নিবাতকবচ

হিন্দু পুরাণে এক শ্রেণির দানব

নিবাতকবচ হলো এক শ্রেণির দৈত্যকশ্যপ মুনি ও দিতির পুত্র নিবাতকবচ হিন্দু পুরাণে অসুর শ্রেণিভুক্ত। তারা রাবণঅর্জুনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এর মাঝে অর্জুনের সাথে যুদ্ধে তাদের সংহার ঘটে।[]

নিবাতকবচের সাথে যুদ্ধরত অর্জুন, বালিনীয় চিত্রকলা

দৈত্যকুলে প্রায় তিন কোটি নিবাতকবচের জন্ম হয়। কালকেয়দের সাথে মৈত্রী করে তারা যুদ্ধে দেবতাদের পরাজিত করে। পুরাণমতে, তারা জাদুবিদ্যা ও অস্ত্রচালনায় সিদ্ধহস্ত। শত্রুদের পরাজিত করতে তারা শক্তিশালী অস্ত্র নির্মাণ করে প্রয়োগ করে।

সাহিত্যে উল্লেখ

সম্পাদনা

রামায়ণ

সম্পাদনা

নিবাতকবচেরা ব্রহ্মার বর লাভ করে সমুদ্রের নিচে মনিমতী নামের শহরে বাস করে এবং পৃথিবীতে ত্রাস বিস্তার করে। রামায়ণ-এ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ, অতিকায় এবং তাদের সেনাবাহিনী নিবাতকবচ জাতিকে আক্রমণ করে। কিন্তু শত বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করার পরেও তাদের পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়। ব্রহ্মার মধ্যস্থতায় এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সন্ধি স্থাপিত হয়।[]

মহাভারত

সম্পাদনা

মহাভারত অনুসারে, ইন্দ্র অর্জুনের থেকে তার দক্ষিণাস্বরূপ নিবাতকবচের ধ্বংস কামনা করেন। ইন্দ্রের বর্ণনায় তার শত্রু নিবাতকবচেরা সমুদ্রের নিচে দুর্গ করে বসবাস করে, তারা সংখ্যায় ত্রিশ লক্ষ এবং দর্শন ও শক্তিতে একে অপরের সমকক্ষ। অর্জুনের উদ্দেশ্য সাধনে ইন্দ্র তার নিজের রথী মাতলিকে প্রেরণ করেন। দেবতারা অর্জুনকে দেবদত্ত নামের একটি শঙ্খ প্রদান করেন এবং মাতলি তার নিজের গায়ের মতো অলঙ্কার প্রদান করেন। তারা যখন নিবাতকবচ দুর্গের তোরণের কাছে আসেন, ইন্দ্র তাদের হত্যা করতে এসেছেন মনে করে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেয়। অর্জুন দেবদত্ত শঙ্খ বাজালে নিবাতকবচেরা তাকে আক্রমণ করে এবং ত্রিশূল, বাণ ও তীর ছুঁড়ে মারে। অর্জুন তার গাণ্ডীব থেকে তীর ছুঁড়ে মারলে হাজার হাজার নিবাতকবচের মৃত্যু ঘটে। নিবাতকবচেরা এই সময় অদৃশ্য হয়ে যায় এবং অর্জুনের ওপর আক্রমণ করতে থাকে। অর্জুন যখন বুঝতে পারে তার সামনে দৈত্যদের হত্যা করার জন্য বাধা পাচ্ছে, তখন মাতলি অর্জুনকে বজ্রাস্ত্র প্রয়োগের উপদেশ দেয়। অর্জুন কথামতো বজ্র প্রয়োগ করে এবং নিবাতকবচের মৃত্যু ঘটে। অর্জুন মনিমতী নগরে প্রবেশ করে। সেখানকার নারীরা তাদের গৃহে আশ্রয় প্রার্থনা করে। মাতলি জানায় এই নগর পূর্বে দেবতাদের ছিল। কিন্তু ব্রহ্মার বর পেয়ে নিবাতকবচেরা এই নগর দখল করে নিয়েছিল। ব্রহ্মা এরপর ইন্দ্রকে এই নগর ফিরে পেতে আশ্বস্ত করেন। এরপর মাতলি অর্জুনকে পার্শ্ববর্তী হিরণ্যপুরে নিয়ে যায়।[]

জাভানীয় রামায়ণ

সম্পাদনা

জাভানীয় ভাষার কাকবিন রামায়ণ-এ অর্জুনবিবাহ নামের একটি পর্বের উপস্থিতি দেখা যায়, যেখানে নিবাতকবচদের সাথে অর্জুনের যুদ্ধের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। এই রামায়ণে দানবদের নগরীকে মণিমন্তক নামে সম্বোধন করা হয়। এখানে অর্জুনের পাশাপাশি দেবতাদের রাজা শক্র এবং সুপ্রভা নামের এক অপ্সরার উল্লেখ পাওয়া যায়, যারা নিবাতকবচবধে অর্জুনকে সাহায্য করেন।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Nivatakavaca, Nivātakavaca, Nivātakavacā, Nivata-kavaca: 12 definitions"উইজডমলিব.অর্গ (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০২২ 
  2. মনি, বেত্তম (১৯৭৫)। পুরাণিক এনসাইক্লোপিডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: মোতিলাল বানারসিদাস। আইএসবিএন 0842608222 
  3. Vyasa's Mahabharatam (ইংরেজি ভাষায়)। একাডেমিক পাবলিশার্স। ২০০৮। পৃষ্ঠা ২৭২–২৭৩। আইএসবিএন 978-81-89781-68-2 
  4. অর্জুনবিবাহ, ইংরেজিতে অনুবাদ: স্টুয়ার্ট রবসন, সংযোগ: https://library.oapen.org/handle/20.500.12657/34659