জুলিয়েট
জুলিয়েট কাপুলেট (ইতালীয়: Giulietta Capuleti) উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত বিয়োগান্তক নাটক রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-এর একটি নাম চরিত্র। জুলিয়েট এই নাটকের কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র এবং ভেরোনার লর্ড কাপুলেট ও লেডি কাপুলেট দম্পতির একমাত্র কন্যা। সে তাদের পারিবারিক শত্রু মন্টাগুয়ে পরিবারের রোমিওর সাথে গোপনে প্রেম ও বিয়ে করে। রোমিও তার ভুয়া মৃত্যুর খবর শুনে আত্মহত্যা করার পর সেও আত্মহত্যা করে।
জুলিয়েট | |
---|---|
স্রষ্টা | উইলিয়াম শেকসপিয়র |
পরিবার |
|
বর্তমান ভেরোনা
সম্পাদনাক্যাসা ডি জিউলিয়েতা
সম্পাদনাভেরোনায়, ১৪শ শতাব্দীর প্রথমদিকে ভিয়া কাপেলো নং. ২৩ দাবী করে এটা কাপুলেটদের এবং অচিরেই তা পর্যটন আকর্ষণ হয়ে ওঠে। সেখানে একটি বেলকনি, ছোট উদ্যান ও জুলিয়েটের একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি রয়েছে। শহরের এই জায়গাটিতে সবেচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয়। মূর্তিটির বুকের দিকে উন্মুক্ত রয়েছে এবং এ সম্পর্কে কিংবদন্তি আছে যে যদি কেউ এই মূর্তির বুকের ডান পাশে আঘাত করতে পারে তবে তা তার ভবিষ্যৎ ও প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ।[১]
এই বাড়ির সামনের দেয়ালে অনেকে তাদের নাম এবং তাদের প্রিয় মানুষের নাম লিখে যায়। দেয়ালটি জুলিয়েটের দেয়াল নামে পরিচিত। অনেকে বিশ্বাস করেন এই দেয়ালে তাদের নাম ও তাদের প্রিয় মানুষের নাম লিখলে সে প্রেম অমর হবে। দেয়ালটি পুনঃনির্মাণ ও পরিষ্কার করা হয় এবং পরবর্তীতে লেখাগুলো পুনঃস্থাপন করা [২] বা দেয়ালের বাইরে সাদা বোর্ড দেয়ার সিদান্ত নেওয়া হয়।[৩]
লেখার পাশাপাশি ছোট প্রেমপত্র লিখে যাওয়াটাও একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। উদ্যান পরিষ্কার রাখার জন্য সেখানকার কর্মচারীরা নিয়মিত চিঠিগুলো নিয়ে যায়।[৪]
ক্লাব ডি জিউলিয়েতা
সম্পাদনা১৯৩০ সাল থেকে ভেরোনায় জুলিয়েটের ঠিকানায় প্রেমপত্র আসতে শুরু করে। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৫,০০০ এর অধিক প্রেমপত্র আসে, যার তিন-চতুর্থাংশ হল মেয়েদের। সবচেয়ে বেশি প্রেমপত্র আসে মার্কিন কিশোরীদের।[৫] ভেরোনা শহরের অর্থায়নে ১৯৮০-এর দশক থেকে ক্লাব ডি জিউলিয়েতা (জুলিয়েট ক্লাব) চালু হয় এবং স্থানীয় সেচ্চাসেবীরা প্রেমপত্রগুলো পড়ে উত্তর দেয়।[৫] ক্লাবটি লিসা ও চেইল ফ্রিডম্যানের একটি বইয়ের আলোচ্য বিষয়, সুজানা হারপারের একটি বইয়ে এবং ২০১০ সালের মার্কিন চলচ্চিত্র লেটারস টু জুলিয়েট চলচ্চিত্রের কাহিনী এই ক্লাবকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে।
অভিনয়শিল্পী
সম্পাদনাঅনেক জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেছে:
- মেরি সন্ডারসন - প্রথম পেশাদার মহিলা অভিনয়শিল্পী যিনি এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এর আগে পুরুষ অভিনয়শিল্পীরা এই চরিত্রে অভিনয় করত।[৬]
- এলিজা ও'নেইল - ১৮১৪ সালে কভেন্ট গার্ডেন-এ জুলিয়েট হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
- ক্যাথরিন কর্নেল - ১৯৩৪ সালে ব্রডওয়ে থিয়েটারর উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল বাসিল র্যাথবোন-এর বিপরীতে তার জুলিয়েট চরিত্র, এবং পরের বছর আবার মঞ্চস্থ করা হলে রোমিও চরিত্রে অভিনয় করেন মরিস ইভানস এবং মারকুশিও চরিত্রে অভিনয় করেন রাফ রিচার্ডসন।
- পেগি অ্যাসক্রফট - ইতিহাসের অন্যতম সেরা জুলিয়েট, ১৯৩৫ সালে লন্ডনে জন জিয়েলগুড-এর নির্দেশনায় অভিনয় করেন, এবং জিয়েলগুড ও লরেন্স অলিভার রোমিও ও মারকুশিও চরিত্রে অভিনয় করেন।
- নর্মা শীরার - জর্জ কুকর পরিচালিত রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (১৯৩৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে রোমিও চরিত্রে অভিনয় করেন লেসলি হাউয়ার্ড।
- জুডি ডেঞ্চ - ফ্রাঙ্কো জেফিরেলির নির্দেশনায় ১৯৬০ সালের লন্ডনের মঞ্চনাটকে জুলিয়েট হিসেবে সফলতা লাভ করেছিলেন।
- ওলিভিয়া হাসি - ফ্রাঙ্কো জেফিরেলি পরিচালিত রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (১৯৬৮) চলচ্চিত্রে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন; তার বিপরীতে রোমিও ছিলেন লিওনার্দ হুইটিং।
- নিয়াম কুসাক - ১৯৮৬ সালে দ্য রয়্যাল শেকসপিয়র কোম্পানির জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন। তার রোমিও ছিলেন শন বেন।
- ক্লেয়ার ড্যানেস - বাজ লুরম্যান পরিচালিত আধুনিক রোমিও + জুলিয়েট (১৯৯৬) চলচ্চিত্রে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন, তার বিপরীতে রোমিওর ভূমিকায় ছিলেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।[৭]
- গুগু এমবাথা-র - রয়্যাল এক্সচেঞ্জ থিয়েটারের ২০০৫ সালের মঞ্চনাটকে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন।
- জেমস প্যাট্রিক ডেভিস - শেকসপিয়র থিয়েটার কোম্পানির ২০০৮ সালে সকল পুরুষ চরিত্রের মঞ্চনাটকে ফিন উইটরক-এর বিপরীতে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন।
- হেইলি স্টেইনফেল্ড কারল কার্লির রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (২০১৩) চলচ্চিত্রে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন, তার বিপরীতে রোমিও চরিত্রে অভিনয় করেন ডগলাস বুথ।[৮]
- দীপিকা পাড়ুকোন - সঞ্জয় লীলা বানসালির হিন্দী ভাষার গোলিও কি রাসলীলা রাম-লীলা (ইংরেজিতে "A Play of Bullets: Ram-Leela") চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তার বিপরীতে ছিলেন রনবীর সিং।
- লিলি জেমস - ২০১৬ সালে কেনেথ ব্রানার নির্দেশনায় নাটকে জুলিয়েত চরিত্রে অভিনয় করেন, তার রোমিও ছিলেন রিচার্ড ম্যাডেন।
অ্যানিমেশন
সম্পাদনা- প্যাট্রিশিয়া ট্রিপেট- রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট: সীলড উইথ অ্যা কিস-এ জুলিয়েট চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন এবং তার ভাই ড্যানিয়েল রোমিও চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন।
- ফুমি মিজুসাওয়া - জাপানী অ্যানিমেশন স্টুডিও গঞ্জোর রোমিও x জুলিয়েট চলচ্চিত্রে জুলিয়েটের ভুমিকার জন্য কণ্ঠ দেন ও রোমিওর ভূমিকার জন্য কণ্ঠ দেন তাকাহিরো মিজুশিমা; ইংরেজি ভাষায় ব্রিয়ানা প্যালেন্সিয়া ও ক্রিস বারনেট জুলিয়েট ও রোমিও চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন।
- ক্রিস্টিন ফেয়ারলি - কিশোর টেলিভিশন সিরিজ পেগ + ক্যাট-এ জুলিয়েট চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন।
- এমিলি ব্লান্ট - নোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-এ জুলিয়েত চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন।
কল্পকাহিনীতে অভিনয়
সম্পাদনা- গিনেথ পাল্ট্রো - একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র শেকসপিয়র ইন লাভ-এ দেখানো হয়েছে অবৈধভাবে ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভায়োলা দে লেসেপস।
- টেইলর সুইফট - মার্কিন এই গায়িকা ও গীতিকারকে তার লাভ স্টোরি গানে জুলিয়েট চরিত্রে দেখা গেছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ La casa di Giulietta, Verona – IgoUgo
- ↑ Veronissima। "Veronissima – Juliet's Wall Graffiti"। Veronissima.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Terna02 – Juliet's graffiti at the D'Orsay Museum in Paris"। PremioTerna.it। ২০০৯-০৯-০৪। ২০১২-০৯-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Desenzano Lake Garda Italy — Verona — Romeo and Juliet"। DesenzanoItaly.com। ১ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ Hooper, John (১৯ মে ২০১০)। "Dear Juliet: the fans who write to Shakespeare's heroine"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Halio, Jay (১৯৯৮)। Romeo and Juliet। Westport: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 0-313-30089-5।
- ↑ Lahr, John। "Where do Claire Danes' Volcanic Performances Come From?"। নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন। দ্য নিউ ইয়র্কার। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ Sneider, Jeff (২০১১-০৬-২১)। "Douglas Booth, thou art 'Romeo'"। Variety। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Bevington, David, Ed. Romeo and Juliet, The Bantam Shakespeare (New York, 1988)
- Levenson, Jill L., Ed. Romeo and Juliet, The Oxford Shakespeare (Oxford, 2000)
- "Juliet's Taming of Romeo" Carolyn E. Brown; Studies in English Literature, 1500–1900, Vol. 36, 1996
- "A Psychological Profile of Shakespeare's Juliet: Or Was It Merely Hormones?" Nancy Compton Warmbrod The English Journal, Vol. 69, No. 9 (Dec., 1980), p. 29