নীহারবালা
নীহারবালা (১৮৯৮ – ৭ মার্চ ১৯৫৪) বাংলা রঙ্গমঞ্চের নৃত্যগীতে সুদক্ষা খ্যাতনাম্নী অভিনেত্রী।[১]
নীহারবালা | |
---|---|
জন্ম | ১৮৯৮ |
মৃত্যু | ৭ মার্চ ১৯৫৪ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পেশা | অভিনেত্রী, গায়িকা, নৃত্যশিল্পী |
পিতা-মাতা | কিশোরীমোহন সরকার (পিতা) নীরদা (মাতা) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনানীহারবালার জন্ম ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। পিতা কিশোরী মোহন সরকার ও মাতা নীরদা। মাতার কাছেই তার শিক্ষা আর বেড়ে ওঠা এবং মাত্র নয় বৎসর বয়সেই তার রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ। তবে নৃত্য ও সঙ্গীতে প্রশিক্ষণের জন্য কিছুদিন মঞ্চ ত্যাগ করেন। সঙ্গীতের শিক্ষা নেন গৌরীশঙ্কর মিশ্র'র কাছে। নৃত্য ও সঙ্গীতে তালিম নেওয়ার পর পুনরায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রঙ্গমঞ্চে যোগ দেন।[২]
অভিনয় জীবন
সম্পাদনা১৯২১ খ্রিস্টাব্দ হতে তিনি দীর্ঘদিন স্টার থিয়েটারে অভিনয় করেন। স্ত্রী-চরিত্র অভিনয়ে একদিকে নাট্যসম্রাজ্ঞী তারাসুন্দরী ও অন্যদিকে লাস্যময়ী নীহারবালা সেসময় স্টারের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে "কর্ণার্জুন" নাটকে 'নিয়তি' র ভূমিকায় অভিনয় করে প্রথম খ্যাতি লাভ করেন। নাটকটি সেসময় দু-শো রজনী অভিনীত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "চিরকুমার সভা" নাটকে 'নীরবালা'র ভূমিকায় তার অভিনয় দেখেন। নাটকে সঠিকভাবে তার নাট্যগীতির প্রয়োগের দক্ষতা কবিকে মুগ্ধ করে ও তিনি কবির প্রশংসা কুড়ান। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি তার অনেক গান রেকর্ড করে। রেকর্ডে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-
- 'কালপ্রবাহ চলে ধীরে'
- 'আমি কখন ভাঙি কখন গড়ি'
- 'প্রাণহীনা পুতুল সমান'
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে স্টার থিয়েটার গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্মায় যান। সেখানে "কর্ণার্জুন" ও "ইরাণের রানী" দুটি নাটকে অভিনয় করেন। তিন দশকের অভিনয় জীবনে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। উল্লেখযোগ্য নাটক গুলি হল-
- রাখিবন্ধন
- ছিন্নহার
- অপ্সরা
- 'সধবার একদশী
- মুক্তির ডাক
- জয়দেব
- চণ্ডীদাস
- প্রফুল্ল
- বন্দিনী
- রূপকুমারী
- বিবাহ বিভ্রাট
- মৃণালিনী
- কপালকুণ্ডলা
- নাহের ( বন্দিনীর ভূমিকায়)
- সুদত্তা (ঋষির মেয়ে ভূমিকায়)
- রামী
- চন্দনা
- আলেয়া প্রভৃতি
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নাট্য নিকেতনের (বর্তমানে বিশ্বরূপা ) সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। মিনার্ভা থিয়েটারে তিনি কয়েকটি নাটকে সখীদের নৃত্য শেখান। স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র "চন্দ্রশেখর" অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এখানে তার সহঅভিনেতা ছিলেন নট ও নাট্যকার অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। যে সমস্ত চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ভূমিকায় তাকে অভিনয় দেখা গিয়েছে সেগুলি হল -
- 'মিশর রানী' (১৯২৪) (সহ অভিনেত্রী)
- 'কেলোর কীর্তি' (১৯২৮)
- 'দেবদাস' (১৯২৮)
- 'প্রহ্লাদ' (১৯৩১) (নর্তকী)
- 'চাঁদ সদাগর' (১৯৩৪) (নেতা ধোপানি)
- 'বিদ্যাসুন্দর' (১৯৩৫) (মালিনী)
- 'সেলিমা' (১৯৩৫) (হিন্দি)
- 'আবর্তন' (১৯৩৬)
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি দক্ষিণ ভারত ভ্রমণে পুদুচেরি যান। তারপর থেকে তিনি সেখানকার অরবিন্দ আশ্রমের নিয়মিত দর্শনার্থী হয়ে যান।
অবসরকালীন জীবন ও জীবনাবসান
সম্পাদনা১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে অভিনয়জগৎ থেকে অবসর নিয়ে শ্রীঅরবিন্দের পুদুচেরি আশ্রমের বাসিন্দা হন এবং সেখানকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ৭ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩৭৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ "নীহারবালা জীবনী (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-০৬।