হামলা করার নির্দেশ দিতে গিয়েছিলেন কিন্তু সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশাররফের কথা শুনে আগে কদম ফেলেননি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Musharraf, Pervez (২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬)। In the Line of Fire: A Memoir (1 সংস্করণ)। Pakistan: Free Press। পৃষ্ঠা 40–60। আইএসবিএন 074-3283449। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১২ 
  2. Siddiqui, Shabnam; Waslekar, Sundeep (২০০২)। Pillai, Leena, সম্পাদক। The Future of Pakistan (1st সংস্করণ)। Mumbai: Strategic Foresight Group। পৃষ্ঠা 112। আইএসবিএন 9788188262007 
  3. Musharraf, Pervez (২০০৮)। "The Potters' Wheel"। In the Line of Fire (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Islamabad: Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 368। আইএসবিএন 9781847395962। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  4. Excerpts from SP Volume। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  5. SP's Military Yearbook (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়)। India: Guide Publications। ১৯৯৯। 
  6. Lal, Indian IAF, ACM P. C. (২০১৩)। "Gnats"। Lal, Ella। My Years with the IAF (google books) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। New Delhi, India: Lancer Publishers LLC। আইএসবিএন 9781935501756। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  7. Panag, IA, Lt. Gen. H.S. (৮ জুন ২০১৬)। "When I captured the man who would be Pakistan's Air Chief"www.newslaundry.com (ইংরেজি ভাষায়)। New Delhi: Newslaundry। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  8. Singh, Indian IAF, Gp. Capt. Ranbir (২০০৯)। "Chottu's incredible Flight Across the Border"। Memorable War Stories (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। New Delhi: Prabhat Prakashan। আইএসবিএন 9788188322664। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  9. Bowman, Martin (২০১৬)। "§The Indo-Paks Wars"। Cold War Jet Combat: Air-to-Air Jet Fighter Operations 1950-1972 (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Oxford, UK: Pen and Sword। পৃষ্ঠা 210। আইএসবিএন 9781473874633। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  10. Chander, Prakash (২০০৩)। India and Pakistan : unending conflict। New Delhi: APH Publishing Corporation। আইএসবিএন 9788176484039 
  11. Shaikh, A. Rashid; ও অন্যান্য (২০০১)। The Story of the Pakistan Air Force, 1988-1998: a battle against odds (1st সংস্করণ)। Islamabad, Pakistan: Shaheen Foundation। পৃষ্ঠা 414। আইএসবিএন 9789698553005 
  12. Hussain, Syed Shabbir; Qureshi, M. Tariq (১৯৮২)। History of the Pakistan Air Force: 1947-1982 (googlebooks) (ইংরেজি ভাষায়)। Islamabad: Pakistan Air Force। পৃষ্ঠা 332। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. Jane's International Defense Review: IDR (ইংরেজি ভাষায়)। Jane's Information Group। ১৯৯৮। 
  14. Release। "Air Chief Marshal Parvaiz Mehdi Qureshi, NI(M), S Bt"। PAS Falcoms (unofficial)। ১৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১২