জিনাত বরকতুল্লাহ
জিনাত বরকতুল্লাহ (৩ অক্টোবর ১৯৫২ - ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩)[১][২] একজন বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্য চর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নৃত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করে।[৩]
জিনাত বরকতুল্লাহ | |
---|---|
জন্ম | ৩ অক্টোবর, ১৯৫২ |
মৃত্যু | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | (বয়স ৭০)
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী |
দাম্পত্য সঙ্গী | মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ |
সন্তান | বিজরী বরকতুল্লাহ |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০২২) |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাজিনাত বরকতউল্লাহর জন্ম ৩ অক্টোবর ১৯৫২ কুমিল্লায়। তার পূর্বপুরুষেরা চাঁদপুরের হলেও তার দাদা ধানমন্ডির সিদ্দিক বাজারে বাড়ি করেন।[৪] জিনাত বরকতুল্লাহ চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী গাজী আলিমুদ্দিন মান্নানের কাছে নৃত্য শেখা শুরু করেন।[৫] এছাড়াও বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্য শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাজিনাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি একই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশন শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করেন। ১৯৭০-এর দশক থেকেই মূলত তার নৃত্যযাত্রা শুরু হয়।[৬] প্রথমজীবনে তিনি উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় নৃত্যের তিনটি ধারা ভরতনাট্যম, কত্থক এবং মণিপুরী নৃত্যে শিক্ষা লাভ করলেও পরবর্তীতে লোকনৃত্যেই তাকে বেশি দেখা যেত। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।[৭] সেখানে তিনি ২৭ বছর কর্মরত ছিলেন।[৮]
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন।[৫] তিনি প্রায় ৮০টি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ঘরে বাইরে’, ‘অস্থায়ী নিবাস’, ‘বড় বাড়ি’, ‘কথা বলা ময়না’সহ প্রভৃতি। তিনি বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, নৃত্যাঞ্চল ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।[৫]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাজিনাত বরকতুল্লাহ নৃত্যশিল্পে অবদানের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন।[৫] এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৫)
- নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৮৭)
- ক্যাডেট কোর পুরস্কার (১৯৮৯)
- ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৯৬)
- তারকালোক পুরস্কার (১৯৯৭)
- সহস্রাব্দ পুরস্কার (২০০০)
- অমৃতবাজার পুরস্কার (২০০১)
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৮)
- শিল্পকলা একাডেমি পদক (২০১৮)
- একুশে পদক (২০২২)
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাব্যক্তিগত জীবনে জিনাত নাট্যকার মোহাম্মদ বরকতুল্লাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫] ২০২০ সালের ৩ আগস্ট মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৫] এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তান বিজরী বরকতুল্লাহ ও কাজরী বরকতুল্লাহ।[৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ চলে গেলেন নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- ↑ জিনাত বরকতউল্লাহ আর নেই, মানবজমিন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- ↑ "নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ আইসিইউতে"। বিডিনিউজ২৪। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ চলে গেলেন নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "জিনাত বরকতুল্লাহ লাইফ সাপোর্টে"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ "The Daily Star Web Edition Vol. 4 Num 75"। ডেইলি স্টার। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ "The Daily Star Web Edition Vol. 5 Num 816"। ডেইলি স্টার। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ চলে গেলেন নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, প্রথম আলো, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- ↑ "নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতুল্লাহ আইসিইউতে"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।