নূতন (ভারতীয় অভিনেত্রী)

ভারতীয় অভিনেত্রী

নূতন সমর্থ (মারাঠি: नूतन; জন্ম: ৪ জুন, ১৯৩৬ - মৃত্যু: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১) তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সির মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন। নূতন নামেই দর্শকমহলে সমধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। চার দশককাল সুদীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে ৭০-এর অধিক হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁকে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা পরিচ্ছন্ন নারী অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।[][] তিনি মোট পাঁচবা ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেন।

নূতন সমর্থ
জন্ম
নূতন সমর্থ

(১৯৩৬-০৬-০৪)৪ জুন ১৯৩৬
মৃত্যু২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১(1991-02-21) (বয়স ৫৪)
কর্মজীবন১৯৫০-১৯৯১
দাম্পত্য সঙ্গীরজনীশ বেহল (১৯৫৯-১৯৯১; মৃত্যু)
সন্তানমোহনিশ বেহল
পিতা-মাতাশোভনা সমর্থ
কুমারসেন সমর্থ
আত্মীয়তনুজা (বোন)
দেখুন মুখার্জী-সমর্থ পরিবার

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

বিশিষ্ট পরিচালক ও কবি কুমারসেন সমর্থ এবং তার অভিনেত্রী পত্নী শোভনা সমর্থের চার সন্তানের একজনরূপে জন্মগ্রহণ করেন।[] মারাঠি পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। তনুজা ও চতুরা নাম্নী ছোট দুই বোন এবং এক ভাই ছিল। তন্মধ্যে তনুজা সফল অভিনেত্রী ছিলেন। শৈশবেই বাবা-মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তনুজা'র কন্যা কাজলও সফল অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেছেন।

অভিনয়

সম্পাদনা

নূতনের সাথে গত পঞ্চাশ বছরে অগণিত চলচ্চিত্র তারকার সাথে জানাশোনা ছিল।

১৯৫০ সালে চৌদ্দ বছর বয়সে হামারি বেটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়কর্মের সূচনা ঘটান। তাঁর মা শোভনা সমর্থ চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন। এরপর নাগিনা ও হামলোগে ধারাবাহিকভাবে ১৯৫১ সালে অভিনয় করেন। ১৯৫২ সালে তিনি মিস ইন্ডিয়া শিরোপা জয় করেন।

১৯৫৫ সালে সীমা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন। সীমা চলচ্চিত্রে অনবদ্য ভূমিকার কারণে তিনি প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর এ সফলতা ধরে রাখেন আবেগধর্মী পেয়িং গেস্ট (১৯৫৭-এর চলচ্চিত্র)-এ। এ চলচ্চিত্রে তাঁর নায়ক ছিলেন দেব আনন্দ। ১৯৫৯ সালে রাজ কাপুরের সাথে আনারী ও বিমল রায়ের সুজাতা চলচ্চিত্রে সুনীল দত্তের সাথে অভিনয় করেন। দুটো ছবিই দর্শকমহলে সাড়া জাগায়। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে চালিয়া, স্বরস্বতীচন্দ্র, দেবী ও মে তুলসী তেরে অঙ্গন কি'র ন্যায় চলচ্চিত্রগুলো সফলতা লাভ করে।

১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মনমোহন দেশাইয়ের চালিয়ায় রাজ কাপুরের বিপরীতে পুনরায় অভিনয় করেন। ছবিতে তাঁর চরিত্রের অভিনয়ের কারণে আরও একবার ফিল্মফেয়ার কর্তৃক মনোনীত হন। ঐ সময়ে চলচ্চিত্রটি পর্যালোচনা করে ফিল্মফেয়ার লিখেছিল যে, 'ভাগ্যবঞ্চিত বালিকা কোন দোষ না করা স্বত্ত্বেও প্রতিবেশীদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়। এতে নূতন চমৎকারভাবে নিজেকে যথোচিত উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন।'[] চিত্রতারকা দেব আনন্দের সাথে জনপ্রিয় জুটি গড়েন। তারা সর্বমোট চারটি চলচ্চিত্রে অংশ নেন।

কেন্দ্রীয় চরিত্রে ১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৭০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত দূর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব কায়েম করেন। এসময়ে তিনি সুজাতা, বন্দিনী, মিলন এবং মে তুলসী তেরে অঙ্গন কি চলচ্চিত্রসমূহে অভিনয়ের জন্য আরও চারবার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এছাড়াও ঐ সময়ে আনারী, চালিয়া, তেরে ঘর কে সামনে, স্বরস্বতীচন্দ্র, অনুরাগ এবং সওদাগর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে সাড়া জাগান।

১৯৮০-এর দশকে চরিত্রধর্মী অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন ও মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অভিনয়কর্ম চালিয়ে যান। এ সময়ে তার অভিনীত অধিকাংশ চরিত্রই মাতৃপর্যায়ের ছিল। তন্মধ্যে ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মেরি জাং চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে ষষ্ঠ ও সর্বশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। তবে এ পুরস্কারটি সেরা সহঃ অভিনেত্রী বিভাগের ছিল। ১৯৮৯ সালে জীবিত থাকাবস্থায় সর্বশেষ চলচ্চিত্র কানুন আপনা আপনা মুক্তি পায়। তার মৃত্যুর পর ১৯৯২ সালে নসীবওয়ালা ও ১৯৯৪ সালে ইনসানিয়াত মুক্তিপ্রাপ্ত হয়।

সম্মাননা

সম্পাদনা

১৯৭৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করে। নূতন রেকর্ডসংখ্যক পাঁচবার সেরা অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন যা ৩০ বছরের অধিককাল টিকেছিল। পরবর্তীতে তার বোনঝি কাজল ২০১১ সালে তার সমকক্ষ হন। সর্বোপরি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মহিলা অভিনেতা বিভাগে সর্বাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। ছয়টি পুরস্কার পেয়ে তার সাথে রয়েছেন জয়া বচ্চন[] ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক তার সম্মানার্থে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বিবৃত করে যে, নূতন বিমল রায়ের নির্দেশনায় সহজাত অভিনয় প্রতিভার স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন।[]

সাধনা এবং স্মিতা পাতিলের ন্যায় অভিনেত্রীরা নূতনকে অনুসরণ করেছেন।[] সাধনা একসময় বলেছিলেন যে, 'আমি সীমা, সুজাতা ও বন্দিনী চলচ্চিত্রে নূতনের চরিত্রে নিজেকে দেখতে পাই। পরখ এমনই এক চলচ্চিত্র যেখানে আমি প্রকৃতপক্ষেই নূতনকে অনুসরণ করেছি।'[] জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সঞ্জয় লীলা বনশালি তার সম্বন্ধে মন্তব্য করেন যে, তারা তার ন্যায় অন্য কোন অভিনেত্রী তৈরি করতে পারবে না।[] ২০১১ সালে রেডিফ.কম তাকে সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রাখে।[১০]

জনপ্রিয় মারাঠি লেখক ললিতা তামানে নূতনের জীবনকে ঘিরে 'নূতন - আসেন মি নাসেন মি' শিরোনামে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি নূতনের জীবনের অভিজ্ঞতা, সহঃঅভিনেতা, পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তার আলাপ-আলোচনার কথা তুলে ধরেছেন যা তিনি ললিতা তামানেকে বলেছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

১১ অক্টোবর, ১৯৫৯ তারিখে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রজনীশ বেহলের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ফুসফুসে সংক্রমিত হওয়া স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে ৫৪ বছর বয়সে নূতনের দেহাবসান ঘটে।[১১][১২] তার মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত তাদের মধ্যকার দাম্পত্যজীবন মধুময় ছিল। ২০০৪ সালে রজনীশ মৃত্যুবরণ করেন।[১৩]

এ দম্পতির সন্তান মোহনিশ বেহল ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করে ও মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ও টেলিভিশনের ছোট পর্দায় অভিনয়কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "The Sunday Tribune – Spectrum – Article"। Tribuneindia.com। ২৬ মে ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. "rediff.com, Movies: Forever Nutan"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  3. "Legendary Actress"। Times of India। 
  4. "From the FIlmfare files...reviews from the 1960s"Filmfare (January 2002)। ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  5. Nutan Upperstall.
  6. Encyclopaedia Britannica (India) Pvt. Ltd; Gulzar; Govind Nihalani; Saibal Chatterjee (২০০৩)। C Encyclopaedia of Hindi cinema |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। Popular Prakashan। আইএসবিএন 978-81-7991-066-5। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "A rare resonance"। Deccanherald.com। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  8. Das Gupta, Ranjan (৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Sadhna worked wonders"The Hindu। Chennai, India। ৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  9. Team, Hitlist (২৬ অক্টোবর ২০০৯)। "Sanjay Bhansali the movies i loved growing up"। Mid-day.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  10. Sen, Raja (২৯ জুন ২০১১)। "Readers Choice: The Greatest Actresses of all time"। Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  11. "SHOBHNA SAMARTH (1915-2000)"। streeshakti.com। 
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৬ 
  13. http://www.rediff.com/movies/2004/aug/04bahl.htm

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা