পরশ পাথর (চলচ্চিত্র)
পরশ পাথর ১৯৫৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার একটি কাল্পনিক হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র। এটি অপু ত্রয়ীর পর সত্যজিৎ রায়ের প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রটি তার প্রথম হাসির, যাদু ও পরাবাস্তব ছবি। চলচ্চিত্রটি রাজশেখর বসুর (পরশুরাম) ছোট গল্প "পরশ পাথর" অবলম্বনে তৈরি। চলচ্চিত্রটি একজন মধ্যবিত্ত কেরানিকে কেন্দ্র করে নির্মিত যিনি ভাগ্যক্রমে একটি পাথর কুড়িয়ে পান, যেটির স্পর্শে অন্যান্য বস্তু সোনায় পরিণত হয়।
পরশ পাথর | |
---|---|
পরিচালক | সত্যজিৎ রায় |
প্রযোজক | প্রমোদ লাহিড়ী |
রচয়িতা | সত্যজিৎ রায় |
উৎস | পরশুরাম কর্তৃক পরশ পাথর |
শ্রেষ্ঠাংশে | তুলসী চক্রবর্তী রানীবালা দেবী কালী বন্দ্যোপাধ্যায় জহর রায় গঙ্গাপদ বসু হরিধন মুখোপাধ্যায় বীরেশ্বর সেন মনি শ্রীমণি ছবি বিশ্বাস পাহাড়ী সান্যাল |
সুরকার | রবিশঙ্কর |
চিত্রগ্রাহক | সুব্রত মিত্র |
সম্পাদক | দুলাল দত্ত |
পরিবেশক | এডোয়ার্ড হ্যারিশন |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১১১ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
কাহিনী সংক্ষেপ
সম্পাদনাপরেশ দত্ত (তুলসী চক্রবর্তী) একজন সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত কেরানী। তিনি বৃষ্টির দিনে খেলা থেকে ফেরার পথে কার্জন পার্কে কুড়িয়ে পান একটি গোলাকৃতি পাথর। সেটি তার পাড়ার ভাইপো পল্টুকে খেলার জন্যে দিলে হঠাৎ জানা যায় লোহা ওই পাথরে স্পর্শ করলেই তা সোনা হয়ে যাচ্ছে। পরেশবাবু 'পরশ পাথর' পাওয়ার আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েন।
তিনি প্রচুর লোহা কিনে তা সোনা করতে থাকেন। রাজনীতি এবং ব্যবসা জগতের একজন কেউকেটা হয়ে যান। সেক্রেটারি রাখেন প্রিয়তোষ হেনরী বিশ্বাস (কালী বন্দ্যোপাধ্যায়) নামে একটি খৃষ্টান তরুনকে। বিভিন্ন সভা-সমিতি, পার্টি এবং অনুষ্ঠানে তার ডাক পড়তে থাকে।
একদিন ফাঁস হয়ে যায় পরেশবাবু এত সম্পত্তি কীভাবে করেছেন। দেশে তোলপাড় শুরু হয়, সোনার দাম পড়ে যাওয়ার আশংকায় লোকে জমানো সোনা বেচতে থাকে।
প্রিততোষকে পাথরটি ও অন্যান্য সম্পত্তি দান করে পরেশবাবু স্ত্রীর সাথে তীর্থ দর্শনে বেরিয়ে পড়েন কিন্তু পুলিশ তাদের আটকায় ও থানায় ধরে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে প্রিয়তোষ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পাথরটি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হাসপাতালে এক্স-রে করে দেখা যায় প্রিয়তোষ পাথড়টা ক্রমশ হজম করে ফেলছে। ডাক্তার (মনি শ্রীমানি) জানান এই অবস্থায় অপারেশন সম্ভব নয়। পুলিশ কোনোভাবেই সেটা উদ্ধার করতে পারেনা। পাথরটি সম্পূর্ণ হজম হয়ে গেলে এযাবৎ যত লোহা সোনায় রূপান্তরিত হয়েছিল সব পূর্বাবস্থায় চলে আসে। মুক্তি পেয়ে পরেশবাবু স্ত্রী, সেক্রেটারি ও চাকর (জহর রায়) কে নিয়ে গড়ের মাঠে জুড়িগাড়ি চড়ে বেরিয়ে পড়েন। তার পরিশ্রমী ও বাস্তব জীবন আবার নতুন করে অনুভূত হয়।
অভিনয়ে
সম্পাদনা- তুলসী চক্রবর্তী – পরেশ চন্দ্র দত্ত
- রানীবালা দেবী - গিরিবালা দত্ত (পরেশের স্ত্রী)
- কালী বন্দ্যোপাধ্যায় – প্রিয়তোষ হেনরি বিশ্বাস (পরেশের ব্যক্তিগত সচিব)
- জহর রায় – ব্রজহরি, চাকর
- গঙ্গাপদ বসু – ব্যবসায়ী কাচালু
- হরিধন মুখোপাধ্যায়- পুলিশ ইন্সপেক্টর চ্যাটার্জি
- বীরেশ্বর সেন – পুলিশ অফিসার
- মনি শ্রীমানি - ডাক্তার নন্দী
এছাড়া ছাবি বিশ্বাস, জহর গাঙ্গুলি, পাহাড়ী সান্যাল, কমল মিত্র , নীতিশ মুখোপাধ্যায়, সুবোধ গাঙ্গুলি, তুলসী লাহিড়ী, অমর মল্লিক, চন্দ্রবাটি দেবী, রেণুকা রায় এবং ভারতী দেবী ককটেল পার্টিতে আগত অতিথির ভূমিকায় অভিনয় করেন।
অভ্যর্থনা
সম্পাদনাসত্যজিৎ রায় নিজেই এই চলচ্চিত্রটিকে "কৌতুক, কল্পনা, ব্যঙ্গ, প্রহসন এবং উদ্দীপনার সংমিশ্রণ" হিসেবে আখ্যা দেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৫৮ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রবেশ করে,[১] সেখানে এটি পাম ডি'অর (শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র) বিভাগে প্রতিযোগিতা করে।[২]
সংরক্ষণ
সম্পাদনা২০০৭ সালে একাডেমি ফিল্ম আর্কাইভ পরশ পাথর চলচ্চিত্রের একটি কপি নিজেদের সংরক্ষণে রাখে।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Festival de Cannes: Parash Pathar"। festival-cannes.com। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
- ↑ "Awards for Satyajit Ray"। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
- ↑ "Preserved Projects"। একাডেমি ফিল্ম আর্কাইভ।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে পরশ পাথর (ইংরেজি)