নোয়ার চলচ্চিত্র
নোয়ার চলচ্চিত্র (ফরাসি: Film noir ফিল্ম নোয়ার) (নয়ার চলচ্চিত্র বা নয়ার সিনেমা নামেও পরিচিত) বলতে মূলত অপরাধ-জগৎ নিয়ে নির্মিত হলিউডের শৈলীনিষ্ঠ নাট্য বা থ্রিলার চলচ্চিত্রগুলোকে বোঝায়, বিশেষ করে যেগুলোতে হতাশাবাদী মনোভাব এবং যৌন প্রণোদনার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ধ্রুপদের যুগের এই সিনেমাগুলোর নির্মাণকাল ছিল ১৯৪০ থেকে ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত। সে যুগের নোয়ার সিনেমাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লো-কি আলোকসজ্জা ব্যবহার করে সাদাকালো চিত্র ধারণ। এই দৃশ্যশৈলী প্রকৃতপক্ষে জার্মান অভিব্যক্তিবাদী (expressionism) চিত্রগ্রহণ থেকে এসেছে। এ সিনেমাগুলোর কাহিনী এবং মনোভঙ্গির উৎপত্তিস্থল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মহামন্দার সময় জন্ম নেয়া অপরাধ-জগৎ-সংশ্লিষ্ট অসংখ্য দুর্ধর্ষ কল্পকাহিনী।
ফরাসি ভাষায় film noir শব্দ দুটির অর্থ কৃষ্ণ চলচ্চিত্র।[১] হলিউড সিনেমার ক্ষেত্রে এই বাগধারাটি প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক নিনো ফ্রঁ, ১৯৪৬ সালে। ধ্রুপদী যুগের মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের অধিকাংশ ব্যক্তিই এ নাম সম্পর্কে কিছু জানতেন না।[২] চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদ ও সমালোচকরা অতীত পর্যালোচনার মাধ্যমে নামটি ব্যবহার শুরু করেছিলেন। ১৯৭০-এর দশকে এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়, এর আগে অধিকাংশ নোয়ার সিনেমাকে মেলোড্রামা হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। নোয়ার সিনেমাকে একটি আলাদা ঘরানা বা জঁরা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে কিনা এ নিয়ে এখনও চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়ে গেছে।
নোয়ার সিনেমার কাহিনী অনেক ধরনের হতে পারে— কেন্দ্রীয় চরিত্রটি হতে পারে কোন প্রাইভেট গোয়েন্দা বা নজরদারিতে নিয়োজিত কোন ব্যক্তি (দ্য বিগ স্লিপ, ১৯৪৬), সাদা পোশাকের পুলিশ (দ্য বিগ হিট, ১৯৫৩), বয়স্ক মুষ্টিযোদ্ধা (দ্য সেট-আপ, ১৯৪৯), অন্যের নির্ভরতা আদায়ের পর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এমন কোন দুর্ভাগা (নাইট অ্যান্ড দ্য সিটি, ১৯৫০), কোন ন্যায়নিষ্ঠ নাগরিক যে ভাগ্যচক্রে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে (গান ক্রেজি, ১৯৫০) অথবা কেবল পরিস্থিতির শিকার কোন সাধারণ মানুষ (ডি.ও.এ., ১৯৫০)। নোয়া সিনেমা এক সময় কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বানানো হলেও পরবর্তীকালে অনেক দেশেই এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ১৯৬০-এর দশকের পরে নির্মীত অনেক চলচ্চিত্রে ধ্রুপদী যুগের নোয়া সিনেমার নিয়মাবলী ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরবর্তী কালের এসব নোয়া-সদৃশ সিনেমাকে বলা হয় নব্য-নোয়া চলচ্চিত্র। অন্যদিকে নোয়া সিনেমার আলঙ্কারিক দিকগুলো নিয়ে সেই ১৯৪০-এর দশক থেকেই ব্যঙ্গাত্মক ছবি নির্মীত হয়ে আসছে।
পটভূমি
সম্পাদনাচলচ্চিত্র থেকে
সম্পাদনানোয়ার সিনেমার নান্দনিকতা অনেকাংশেই জার্মান অভিব্যক্তিবাদ দ্বারা প্রভাবিত। ১৯১০ থেকে ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত মূলত জার্মান নাটক, আলোকচিত্র, চারুকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য এবং সিনেমায় এই বিপ্লব দেখা দিয়েছিল। হলিউডে সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি থাকায় এবং জার্মানিতে দিনদিন নাৎসি পার্টির প্রভাব বাড়তে থাকায় সে সময় জার্মানিতে কর্মরত অনেক চলচ্চিত্রকার ও কুশলী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান যার মাঝে অনেকেই সরাসরি অভিব্যক্তিবাদের সাথে জড়িত ছিলেন অথবা তার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পড়াশোনা করেছেন।[৩]
সর্বকালের সেরা নোয়ার চলচ্চিত্র
সম্পাদনাইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ-এ দর্শকদের ভোটের ভিত্তিতে সর্বকালের সেরা ৫০টি নোয়া চলচ্চিত্রের একটি তালিকা করা হয়েছে যাতে প্রথম স্থানে রয়েছে বিলি ওয়াইল্ডারের সানসেট বুলেভার্ড।[৪] এই তালিকায় সেরা দশটি সিনেমা হচ্ছে:
রেংকিং | আইএমডিবি রেটিং | সিনেমার নাম | ইংরেজি নাম | মুক্তির সন | পরিচালক |
---|---|---|---|---|---|
১ | ৮.৭ | সানসেট বুলেভার্ড | Sunset Blvd. | ১৯৫০ | বিলি ওয়াইল্ডার |
২ | ৮.৬ | এম | M | ১৯৩১ | ফ্রিৎস লাং |
৩ | ৮.৫ | ডাবল ইনডেমনিটি | Double Indemnity | ১৯৪৪ | বিলি ওয়াইল্ডার |
৪ | ৮.৩ | দ্য থার্ড ম্যান | The Third Man | ১৯৪৯ | ক্যারল রিড |
৫ | ৮.৩ | দ্য মাল্টিজ ফ্যালকন | The Maltese Falcon | ১৯৪১ | জন হিউজটন |
৬ | ৮.৩ | টাচ অফ ইভিল | Touch of Evil | ১৯৫৮ | অরসন ওয়েলস |
৭ | ৮.২ | দিয়াবোলিক | Diabolique | ১৯৫৫ | অঁরি-জর্জ ক্লুজো |
৮ | ৮.২ | স্ট্রেঞ্জারস অন আ ট্রেন | Strangers On a Train | ১৯৫১ | আলফ্রেড হিচকক |
৯ | ৮.২ | রিফিফি | Riffi | ১৯৫৫ | জুল দাসাঁ |
১০ | ৮.২ | নটরিয়াস | Notorious | ১৯৪৬ | আলফ্রেড হিচকক |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত ধ্রুপদী নোয়া চলচ্চিত্রসমূহ | |
---|---|
১৯৪০-৪৯ |
দ্য ম্যাল্টিজ ফ্যালকন |
শ্যাডো অফ আ ডাউট |
লরা |
ডাবল ইনডেমনিটি |
মিলড্রেড পিয়ার্স |
দ্য লস্ট উইকএন্ড |
১৯৫০-৫৮ |
গান ক্রেজি |
ডি.ও.এ. |
ইন আ লোনলি প্লেস |
দ্য অ্যাসফল্ট জাংগল |
সানসেট বুলেভার্ড |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ উদাহরণস্বরূপ দেখুন, Biesen (2005), p. 1; Hirsch (2001), p. 9; Lyons (2001), p. 2; Silver and Ward (1992), p. 1; Schatz (1981), p. 112. Outside the field of noir scholarship, "dark film" is also offered on occasion; see, e.g., Block, Bruce A., The Visual Story: Seeing the Structure of Film, TV, and New Media (2001), p. 94; Klarer, Mario, An Introduction to Literary Studies (1999), p. 59.
- ↑ Naremore (2008), pp. 4, 15–16, 18, 41; Ballinger and Graydon (2007), pp. 4–5, 22, 255.
- ↑ Bould (2005), pp. 24–33.
- ↑ Top Rated "Film-Noir" Titles ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে, IMDb