জ্যামাইকায় ইসলাম
জ্যামাইকা প্রধানত একটি খ্রিস্টান দেশ এবং ইসলাম সেখানে একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। জ্যামাইকার সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সেখানে মুসলমানরা ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করতে পারে এবং দেশে উপাসনালয় নির্মাণের স্বাধীনতা রয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, জ্যামাইকায় প্রায় ৫৪২৬ জন মুসলমান বসবাস করেন।[১][২]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৫৪২৬ | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম (সংখ্যাগরিষ্ঠ), শিয়া ইসলাম, আহমদিয়া | |
ধর্মগ্রন্থ | |
কুরআন, হাদিস, ফিকহ | |
ভাষা | |
ইংরেজি, জ্যামাইকীয় প্যাটোইস, আরবি, উর্দু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি |
উপনিবেশ আমলে প্রথম মুসলমানরা দাস হিসেবে জ্যামাইকায় আসে। ক্যারিবীয় অঞ্চল ও আমেরিকায় আনা আফ্রিকীয়দের অন্যতম প্রধান ধর্ম ছিল ইসলাম। এছাড়া অন্যান্য মুসলিম গোষ্ঠীগুলি বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল। বর্তমান জ্যামাইকায় বেশ কয়েকটি মসজিদ ও উৎসব রয়েছে।[৩]
ইতিহাস
সম্পাদনাজ্যামাইকার প্রথম মুসলমানরা হলেন পশ্চিম আফ্রিকীয় মুর সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা রিকনকুইস্তাতে বন্দী হয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে দাস হিসেবে বিক্রি হয় এবং পরে জাহাজে করে তাদের জ্যামাইকায় আনা হয়।[৪] ব্রায়ান এডওয়ার্ডস ও রিচার্ড রবার্ট ম্যাডেন ১৮ শতকের শেষের দিকে এবং ১৯ শতকের প্রথম দিকে লেখা তাদের বইয়ে প্রায়শ জ্যামাইকার মুসলিম ক্রীতদাস ও তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে লিখেছেন। তারা লিখেছেন যে, তাদের অনেকে কুরআন মুখস্থ করতে। শাহাদা ঘোষণা করত; রমজানে রোজা রাখত এবং দৈনিক নামাজ আদায় করত। তাদের কেউ কেউ আরবিতে লিখতেও সক্ষম ছিলেন। [৫]
সময়ের সাথে সাথে তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে জোরপূর্বক সংমিশ্রণের কারণে তাদের ইসলামি পরিচয় হারিয়ে ফেলে। মান্দিঙ্কা, ফুলা, সুসু, আশান্তি ও হাউসার ইসলামি দেশগুলির অন্তর্গত আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত মুমিনরা জ্যামাইকার বাগানে ক্রীতদাস হিসাবে কাজ করার সময় গোপনে তাদের ইসলামি অনুশীলনগুলি বজায় রাখার জন্য অবিরাম চেষ্টা করেছিলেন। ক্রীতদাসদের মুক্ত করার পর তাদের অতীতের মুসলিম বিশ্বাসের অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল এবং মুক্ত করা দাসরা তাদের প্রাক্তন দাস প্রভুদের বিশ্বাস গ্রহণ করেছিল। কিছু মুসলিম ক্রীতদাস আফ্রিকায় ফিরে এসেছিল বা ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য অংশে ভ্রমণ করেছিল। কিছু জ্যামাইকায় থেকে গিয়েছিল এবং গোপনে তাদের বিশ্বাস অনুশীলন করেছিল। এই কারণে ভারতীয় সম্প্রদায়ের বাইরে জ্যামাইকায় ইসলাম প্রায় অস্তমিত হয়ে গিয়েছিল। [৫]
১৮৪৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে জ্যামাইকাতে আসা ৩৭,০০০ জন চুক্তিবদ্ধ ভারতীয় অভিবাসীদের প্রায় ১৬ শতাংশই ছিল মুসলমান। ১৯১৫ সালে জ্যামাইকায় আসা মুহাম্মদ খান ১৯৫৭ সালে স্প্যানিশ শহরে মসজিদ আর-রহমান তৈরি করেছিলেন এবং মুহাম্মাদ গোলাম নামে একজন ওয়েস্টমোরল্যান্ডের মসজিদ হুসেন তৈরি করেছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে জ্যামাইকায় প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য আটটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন অভিবাসী মুসলমানরা।[৬]
বর্তমান জ্যামাইকায় অনেক ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব সেন্টারে ইসলাম বিষয়ে প্রায় নিয়মিত বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া দ্বীপটিতে তাবলিগ জামাতেরও বেশ প্রভাব লক্ষ করা যায়। এসবের মাধ্যমে অনেক জ্যামাকীয় মুসলিম ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারছে এবং অনেকে ইসলামে ফিরেও আসছে।
বর্তমান জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০২১ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, জ্যামাইকার মোট মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৫,৬২৪ জন, [৭] যা ২০১১ সালে মাত্র ১,৫০০ এর মত ছিল।[৩] জ্যামাইকায় বেশ কয়েকটি ইসলামি সংগঠন এবং মসজিদ রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ইসলামিক কাউন্সিল অফ জ্যামাইকা। এটি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড দাওয়াহ সেন্টার নামে আরেকটি সংগঠন রয়েছে। উভয়টি রাজধানী কিংস্টনে অবস্থিত। এসবে ইসলামিক স্টাডিজের ক্লাস এবং দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কিংস্টনের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে ম্যান্ডেভিলের মসজিদ আল হক, নেগ্রিলের মসজিদ আল-ইহসান, ওচো রিওসের মসজিদ-আল-হিকমাহ, সেন্ট মেরির পোর্ট মারিয়া ইসলামিক সেন্টার এবং ওল্ড হারবারের মাহদি মসজিদ।[৬]
উৎসব
সম্পাদনাজ্যামাইকার মুসলমানরা বিশ্বের অন্য মুসলিমদের মত নিম্নোক্ত ইসলামি উৎসবগুলো পালন করে থাকে:
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Central America :: Jamaica — The World Factbook - Central Intelligence Agency"। web.archive.org। ২০১৮-১২-২৪। ২০১৮-১২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৯।
- ↑ "দেশ অনুযায়ী ইসলাম"। উইকিপিডিয়া। ২০২২-০৮-০৫।
- ↑ ক খ "Religion and the 2011 census"। ৪ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Kettani, A. (1986).
- ↑ ক খ al-Ahari, Muhammed Abdullah (১৯৯৯)। "The Caribbean and Latin America"। Islam Outside the Arab World। Routledge। পৃষ্ঠা 445–446। আইএসবিএন 0-7007-1124-4।
- ↑ ক খ "Faith in Jamaica | Learn More About What We Believe"। www.visitjamaica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৯।
- ↑ "Jamaica Religion Facts & Stats"। www.nationmaster.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-০৯।