তিসফুন
তিসফুন (/ˈtɛsɪfɒn/TESIFON; গ্রিক: Κτησιφῶν ; পার্থিয়ান/ফার্সি: তিস্পুন বা তিসফুন[১]) একটি প্রাচীন শহর। এটি দজলা নদীর পূর্ব তীরে এবং বর্তমান বাগদাদ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল। ৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে পার্থিয়ান সাম্রাজ্যের যুগে এই শহর পারস্যের রাজধানী হয় এবং ৬৫১ খ্রিস্টাব্দে মুসলমানদের পারস্য বিজয়ের আগপর্যন্ত এই শহর সাসানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল।
অবস্থান | সালমান পাক, বাগদাদ, ইরাক |
---|---|
অঞ্চল | মেসোপটেমিয়া |
স্থানাঙ্ক | ৩৩°৫′৩৭″ উত্তর ৪৪°৩৪′৫০″ পূর্ব / ৩৩.০৯৩৬১° উত্তর ৪৪.৫৮০৫৬° পূর্ব |
ধরন | জনবসতি |
ইতিহাস | |
সংস্কৃতি | ইরানি জনগণ |
স্থান নোটসমূহ | |
খননের তারিখ | ১৯২৮-২৯, ১৯৩১-৩২, ১৯৬০-৭০ |
প্রত্নতত্ত্ববিদ | অস্কার রুয়েথার, এন্তোনিও ইনভারনিজ্জি, জিয়রগিও গুল্লিনি |
অবস্থা | ধ্বংসাবশেষ |
হেলেনীয় শহর সেলেউসিয়াসহ নদীর উভয় তীরের শহরসমূহকে আত্মীকরণের মাধ্যমে তিসফুন একটি ধনী বাণিজ্যিক শহর হিসেবে গড়ে উঠেছিল। তিসফুন এবং তার শহরতলীকে কখনও শহরসমূহ হিসেবে উল্লেখ করা হয় (আরামাইক: মাহুজা, আরবি: المدائن,আরবি: আল-মাদাইন)। ষষ্ঠ শতকের শেষ ও সপ্তম শতকের প্রথম দিকে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শহর ছিল।
রোমান সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পার্থিয়ান তিসফুন চার বার এবং পরে সাসানীয় সময়ে একবার রোমানদের হস্তগত হয়। এটা তিসফুন যুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র যেখানে জুলিয়ান দ্য এপোস্টেট নিহত হন।[২] মুসলমানদের অভিযানের পরে শহরটির অবনতি শুরু এবং ৮ম শতকে জনসংখ্যা খুবই হ্রাস পায়। বর্তমানকালে টিকে থাকা স্থাপনার মধ্যে আছে তিসফুনের বিখ্যাত খিলানপথ।[৩]
নাম
সম্পাদনালাতিন নাম Ctesiphon এসেছে প্রাচীন গ্রীক Ktēsiphôn (Κτησιφῶν)(ΚτησιφῶνΚτησιφῶν) থেকে। এটি বাহ্যত ব্যক্তি নাম থেকে উদ্ভূত গ্রীক টোপোনেম। তবে এটি স্থানীয় নামের হেলেনীয় রূপও হতে পারে যা তিসফন বা তিসবন হিসেবে গঠিত হয়েছে।[৪] সাসানীয় যুগের ইরানি ভাষার রচনাসমূহে ম্যানিকিয়ান পার্থিয়ান, মধ্য পারস্য এবং খ্রিস্টীয় সোগডিয়ান (সিরিয়াক লিপিতে) ভাষায় একে tyspwn উচ্চারণ করা হত (একে Tīsfōn, Tēsifōn প্রভৃতি হিসেবে পড়া যেতে পারে)। নতুন ফার্সিতে এর রূপ হচ্ছে তিসফুন (تیسفونتیسفون)।
প্রাচ্যের আশারিয় গীর্জা থেকে প্রাপ্ত পুঁথি তে সেলেকিয়া-তেসিফন মহানগরীকে উল্লেখ করার সময়ে তেসফন Qṭēspōn বা কখনো কখনো Māḥôzē ব্যবহার করা হয়েছে।
আধুনিক আরবিতে নামটি তায়সাফুন Ṭaysafūn (طيسفونطيسفون) বা কাতায়স্ফুন (قطيسفونقطيسفون), আরবিতে আল-মাদাইন' (المدائنالمدائن) (আক্ষরিক অর্থ "শহরসমূহ", বৃহত্তর তিসফুনকে বোঝায়) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইয়াকুত আল হামাউয়ির মতে হামজার উদ্ধৃতি অনুযায়ী শব্দটি মূল নাম ছিলো তুসফুন যা আরবীতে তায়সাফুনে পরিবর্তিত হয়েছে।[৫] শহরটির আর্মেনীয় নাম তিজবন (ՏիզբոնՏիզբոն)। তিসফুনকে ওল্ড টেস্টামেন্টের বুক অব এজরাতে[৬] কাসফিয়া/চাশফিয়া নামে (এটি জাতিগত নাম কাস থেকে উপজাত এবং কাস্পিয়ান ও কাজভিনের সগোত্র) সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়।
অবস্থান
সম্পাদনাতিসফুন ইরাকের আধুনিক বাগদাদ শহরের ৩২ কিমি (২০ মা) দক্ষিণ-পূর্বে দজলা নদীর তীরে আল-মাদাইনে অবস্থিত। তিসফুনের আয়তন ৩০ বর্গকিমি যা ৪র্থ শতাব্দীর রাজকীয় রোমের ১৩.৭ বর্গকিমি আয়তনের দ্বিগুনের চেয়ে বেশি।
তাক কাসরা বা কোসরেয়সের খিলানপথ একদা তিসফুনের রাজপ্রাসাদের অংশ ছিল এবং এর আনুমানিক নির্মাণকাল ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দী।[৭] এটা এখন বর্তমানে ইরাকি শহর সালমা পাকে অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাপার্থিয়ান যুগ
সম্পাদনাতিসফুন ১২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা পারস্যের প্রথম মিথ্রিদাতেস কর্তৃক স্থাপিত সেলেউসিয়ার পাশে একটি সামরিক ক্যাম্পকে ঘিরে গড়ে ওঠে। প্রথম গোতারজেসের রাজত্বকালে তিসফুন রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে শিখরে পৌছায়। ৫৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দ্বিতীয় অরোদেসের শাসনামলে শহরটি সাম্রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। ক্রমে ক্রমে শহরটির সাথে পুরাতন হেলেনীয় রাজধানী শহর সেলেউসিয়া এবং আশপাশের বসতিসমূহ একীভূত হয়ে একটি বহুজাতিক মহানগরীতে পরিণত হয়।[৭]
পশ্চিম দিকে এই রাজধানী স্থানান্তরের কারণ হচ্ছে পূর্বের রাজধানীগুলো (মিত্রাদারকার্ট এবন হাইকার্নিয়ার হেকাটোম্পাইলস) স্কাইথীয়দের আক্রমণের শিকার হতো[৭]।
স্টার্বো তিসফুনের পত্তনের উপর প্রচুর বর্ণনা করেছেনঃ
প্রাচীন কালে ব্যাবিলন আসিরিয়ার মহানগরী ছিলো; কিন্তু বর্তমানে সেলেউকিয়া হচ্ছে মহানগরী, আমি দজলা তীরবর্তী সেলেউকিয়াকেই বোঝাচ্ছি, যে নামে এটা পরিচিত। এর পাশে একটি গ্রাম অবস্থিত নাম তিসফুন, খুব বড় একটা গ্রাম। এই গ্রামে পার্থিয়ান রাজারা সেলেউকিয়া ছেড়ে তাদের শীতকালীন নিবাস তৈরী করতে পারবে না কিন্তু এর ফলে সেলেকিয়া স্কাইথীয় জনগোষ্ঠী বা তাদের মিত্রদের দ্বারা আক্রান্ত হবে না। পার্থিয়ান শক্তির কল্যাণে তিসফুনকে গ্রামের তুলনায় শহরই বলা ভালো; এর আকার এমন যে এতে অনেক সংখ্যক মানুষ ধরবে এবং এর ভবনগুলো পার্থিয়ানরা নিজেদের জন্য ব্যবহার করে। বাতাসের কারণে পার্থিয়ার রাজারা এখানে শীতকালটা ভালোভাবে কাটাতে পারবে কিন্তু গরমটা তারা একবাতানা এবং হাইকার্নিয়াতে কাটায় কারণ এদের প্রাচীন খ্যাতি রয়েছে।[৮]
গুরুত্বের কারণে প্রাচ্যের যুদ্ধসমূহে তিসফুন রোমান সাম্রাজ্যের নেতাদের প্রধান সামরিক উদ্দেশ্যে পরিণত হয়। শহরটির ইতিহাসে এটা পাঁচবার রোমানদের হাতে বিজিত হয়- ২য় শতকেই এটা তিনবার দখল হয়। ১১৬ সালে সম্রাট ট্রজান তিসফুন দখল করেন কিন্তু তার উত্তরসুরি হাদ্রিয়ান স্বেচ্ছায় ১১৭ সালে শান্তি নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে তিসফুন ফিরিয়ে দেওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৪ সালে রোমান সেনাপতি আভিদিয়ুস ক্যাসিয়াস পার্থিয় যুদ্ধের সময়ে তিসফুন দখল করেন কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে শহরটি পরিত্যাগ করেন। ১৯৭ সালে সম্রাট সেপটিমিয়াস সেভেরাস তিসফুন দখল করেন এবং এর দুই হাজার অধিবাসীকে বন্দী করে দাস হিসেবে বিক্রি করেন।
সাসানীয় শাসনকাল
সম্পাদনা২২৬ সালে তিসফুন সাসানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো। তারা তিসফুনকে তাদের রাজধানী বানায় এবং ইরানে পার্থীয় সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘোষণা করে। তাদের শাসনামলে তিসফুন বিশালাকে বর্ধিত এবং সমৃদ্ধ হয়ে শহরে রূপান্তরিত হয় যা আরবিতে আল-মাদাইন এবং আরামীয় ভাষায় মাহোযে নামে পরিচিতি পায়।[৯] এর পূর্ব পাশে প্রাচীনতম আবাস গড়ে উঠেছিলো, আরব উৎসমসমূহ একে পুরাতন শহর হিসেবে উল্লেখ করেছে যেখানে সাসানীয় বাসস্থান শ্বেত প্রাসাদ অবস্থিত ছিলো। তিসফুনের দক্ষিণ অংশ আসপানবার নামে পরিচিত ছিলো যা বিশিষ্ট হলঘর, ঐশ্বর্য্য, ক্রীড়া, আস্তাবল এবং গোছলখানার জন্যও সুপরিচিত ছিলো।
পশ্চিম অংশ ভেহ-আর্দাশির (মধ্য পারস্যে আরদাশিরের ভালো শহর) নামে পরিচিত, ইহুদিদের কাছে মাহোযা, খ্রিস্টানদের কাছে কোখে এবং আরবদের কাছে বেহরাসির নামে পরিচিত। ভেহ-আর্দাশিরে অনেক ধনী ইহুদি বাস করতো এবং নেস্টোরিয় প্যাট্রিয়ার্কের গীর্জা ছিলো। ভেহ-আর্দাশিরের দক্ষিণে ভালাশাবাদ।[১০] তিসফুনের আরো কিছু জেলা ছিলো যাদের নাম হানবু শাপুর, দারযানিদান, ভেহ জনদিউ-খোসরু, নাউইনাবাদ এবং কারদাখ।[১০]
সেভেরাস আলেক্সান্ডার ২৩৩ সালে তিসফুনের দিকে অগ্রসর হয় কিন্তু হিরোডিয়ান সঙ্গে যুক্ত হয়েও তার সেনাদল আর্দাশির ১ এর বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হারের সম্মুখীন হয়।[১১] ২৮৩ সালে সম্রাট কারুস শহরে বেসামরিক সংঘাতের কারণে বিনাপ্রতিরোধে শহরটি দখল করেন। ২৯৫ সালে সম্রাট গ্যলারিয়াস শহরের বাইরে পরাজিত হন। এক বছর করে তিনি প্রতিহিংসা নিয়ে ফিরে আসেন এবং জয়লাভ করেন। ২৯৯ সালে শহরটি চুড়ান্তভাবে রোমানরা দখল করে নেয়। আর্মেনিয়া এবং পশ্চিম মেসোপটেমিয়ার বিনিময়ে তিনি পারস্য রাজ নারসেসকে তিনি তিসফুন ফিরিয়ে দেন। ৩২৫ সালে এবং পূনরায় ৪১০ সালে শহরটি অথবা নদীর পাশের গ্রীক কলোনী ছিলো প্রাচ্যের আশারীয় গীর্জার চার্চ কাউন্সিল।
৩৬৩ সালে শহরের প্রাচীরের বাইরে , শাপুর ২ এর বিরুদ্ধে সম্রাট জুলিয়ান তিসফুনের যুদ্ধে নিহত হন।
৫৪১ সালে এন্টিয়োখ বিজয়ের পর দ্বিতীয় খসরু তিসফুনের কাছে একটি নতুন শহর নির্মাণ করেন তার বন্দীদের জন্য। তিনি নতুন শহরটির নামকরণ করেন ওয়েহ এন্টিয়োক খুসরাউ যা শব্দগত অর্থ খসরু এটা তৈরী করেছেন যা এন্টিয়োখ থেকেও উত্তম।[১২] স্থানীয় অধিবাসীরা শহরটিকে রুমাগান নামে ডাকত যার অর্থ রোমানদের শহর। ওয়েহ এন্টিয়োকের পাশাপাশি খোসরু বেশ কিছু শহর নির্মাণ করেন।[১৩] ৫৪২ সালে তিসফুনের নতুন শহরে ১ম খোসরু ২৯২,০০০ অধিবাসী, দাস এবং বিজিত মানুষ নিয়ে আসেন।[১৪]
৫৯০ সালে হাউজ অভ মিহরানের একজন সদস্য বাহরাম চোবিন নতুন সাসানীয় শাসক দ্বিতীয় খসরুর অধিনস্ততা অস্বীকার করে অঞ্চলটি দখল করেন। এক বছর পরে দ্বিতীয় খসরু বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাহায্যে পুনরায় তিসফুন দখল করেন। খোসরুর শাসনামলে তার নতুন শীতকালীন আবাস দাস্তাগড়ের কারণে আল মাদাইনের কিছু জৌলুস কমে যায়।[১৫] ৬২৭ সালে বাইজেন্টাইন সম্রাট হিরাক্লিয়াস সাসানীয় সম্রাটের রাজধানী তিসফুন শহরটি ঘিরে ফেলেন। পারস্যগণ তার শান্তি প্রস্তাব মেনে নিলে তিনি প্রস্থান করেন। ৬২৮ সালে মরণঘাতী প্লেগ আঘাত হানে। সাসানীয় সাম্রাজ্যের সকল অংশই আক্রান্ত হয়। প্লেগে খোসরুর সন্তান এবং উত্তরসুরি দ্বিতীয় কাভাড় মৃত্যুমুখে পতিত হন।[১৫]
৬২৯ সালে তিসফুন অল্পকিছুকাল মিহরানিদ দখলদার শাহ্রবারাযের অধীনে ছিলো, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দ্বিতীয় খসরুর কন্যা বুরানদাখতের সমর্থকদের হাতে খুন হন। অতঃপর তিসফুন সাসানীয় সাম্রাজ্যের দুটি ভগ্নাংশ; হাউভ অভ ইস্পাহবুধানের অধীনে পাহলভ (পার্থীয়) অংশ এবং পিরুজ খোসরুর অধীনের পারসিগ (পারস্যীয়) একাধিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
সাসানীয়দের পতন এবং ইসলাম পন্থীদের বিজয়
সম্পাদনামুসলিম আরবগণ ৬৩৩ সাল থেকে সাসানীয় সাম্রাজ্যের অঞ্চলসমূহ আক্রমণ করে আসছিলো এবং ৬৩৬ সালে আল-কাদিশিয়াহ'র যুদ্ধে সাসানীয় সম্রাটদের পরাজিত করে। অতঃপর আরবগণ তিসফুন আক্রমণ করে এবং এর কিছু অংশ দখল করে নেয়।[১০]
মুসলিম সামরিক অফিসার খালিদ ইবন উরফুতা দ্রুত ভাসশাবাদ দখল করে নেন এবং ওয়েহ এন্টিয়োক খুসরাউ এবং ভেহ-আর্দাশিরের অধিবাসীদের সংগে শান্তিচুক্তি করেন। শান্তি চুক্তির শর্ত ছিলো ওয়েহ অভ খুসরাউর অধিবাসীরা চাইলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পারবে কিন্তু যদি থাকতে চায় তবে তাদেরকে মুসলিম শাসন মেনে নিতে হবে এবং জিজিয়া কর দিতে হবে। যখন মুসলিম সামরিক অফিসার সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস তিসফুনে এসে পৌঁছান তখন এটা ছিলো জনবিরল কারণ রাজকীয় পরিবার, পরিষদবর্গ এবং সৈন্যদের সংগে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। মুসলমানগণ কিছু সৈন্যদের বন্দী করে। সাসানীয় রাজকোষের ধন রত্ন মুসলমান সৈন্যদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।[১০] তাক কাসরার দরবার হল মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে মুসলমানগণ।[১৬]
আব্বাসীয় শাসনামলে অষ্টম শতকে রাজধানী বাগদাদে স্থানান্তরিত করলে তিসফুন তার জৌলুস হারায় এবং শীঘ্রই ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়। খলিফা আল মনসুর বাগদাদ শহর নির্মানের জন্য তিসফুনের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিয়ে যান। তিনি রাজপ্রাসাদ ভেঙে এর ইট দিয়ে নিজের ভবন নির্মাণের পরিকল্পণা করেন কিন্তু পরিবহন কষ্টসাধ্য হওয়ায় তা বাতিল করেন।[১৭]
আধুনিক যুগ
সম্পাদনা১ম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৫ সালের নভেম্বর মাসে তিসফুন যুদ্ধক্ষেত্রে হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অটোমান সাম্রাজ্য ব্রিটিশ বাহিনীর বাগদাদ দখলের প্রচেষ্টাকে রুখে দেয় এবং তাদেরকে ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) পিছনে তাড়িয়ে দেয়।
জনসংখ্যা ও ধর্ম
সম্পাদনাসাসানীয় যুগে তিসফুনের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে মিশ্র রূপ নেয়, এর মধ্যে আরামীয়, পারস্যীয়, গ্রীক এবং আশারীয়। মহানগরীতে একাধিক ধর্ম চর্চিত হতো যার মধ্যে খ্রিস্টান, ইহুদী এবং জরাথুস্ট্রবাদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মানি ধর্মের অনুসারীরাও ছিলো যাদের উমাইয়া শাসন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়।[৯] আরবেরা তিসফুন দখল করলে এর অধিকাংস অধিবাসী পালিয়ে যায়। পারস্যীয়দের অল্প সংখ্যক লোক শহরে থেকে যায় এবং এদের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আলীকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন কিন্তু আলী তা নিতে অস্বীকার করেন। সিফফিন যুদ্ধের পরে তিসফুন জনশুন্য হয়ে পড়ে।[৯]
প্রত্নতত্ত্ব
সম্পাদনাঅস্কার রিউথারের নেতৃত্বে একটি জার্মান ওরিয়েন্টাল সোসাইটি এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দল ১৯২৮-২৯ এবং ১৯৩১-৩২ সালে তিসফুন খননকাজ চালায়। প্রধানত স্থানটির পশ্চিমাংশের কাসর বিনতে আল কাজীতে খনন কাজ চালানো হয়।[১৮][১৯][২০][২১]
১৯৬০ এর শেষে এবং ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে এন্টোনিও ইনভেরনিজ্জি এবং জিয়োরগিয়ো গুল্লিনি এর পরিচালনায় তুরিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ইতালীয় দল তিসফুন কাজ করে, দ্বিতীয় খসরুর রাজপ্রাসাদ পূনঃনির্মানের কাজ করে।[২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭] ২০১৩ সালে পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে ইরাকি সরকার তিসফুনের খিলানপথ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।[২৮]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
১৮২৪ সালে ক্যাপ্টেন হার্টের আঁকা চিত্র
-
২০০৮ সালে তাক কাসরার ধ্বংসাবশেষ
-
১৯২৩ সালে খিলান পথের ছবিযুক্ত ইরাকি পোস্ট কার্ড
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kröger, Jens। "Ctesiphon"। Encyclopædia Iranica। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Ctesiphon"। Livius। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Eventually no less than four Sasanian rulers were quoted as its builders: Shapur I (241–273), Shapur II (310–379), Chosroes I Anushirvan (531–579) and Chosroes II Parvez (590–628).
- ↑ E.J. Brill's First Encyclopaedia of Islam 1913–1936, Vol. 2 (Brill, 1987: আইএসবিএন ৯০-০৪-০৮২৬৫-৪), p. 75.
- ↑ Encyclopedia Iranica, ১৯৯৩
- ↑ Ezra 8:17
- ↑ ক খ গ Farrokh, K. (2007).
- ↑ "LacusCurtius • Strabo's Geography — Book XVI Chapter 1, 16"। penelope.uchicago.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ ক খ গ [[#CITEREF|]]।
- ↑ ক খ গ ঘ Morony 2009।
- ↑ Farrokh, K. (2007). The rise of Ctesiphon and the Silk Route. In Shadows in the Desert: Ancient Persia at War (p. 185).
- ↑ Dingas, Winter 2007, 109
- ↑ Frye 1993, 259
- ↑ Christensen (১৯৯৩)। The Decline of Iranshahr: Irrigation and Environments in the History of the Middle East, 500 B.C. to A.D. 1500। Copenhagen: Museum Tusculanum Press। আইএসবিএন 87-7289-259-5।
- ↑ ক খ Shapur Shahbazi 2005।
- ↑ Reade, Dr Julian (1999). Scarre, Chris, ed. The Seventy Wonders of the Ancient world The Great Monuments and How they were Built. Thames & Hudson. pp. 185–186. আইএসবিএন ০-৫০০-০৫০৯৬-১.
- ↑ Bier, L. (1993). The Sassanian Palaces and their Influence in Early Islam. In Ars Orientalis, 23, 62-62.
- ↑ Schippmann, K. (১৯৮০)। "Ktesiphon-Expedition im Winter 1928/29"। Grundzüge der parthischen Geschichte (জার্মান ভাষায়)। Darmstadt। আইএসবিএন 3-534-07064-X।
- ↑ Meyer, E. (১৯২৯)। "Seleukia und Ktesiphon"। Mitteilungen der Deutschen Orient-Gesellschaft zu Berlin। 67: 1–26।
- ↑ Reuther, O. (১৯২৯)। "The German Excavations at Ctesiphon"। Antiquity। 3 (12): 434–451। ডিওআই:10.1017/S0003598X00003781।
- ↑ Upton, J. (১৯৩২)। "The Expedition to Ctesiphon 1931–1932"। Bulletin of the Metropolitan Museum of Art। 27: 188–197।
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, First Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Season 1964, Mesopotamia, vol. I, pp. 1–88, 1966
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, Second Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Season 1965, Mesopotamia, vol. 2, 1967
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, Third Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Season 1966, Mesopotamia, vol. 3–4, 1968–69
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, Fifth Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Season 1969, Mesopotamia, vol. 5–6, 1960–71
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, Sixth Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Seasons 1972/74, Mesopotamia, vol. 5–6, 1973–74
- ↑ G. Gullini and A. Invernizzi, Seventh Preliminary Report of Excavations at Seleucia and Ctesiphon. Seasons 1975/76, Mesopotamia, vol. 7, 1977
- ↑ "Iraq to restore ancient Arch of Ctesiphon to woo back tourists"। rawstory.com। মে ৩০, ২০১৩। জানুয়ারি ১, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭।
টিকা
সম্পাদনা- M. Streck, Die alte Landschaft Babylonien nach den arabischen Geographen, 2 vols. (Leiden, 1900–1901).
- M. Streck, "Seleucia und Ktesiphon," Der Alte Orient, 16 (1917), 1–64.
- A. Invernizzi, "Ten Years Research in the al-Madain Area, Seleucia and Ctesiphon," Sumer, 32, (1976), 167–175.
- Luise Abramowski, "Der Bischof von Seleukia-Ktesiphon als Katholikos und Patriarch der Kirche des Ostens," in Dmitrij Bumazhnov u. Hans R. Seeliger (hg), Syrien im 1.-7. Jahrhundert nach Christus. Akten der 1. Tübinger Tagung zum Christlichen Orient (15.-16. Juni 2007). (Tübingen, Mohr Siebeck, 2011) (Studien und Texte zu Antike und Christentum / Studies and Texts in Antiquity and Christianity, 62),
- Morony, Michael (২০০৯)। Encyclopaedia Iranica।
- Kennedy, Hugh N. (২০০৪)। The Prophet and the Age of the Caliphates: The Islamic Near East from the 6th to the 11th Century (Second সংস্করণ)। Harlow, UK: Pearson Education Ltd.। আইএসবিএন 0-582-40525-4।
- The Eclipse of the ‘Abbasid Caliphate. Original Chronicles of the Fourth Islamic Century, Vol. V: The concluding portion of The Experiences of Nations by Miskawaihi, Vol. II: Reigns of Muttaqi, Mustakfi, Muti and Ta'i। Oxford: Basil Blackwell। ১৯২১।
- Rekaya, M. (১৯৯১)। "al-Maʾmūn"। The Encyclopedia of Islam, New Edition, Volume VI: Mahk–Mid। Leiden and New York: BRILL। পৃষ্ঠা 331–339। আইএসবিএন 90-04-08112-7।
- Kennedy, Hugh N. (২০০৪)। The Prophet and the Age of the Caliphates: The Islamic Near East from the 6th to the 11th Century (Second সংস্করণ)। Harlow, UK: Pearson Education Ltd.। আইএসবিএন 0-582-40525-4।
- Zarrinkub, Abd al-Husain (১৯৭৫)। "The Arab conquest of Iran and its aftermath"। The Cambridge History of Iran, Volume 4: From the Arab Invasion to the Saljuqs। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 1–57। আইএসবিএন 978-0-521-20093-6।
- Bosworth, C. E. (১৯৭৫)। "Iran under the Buyids"। Frye, R. N.। The Cambridge History of Iran, Volume 4: From the Arab Invasion to the Saljuqs। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 250–305। আইএসবিএন 0-521-20093-8।
- Kröger, Jens (১৯৯৩)। "CTESIPHON"। Encyclopaedia Iranica, Vol. IV, Fasc. 4। পৃষ্ঠা 446–448।
- Shapur Shahbazi, A. (২০০৫)। "SASANIAN DYNASTY"। Encyclopaedia Iranica, Online Edition। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- তিসফুন এবং তাক কাস্রা ফটো গ্যালারি
- Livius.org: তিসফুন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে
- Ctesiphon (প্রোফাইল: মেট্রোপোলিরান আর্ট মিউজিয়ামের)