ট্রেমা ওরিয়েন্টালিস
ট্রেমা ওরিয়েন্টালিস (Trema orientale বা Trema orientalis) হলো ক্যানাবেসিয়াই উদ্ভিদ পরিবারের ও গাঁজা গণের অন্তর্ভুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদসমূহের একটি প্রজাতি।[৪][৫][৬] ইংরেজি বলয়ে এর অনেকগুলো প্রচলিত নাম রয়েছে, যেমন: charcoal-tree,[৬] Indian charcoal-tree,[৬] pigeon wood,[৭] Oriental trema,[৮] হাইয়াই অঞ্চলে যেখানে এর প্রাকৃতিকায়ন ঘটেছে, সেখানে এটি gunpowder tree,[৯] অথবা nalita.[১০] নামে পরিচিত। বাংলাভাষীদের কাছে এটি ঝিংনি, ঝিঙ্গন, জিগনি, জীবন, জীবন্তি, ঝিটকা নামে পরিচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত এবং দক্ষিণ চীন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পুরানো বিশ্বের ক্রান্তীয় এবং উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে দ্রুতবর্ধনশীল এই উদ্ভিদটির প্রায় সর্বজনীন বিস্তৃতি রয়েছে।
ট্রেমা ওরিয়েন্টালিস | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
ক্লেড: | ইউডিকটস |
গোষ্ঠী: | রোসিদস |
বর্গ: | রোজালেস |
পরিবার: | Cannabaceae |
গণ: | Trema (L.) Blume[২][৩] |
প্রজাতি: | T. orientale |
দ্বিপদী নাম | |
Trema orientale (L.) Blume[২][৩] | |
প্রতিশব্দ[২] | |
তালিকা
|
বিস্তৃতি
সম্পাদনাট্রেমা ওরিয়েন্টালিস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকা (মাদাগাস্কারসহ), এশিয়া (আরব উপদ্বীপ, চীন, পূর্ব এশিয়া, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া) এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসী।[৬]
ব্যবহার
সম্পাদনাএর কাঠ তুলনামূলকভাবে নরম এবং শুষ্ক অবস্থায় এটি সহজেই ও দ্রুত জ্বলে। এর কাঠ কাগজ ও কাগজের কাচামাল পাল্প তথা মণ্ড উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত,[১১][১২] উপরন্তু এই কাঠের তৈরি কাগজ ভাল প্রসারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ও ভাঁজ করার সক্ষমতাযুক্ত।[১১] এর ছাল সুতা বা দড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা যায় এবং ছিপের জন্য জলরোধী সুতা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।[৭][১৩] ভারত ও তানজানিয়াতে কাঠকয়লা বা চারকোল তৈরিতে এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। আর এটি একটি উত্তম অগ্নি-উৎপাদকও (fire starter)।[১৩]
ভেষজ প্রয়োগ
সম্পাদনাবিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্ভিজ্জ ঔষধরূপে এই গাছের বহুবিধ প্রয়োগ রয়েছে।[৭] পাতা ও ছাল কাশি, গলা ব্যথা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, গনোরিয়া, পীতজ্বর, দাঁতের ব্যথা এবং সাধারণ বিষের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[১১][১৪] আমাশয়ের নিয়ন্ত্রণের এর ছাল ভেজানো রস (infusion) এবং কুকুরের কৃমিনাশক হিসেবে এর পাতার ক্বাথবিশেষ (decoction) ব্যবহার করা হয় বলে তথ্যও রয়েছে।[১১] সাম্প্রতিক ফার্মাকোলজিক্যাল গবেষণায়, ডায়াবেটিস রোগের পরীক্ষামূলক প্রাণী মডেলের ক্ষেত্রে বাকল থেকে নিষ্কাসিত জলীয় নির্যাস প্রয়োগ করে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে দেখা গিয়েছে। এটি এই রোগের চিকিৎসায় উপকারী হতে পারে।[১৫] ট্রেমা ওরিয়েন্টালিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত আরও কিছু প্রজাতির (Trema guineense ও Trema micrantha) উদ্ভিদের পাতার নির্যাস ইঁদুরজাতীয় (rodents) প্রাণীতে প্রদাহবিরোধী ও বেদনানাশক লক্ষণ দেখিয়েছে।[১৬] ট্রেমা ওরিয়েন্টালিসের ক্ষেত্রেও যে একই ফলাফল পাওয়া যেতে পারে তা এটা অনুমান করা যায়।
বাস্তুসংস্থান
সম্পাদনাঅন্ততপক্ষে ১৪ প্রজাতির প্রজাপতি এই উদ্ভিদটি তাদের লার্ভার খাদ্য উদ্ভিদরূপে বয়বহার করায় এর একটি উচ্চ বাস্তুতান্ত্রিক বা পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।[৭] কয়েক প্রজাতি পাখি এই গাছের ফল অথবা এই গাছে বসবাসকারী বাড়তি পোকামাকড় খেয়ে থাকে। কবুতর ও ঘুঘুকে প্রায়শই এই প্রজাতির গাছে বাসা বাধতে অথবা এসব গাছের ফল খেতে দেখা যায়; যার কারণে এ গাছের আরেক নাম 'কবুতর কাঠ' (Pigeon Wood) এর উৎপত্তি ঘটেছে।[৭] ফিলিপাইনে এর পাতা, শুঁটি ও বীজ গবাদি পশু, মহিষ ও ছাগলে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[১১][১৪] বাংলাদেশও এর পাতা পশুখাদ্যরূপে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এছাড়াও, শিকার্য প্রাণীরা (game animals) এর পাতা খেয়ে থাকে এবং এই পাতা স্পিনাচরূপেও ব্যবহার করা যায়। এই গাছটি একটি দ্রুতবর্ধনশীল প্রজাতি যা ইতোপূর্বে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে এমন অঞ্চলে এবং বনভূমিতে পাওয়া যায়। এটি একটি অগ্রণী প্রজাতি যা খারাপ মাটিতেও বাড়তে পারে। শক্তকাঠের বনভূমির চারার ছায়া ও সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে বনভূমির পুনর্নির্মাণেও এই গাছ ব্যবহার করা যায়। টি. ওরিয়েন্টালিস একটি নাইট্রোজেন সংবদ্ধী উদ্ভিদ, তাই অন্যান্য প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।[১৪]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
ফুল ও পাতা
-
পাকা ফল ও ছাল
-
কাঁচা ও পাকা ফল (কালো)
-
নোয়ানো শাখায় পাতা ও ফল
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Barstow, M. (2018). Trema orientalis. The IUCN Red List of Threatened Species 2018: e.T61988133A61988136. https://doi.org/10.2305/IUCN.UK.2018-1.RLTS.T61988133A61988136.en. Downloaded on 30 October 2018.
- ↑ ক খ "Trema orientale (L.) Blume"। Plants of the World Online। Royal Botanic Gardens, Kew। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ Under its treatment of Trema orientalis (from its basionym of Celtis orientalis), this plant name was first published in Museum Botanicum 2: 62. 1852. "Name - Trema orientalis (L.) Blume"। Tropicos। Saint Louis, Missouri: Missouri Botanical Garden। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২, ২০১১।
- ↑ "Name - !Trema orientalis (L.) Blume synonyms"। Tropicos। Saint Louis, Missouri: Missouri Botanical Garden। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২, ২০১১।
- ↑ The basionym of T. orientalis, Celtis orientalis was originally described and published in Species Plantarum 2: 1044. 1753. "Name - Celtis orientalis L."। Tropicos। Saint Louis, Missouri: Missouri Botanical Garden। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২, ২০১১।
Type-Protologue: Locality: Habitat in Indiis: Distribution: Sri Lanka
- ↑ ক খ গ ঘ GRIN (মে ২৯, ২০০৭)। "Trema orientalis information from NPGS/GRIN"। Taxonomy for Plants। National Germplasm Resources Laboratory, Beltsville, Maryland: USDA, ARS, National Genetic Resources Program। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২, ২০১১।
Comment: although treated [at GRIN] as feminine, in accordance with botanical tradition (Vienna ICBN Art. 62.1), the genus is of neuter gender according to NCU-3
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Malan, Christien; Notten, Alice (এপ্রিল ২০০৫)। "Trema orientalis"। South African National Biodiversity Institute। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১০।
- ↑ "Trema orientalis" (ইংরেজি ভাষায়)। ন্যাচারাল রিসোর্সেস কনসারভেশন সার্ভিস প্ল্যান্টস ডেটাবেস। ইউএসডিএ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ Little Jr., Elbert L.; Skolmen, Roger G. (১৯৮৯)। Common Forest Trees of Hawaii: Gunpowder-tree (পিডিএফ)। Agriculture Handbook No. 679। USDA। ২০১২-০৫-১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০২।
- ↑ Jahan, M. Sarwar; Sung Phil Mun (এপ্রিল ২০০৭)। "Characteristics of Dioxane Lignins Isolated at Different Ages of Nalita Wood (Trema orientalis)"। Journal of Wood Chemistry and Technology। 27 (2): 83–98। এসটুসিআইডি 98093199। ডিওআই:10.1080/02773810701486865।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Orwa, C; A Mutua; Kindt R; Jamnadass R; S Anthony (২০০৯)। "Trema orientalis"। Agroforestree Database:a tree reference and selection guide, version 4.0। World Agroforestry Centre। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০৯।
|work=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ Jahan, M.S. et al. (2007). Evaluation of cooking processes for Trema orientalis pulping Journal of Scientific & Industrial Research, Vol. 66 (2007) 853
- ↑ ক খ FAO Forestry Department (১৯৮৬)। Some Medicinal Forest Plants Of Africa And Latin America Forestry - Paper 67। Food And Agriculture Organization Of The United Nations। পৃষ্ঠা 223–227। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০২।
- ↑ ক খ গ Eckman, Karlyn; Hines, Deborah A. (১৯৯৩)। "Trema orientalis" (পিডিএফ)। Indigenous multipurpose trees of Tanzania: uses and economic benefits for people। FAO Forestry Department। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০২।
- ↑ Dimo T, Ngueguim FT, Kamtchouing P, Dongo E, Tan PV (২০০৬)। "Glucose lowering efficacy of the aqueous stem bark extract of Trema orientalis (Linn) Blume in normal and streptozotocin diabetic rats"। Die Pharmazie। 61 (3): 233–6। পিএমআইডি 16599266।
- ↑ Barbera, R.; Trovato, A.; Rapisarda, A.; Ragusa, S. (১৯৯২)। "Analgesic and antiinflammatory activity in acute and chronic conditions of Trema guineense (Schum. et Thonn.) Ficalho and Trema micrantha Blume extracts in rodents"। Phytotherapy Research। 6 (3): 146। এসটুসিআইডি 83475778। ডিওআই:10.1002/ptr.2650060309।
গ্রন্থতালিকা
সম্পাদনা- Pooley, E. (1993). The Complete Field Guide to Trees of Natal, Zululand and Transkei. আইএসবিএন ০-৬২০-১৭৬৯৭-০.