জোইয়্যা বা জোইয়া হল ভারতে বসবাসকারী ভাগনরী বালুচদের প্রধান উপজাতি।[] এই সম্প্রদায় হিন্দি ভাষায় কথা বলে। এই সম্প্রদায়টি তাদের নামের সাথে খান উপাধি ব্যবহার ক'রে নিজেদেরকে বালুচের বংশধর হিসেবে উপস্থাপন করে। তাদের উপজাতির কিছু লোক ভারত থেকে পাকিস্তানের মধ্য পাঞ্জাবে সফলভাবে অভিবাসন করেছিল।[] এই অভিবাসীরা এখনও ভাগনরী, স্তগড়া ওকারা, দেপালপুর, ভেহারি, লাহোর, পাকপত্তন, ঝাং, কসুর এবং সাহিওয়ালের কাছাকাছি বসবাস করছে।[][] এই জোইয়্যাদের হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় যোধা[] বালুচ (যোদ্ধা বালুচ) বলা হয়।

জোইয়্যা বালুচ শাসক

সম্পাদনা

বিহারির ফতেহ খান জোইয়্যা ছিলেন জোইয়্যা বালুচ উপজাতির মহান নেতা, যিনি শের শাহ সুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। ফতেহ খান জোইয়্যার সমাধিটি একটি পুরানো সমাধিস্থলের মাঝখানে অবস্থিত এবং এটি তহসিল মেইলসির চক ১৮৪-ডব্লিউবিতে সখী দালাইলের সমাধির মতো ১৫ শতকের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ইঙ্গিত দেয়।[] দৌলত খান জোইয়্যা এবং তাঁর বংশধররা (দৌলতানারা) এই এলাকার শাসক হয়ে ওঠেন। ১৭৫৪ সালে আমির মুবারক খান আব্বাসী এই এলাকা আক্রমণ করে জয় করার আগে পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করে গেছেন।[]

ভাগনরী জোইয়্যারা বেশিরভাগই হিন্দু ছিলেন[] কিন্তু অভিবাসনের পর তাঁরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

সংস্কৃতি

সম্পাদনা

তাঁরা লম্বা বালোচি শালোয়ার কামিজ, বালোচি পাগড়ি বালোচি ওয়েস্টকোট, বালোচি জুতা বা চাওয়াত পরেন এবং ঐতিহ্যবাহী লাঠি বহন করেন।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

ভাগনরী জোইয়্যা উপজাতির মানুষ বেলুচিস্তানের পূর্বদিকে কাছিতে বসতি স্থাপন করেছিল। ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং দেশভাগের কারণে তারা বেলুচিস্তান থেকে চলে আসে এবং ভারতে আশ্রয় নেয়। রানা সোহনপাল খান জোইয়া ছিলেন এই গোত্রের আদি প্রধান, তাঁর চার ছেলে লুনি খান, বুর খান, ওয়াসুল খান এবং ডনি খান। লুনি খান একজন মহান যোদ্ধা ছিলেন এবং তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজস্থানে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর ১২ জন পুত্র ছিল। তাঁরা পাকপত্তনের বাবা ফরিদের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র লখু খান এই গোষ্ঠীর প্রধান হন এবং তিনি পাকপত্তনের কাছাকাছি অনেক এলাকা জয় করেন। ভাট্টি ও রাও রাজপুতদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর তাঁরা দেশান্তরী হতে বাধ্য হন। তাই তাঁরা মুলতানের কাছাকাছি চলে আসেন। সে সময় ফতেহ খান জোইয়্যা ছিলেন গোষ্ঠীপতি।তিনি একজন মহান যোদ্ধাও ছিলেন। তিনি মুলতান এবং বিহারি শাসন করেছিলেন, শের শাহ সুরির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাঁকে পরাজিত করেছিলেন[] পাকিস্তানে বসবাসকারী জোইয়্যারা হলেন ফতেহ খান জোইয়্যার বংশধর যিনি ভাগনরী বালুচ বা ভারতের হিন্দু বালুচ উপজাতি থেকে ছিলেন।

উৎপত্তি

জোইয়্যা উপজাতির লোকদের মতে, একজন সাধক হযরত আলিয়াস সেরি বাগদাদে থাকতেন যিনি ইরানী নিওলিথিক কৃষক বা "বালুস" বা "বেলুচ" উপজাতির বংশধর ছিলেন। হালাকু খানের আক্রমণের সময়,[] তিনি বাগদাদ থেকে বেলুচিস্তানে চলে আসেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে তিনি বেলুচিস্তানে মাত্র কয়েক মাস অতিবাহিত করেন, তিনি আবার ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে চলে যান। তিনি সেখানে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। "রাজা চুয়ার সিং" নামে একজন রাজপুত শাসক তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। সেই সময় রাজা তাঁর বড় মেয়ে রানি নাহালকে তাঁর সাথে বিয়ে দেন এবং তাঁকে তার সাম্রাজ্যের ৮টি দুর্গও উপহার দেন। হযরত আলিয়াস সেরী একটি পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং তাঁর নাম "জোইয়্যা খান"।

জোইয়্যা খান একজন মহান যোদ্ধা ছিলেন এবং তাঁদের গোত্রের নামকরণ করা হয়েছিল তাঁর নামে। একটি শক্তিশালী উপজাতি হওয়ায় তিনি নিকটবর্তী অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করেন এবং রাজস্থানের অনেক এলাকা জয় করেন। অন্য একটি সূত্র অনুসারে জোইয়্যা উপজাতি রাজস্থান, ভাটনের, সুতলজ, বিকানের, বিহারি, মুলতান, সিন্ধু নদ অঞ্চল এবং ভারতের অনেক পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলে শাসন করেছিল।[১০]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "A piece of Balochistan in Mumbai since Partition — 150 families & Khatti Dal"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  2. "Mumbai's filmi daredevils with a cross-border history"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  3. Language policy and language conflict in Afghanistan and its neighbors : the changing politics of language choice। Harold F. Schiffman। ২০১২। আইএসবিএন 978-90-04-21765-2ওসিএলসি 148111623 
  4. "Khans of Sahiwal", Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়), ২০২২-১২-১৫, সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  5. "योद्धा", Wiktionary (ইংরেজি ভাষায়), ২০২৩-০৩-১৭, সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  6. Ahmed, Shakeel (২০১৯-০২-২৬)। "Govt to restore tomb of the Joiya who resisted Sher Shah Suri"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  7. "Balochi clothing", Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়), ২০২৩-০৩-২৯, সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬ 
  8. "Our History | Vehari"vehari.punjab.gov.pk। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৯ 
  9. Courses, The Great (২০১৭-০২-০৯)। "The Mongol Sack of Baghdad in 1258"Wondrium Daily (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৬ 
  10. A Glossary of the Tribes & Castes of the Punjab & North-west Frontier Province: Based on the Census Report for the Punjab, 1883, by the Late Sir Denzil Ibbetson ... & the Census Report for the Punjab, 1892, by Sir Edward Maclagan ... & Comp. by H.A. Rose ... (ইংরেজি ভাষায়)। Superintendent, government printing, Punjab। ১৯১১।